তলপেটে হঠাৎ ব্যথা (এপিন্ডিসাইটিস)

তলপেটে হঠাৎ করে ব্যথা উঠলেই অনেকে মনে করে থাকেন অ্যাপেনডিসাইটিসের ব্যথা। জরুরিভিত্তিতে অপারেশন দরকার। আসলে কথাটা সঠিক নয়। পেটে ব্যথা অ্যাপেনডিসাইটিস ছাড়াও বহুবিধ কারণে হতে পারে। ওষুধপত্রের মাধ্যমেও পেটের ব্যথা থেকে নিরাময় হওয়া যায় অনেক ক্ষেত্রে।
অ্যাপেনডিক্স হচ্ছে ছোট নলাকার একটি অঙ্গ যা বৃহদন্ত্রের সাথে সংযুক্ত থাকে। লম্বায় ২-২০ সেমি। কোনো কারণে অ্যাপেনডিক্সের মধ্যে ইনফেকশন হলে এটি ফুলে যায়, প্রদাহ হয়, তখন একে বলা হয় অ্যাপেনডিসাইটিস।
উপসর্গ
১. সাধারণত প্রথমে ব্যথা নাভীর চারপাশে অনুভব হয় এবং কয়েক ঘন্টা পর ব্যথাটা তল পেটের ডান পাশে চলে আসে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে পেটের অন্য অংশেও ব্যথা হতে পারে;
২. বমি বমিভাব হতে পারে;
৩. বমিও হতে পারে;
৪. অরুচি হতে পারে;
৫. পাতলা পায়খানা হতে পারে এবং
৬. জ্বর হতে পারে।
এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রোগীর ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষাই বেশি জরুরি। আলট্রাসনোগ্রাম কিংবা রক্ত পরীক্ষা অ্যাপেনডিসাইটিস নির্ণয়ে সহায়ক হতে পারে। তবে এ রোগ নির্ণয়ে চিকিৎসকের অভিজ্ঞতাই গুরুত্বপূর্ণ। পেটের ডান দিকে নিচের অংশে অনেক কারণে ব্যথা হতে পারে, বিশেষ করে মহিলাদের ক্ষেত্রে। তাই এ রোগে অপারেশনের আগে চিকিৎসককে অবশ্যই অন্য কারণগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। তবে অ্যাপেনডিসাইটিস হলে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা হচ্ছে অপারেশন। কারো অ্যাপেনডিসাইটিস হলে যদি অপারেশন করা না হয় তাহলে অ্যাপেনডিক্স ছিদ্র হয়ে যেতে পারে, ইনফেকশন সমস্ত পেটে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং জীবন বিপন্ন হতে পারে।
লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ (অব:), বিএসএমএমইউ, ঢাকা। চেম্বার : জাপান-বাংলাদেশ ফেন্সন্ডশিপ হসপিটাল (প্রা.) লি., ৫৫, সাতমসজিদ রোড, ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোন : ০১৭২৬৭০৩১১৬, ০১৭১৫০৮৭৬৬১

সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধ

অধ্যাপক ডা. কাজী তরিকুল ইসলাম
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সোয়াইন ফ্লু যা বর্তমানে এইচ১এন১ ভাইরাস নামে পরিচিতÑ বাংলাদেশেও এতে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এ ভাইরাস হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায় এবং বাতাসে বা মাটিতে ৭-১৪ দিন পর্যন্ত জীবিত অবস্থায় থাকতে পারে। এ জীবাণু থেকে বাঁচার সতর্কতা খুব সাধারণ, তা হচ্ছেÑ
সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত দেশ থেকে কেউ ভ্রমণ করে দেশে এলে তার দিকে পরিবারের সবার বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।
পাবলিক প্লেস যেমন স্কুল, মার্কেট, খেলার মাঠ, বাজারে যথাসম্ভব না যাওয়া। এ জায়গায় যেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।
হাত যেন জীবাণুমুক্ত থাকে সেজন্য ঘন ঘন হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে।
পাবলিক প্লেসে কিংবা যে কোনও জায়গায় হাঁচি-কাশি দেয়ার সময় রুমাল, কাপড়, টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহƒত এ জিনিসগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলতে হবে বা আলাদাভাবে ধুতে হবে। মনে রাখবেন, এ ভাইরাস মূলত হাঁচির মাধ্যমে ছড়ায়।
ঐ১ঘ১ ভাইরাস কি মৃত্যু ঘটায়? এ ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষ সহজে মরে না। এ ভাইরাসের নিজের মারণ ক্ষমতাও নেই। তবে এরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে শরীরে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাশ আক্রমণের সুযোগ করে দেয়। যারা আগে থেকেই ইমিউনোকমপ্রোমাইজড অর্থাৎ যারা শিশু, বৃদ্ধ, যারা এইচআইভি, যক্ষ্মা, ডায়াবেটিসে ভুগছে কিংবা করটিকোস্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ খাচ্ছে তাদেরই মৃত্যু ঝুঁকি বেশি।
প্রতিরোধ : সম্প্রতি ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত হয়েছে। অভিলটামেভির ট্যাবলেট প্রতিদিন ১টি করে ৭-১৪ দিন খাওয়া যেতে পারে। তারাই খাবেন যারা প্যানডেমিক দেশগুলো ভ্রমণ করবেন বা করেছেন কিংবা এ ধরনের রোগীর সংস্পর্শে এসেছেন।
বাংলাদেশে এ রোগ শনাক্তকরণের ব্যবস্থা রয়েছে।

