কিডনি রোগ : জেনে নিন প্রতিরোধের উপায়
কিডনি হলো শরীরের পরিশোধনাগার। প্রতিদিন কিডনি প্রায় ২০০ লিটার রক্ত শোধন করে দুই লিটার রেচন পদার্থ মূত্র থলিতে জমা করে, যা মূত্রাকারে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিডনি তার ছাঁকনির মাধ্যমে রক্তকে পরিশোধিত করে অপ্রয়োজনীয় দূষিত পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে বের করে দিয়ে আমাদের শরীরকে সুস্খ রাখে। যদি কোনো কারণে কিডনি রক্ত থেকে সেই দূষিত পদার্থ অপসারণ করতে না পারে, তবেই শরীর নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
একনজরে কিডনির ১০টি কাজ :
১। রক্ত পরিশ্রুত করে দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বের করে দেয়া।
২। শরীরে পানির সমতা বজায় রাখা।
৩। রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
৪। হাড় ও মজ্জাকে সবল রাখা।
৫। লোহিত রক্তকণিকা তৈরির জন্য হরমোন উৎপাদন করা।
৬। রক্তে খনিজ পদার্থগুলোর ভারসাম্য রক্ষা করা।
৭। ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য রক্ষা করা।
৮। রক্ত থেকে ওষুধ অপসারণ করা (সেবনকৃত ওষুধ)।
৯। রক্তে এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা।
১০। পুষ্টি পুনরুদ্ধার এবং সেগুলো পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা।
কিডনি রোগের লক্ষণ : ২০ শতাংশ কার্যক্ষম একটি মাত্র কিডনিই একজন মানুষকে সুস্খ রাখতে সক্ষম। কিডনি রোগের প্রধান প্রধান লক্ষণগুলো :
ক) ব্যথা : সাধারণত খুব মৃদু ব্যথা পেটের পেছনে মেরুদণ্ডের দু’পাশে এবং পেটের মাঝখানে নাভির কাছে। কিডনি পাথরের বেলায় ব্যথা তীব্র হতে পারে।
খ) প্রায়ই মাথা ব্যথা।
গ) বমি-বমিভাব এবং বমি করা।
ঘ) প্রস্রাব করতে ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া।
ঙ) বারবার প্রস্রাব হওয়া। অথবা হঠাৎ প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।
চ) চুলকানি/খোস-পাঁচড়া।
ছ) ক্ষুধা না পাওয়া ও ক্লান্তিবোধ করা।
জ) মুখ, বিশেষত চোখের নিচে, হাত, পা অথবা সর্বশরীর ফুলে যাওয়া।
ঝ) উচ্চ রক্তচাপ ও রক্ত শূন্যতা।
রোগ নির্ণয় : যেহেতু কিডনি রোগ অনেক প্রকার, তাই লক্ষণও ভিন্ন ভিন্ন। প্রথমাবস্খায় কিডনি রোগে প্রায়ই কোনো লক্ষণ থাকে না বা সামান্য থাকে। কখনো কখনো কোনো লক্ষণ প্রকাশের আগেই রোগীর কিডনি ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষার দ্বারা কিডনির রুটিন চেকআপ জরুরি। প্রস্রাবের পরীক্ষা, রক্তের বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসাউন্ড এবং প্রয়োজনে বায়োপসি দ্বারা কিডনি রোগ নির্ণয় করা যায়।
কিডনি রোগের জটিলতা : কিডনির রোগ মানে কিডনির কাজ ব্যাহত হওয়া। যার ফলে যে সব রোগ দেখা দিতে পারে সেগুলো হচ্ছে : ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, নেফন্সাইটিস, সংক্রামণ, পাথর হওয়া, আঘাত প্রাপ্তি ইত্যাদি।
কিডনি রোগের প্রতিরোধ : ক) প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা। খ) নিজেকে কর্মতৎপর রাখুন। নিজস্ব পেশার কাজ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা, দৌড়ান বা সাইকেল চালানোর অভ্যাস করা। গ) গলায় প্রদাহ বা খোস-পাঁচড়া হলে সময় মতো ভালোভাবে চিকিৎসা করানো। ঘ) ধূমপান না করা। ধূমপান কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া ধূমপান কিডনিতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। ঙ) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। উচ্চরক্তচাপ কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অন্যদিকে ক্রলিক কিডনি রোগের উচ্চরক্তচাপ একটি প্রধান লক্ষণ। চ) ব্যথা বা বাতের ব্যথার ওষুধ একটানা বেশিদিন ব্যবহার না করা। এ জন্য ব্যথা উপশমে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। ছ) ডায়বেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। জ) শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ঝ) কিডনি পরীক্ষা করুন যদি আপনার পরিবারে কারো কিডনি রোগের ইতিহাস থাকে, তবে আপনার কিডনি পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
কিডনি রোগের চিকিৎসা : কোথায় যাবেন?
কিডনি রোগের চিকিৎসা বেশ জটিল। কী ধরনের রোগ, প্রকৃত কারণ এবং রোগের স্খায়ীত্বের ওপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা। অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসের শরণাপন্ন হয়ে ভালোভাবে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হবে। আধুনিক অ্যালোপ্যাথিতে মেডিসিন এবং ডায়ালিসিস পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়। শুরুতেই রোগ ধরা পড়া রোগী স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারেন। ডায়ালিসিসের মাধ্যমে রোগী অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতেও কিডনি রোগের ভালো চিকিৎসা রয়েছে। যেমন হোমিওপ্যাথিতে কিডনি রোগের উন্নত চিকিৎসা রয়েছে। এ জন্য এ বিষয়ে একজন বিজ্ঞ, উচ্চশিক্ষিত, প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের সাহায্য নিতে পারেন। ইউনানী, আয়ুর্বেদী ও হারবাল পদ্ধতিতেও কিডনি রোগের ভালো চিকিৎসা সম্ভব। এসব চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর একজন বিজ্ঞ চিকিৎসকই শুধু আপনাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারেন। এ জন্য চিকিৎসক বাছাইয়ে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ।
রোড নং-১১, বাড়ি নং-৩৮, নিকুঞ্জ-০২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯। হেলপ লাইন : ০৬৬৬-২৬২৯৬০৮ (১২-২টা), ০১৭১২৮১৭১৪৪।
কিডনিতে স্টোন বা পাথর হওয়া
1. Zyqî gøaw ÌRËM IVw - owcwkYZ mkyËkk GKewËm ÂkØ pt Ggv e^wRËkk ÌeQd ÌaËK ÂkØ pËt Ìj#dwËŠk xbËK cwxgZ pËZ awËK„
2. gwk gwk eoÛwËgk ZwxMb AdÖhg Kkw ÈË£I eoÛwg Kkwk oit ÌKgl owiwdø exkiwY eoÛwgB xdMêZ pt Zwk Ìgxm pt dw, xKvgw GËKgwËkB eoÛwg dw pItw„
3. ËaËi ÌaËi eoÛwg xdMêZ pItw|
4. eÖkØnËbk ÌqË¢, xmËmí Ggv A¡ËKwËn gøaw pItw|
5. k£ßwh xKvgw Mws eoÛwg|
6. xgZÚnäw Ggv gxi|
xKWxdËZ Adø ÌKwd ÌkwM pËl gw qZ pËl ÌoUwk DeoMê pËZ ewËk:
1. Ròk|
2. eoÛwËg RòwlwËewrw|
3. Ggv ÌNwlwËU eoÛwg„
Ky Kkw DxPZ
1. jxb Awexd xKWxdËZ ewak pgwk AoÖËL Aw¢ßwìæ pËt awËKd ÌoËqË¢ eÞPÖk exkiwY ewxd ewd KkØd, xbËd AìæZ AwU ÌaËK bm Möwo„ eÞP×k ewxd ewd KkËl ÌoUw xKWxdk ewak†Ëlw cÖËt xdMêZ KËk xbËZ oqi pËg Ggv Adøwdø ewak pgwk oÖËjwM dÄ KkËg„
2. gøaw ÌaËK ÌkpwB ewgwk RËdø gøaw xdkwitKwky ÌKwd InÖc xWoËeëowxk ÌaËK xKËd Ëogd KkËZ ewËkd, ZËg AgmøB Ìo InÖcxU Ww£ßwxk ekwimê AdÖjwty Ìogd KkËgd„
1. jxb Awedwk mkyËkk GKxbËK ZygÛ gøaw ÌRËM IËV, Ggv ÌoUw GK RwtMw ÌaËK Adø xbËK eÞgwxpZ pt, Ìjid Awedwk xeËVk xbËK xKvgw DbËkk gw ZlËeËUk xbËK„
2. jxb eoÛwËg RòwlwËewrw gw KÄ pt„
3. jxb eoÛwËgk owËa k£ß xdMêZ pt
4. jxb GB lqY†Ëlwk owËa Awgwk RòkI awËK„
KyhwËg eÞxZËkwc KkËgd
xKWxdËZ eÖd:eÖd: ewak pËZ ewËk, Awk ZwB jwËZ KËk ewak RdôwËZ dw ewËk ÌoRËdø xdËiíw£ß ebËqe†Ëlw MÞpY KkØd:
1. GKxbËd AìæZ AwU Möwo ewxd ewd KkØd- MkËik xbËd AwkI Ìgxm ewd KkØd„
2. Ggv Ww£ßwËkk KwËQ InÖËck xgnËt ekwimê xdd Ggv Awedwk Lwbø ZwxlKwt xK exkgZêd owcd Kkw jwt Ìo xgnËt Awlwe KkØd„
এক নজরে সৌদি আরব
২। রাজধানী ও বৃহত্তম শহর : রিয়াদ, জনসংখ্যা ৩৭,২৪,১০০ জন (২০০৩)। অন্যান্য বড় শহর : জেদ্দা, জনসংখ্যা ২৭,৪৫,০০০ জন, মক্কা জনসংখ্যা ১৬,১৪,৮০০ জন।
৩। সরকার পদ্ধতি : রাজতন্ত্র, রাষ্ট্রপ্রধান পবিত্র মসজিদদ্বয়ের খাদেম বাদশাহ আবুদল্লাহ বিন আবদুল আজিজ।
৪। আয়তন : ২২,৪০,০০০ বর্গকিলোমিটার, ৮,২৯,৯৯৫ বর্গমাইল।
৫। ভাষা : আরবি, ইংরেজিরও প্রচলন আছে।
৬। জনসংখ্যা : ২,৮৬,৮৬,৬৩৩, জন্ম বৃদ্ধির হার ১.৮%, জন্মহার ২৮.৫/১০০০, শিশু মৃত্যুর হার ১১.৫/১০০০, গড় আয়ু ৭৬.৩, প্রতি বর্গমাইলে জনবসতির ঘনত্ব ৩৩ (২০০৯)।