ডেঙ্গুজ্বর চিকিৎসা গাইডলাইন

ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ভাইরাস রোগ। চার ধরনের ভাইরাসে এ রোগ হয়। প্রথমত, ভাইরাসে আক্রান্ত হলে ওই ভাইরাসে দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই, ৭-৮ মাসের জন্য দ্বিতীয় কোনও ভাইরাসও আক্রমণ করে না। তবে দ্বিতীয়বার ইনফেকশন হলে সাধারণত মারাÍক ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হয়। সেজন্যই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের রোগীর সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ে।
উপসর্গ : চিকিৎসার সুবিধার জন্য ডেঙ্গুকে তিন ভাগে বর্ণনা করা হয়। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার, ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার ও ডেঙ্গু শক সিনড্রম। আরও দুইভাবে ডেঙ্গু রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসে। নন-স্পেসিফিক ফিভার যেসব ডেঙ্গুজ্বরকে অন্য জ্বর থেকে পৃথক করা সম্ভব হয় না। ডেঙ্গুর জটিলতা লিভারের মারাÍক অসুখ (ফালমিনেটিং লিভার ফেইলুর) অথবা ব্রেনের অসুখ (এনসেফালাইটিস/ এনসেফালপ্যাথি)। ডেঙ্গুতে এনসেফালাইটিস হয় না বললেই চলে। জুলাই থেকে ডিসেম্বর এ সময় জ্বর যে কোনও কারণেই হোক ডেঙ্গু ভেবে চিকিৎসা শুরু করা যেতে পারে।
মশা কামড়ানোর দুই সপ্তাহ পরে জ্বর হলে বা দুই সপ্তাহের বেশি জ্বর থাকলে সেটা ডেঙ্গু নয়। ডেঙ্গুরও তিনটি উপসর্গ লক্ষণীয়। জ্বর, রক্তক্ষরণ এবং র‌্যাশ। ডেঙ্গুতে হঠাৎ করেই সব উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন রোগীর ভীষণ জ্বর, অসহনীয় গা-ব্যথা, গিরাব্যথা, মাথাধরা, বমি, র‌্যাশ বেরোয়। ১০৪০ থেকে ১০৬০ ফা. জ্বর পাওয়া যায়। ডেঙ্গুর র‌্যাশ চার ধরনের। প্রথম দিন বা দ্বিতীয় দিন সারা শরীর লাল (ফ্লাস) হয়ে যায়, শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাভ দানা (ফ্লিটিং র‌্যাশ) দেখা যায়। তৃতীয় বা চতুর্থ দিনের হামের মতো র‌্যাশ (মরবিলি ফরম) উঠতে পারে। টিপিক্যাল র‌্যাশ বেরোয় ষষ্ঠ দিনে। পিনের মাথার আকৃতির রক্তদানার মতো সারাশরীরে র‌্যাশ ছড়িয়ে যায় এবং এর মাঝে মাঝে স্বাভাবিক চামড়া দেখা যায়। একে বলে কনভালোসেন্ট কনফ্লুয়েন্ট পেটিকিয়াল র‌্যাশ। র‌্যাশ ছাড়াও ডেঙ্গু হতে পারে। হেমোরেজিক না হয়েও র‌্যাশের সঙ্গে রক্তক্ষরণ থাকতে পারে ক্লাসিক ডেঙ্গুতে। ডেঙ্গুজ্বরের সময় অনেক মহিলাই অসময়ে মাসিক শুরু হওয়ার কথা বলেছে যাদের ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ছিল, তাদের ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার হয়নি। ডেঙ্গুতে রক্তনালী লিক করে ও রক্তক্ষরণ বন্ধের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।
রক্তনালীর লিকই আসলে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারের মূল সমস্যা। এজন্যই ডেঙ্গুতে রক্তক্ষরণ ছাড়াও রক্তচাপ বা ব্লাড প্রেসার কমে যায়, পেটে পানি (এসাইটিস) ও ফুসফুসে পানি (ইফুশন) জমে। এসব লক্ষণ সাধারণত জ্বর চলে যাওয়ার ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে শুরু করে ৪৮ ঘণ্টা পর পর্যন্ত হয়ে থাকে। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে দৃশত কোনও রক্তক্ষরণ না থাকলে তাকে গ্রেড-১ বলে। রক্তক্ষরণ থাকলে গ্রেড-২। এগুলোর সঙ্গে রক্তচাপ কমতে থাকলে বলে গ্রেড-৩, আর রক্তচাপ না পাওয়া গেলে গ্রেড-৪। গ্রেড-৩ ও গ্রেড-৪ কে একত্রে ডেঙ্গু শক সিনড্রম বলে।
প্রতিকার : ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে তিনটি মারাÍক সমস্যা দেখা দেয় ১. রক্তক্ষরণ ২. লিভার ফেইলুর ও ৩. শক। রক্তক্ষরণ বিশেষ করে খাদ্যনালীর রক্তক্ষরণ (রক্তবমি, কালো পায়খানা) ও হেপাটিক ফেইলুর এবং অনেক ক্ষেত্রে কিডনি ফেইলুর ওইসব রোগীর বেশি হয় যারা নিমেসুলাইড (নিমো, নীরা ইত্যাদি) ডাইক্লোফেন (ভলটালিন ইত্যাদি) জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে। দুঃখজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের অনেক চিকিৎসক এখনও জ্বর কমানোর জন্য এসব ব্যবহার করে থাকেন। ডিহাইড্রেশনের রোগীর ক্ষেত্রে এগুলোর ব্যবহার মারাÍক পরিণতিকে ত্বরান্বিত করে। ডেঙ্গুর বিশেষ কোনও চিকিৎসা নেই। শক প্রতিরোধের জন্য যথেষ্ট পরিমাণ পানি খেতে হবে। জ্বরের জন্য উল্লিখিত ওষুধগুলো ব্যবহার না করে প্যারাসিটামল (৬০-৮০ মি.গ্রাম/কেজি/প্রতিদিন) দিতে হয়। জ্বর স্বাভাবিক না হলেও ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট রাখতে পারলেই হবে। প্যারাসিটামল সাধারণত ৫০০ মি.গ্রাম করে ৬ ঘণ্টা পর পর খেলেই চলে; তারপরও যদি জ্বর ১০২০-র বেশি থাকে তবে অতিরিক্ত ৫০০-১০০০ মি.গ্রাম তৎক্ষণাৎ খেতে হবে। অধৈর্য না হয়ে যথোপযুক্ত পরিমাণ প্যারাসিটামল ও পানি দিলে সব রোগীরই জ্বর কমে। প্রতিদিন মোটামুটি ৩ লিটার পানি খেতে পারলেই হবে। পানি খেতে না পারলে স্যালাইন দিতে হবেÑ এক্ষেত্রে নরমাল স্যালাইনই সবচেয়ে ভালো। নিউট্রিশন ঠিক রাখার জন্য অন্যান্য খাবার খেতে উৎসাহী করতে হবে। ডাবের পানি, ওরস্যালাইন, জুস, কোক ইত্যাদি পানীয় দিলে পানির সঙ্গে ক্যালরিও নিশ্চিত হয়। ডেঙ্গু শক প্রতিরোধ করতে হলে ব্লাড প্রেসার, প্রস্রাবের পরিমাণ ইত্যাদি মনিটর করতে হবে। ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে মৃতের সংখ্যা ১০-১২ শতাংশ হতে পারে। শক সিনড্রম হলে এ সংখ্যা ৪০ শতাংশে দাঁড়াবে। তবে প্রথম থেকেই উপযুক্ত চিকিৎসা দিতে পারলে এ সংখ্যা ০.২ শতাংশ রাখা সম্ভব। থাইল্যান্ডে মৃতের সংখ্যা ০.২ শতাংশ রাখতে পারলেও ভারত, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুরের মৃতের সংখ্যা ২ এর বেশি। গত কয়েক বছর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমাদের মৃতের সংখ্যা ২-এর কম এবং কমছে।
খারাপ দেখলে রোগীকে ভালো হাসপাতালে আনাই সর্বোত্তম। যার পেটের ব্যথা থাকছেই, বমি কমছে না, যে উল্টা-পাল্টা বকছে এ ধরনের রোগী ডেঙ্গু শক সিনড্রম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এসব রোগীর হঠাৎ করে জ্বর নেমে যায় ও প্লাটিলেট খুব কমে যায়।
গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ তে বিশেষ কিছু লাগার কথা নয়। গ্রেড-৩ হলে স্যালাইন দিয়ে মনিটর করতে হবে। প্রথমে তিন মিলি/কেজি/ঘণ্টা দিয়ে শুরু করে প্রয়োজন অনুযায়ী (প্রেসার দেখে) কমাতে বা বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে বেশি পানি দেয়াও মারাÍক ঝুঁকিপূর্ণ। ডেঙ্গুতে রক্তনালীর (প্লাজমা) লিকের জন্য ডিহাইড্রেশন হয় এবং পানি লাগে। লিকটা ক্ষণস্থায়ী হয় ১২-৪৮ ঘণ্টা। লিক বন্ধ হয়ে গেলে তাই অতিরিক্ত পানি পেলে সেটা পেট, ফুসফুস, ব্রেন বা অন্যান্য জায়গায় জমবে। রক্তক্ষরণের জন্য হেমাটোক্রিট কমে গেলে পুরা (হোল) ব্লাড দিতে হবে। আশংকাজনক রক্তক্ষরণ থাকলে ও হিমাটোক্রিট বেশি থাকলে প্লাটিলেট দিতে হয়। অনেকে প্লাটিলেট কাউন্ট ১০ হাজার-এর কম হলে দিতে বলেন কারণ এসব ক্ষেত্রে ব্রেন বা অন্য কোনও ভাইটাল অর্গানে রক্তক্ষরণ হওয়ার ভয় থাকে। তবে বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, ডেঙ্গুজ্বর চিকিৎসায় প্লাটিলেট দেয়ার প্রয়োজন প্রায় ক্ষেত্রেই নেই।

অধ্যাপক ডা. খাজা নাজিম উদ্দীন
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, বারডেম

হাঁটু সন্ধির ব্যথা

বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক, ফিজিক্যাল মেডিসিন বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

সন্ধিবাত বা জোড়া ব্যথা জীবনে হয়নি এমন মানুষ খুব কম। এধরনের বাত ব্যথা সাধারনত বয়স্কদের বেশী হয়, তবে কম বয়সীরাও অনেক সময় এরোগে ভুগে থাকে। এখানে হাঁটুর অস্থি সংযোগের ক্ষয়জনিত রোগ বা অস্টিও আর্থোসিস নিয়ে আলোচনা করব যা বৃদ্ধ বয়সে প্রায় সকলকে পেয়ে বসে। হাঁটুর অস্থি সংযোগে বৃদ্ধ বয়সে ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে একটি পরিবর্তন সাধিত হয়। এই পরিবর্তনের ফলে হাঁটু সন্ধির নানা উপসর্গ দেখা দেয়।

উপসর্গগুলি হল-

০ হাটুর অস্থি সংযোগে ব্যথা। এ ব্যথা প্রথমে অল্প থেকে আরম্ভ হয় এবং ক্রমে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

০ হাটুর অস্থি সংযোগে সকালে শক্তভাব দেখা দেয় এবং এ কারণে অনেক সময় হাটু নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয় অথবা করলে ব্যথা আরো বৃদ্ধি পায়। তবে এই শক্তভাব সাধারণত একঘন্টার কম থাকে।

০ হাটুর অস্থি সংযোগে দুর্বলতা বা জোর না পাওয়ার অনুভূতি হয়।

০ প্রাত্যহিক কাজ যেমন, সিড়ি দিয়ে উঠানামা করা, বাথরুমে বসা ইত্যাদিতে হাঁটুর অস্থি সংযোগের ব্যথা বৃদ্ধি পায়।

০ অনেক সময় ব্যথার সাথে প্রদাহ হতে পারে। এই প্রদাহ হলে হাঁটু কিছুটা ফুলে যায়।

চিকিৎসা, প্রতিকার ও উপদেশঃ

এ রোগে বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসকগণ প্রয়োগ করে থাকেন। ব্যথা উপশমকারী ঔষধ হিসেবে প্যারাসিটামল উত্তম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইনডোম্যাথাসিন, ডাউক্লোফেন, আইবুপ্রোফেন রোগীর অবস্থা অনুযায়ী দেয়া হয়ে থাকে। ব্যথা থাকা অবস্থায় মাংসপেশী শিথিলকরণ ঔষধ যেমন, ডায়াজিপাম দেয়া যেতে পারে। সব ক্ষেত্রে একমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নির্দিষ্ট মাত্রায় সঠিক নিয়মে ঔষধ খেতে হবে। হাঁটুর অস্থি সংযোগে স্টেরয়েড ঔষধ ইনজেকশন-এর মাধ্যমে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োগ করা যেতে পারে। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে এ ইনজেকশন প্রয়োগ করা উচিত। সঠিক নিয়মে এ ইনজেকশন প্রয়োগ না হলে লাভের চেয়ে ক্ষতি হবার সম্ভাবনাই বেশী থাকে। চিকিৎসক এই প্রক্রিয়ায় যথেষ্ঠ সাবধানতা অবলম্বন করে থাকেন। বিভিন্ন প্রকার তাপ এ রোগে চিকিৎসকগণ প্রয়োগ করে থাকেন যেমন, শটওয়েভ থেরাপী, আলট্রাসাউন্ড থেরাপী ইত্যাদি। রোগীর কোনো অবস্থায় এ সমস্ত থেরাপি প্রয়োগ করতে হবে তা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নির্ধারণ করে দেন।

হাঁটুর অস্থি সংযোগ ব্যথা রোগীর জন্য উপদেশঃ

০ হাঁটুর ব্যথা থাকা অবস্থায় যতদূর সম্ভব হাঁটুকে বিশ্রাম দিন।

০ ঝুকে বা উপুর হয়ে কোনো কাজ করবেন না।

০ একই স্থানে বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে অথবা বসে থাকবেন না।

০ ভারী কোনো জিনিস যেমন, এক বালতি পানি, বেশী ওজনের বাজারের থলি ইত্যাদি বহন করবেন না।

০ ঝরনায় অথবা সোজা হয়ে বসে তোলা পানি দিয়ে গোসল করবেন।

০ পিড়িতে বসে কোনো কাজ করবেন না।

০ডা. এম এ শাকুর

বাত রোগ বিশেষজ্ঞ

সহযোগী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

মোবাইল : ০১৮১৯৪১০০৮০।

এলার্জির কারণ ও প্রতিকার

সচরাচর নির্দোষ বলে গণ্য কোনো জিনিস যদি শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তবে তাকে এলার্জি বলা হয়। যে সব দ্রব্য এলার্জি সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় এলারজেন বা এন্টিজেন এবং এসব দ্রব্য দেহে প্রবেশের ফলে দেহের অভ্যন্তরে যে দ্রব্য সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় এন্টিবডি। এন্টিজেন ও এন্টিবডি পরস্পর মিলিত হলে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় এন্টিজেন-এন্টিবডি বিক্রিয়া।