৭। ধর্ম : ইসলাম, শতকরা ১০০% মুসলমান, ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন, মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর জন্মভূমি এবং ইসলামের দুই পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনা শরীফের অবস্খানের কারণে সৌদি আরব বিশ্বের সকল মুসলমানের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।
৮। পতাকা : পতাকার রঙ সবুজ। দৈর্ঘ্যরে দুই-তৃতীয়াংশ প্রস্খ ও এতে তাওহীদের মর্মবাণী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলূলাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকারের মাবুদ নেই মুহাম্মাদ সা: আল্লাহর রাসূল)। এ কালিমা আরবিতে উৎকীর্ণ রয়েছে। কালিমার নিচেই একটি কোষমুক্ত তরবারি অঙ্কিত রয়েছে যা দ্বারা ন্যায়বিচারকে বুঝানো হয়েছে। কালিমা তাইয়্যিবাহ উৎকীর্ণ থাকায় সৌদি আরবের পতাকা কখনো অর্ধনমিত করা হয় না। সবুজ রঙ ইসলামের ঐতিহ্যের দিকে ইঙ্গিতবহ।
৯। প্রতীক : আড়াআড়ি দু’টি তরবারির ওপর একটি খেজুরগাছ হলো সৌদি আরবের জাতীয় প্রতীক, খেজুর দ্বারা বোঝানো হয়েছে সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি, আর তরবারি দ্বারা ন্যায়বিচার, শক্তি ও নিরাপত্তা বুঝানো হয়েছে।
১০। আবহাওয়া : তাপমাত্রা ১২ থেকে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ওঠানামা করে, বৃষ্টিপাত বিক্ষিপ্ত ও অনিয়মিত। দীর্ঘস্খায়ী উষ্ম ও শুষ্ক গ্রীষ্মকাল। রাতে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে হন্সাস পায়। শীতকালে হালকা তুষারপাত হয়।
১১। জাতিসত্তা : আরব ৯০% আফেন্সা এশীয় ১০%।
১২। শিক্ষার হার : ৭৯% (২০০৩)।
১৩। মুদ্রা : রিয়াল, ১০০ হালালায় ১ রিয়াল (এক মার্কিন ডলার সমান ৩.৭৫ সৌদি রিয়াল)।
১৪। স্বাধীনতা : ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সব গোত্র ও প্রদেশগুলো একত্রীকরণ করা হয়। সে জন্য ২৩ সেপ্টেম্বরকেই সৌদি আরবের জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।
১৫। সংবিধান : ইসলামি আইন (শরিয়া) মোতাবেক ১৯৯৩ সালে সরকারের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কিত ধারা-উপধারা সংযোজন করা হয়েছে।
১৬। বিচার ব্যবস্খা ইসলামি আইন অনুযায়ী করা হয়। কিছু ধর্মনিরপেক্ষ ধারা-উপধারা সংযোজিত হয়েছে। বাণিজ্যিক বিষয়াদি বিশেষ কমিটি কর্তৃক নিষ্পত্তি করা হয়।
১৭। প্রশাসনিক এলাকা : সৌদি আরবে ১৩টি প্রশাসনিক এলাকা আছে।
(ক) রিয়াদ (খ) পবিত্র মদিনা (গ) পূর্বাঞ্চল (আশ শারকিয়া) (ঘ) তাবুক (ঙ) পবিত্র মক্কা (চ) আল কাছিম (ছ) আছির (জ) হাইল (ঝ) উত্তর সীমান্তবর্তী অঞ্চল (আল হুদুদ আশ শিমালিয়া) (ঞ) জাযান (ট) নাজরান (ঠ) আলবাহা (ড) আল জাওফ।
১৮। শিক্ষা : সৌদি আরব আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে। সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সকল নাগরিকের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা। বর্তমানে সৌদি আরবের বাজেটের ২৫% এ খাতের জন্য নির্ধারিত। বর্তমানে সৌদিতে চালু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : ক. বিশ্ববিদ্যালয়-২০টি, খ. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-২টি
গ. কলেজ-১০৫টি তন্মধ্যে মহিলা কলেজ ১১টি। ঘ. বিদ্যালয় ৩৫,০০০টি।
২০০৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে ৫৮,০০,০০০ ছাত্রছাত্রী শিক্ষারত তন্মধ্যে ৬,০৪,০০০ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৫৮,০০০ কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষারত ৮৮,০০০ ব্যক্তি গণস্বাক্ষরতা শিক্ষাকার্যক্রমের সাথে জড়িত। সকল পর্যায়ে শিক্ষকের সংখ্যা ৪,৫৭,৮৯৮ জন।
২০০৮ শিক্ষাবর্ষে সৌদি আরবের ৫০ হাজারের অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী বিদেশে শিক্ষারত অবস্খায় আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যাধুনিক শিক্ষা উপকরণ দ্বারা সুসজ্জিত ও শিক্ষার মান উন্নয়নে চেষ্টারত। বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর বেশ সংখ্যক ছাত্র সৌদি আরবে অধ্যয়ন করতে যায়।