হাঁপানির সঙ্গে এলার্জির গভীর সংযোগ আছে। ফুলের পরাগ, দূষিত বাতাস, ধোঁয়া, কাঁচা রংয়ের গন্ধ, চুনকাম, ঘরের ধূলো, পুরানো ফাইলের ধূলো দেহে এলার্জিক বিক্রিয়া করে হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করে। কাজেই যারা হাপানিতে ভুগছেন তাদেরকে এগুলি পরিত্যাগ করে চলতে হবে।

ছত্রাক দেহে এলার্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টি করে। ছত্রাক হচ্ছে অতি ক্ষুদ্র সরল উদ্ভিদ। ছত্রাক ২০ ডিগ্রী সেঃ গ্রেঃ থেকে ৩২ ডিগ্রী সেঃ গ্রেঃ উত্তাপে জন্মে, ভেজা পদার্থে এই ছত্রাক জন্মাতে দেখা যায়। আবার কোনো কোনো খাদ্য ছত্রাকদ্বারা দূষিত হয়ে থাকে। পনিরে ছত্রাক মিশিয়ে তৈরী করা হয়। কোনো কোনো পাউরুটি এবং কেক তৈরী করতেও ইয়েস্ট জাতীয় ছত্রাক ব্যবহার করা হয়। আলু, পেঁয়াজও ছত্রাকদ্বারা দূষিত হয়। এই ছত্রাক ও এলর্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ। ঘরের ধূলোতে একটি সচরাচর পরিচিত। এক অনুসন্ধানে দেখা যেছে যে শতকরা প্রায় ষাট শতাংশ ক্ষেত্রে এলার্জি সৃষ্টির জন্য এই ‘মাইট’ দায়ী। সে জন্যে যারা হাঁপানিজনিত এলার্জিক সমস্যায় ভোগেন তারা ঘরের ধূলো সবসময় এড়িয়ে চলবেন। ঘরের আসবাবপত্র, কম্বল, পর্দা, তোষক, বালিশ, প্রভৃতিতে যে ধূলো জমে থাকে তা পরিষ্কার করার সময় দূরে সরে থাকতে হবে।

খাদ্যে প্রচুর এলার্জির সম্ভাবনা থাকে যেমন, দুধে এলার্জি, বিশেষ করে শিশুদের থেকে গরুর দুধে খুবই বেশী এলার্জি হতে দেখা যায়। গরুর দুধে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে গায়ে চুলকানি, হাঁপানি ইত্যাদি হতে দেখা যায়। এছাড়া গমে ডিমে, মাছে এলার্জি হতে দেখা যায়। বাদাম, কলা, আপেল, আঙ্গুর, ব্যাঙের ছাতা, তরমুজ, পেঁয়াজ, বসুন, চকোলেট, এমনকি ঠান্ডা পানীয় কোনো কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে এলার্জি সৃষ্টি করে।

পতঙ্গের কামড়ে গায়ে চুলকানি, স্থানটি ফুলে যাওয়া এমকি হাঁপানি পর্যন্তও হতে দেখা যায়। মশা, বেলেমাছি, মৌমাছি, বোলতা, ভীমরুল, প্রভৃতি, পতঙ্গের কামড়ে দেহে এলার্জির সৃষ্টি হয়।

জীবজন্তু----- যেমন বিড়াল, কুকুর, অর্শ্ব, প্রভৃতি গৃহপালিত পশু, অনেকসময় এলার্জি সৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এছাড়া একটি চর্মরোগ আছে যাকে বলা হয় আর্টিকোরিয়া, বাংলায় কেউ কেউ আমরাতও বলে থাকেন। এক্ষেত্রে ত্বকে চাকা চাকা হয়। আর ফুলে উঠে চুলকাতে দেখা যায়। এটিও হল এলার্জির অন্যতম প্রকাশ। অধিকাংশ লোকের জীবনেই কোনো না কোনো সময় এই রোগ হতে দেখা যায়। এই আর্টিকোরিয়া শরীরের কোনো অংশে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে অথবা সমস্ত শরীর ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে বিভিন্ন আকারে লালচে চাকা চাকা ফোলা দাগ হতে দেখা যায় এবং সেইসঙ্গে থাকে প্রচন্ড চুলকানি। অনেকগুলো কারণ এর মধ্যে খাদ্য এলার্জির থেকেও এ রোগ হতে পারে। যেমন- বাদাম, ডাল, মাংস, ডিম ইত্যাদি। এছাড়া এই এলার্জির সৃষ্টি পতঙ্গ থেকেও হতে পারে এছাড়া ঔষধই এলার্জি সৃষ্টি দায়ী। এছাড়া এই এলার্জির সৃষ্টি পতঙ্গ মৌমাছি, ভীমরুল, মাকড়সা প্রভৃতির কামড়ে এই এলার্জি দেখা দিতে পারে। এছাড়া ঔষধ এলার্জি হতে পারে। এর মধ্যে পেনিসিলিন আর অ্যাসপিরিন অন্যতম। মোট কথা এলার্জিতে ভুগলে লক্ষ্য করবেন কোনো খাবারে আপনার এলার্জি হয় কিনা ? যদি খাবারের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় তবে সেই খাবারের সর্ম্পর্ক খুজে পাওয়া যায়। তবে সেই খাবার অবশ্যই পরিহার করতে হবে। মোট কথা যে করণে আপনার এলার্জি হয় সেই কারণ এড়িয়ে চলতে হবে।

০ডা. দিদারুল আহসান

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ

আলরাজী হাসপাতাল, ১২, ফার্মগেট, ঢাকা।

ফোন : ০১৮১৯২১৮৩৭৮।

স্বাস্থ্যসম্মত সেহরি ও ইফতার

রোজা নিয়ে মানুষের স্বাস্থ্য ভাবনার শেষ নেই। রোজায় সেহরি, ইফতার ও শারীরিক সুস্থতা নিয়ে মানুষের মনে এ সময়ে থাকে অনেক জিজ্ঞাসা। কিন্তু রোজায় স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তো নেইই, বরং অনেক সময় এটি স্বাস্থ্যের জন্য সুফল বয়ে আনে।

রোজায় সেহরি ও ইফতার কেমন হবে?

আমাদের দেশে মানুষের মধ্যে রমজানে যে খাদ্যাভ্যাস লক্ষ্য করা যায়, তা পুরোপুরি স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এ সময়ে খাবারের প্রধান পর্যায় দুটি-সেহরি ও ইফতার। আমাদের দেশে সেহরি ও ইফতারের অধিকাংশ খাবারই হচ্ছে চর্বি সমৃদ্ধ এবং তেলে ভাজা। সেহরি ও ইফতারের খাবার নির্বাচনে রোজাদারের বয়স ও শারীরিক অবস্থাকে বিবেচনায় রাখা হয় না। কিন্তু এসব দিকে নজর দিতে হবে।

সেহরির প্রসঙ্গে আসা যাক। স্বাভাবিকভাবে যেকোনো ধরনের খাবারই সেহরিতে খাওয়া যায়, তবে খেয়াল রাখতে হবে খাবারটা যেন সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়। ভাত ভাঙালির মূখ্য খাবার। তাই সেহরিতে অবশ্যই সাদা ভাত রাখবেন। তবে ভাতের সঙ্গে রাখতে হবে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- মাছ, গোশত ও ডিম। খরচ কমাতে চাইলে ভাতের সঙ্গে শুধু ডিম ও ডাল। ডাল উদ্ভিজ প্রোটিন বলে এতে ক্ষতিকর চর্বি নেই। সেহরির খাবার তালিকায় যেকোনো একটি সবজি থাকা ভাল। ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, পেঁপে, করলা, আলু, টমেটো এর কয়েকটি বা যেকোনো একটি রাখলে চলবে। পাকস্থলীতে উত্তেজনা ও অস্বস্তি সৃষ্টি করে- এমন কোনো খাবার খাওয়া উচিত নয়। এবার ইফতার প্রসঙ্গ। ইফতার পর্বে উত্তেজক খাবার একেবারেই বর্জন করতে হবে। ইফতার শুরু করবেন শরবত দিয়ে। তবে শরবতে কৃত্রিম রঙ মেশাবেন না। এ রঙে থাকে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান। বাজারে অনেক কৃত্রিম রঙ মেশানো শরবত পাওয়া যায়, যেসব অবশ্যই পরিহার করবেন। যেকোনো একটি ফল খাবেন ইফতারে। ফল থাকে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ যা আপনাকে স্বাস্থ্য বিপর্যয় থেকে রক্ষা করবে। বুট, ছোলা ও মুড়ি খেতে পারেন এ সময়ে। দই, চিড়া ও কলা খেলে ভাল। তবে প্রচলিত তেলে ভাজা খাবার স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে। তা ছাড়া খাবারগুলো পুরনো তেলে ভাজা হলে ক্ষতির পরিমাণটা বেড়ে যায়। তেল বারবার গরম করলে ক্ষতিকর পলিনিউক্লিয়ার হাইড্রোকার্বন তৈরি হয় যার মধ্যে থাকে বেনজোপাইরিন। এটা ক্যান্সার সৃষ্টি করে। সারাদিন না খেয়ে থাকার ফলে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি দেখা দেয়। খেঁজুর সেই ঘাটতি পূরণে সাহায্য করে। সেহরি ও ইফতারে প্রচুর পানি পান করবেন। পানি আপনার শরীরের কোষগুলোকে সজীব রাখবে।

যারা বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন তাদের জন্য পরামর্শ

পেপটিক আলসারের রোগী যারা বিভিন্ন অসুখে ভুগছেন তারাও রোজা রাখতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের খাবারের বেলায় কিছুটা সতর্ক হতে হবে। সেহরি ও ইফতারে বাছাই করা খাবার খেতে হবে। তৈলাক্ত খাবার বাদ দিয়ে সহজপাচ্য খাবার খেলে এসিড নিঃসরণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে এবং স্বাস্থ্যগত কোনো অসুবিধা হবে না।

ডায়াবেটিসের রোগী অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখতে হবে। যারা ইনসুলিন নিচ্ছেন, রোজা তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী এদের রোজা না রাখাই ভাল। কিন্তু যারা ইনসুলিন নিচ্ছেন না তারা রোজা রাখতে পারেন। তবে রোজা রাখার সময় অনেকের হাইপোগাইসেমিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সে ক্ষেত্রে রোজা রাখার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে আপনার চিকিৎসাপত্র, খাবার ও ব্যায়ামের ব্যাপারটা ঠিক করে নেবেন। এ সময়ে দৈনন্দিন কাজ কম করতে হবে।

রোজা রাখলে হৃদরোগীদের সাধারণ অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তা ছাড়া এ সময়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রণে রাখার একটা সুযোগ তৈরি হয় বলে তাদের রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রাও ঠিক থাকে।

রোজায় পানি শূন্যতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যদি সেহরি ও ইফতারে পর্যাপ্ত পানি না খাওয়া হয়। সেহরি ও ইফতারে পর্যাপ্ত পানির সঙ্গে শাকসবজি ও ফলমূল খাবেন। তাহলে পানিশূন্যতার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও রেহাই পাওয়া যাবে। যারা ওষুধ খাচ্ছেন তাদের জন্য রোজার সময়ে ওষুধ কোনো সমস্যা নয়। চিকিৎসককে বলে ওষুধের মাত্রা ঠিক করে নিলেই হলো। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীকে জীবন বাঁচানোর স্বার্থে রোজা রাখার পরিকল্পনা বাতিল করতে হবে। অন্য ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ওষুধের মাত্রা ঠিক করে নিলে রোজা রাখতে কোনো অসুবিধার সৃষ্টি হবে না। রোজার সময় আরো একটি স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেয়। সেটি হলো পেটে ব্যথা। বিভিন্ন হাসপাতালে দেখা গেছে, রোজার সময় ইফতারের পরপরই অধিকাংশ রোগী ভর্তি হন পেটে তীব্র ব্যথা নিয়ে। অনেকের অন্ত্র ফুটো হয়ে যায় এবং জরুরি অপারেশনের প্রয়োজন হয়। ব্যথানাশক ওষুধ খাবার কারণে পেটে তীব্র ব্যথা এবং অন্ত্র ফুটো হয়ে যাওয়া সমস্যার সৃষ্টি হয়। মূলত মাথাব্যথা করলে ইফতারের সঙ্গে সঙ্গেই ব্যথানাশক ওষুুধ যেমন এসপিরিন বা ডাইক্লোফেনাক সোডিয়াম খাওয়া উচিত নয়। কিছু খেয়ে তারপর এসব ওষুধ খেতে হবে। যাদের পেপটিক আলসারের ইতিহাস আছে, তারা এন্টাসিড ও রেনিটিডিন খেয়ে এসব ওষুধ খাবেন। সুতরাং একটু সতর্কতা ও নিয়ম পালন করলে রোজা রাখা কোনো সমস্যা নয়। রোজার মাধ্যমে আপনি পেতে পারেন সুন্দর, স্বাস্থ্যসম্মত জীবন।

০ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল

জেনারেল ও ল্যাপারোস্কপিক সার্জন।

চেম্বার : কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬ এলিফ্যান্ট রোড ঢাকা। ফোন : ০১৭১৬২৮৮৮৫৫।