১৯। স্বাস্খ্য : স্বাস্খ্য খাতে মাথাপিছু ব্যয় বিশ্বের সর্বোচ্চ। বিদেশীসহ সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্খা রয়েছে। বর্তমানে সৌদি আরবে-
হাসপাতাল সংখ্যা : ৩১৩টি, শয্যা সংখ্যা : ৪৫,৫০০, চিকিৎসকের সংখ্যা : ৩০,৭০০, প্রাথমিক স্বাস্খ্যকেন্দ্র : ৩,১৩০টি (২০০৮)।
২০। মোট জাতীয় আয় : বৃদ্ধির হার ১৩.৫% (২০০৮)।
২১। মাথাপিছু আয় : সৌদি রিয়াল ৩৫,০০০ (৯,৫০০ মার্কিন ডলার)।
২২। শিল্প : ২০০৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩০০ বিলিয়নের অধিক সৌদি রিয়াল ব্যয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩,৭৮৫টি শিল্প ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যাতে বর্তমানে ৩,৫০,০০০ জন শ্রমিক কর্মরত আছে।
২৩। কৃষি : মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৪৫ লাখ হেক্টর, চাষাবাদের আওতায় ২৯ লাখ হেক্টর, চারণভূমি ৪ কোটি ৮০ লাখ হেক্টর। প্রধান ফসল খেজুর যার বার্ষিক উৎপাদন ৫ লাখ টন। এক হিসাবে দেখা গেছে, মাথাপিছু ২৯ কেজি করে খেজুর উৎপাদিত হয়, বর্তমানে খেজুর প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য সারাদেশে ৪০টি কারখানা রয়েছে। তা ছাড়াও বছরে প্রায় ৪০ লাখ টন গম উৎপাদন হয়। পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্যশস্য আলু, ফল-ফলাদি ও শাকসবজি বিপুল পরিমানে উৎপাদি হয়।
২৪। বিদ্যুৎ : ষষ্ঠ উন্নয়ন পরিকল্পনা (১৯৯৬-২০০০) সাল শেষে দেশের ৯০ ভাগ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে।
২৫। পর্যটন : আকর্ষণীয় স্খানগুলোর মধ্যে রয়েছে : তায়েফ, আলশিফা, আলহাদা, আলবাহা, আবহা, খামিস মুশাইয়াত, আলনামাছ, আলআহসা।
এ ছাড়া পূর্বাঞ্চলে রয়েছে আকর্ষণীয় হাফ মুন বিচ, যা অর্ধচন্দ্রাকৃতীয় সমুদ্রসৈকত এবং বন্দরনগরী জেদ্দার অভূতপূর্ব প্রবাল প্রাচীর ও দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত।
২৬। খনিজ ও খনন : অশোধিত তেলের মোট মজুদ ২৬০ বিলিয়ন ব্যারেল, যা বিশ্বের মোট মজুদের এক-চতুর্থাংশ। মোট গ্যাসের মজুদ ১৮০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। সৌদি আরবে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ হিসেবে বিশ্বে চতুর্থ।
অন্যান্য খনিজদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে : খনিজ সিসা, নিকেল, দস্তা, সোনা, টিন ও টাংস্টোন, লোহা, তামা, ইউরেনিয়াম, ফসফেট, বক্সাইট, পটাশিয়াম, গ্রানাইট ও মার্বেল।
২৭। রফতানি : সৌদি আরব তার রফতানি আয়ের ৯০% তেল ও তেলজাত দ্রব্য থেকে অর্জন করে, যা তার জাতীয় বাজেটের ৭৫%। এ ছাড়াও পেট্রোরসায়ন, সার, ধাতব পদার্থ, গম, সিমেন্ট, নির্মাণসামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্য।
২০০৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে যে, সৌদি আরব এশিয়ান দেশের নিকট ৪৯.৯%, উত্তর আমেরিকা ১৫.৮%, পশ্চিম ইউরোপ ১৩.৩%, জিসিসি দেশসমূহে ৭.৪%, আরবলিগের দেশসমূহে ৫.৩% দ্রব্যাদি রফতানি করেছে।
২৮। আমদানি : বিদ্যুৎ সামগ্রী গৃহস্খালি আসবাবপত্র, বস্ত্র, মসলা, রেশমীদ্রব্য, কাটলারিজ, অলঙ্কার আমদানি করে। সৌদি আরব ২০০৬ সালে নিুোক্ত দেশগুলো থেকে বিভিন্ন জিনিস আমদানি করে-
আমেরিকা : ১৪.৫%, চায়না : ৮.৬%, জার্মানি : ৮.১%, জাপান : ৮.১%, ইতালি : ৪%, ব্রিটিশ : ৩.৯%, ফন্সান্স : ৩.৯%, উত্তর কোরিয়া : ৩.৮%, ভারত : ৩.৮%।
২৯। পরিবহন ও যোগাযোগ : পরিবহন খাতে সৌদি আরব খুবই সমৃদ্ধ।
বিমানবন্দর ২৬টি তন্মধ্যে চারটি আন্তর্জাতিক : ১) জেদ্দা, ২) রিয়াদ, ৩) দাম্মাম, ৪) মদিনা ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ২২টি। সৌদি আরবে বর্তমানে রেললাইন ১৩৯২ কিমি (২০০২)
মহাসড়ক ১,৫১,৪৭০ কিমি তন্মধ্যে পাকা সড়ক ৪৫.৫৯২, কাঁচা সড়ক ১০৫.৮৭৮ কিমি.