পেটের গোলমালে কলা উপকারী

আমাদের অনেকেরই হয়ত জানা নেই, কলা পেটফাঁপা বা স্টমাক আপসেট থেকে রক্ষা করতে পারে। যদিও কথাটি অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইবেন না কিন্তু সাম্প্রতিককালের গবেষণায় এমনটিই দেখা গেছে। গবেষকরা বলছেন, কলা পাকস্থলী থেকে মিউকাস এবং এক ধরনের কোষের উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে যা পাকস্থলীর ঝিল্লি এবং এসিডের মাঝে পর্দার মতো বাঁধার কাজ করে। উল্লেখ্য, এই এসিডই বুকজ্বালা (হার্টবার্ন) ও পেটফাঁপার (স্টমাক আপসেট) জন্য দায়ী। তবে সবক্ষেত্রেই পেটফাঁপা এবং বুকজ্বালা দূর করতে কলা কার্যকর হবে না। বিশেষ করে পেটফাঁপাজনিত কারণে কেউ বমি করতে থাকলে করা এবং কলার মতো অন্যকোন শক্ত খাবারই তখন দেখা উচিত হবে না। এসব অবস্থায় তরল খাবারই রোগীকে দেয়া উচিত। তরল খাবারের পর শক্ত খাবার শুরু করতে চাইলে তা কিছুটা মৃদু জাতের হওয়াই বাঞ্চনীয়। কলাকে সেই মৃদু খাবার হিসেবেই গণ্য করা হয়। বদহজমসহ পেটের গোলমালের ক্ষেত্রে শিশুদের জন্য উপযোগী ব্রাট (বিআরএটি) খাবারেরও অন্যতম উপাদন হচ্ছে কলা। ‘ব্রাট’ হচ্ছে বানানা, রাইস সিরিয়্যাল, আপেল সস ও টোস্ট-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। অনেক চিকিৎসকই শিশুদের পেটের গোলমালের পর বিশেষ করে ডায়রিয়ার পর এই ‘ব্রাট’ খাবার শিশুকে খাওয়াতে পছন্দ করেন।

অলিভ অয়েলের নানা গুণ

অলিভ অয়েলের রয়েছে হরেক গুণ। ঐতিহাসিকভাবে এটি শান্তি ও সৌহার্দ্যের প্রতীক। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এর কদর স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য হিসাবে। এসব ছাড়াও স্বাস্থ্য পরিচর্যা, ঘর- গৃহস্থালীর জিনিসপত্র পরিষ্কার করার কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে অলিভ অয়েল।

অলিভ অয়েলে রয়েছে উপকারী কলেস্টেরাল এইচডিএল (হাই ডেনসিটি লাইপ্রোটিন)। যা পরিপাক প্রক্রিয়ায়-সহায়ক ভূমিকা রাখে। গলস্টোন ও আলসার প্রতিরোধের পাশাপাশি-পুষ্টির যোগান দেয়। এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকায় কাজ করে ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসাবে।

ঘুমের ঘোরে নাক ডাকার প্রবণতা আছে অনেকেরই। এজন্য -শয্যাসঙ্গীর পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যরাও মহা বিরক্ত। বহু চিকিৎসা গ্রহণ করেও ফল মেলেনি। তাদের জন্য অলিভ অয়েল দিতে পারে শান্তির পরশ। বিশেষজ্ঞের অভিমত, ঘুমুতে যাওয়ার আগে সামান্য পরিমাণ অলিভ অয়েল মুখে নিয়ে চেটে খেলে গলার পেশীতে এটি লুব্রিকেটের ভূমিকা পালন করে। ফলে নাক ডাকার প্রবণতা অনেকটাই কমে যায়। যাদের চুল পড়ার প্রবণতা বেশি। তাদের জন্য অলিভ অয়েল আনন্দের বার্তা বয়ে এনেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিষ্প্রাণ চুলকে সজীব করতে অলিভ অয়েলের জুড়ি নেই। বিশেষ করে শীতের দিনে শুষ্কতার কারণে চুলের রুক্ষèভাব বেশি পরিলক্ষিত হয়। একই কারণে চুল ভেঙ্গে যায়। কোন কোন ক্ষেত্রে যায় পড়ে। তাই- চুল পড়া বন্ধ করতে এবং বিদ্যমান চুলকে আরো উজ্জ্বল রাখতে সপ্তাহে অন্তত দুইবার পরিমাণমত অলিভ অয়েল চুলে মেখে আধ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করলে নির্জীব চুল ও প্রাণ ফিরে পায়। বন্ধ হয় চুল পড়া। ত্বক পরিষ্কারে অলিভ অয়েলের গুরুত্ব অপরিসীম। শত শত বছর ধরে লোকজন ত্বক পরিচর্যায় ব্যবহার করে আসছে অলিভ অয়েল। ময়েশ্চারাইজার হিসাবেও এর ব্যবহার সর্বজনবিদিত অলিভ অয়েল মাখলে ত্বকের জলীয় উপাদান বাষ্প আকারে বের হওয়া বন্ধ হয়। ফলে ত্বক থাকে মোলায়েম। অলিভ অয়েলের আরো-উপকারী গুণ রয়েছে। যেমন- কাঠের আসবাবপত্রের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে এটি চমৎকার কাজ করে।

জমি কিনতে জেনে রাখুন

একখন্ড জমি কেনার সামর্থ্য থাকলেও সব জায়গায় জমি কেনা, বিশেষ করে শহর, উপশহর বা আশপাশের এলাকায় জমি কেনা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। জমি ক্রয়-বিক্রয়ে দালাল-টাউট-বাটপারদের প্রতারণা পদে পদে। এদের রসাল কথা, বেশি দামি জমি কম দামে কিনে দেওয়ার সুযোগ হাতছাড়া না করার মিথ্যা তাড়না ইত্যাদি রকমের বিভ্রান্তিতে পড়ে জমি ক্রয় করতে গিয়ে ক্রেতারা প্রায়ই প্রবঞ্চিত হন। অনেক সময় জমি কিনে নামজারি করে দখল নিতে গিয়ে ক্রেতাকে নাজেহাল পর্যন্ত হতে হয়। ফলে তখন মামলা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না। অথচ জমি কেনার সময় যদি কিছু বিষয়ের প্রতি ভালোভাবে নজর থাকে, তাহলে খুব সহজেই জমিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।