বন্দর ও পোতাশ্রয় : ১। দাম্মাম ২। আলজুবাইল ৩। দুবা ৪। জেদ্দা ৫। জিজান ৬। রাবিগ ৭। রাসআলখাফজি ৮। রাসআততাননুরা ৯। মিছহাব ১০। ইয়াম্বুল আলবাহর ১১। মদিনাতুল ইয়াম্বু আল ছিনাইয়াহ
৩০। গণমাধ্যম : বহুল প্রচারিত দৈনিক ১১টি : ১। আল রিয়া ২। আল জাজিরা ৩। ওকাজ ৪। আল ওয়াতন ৫। আল ইকতিছাদিয়া ৬। আমদিনা ৭। আল ইয়াওম ৮। আল রিয়াদিয়া ৯। আল রিয়াদা ১০। আশশারফ আওমাত ১১। আল হায়াত। এ ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্খ্য, ওষুধ, খেলাধুলা, নারী ও সামাজিক বিষয়ের ওপর অসংখ্য ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়।
রেডিও স্টেশন : এএম ৪৩, এফএম ৩১, সটওয়েব ২ (১৯৯৮)।
টিভি সম্প্রচার কেন্দ্র ১১৭ (১৯৯৭), ডাকঘর ৬৮৩, ট্যালেক্স ৩০,০০০ (২০০৮)। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারী সংস্খা ২২।
৩১। গণযোগাযোগ : ফিক্সড টেলিফোন : ৩.৯ মিলিয়ন (২০০২), মোবাইল ফোন : ২.৯ মিলিয়ন (২০০২) রেডিও সেট : ৬.২৫ মিলিয়ন (১৯৯৭), টেলিভিশন : ৫.০১ মিলিয়ন (২০০২), কম্পিউটার : ৪ মিলিয়ন, ইন্টারনেট ব্যবহারহারী : ১.৪৫৩ মিলিয়ন (২০০২)।
৩২। বাঁধ : মরুধূসর সৌদি আরব পানি সংরক্ষণের জন্য সারাদেশে ২৩০টি বাঁধ নির্মাণ করছে। যার দ্বারা ৮৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার সংরক্ষণ করা যায়। বিশা ও নাজকরান বাঁধ সর্ববৃহৎ।
৩৩। লবণ বিযুক্তকরণ প্রকল্প : সারাদেশে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের জন্য ২৭টি প্রকল্প বিদ্যমান, যা দৈনিক ৫৭ কোটি ৩০ লাখ ঘনমিটার পানি উৎপাদনে সক্ষম।
৩৪। ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্খান : প্রত্নতত্ত্ব সমৃদ্ধ এলাকা ১। মদিনা মুনাওয়ারা ২। আল-আউলা ৩। মাদায়েন সালেহ ৪। নাজরান ।
৩৫। দুই পবিত্র মসজিদের উন্নয়ন : ৭০ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল ব্যয়ে মক্কা ও মদিনায় ২টি পবিত্র মসজিদের উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে।
১৯৯৫ সালে সমাপ্ত ফাহদ সম্প্রসারণ প্রকল্পের ফলে ২টি মসজিদের আয়তন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার বর্গমিটার। ফলে একসঙ্গে প্রায় ৪০ লাখ লোক একত্রে নামাজ আদায় করতে পারে।
৩৬। ২০০৮ সালের মানবিক সাহায্য ফান্ডে সর্বোচ্চ ২০টি দাতা দেশগুলোর দানের জিডিপি’র হারে দেখা যায় যে, সৌদি আরব শীর্ষে রয়েছে। উহার সাহায্যের হার ০.১৯০৫%।
সৌদি আরব : উন্নয়নের এক শ’ বছর
সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ
উন্নয়নের পথে সৌদি আরবের অব্যাহত অগ্রগতি একটি প্রণিধানযোগ্য ও উল্লেখযোগ্য বাস্তবতা। গোটা বিষয়টি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পিত ও দক্ষতার সাথে বাস্তবায়িত। বাদশাহ আবদুল আজিজ ও তার উত্তরসূরি পুত্রদের সউদ, ফয়সল, খালিদ ও ফাহাদ সবাই একটি অতি সাধারণ নীতি অনুসরণ করে এসেছেন। তা হলো, জনগণই দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ এবং সরকারের কর্তব্য সব সেবা ও সুযোগ-সুবিধা তাদের জন্য সুলভ করে দেয়া যেন তারা নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। অতীতে হাজীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফি সৌদি আরবের পশ্চিম অংশ হিজাজের শাসকদের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস ছিল। ১৯২৬ সালে হিজাজ দখলে আসার পর বাদশাহ আবদুল আজিজ এই মূল নীতি তৈরি করলেন যে, সৌদি আরব হাজীদের সেবা করবে এবং সরকারি কার্যক্রম পরিচালনার ব্যয়ভার হাজীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা হবে না। সৌভাগ্যক্রমে, সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যে খননকাজের ফলে দেশটির পূর্বাঞ্চলে তেলের বিপুল মজুদ আবিষ্কৃত হয়। আবিষ্কৃত তেলের এই বিপুল মজুদ সৌদি আরবের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ করে। সৌদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনাবিদরা প্রাপ্ত তেলের এ বিপুল ভাণ্ডারকে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করলেন এবং একে উন্নয়নের অন্যান্য খাতের মূলধন হিসেবে কাজে লাগালেন, যাতে একদিন এসব খাতও তেল খাতের মতো অর্থনীতির ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় আয়ের প্রধান উৎসে উন্নীত হতে পারে। জাতীয় তেল কোম্পানি ‘আরামকো’ তেল খাতের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে উৎপাদন, পরিশোধন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের এক বিরাট ও ব্যাপকভিত্তিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। সৌদি উন্নয়ন পরিকল্পনার সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় জাতীয় সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি অর্জনের জন্য এবং একটি সফল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপন্ন ও সেবার ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল হওয়া। এর সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য হলো আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো এবং উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রফতানির সক্ষমতা অর্জন করা।
পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পরবর্তী চার দশক উল্লিখিত লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পর সৌদি আরব উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অতিক্রম করে। ১৯৭০ সাল থেকে দেশে পঞ্চ-বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উন্নততর পর্যায়ে প্রবেশ করে। উন্নয়নের পথে সমন্বয়, ধারাবাহিকতা ও সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যে গৃহীত প্রতিটি পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনাই ছিল পরবর্তীটির ভিত্তি। অবশ্য আশি ও নব্বইয়ের দশকের পরবর্তী পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য নির্ধারিত হয় জাতীয় অর্থনীতির বহুমুখীকরণ ও বেসরকারীকরণ। বেসরকারি খাতের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার জন্য সরকার সুদমুক্ত ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠান স্খাপন করলেন, যার লক্ষ্য ছিল শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন নতুন বিনিয়োগ সুবিধার সৃষ্টি।
উন্নয়নের এক শ’ বছর
বিদ্যমান খাতগুলোকে সম্প্রসারিত করার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা ও কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়। ১৯৯৭ সাল নাগাদ এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি খাতে ৭২.৮ বিলিয়ন ডলারেরও অধিক প্রদান করে। এগুলোসহ অন্যান্য কর্মসূচির ফলে ১৯৭০ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত সময়ে সৌদি আরবের মোট স্খানীয় উৎপাদন (জিডিপি) সাত গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪৪.৮২ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল বা ১৪৫.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। একই সময়কালে জিডিপিতে তেলবহির্ভূত খাতের অংশ ৪১.১ থেকে ৬৫.২%-এ উন্নীত হয়। একবিংশ শতাব্দীতে অর্জিত আর্থসামাজিক অগ্রগতির এই ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য শিক্ষা খাতে দেশটির ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। ১৯৩২ সালে আধুনিক সৌদি আরব প্রতিষ্ঠালগ্নে সাধারণ শিক্ষা বলতে ছিল শহর এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্খাপিত কিছুসংখ্যক ধর্মীয় শিক্ষালয়। বর্তমানে সৌদি আরবের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০টিরও অধিক ফ্যাকাল্টিতে এবং ২২ হাজার ৩০০ বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ সম্পূর্ণ অবৈতনিক। এই সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বর্তমানে ৪৫ লাখের অধিক।
অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতি
জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সৌদি আরবে অনুরূপ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সৌদি আরবে ১৯৩২ সালে চিকিৎসাসেবা বলতে তেমন কিছুই ছিল না। সেখানে বর্তমানে দেশটিতে আধুনিক চিকিৎসাসেবার সব সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি বিদ্যমান। শিল্পের ক্ষেত্রেও অনুরূপ ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে শিল্পকারখানার সংখ্যা তিন হাজার ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। যেগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা দুই লাখ ৮০ হাজার। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো ও রফতানির জন্য এসব কারখানায় বিভিন্ন ধরনের শিল্প ও ভোগ্যপণ্য উৎপাদিত হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর বিশ্বের ১১৮টি দেশে প্রায় ২৩ বিলিয়ন রিয়াল বা ৬.১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সৌদি উৎপাদিত দ্রব্য রফতানি করা হয়। যোগাযোগের জন্য দেশটিতে রয়েছে হাজার হাজার মাইলের সেকেন্ডারি রোড, একাধিক সমুদ্রবন্দর এবং বহুসংখ্যক বিমানবন্দর। সৌদি উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে দেশের পানিসম্পদ উন্নয়ন এবং কৃষি, শিল্প ও নাগরিকদের প্রাত্যহিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য পানি সরবরাহ বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। বর্তমানে দেশটিতে রয়েছে ১৮৪টি বাঁধ যেগুলোর মোট পানি ধারণক্ষমতা ২৭.৩ বিলিয়ন ঘনফুট। তা ছাড়া রয়েছে প্রতিদিন ৫২০ মিলিয়ন গ্যালন পানীয়জল সরবরাহের জন্য ৩৩টি লবণ-বিমুক্তকরণ কারখানা। কৃষি খাতই হচ্ছে সৌদি আরবে পানি ব্যবহারের সর্ববৃহৎ খাত বর্তমানে যার বার্ষিক উৎপাদন ৩০ লাখ টন শস্যদানা, ২৫ লাখ ৯০ হাজার টন সবজি, ১১ লাখ ৫০ হাজার টন ফল, তিন লাখ ৯৭ হাজার টন হাঁসমুরগি, ১৫৭ হাজার টন লাল গোশত এবং আট লাখ ১৬ হাজার টন গবাদিপশুজাত উৎপন্ন দ্রব্য।