ভুমি-সমস্যা এড়াতে প্রয়োজনীয় পরামর্শ
১. জমি কেনার সময় ক্রেতাকে অবশ্যই জরিপের মাধ্যমে প্রণীত খতিয়ান ও নকশা যাচাই করতে হবে।
২. জমির তফসিল (মৌজা, খতিয়ান ও দাগ নম্বর, দাগে জমির পরিমাণ) জানতে হবে।
৩. প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিএস, এসএ, আরএসসহ সর্বশেষ জরিপের পরচা দেখতে হবে।
৪. বিক্রেতা ক্রয়সুত্রে মালিক হলে তাঁর মালিকানার যোগসুত্র সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে।
৫. বিক্রেতা উত্তরাধিকারসুত্রে মালিক হলে পূর্বমালিকানা ক্রমান্বয়ে মেলাতে হবে।
৬. উত্তরাধিকারসুত্রের জমির ক্ষেত্রে বণ্টননামা (ফারায়েজ) দেখতে হবে।
৭. জরিপ চলমান এলাকায় জমি কেনার সময় বিক্রেতার মাঠপরচা যাচাই করে দেখতে হবে। মাঠপরচার মন্তব্য কলামে কিছু লেখা আছে কি না তা ভালো করে দেখতে হবে। যেমন AD লেখা থাকলে বুঝতে হবে, অত্র খতিয়ানের বিরুদ্ধে তসদিক পর্যায়ে (Dispute in Attestation Stage) আপত্তি আছে। এ ক্ষেত্রে জরিপ অফিস বা ক্যাম্পে গিয়ে পরচাটির সর্বশেষ অবস্থা জেনে নিতে হবে।
৮. বিক্রেতার দেওয়া দলিল, ভায়া দলিল, খতিয়ান, পরচা ইত্যাদি কাগজপত্র সংশ্লিষ্ট ভুমি অফিসে গিয়ে স্বত্বলিপির (২ নম্বর রেজিস্টার) সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে হবে।
৯. নামজারি পরচা, ডিসিআর খাজনার দাখিলা (রসিদ) যাচাই করে দেখতে হবে। বকেয়া খাজনাসহ জমি কিনলে বকেয়া খাজনা পরিশোধের সব দায় ক্রেতাকে বহন করতে হবে।
১০. জমিটি সার্টিফিকেট মামলাভুক্ত কি না তা সংশ্লিষ্ট ভুমি অফিস থেকে জেনে নিতে হবে। কারণ সার্টিফিকেট মামলাভুক্ত সম্পত্তি বিক্রিযোগ্য নয়।
১১. জমিটি খাস, পরিত্যক্ত বা অর্পিত (ভিপি) কি না কিংবা অধিগ্রহণকৃত বা অধিগ্রহণের জন্য নোটিশকৃত কি না, তা ইউনিয়ন ও উপজেলা ভুমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের অফিসের এলএ শাখা থেকে জেনে নিতে হবে।
১২. বিবেচ্য জমি কোনো আদালতে মোকদ্দমাভুক্ত কি না তা জেনে নিতে হবে।
১৩. জমিটি সরেজমিনে দেখে এর অবস্থান নকশার সঙ্গে মিলিয়ে বিক্রেতার দখল নিশ্চিত হতে হবে।
১৪. সরকার-নির্ধারিত ফি দিয়ে স্থানীয় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এবং জেলা রেজিস্ট্রারের অফিসে তল্লাশি দিয়ে বিবেচ্য জমির হেবা, এওয়াজ ও বেচাকেনার সর্বশেষ তথ্য জেনে নিতে হবে।
১৫. প্রস্তাবিত জমিটি ঋণের দায়ে কোনো ব্যাংক বা সংস্থার কাছে দায়বদ্ধ কি না তা নিশ্চিত হতে হবে।
১৬. প্রস্তাবিত জমিতে যাতায়াতের রাস্তা আছে কি না তাও দেখতে হবে।
১৭. কোনো কোনো এলাকার জমিতে সরকারি কিছু বিধিনিষেধ থাকে; যেমন ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের স্বার্থে গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার আড়াইশপ্রসাদ, বনখরিয়া, বিশিয়া কুড়িবাড়ি, বারইপাড়া, উত্তর সালনা, বাউপাড়া, বাহাদুরপুর ও মোহনা ভবানীপুর মৌজাসমূহের ব্যক্তিমালিকানাধীন বা সরকারি জমিতে শিল্প, কারখানা, পাকা ইমারতসহ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, কৃষি, দুগ্ধ ও মৎস্য খামার ইত্যাদি স্থাপন না করার জন্য একটি পরিপত্র জারি করা আছে। এসব বিষয়ে আগেই খোঁজখবর নিয়ে জমি কেনা উচিত।
১৮. মালিক কাউকে আমমোক্তারনামা বা অ্যাটর্নি নিয়োগ করেছেন কি না তাও দেখতে হবে।
১৯. জমির কাগজপত্রের শুদ্ধতা যাচাইয়ের দায়িত্ব যেকোনো আইনজীবীকে দিয়ে করালে তাঁর কাছ থেকে নিজে জমির অবস্থাবিষয়ক তথ্য ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে।
লেখক "" আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট।

মাথা ঘোরার কারণ ও প্রতিকার

মাথা ঘোরা কোনো মজার অভিজ্ঞতা নয়। যতক্ষণ না মাথা ঘোরা চলে যায়, ততক্ষণ এক ভয়ঙ্কর অসুস্খতা গ্রাস করে থাকে। বিভিন্ন কারণে মাথা ঘুরতে পারে। মাথা ঘোরার সম্ভাব্য কারণের মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত পরিশ্রম, অন্ত:কর্ণের রক্তবাহী নালীর অস্বাভাবিকতা, অন্ত:কর্ণের প্রদাহ, অস্বাভাবিক দৃষ্টিগত সমস্যা। মাথা ঘোরা দীর্ঘস্খায়ী হওয়ার কারণ হলো­ মধ্য কানের প্রদাহ, মেনিয়ার’স রোগ, অ্যাকোয়াসটিক নিউরোমা আর যদি কানের উপসর্গ না থাকে এবং অঙ্গবিন্যাসজনিত সমস্যা থাকে, তাহলে সম্ভাব্য কারণ হলো অঙ্গভঙ্গিজনিত মাথা ঘোরা, সার্ভাইক্যান স্পন্ডাইলোসিস। আবার যদি কানের উপসর্গ না থাকে এবং অঙ্গবিন্যাসজনিত সমস্যাও না থাকে, তাহলে সম্ভাব্য কারণ হচ্ছে বিভিন্ন ওষুধ সেবন, দুশ্চিন্তা, ঘাড়ে আঘাত, কপালের এক পাশে ব্যথা ও নারীদের ক্ষেত্রে রজ:নিবৃতি প্রভৃতি কারণ। এসব লক্ষণ যাচাই করে কিছু পরীক্ষার মাধ্যমে মাথা ঘোরার সঠিক কারণ নির্ণয় করা যায়। এরপর চিকিৎসার মাধ্যমে মাথা ঘোরা থেকে আক্রান্ত ব্যক্তি মুক্তি পেতে পারেন।

System Speed Improve করার ১০ টি টিপস

1. আপনার পিসি পুরো বুট না হওয়া পযর্ন্ত কোন application open করবেননা।

2. যে কোন application close করার পর আপনার desktop F5 চেপে refresh করে নিন, যা আপনার পিসির RAM হতে unused files remove করবে।

3.ডেস্কটপ wallpaper হিসেবে very large file size image ব্যবহার হতে বিরত থাকুন।

4. ডেস্কটপে অতিরিক্ত shortcuts রাখবেননা। আপনি জানেন কি ডেস্কটপে ব্যবহৃত প্রতিটি shortcut up to 500 bytes of RAM ব্যবহার করে।

5. প্রতিদিন আপনার ডেস্কটপের recycle bin Empty করে রাখুন। (The files are not really deleted from your hard drive until you empty the recycle bin.)