প্রভাবশালী বিশ্বশক্তি
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সৌদি আরব বর্তমানে একটি প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে বিবেচিত। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সৌদি আরবের গুরুত্বের অন্যতম কারণ ইসলামের জন্মস্খান এবং দুই পবিত্র স্খান মক্কা মুকাররামা ও মদিনা মুনাওয়ারার দেশ হিসেবে বিশ্বের ১০০ কোটি মুসলমানের মধ্যে দেশটির বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ অবস্খান। অন্য দু’টি কারণের একটি হলো সৌদি সরকারের স্খিতিশীলতা ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং অপরটি প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের সাথে দেশটির বìধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ইসলামি মূলনীতি ও সমৃদ্ধ আরবীয় ঐতিহ্যের ধারক সৌদি আরব বিশ্বের দরবারে সঠিকভাবেই তার মর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ, আরব লিগ, ওআইসি, উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্খার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে সৌদি আরব মানবজাতির অব্যাহত উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য নিরলস দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। লেবানন, আফগানিস্তান ও বসনিয়ায় শান্তি স্খাপনসহ বিশ্বের অনেক সঙ্কট নিরসনে সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আরব-ইসরাইল সমস্যা সমাধান এবং কুয়েতকে ইরাকি আগ্রাসনমুক্ত করার ক্ষেত্রেও সৌদি আরব উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। তা ছাড়া মানুষের সৃষ্ট বিপদ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মনুষ্যসমাজকে রক্ষার জন্য বরাবর অকাতরে অর্থসম্পদ ব্যয় করে আসছে ও জনসম্পদকে কাজে লাগিয়ে এসেছে। অন্যান্য দেশের উন্নয়ন সহায়তায় সৌদি আরব এ পর্যন্ত ৮ হাজার কোটি ডলারেরও অধিক সাহায্য প্রদান করেছে।
চোখের ছানি
সাাৎকার নিয়েছেন স্বকৃত নোমান
সাপ্তাহিক : চোখের ছানি কী?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : প্রকৃতপে আমাদের চোখ আর ক্যামেরার ম্যাকানিজম প্রায় এক। বাইরের কোনো ছবি ক্যামেরার লেন্সে একটি ছায়া তৈরি করে যে ছায়া প্রিন্ট হয়ে আসলে আমরা ছবিটা দেখতে পাই। ক্যামেরার মধ্যে একটি বা একাধিক লেন্স দিয়ে এই ছায়াটা তৈরি করা হয়। ঠিক তেমনই মানুষের চোখেও একটি লেন্স থাকে। এই লেন্সের মাধ্যমে বাইরের ছবি চোখের রেটিনার ওপরে পড়ে। রেটিনার ওপরে পড়লে রেটিনা থেকে এটি মস্তিষ্কে চলে যায় আমাদের নার্ভস সিস্টেমের মাধ্যমে। ফলে আমরা দেখতে পাই। যে লেন্সের মাধ্যমে বাইরের যে কোনো জিনিসের ছবি আমাদের রেটিনার ওপরে পড়ে সে লেন্স যে কোনো লেন্সের মতোই স্বচ্ছ, যার কারণে আমরা ছবি দেখতে পাই। কিন্তু যেহেতু এই লেন্সটি সাধারণ কাচের লেন্স নয় এবং এটি বায়োলজিক্যাল অথবা মানুষের শরীরের কোষ থেকে তৈরি। তাই বয়সের কারণে অথবা আঘাত বা অন্য কোনো কারণে এই লেন্সটি স্বচ্ছ নাও থাকতে পারে। যদি ঘোলা হয়ে যায় তখন বাইরের ছবি থেকে যে আলো আসবে তা রেটিনার ওপর পড়বে না। এই ঘোলা হয়ে যাওয়াকেই বলা হয় চোখের ছানি।
সাপ্তাহিক : ছানি কেন হয়?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : প্রকৃতপে লেন্স তৈরি হয় আমাদের শরীরের কোষ দিয়ে। শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন বিভিন্ন কারণে তিগ্রস্ত হতে পারে, আঘাতের কারণে বা বয়সের কারণে পরিবর্তিত হতে পারে, ঠিক তেমনই লেন্সটা যেহেতু শরীরেরই একটা অংশÑ লেন্সেরও এই পরিবর্তন হতে পারে। কোনো কারণে যদি লেন্সের পরিবর্তন হয় তখন লেন্স ঘোলা হয়ে যেতে পারে। শরীরের যে কোনো জিনিসকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ রাখা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। আমাদের শরীরে আমাদের চোখের লেন্সকে জেনেটিক সিস্টেম এমনভাবে তৈরি করেছে যেন এটি সারাজীবন স্বচ্ছ থাকে। কোনো কারণে এই স্বচ্ছতার সিস্টেমের মধ্যে সামান্যতম সমস্যা দেখা দিলেই এই লেন্সটা ঘোলা হয়ে যেতে পারে।
সাপ্তাহিক : ছানি শুধু কী বয়স্ক ব্যক্তিদেরই হয়?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : চোখের ছানি শুধু বয়স্ক ব্যক্তিদেরই হয় না, তবে বয়স্ক ব্যক্তিদের বেশি হয়। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সমস্ত অঙ্গই অকার্যকর, দুর্বল হতে থাকে। একই প্রক্রিয়ায় চোখের লেন্সও একসময় না একসময় ঘোলা হয়ে যাবে। আমাদের দেশে প্রাপ্ত ছানির ৮০ ভাগই বয়সের কারণে হয়ে থাকে।