6. প্রতিদিন আপনার temporary internet এবং অন্যান্য Temp, recent file গুলো Delete করুন। এর জন্য আপনাকে যা করতে হবে –
Winkey+r – %temp%- select all – shift+del- ok
Winkey+r – temp- select all – shift+del- ok
Winkey+r – prefetch- select all – shift+del- ok
Winkey+r – recent- select all – shift+del- ok

7. প্রতি সপ্তাহ একবার আপনার hard drive Defragment এবং disk cleanup করুন।
(1. click start – all programs – accessori – system utility – Defragment drive utility
2. click start – all programs – accessori – disk cleanup)

9.যে কোন Software install করার সময় tray icon disable করুন।
(The tray icons use up available RAM, and also slow down the booting of your PC. Also disable the option of starting the application automatically when the PC boots. You can disable these options later on also from the Tools or preferences menu in your application.)

8. আপনার hard disk এ দুইটি partition করুন এবং সেকেন্ড পার্টিশনে Install করুন সব large Softwares (like PSP, Photoshop, 3DS Max etc). Windows এর জন্য আপনার C Drive যথাসম্ভব খালি রাখুন যাতে Windows RAM full হওয়ার পর আপনার C Drive কে virtual memory হিসেবে use করতে পারে।

10. ধুলাবালি হতে আপনার PC কে Protect করুন। ধুলাবালি আপনার CPU cooling fan কে jam এবং slow করে এতে CPU অতিরিক্ত গরম হয় এবং এর processing speed কমে যায়।ধুলাবালি পরিষ্কার করার জন্য compressed air Use করুন, কখনো vacuum use করবেননা।

টিউন করেছেন: ridhoy

কী করে বুঝবেন স্তন ক্যান্সার?

সারা বিশ্বে মহিলাদের স্তন বা ব্রেষ্ট ক্যাসারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। অথচ সময়মত ব্যবস্হা নিলে এ রোগের ভয়াবহ থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। সাধারণত ৩০ বছরের আগে এই রোগ কম হয়। বেশিরভাগ রোগী বুকে চাকা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়। বুকে চাকা সেই সাথে কিছু কিছু রোগী ব্যথার কথাও বলে থাকে। কখনো কখনো বুকে চাকা এবং বগলেও চাকা নিয়ে রোগী আসতে পারে। নিপল ডিসচার্জ এবং নিপল ভেতরের দিকে ঢুকে যাওয়াও এ রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু রোগী বুকে ফুলকপির মতো ঘা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসে। অনেক সময় যে বুকে ব্যথা, সেদিকের হাত ফোলা নিয়েও আসতে পারে। এগুলো ছাড়া ব্রেষ্ট ক্যাসার দুরবর্তী কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে এমন উপসর্গ নিয়ে আসে; যেমনঃ হাড়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও জন্ডিস ইত্যাদি।

কারণঃ
–জেনিটিক কারণ, যেমন-মা-খালা থাকলে সন্তানদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
–অবিবাহিত বা সন্তানহীনা মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যাসারের প্রকোপ বেশি।
–একইভাবে যারা সন্তানকে কখনো স্তন্য পান করাননি, তাদের ব্রেষ্ট ক্যাসার বেশি হয়।
–৩০ বছর পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন, তাদের স্তন ক্যাসারের প্রবণতা একজন কমবয়সী মা হওয়া মহিলার থেকে অনেক বেশি।
–বয়স যত বাড়ে, স্তন ক্যাসারের ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পায়।
–অল্প সময়ে বাচ্চা নিলে, দেরিতে মাসিক শুরু হলে, তাড়াতাড়ি মাসিক বন্ধ হলে স্তন ক্যাসারের প্রকোপ বেড়ে যায়।
–একাধারে অনেক দিন জন্মনিরোধক বড়ি খেলেও স্তন ক্যাসার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

উপরোক্ত কারণগুলো ব্রেষ্ট ক্যাসারে সহায়ক ভুমিকা পালন করে। তবে এগুলোই একমাত্র কারণ নয়।

রোগ নির্ণয়ঃ
–মেমোগ্রাম বা স্তনের বিশেষ ধরনের এক্স-রে।
–স্তনের আলট্রাসনোগ্রাম।
–চাকা বা টিউমার থেকে রস নিয়ে পরীক্ষা করলে এই রোগ ধরা পড়বে।

ব্রেষ্ট ক্যান্সারে চিকিৎসাঃ
সম্ভব হলে সার্জারি করাই উত্তম। তাছাড়া কেমো থেরাপি, রেডিও থেরাপি, হরমোন থেরাপি ইত্যাদি।

প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়
–৩০ বছরের বেশি বয়স হলে নিজ নিজ ব্রেষ্ট পরীক্ষা করতে হবে কোনো চাকা পাওয়া যায় কিনা। চাকা পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
–বয়স ৫০-এর উপরে হলে বছরে একবার মেমোগ্রাম করতে হবে।
–কোনো প্রকার সন্দেহ হলে ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করতে হবে।

রোগ প্রতিরোধের উপায়
যেহেতু রোগটির নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা যায়নি, তাই এই রোগ এড়ানোর জন্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চলার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়ঃ

–৩০ বছর বয়স থেকে নিজ নিজ ব্রেষ্ট পরীক্ষা করুন।
–রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে সে ক্ষেত্রে মেমোগ্রাফি করুন। যেমনঃ ফ্যামিলিতে ব্রেষ্ট ক্যাসার থাকলে।
–৩০ বছর বয়সের মধ্যে প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুন।
–সন্তানকে বুকের দুধ পান করান।
–টাটকা শাক-সবজি ও ফল খান।
–সন্দেহ হলে ক্যাসার সার্জনের শরণাপন্ন হন।

মনে রাখবেন প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নিরূপণ হলে এবং চিকিৎসা করালে আপনি অনেকদিন সুস্হ থাকবেন। সার্জারি করার সময় টিউমারটি বগলে লসিকা গ্রন্হিসহ অপসারণ করলে এই রোগ পুনরায় দেখা দেয়ার সম্ভাবনা খুব কম। অসম্পুর্ণভাবে টিউমার অপসারণ করলে এই রোগ আবার হতে পারে। বর্তমানে অপারেশন টেকনোলজি অনেক উন্নতি লাভ করেছে; যার ফলে এই রোগের চিকিৎসা এখন বাংলাদেশেই সম্ভব।