সাপ্তাহিক : ছানির পরিণতি কী?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : ক্যাটারেক্টের পরিণতি অন্ধত্ব। লেন্সটা স্বচ্ছ থাকলে, বাইরের আলো চোখের মধ্যে পড়লে আমরা দেখতে পাই, কিন্তু যদি লেন্সটা ঘোলা হয়ে যায় তাহলে বাইরের আলো চোখের রেটিনাতে পড়বে না। ফলে রোগী দেখবে না। প্রথমেই যদি সামান্য ঘোলা হয় তাহলে সামান্য কম দেখবে। আস্তে আস্তে যত বেশি লেন্স ঘোলা হতে থাকবে রোগী তত কম দেখবে। একপর্যায়ে পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
সাপ্তাহিক : চোখের ছানি অপারেশনের আগে অনেক সময় ডাক্তার রোগীকে কিছুদিন অপো করতে বলেনÑ এর কারণ কী?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : না, ছানি অপারেশনের আগে সামান্যতম দেরি করার দরকার নেই। প্রকৃতপক্ষে আগেকার দিনে যখন উন্নত প্রযুক্তি ছিল না, মাইক্রোস্কোপ বা ফ্যাকোসার্জারির প্রযুক্তি ছিল না, তখন আমরা খালি চোখে ছানি অপারেশন করতাম। যেহেতু লেন্স অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং অত্যন্ত কোমল গঠনের তাই তখন ছানি অপারেশনের সময় লেন্সটাকে সম্পূর্ণ বের করে নিয়ে আসা হতো। তারপর চশমা দিয়ে রোগীর পরবর্তী চিকিৎসা করা হতো। ছানি যখন পাকে মানে ছানিটি যখন শক্ত হয়ে সাদা যায়, তখন এর সংযোগগুলো হালকা হয়ে যায়। তখন এটাকে বের করে আনা সুবিধাজনক। এজন্য আমরা রোগীদের বলতাম, ‘আপনার ছানি এখনো পাকেনি, ছানি পাকুক, তারপরে অপারেশন করুন।’ কিন্তু এখন যত তাড়াতাড়ি ছানি অপারেশন করা যায়, ততই ভালো এবং সুবিধাজনক। কারণ বয়স বাড়লে নানা রোগ দেখা দেয়। সুতরাং আগে করে ফেলাটাই ভালো।
সাপ্তাহিক : স্বাস্থ্যগত কোনো কারণ কি চোখের ছানি অপারেশনের জন্য বাধা হতে পারে?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : স্বাস্থ্যগত কারণ ছানির কারণও হতে পারে, আবার ছানি অপারেশনের বাধাও হতে পারে। যেমন ডায়াবেটিস, হরমোনজনিত রোগ, জন্মগত ভাইরাস, ইনফেকশনÑ এগুলোর জন্য ছানি হতে পারে। ছানি অপারেশনের পূর্বে আমরা রোগীর স্বাস্থ্যের কতগুলো পরীা করে নিই, যাতে ছানি অপারেশনে কোনো সমস্যা না হয়।
সাপ্তাহিক : ছানি অপারেশন কী কোনো বড় অপারেশন?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : খুব বড় ধরনের অপারেশন নয়। তবে অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির অপারেশন এটি। সাধারণত কোনো অপারেশনের সঙ্গে ছানি অপারেশনের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলোÑ অন্য অপারেশনে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই অপারেশন করি; যাতে কোনো ইনফেকশন না হয়। তারপরও যদি কোনো সমস্যা বা ইনফেকশন হয় সেই সমস্যাটাকে আস্তে আস্তে মেকাপ করা যায়। ছানি ছোট্ট একটা অপারেশন। এই অপারেশনে যদি কোনো ইনফেকশন হয় রোগীর দৃষ্টি সারাজীবনের জন্য নষ্টও হয়ে যেতে পারে। এজন্য ছানি অপারেশন যেখানে করা হয় সেখানে অন্য অপারেশন করা হয় না।
সাপ্তাহিক : অপারেশনের কতদিন পর রোগী বাড়ি যেতে পারে?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : এক ঘণ্টা পরেই যেতে পারে।
সাপ্তাহিক : অপারেশনের পর রোগীর দৃষ্টিশক্তির উন্নতি কতটুকু হয়? সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কেমন সময় লাগে?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : রোগীর যদি অন্য কোনো রোগ না থাকে তবে এক শ ভাগ উন্নতি হবে। সুস্থ হতে আমরা সাধারণত ২৪ ঘণ্টা ব্যান্ডেজ রাখতে বলি, তারপর বলি কালো চশমা পরতে। দু-একদিন সাবধান থাকতে হবে, সাতদিন পর পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়া যায়।
সাপ্তাহিক : অপারেশন পরবর্তী রোগীর যতœ সম্পর্কে বলুন?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : এখনকার উন্নত চিকিৎসায় বিশেষ কোনো যতœ নিতে হয় না। তবুও জোরে চিৎকার করা, দৌড়ানো, মাথা ঝাঁকানোÑ ইত্যাদি কাজ না করলেই ভালো। ৭-১৫ দিন পানি না লাগাতে বলি আমরা।
সাপ্তাহিক : অপারেশন পরবর্তী জটিলতা কী কী হতে পারে?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : কোনো জটিলতা হবে না। তবে অপারেশনের সময় ডাক্তারের অসতর্কতায় কোনো সমস্যা হলে কিছু কিছু রোগ দেখা দিতে পারে। এগুলোর চিকিৎসাও আছে।
সাপ্তাহিক : অপারেশনে কেমন খরচ হয়?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : একসঙ্গে অনেক রোগী অপারেশন করলে খরচ কমে আসে, মাত্র দুই-তিন হাজার টাকায় সম্ভব। কিন্তু অল্প রোগীর েেত্র খরচ তো বেশি পড়াটাই স্বাভাবিক। কারণ এ অপারেশনের জন্য একটা মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। একটি দিয়ে তো অনেক রোগীর চিকিৎসা করা যায়। তা ছাড়া খরচ কম-বেশি সেটা লেন্সের ওপরও নির্ভর করে।
সাপ্তাহিক : বাংলাদেশে চোখের ছানি অপারেশনের বর্তমান প্রোপট/অবস্থা সম্পর্কে বলুন?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : চোখের ছানি অতীতের মতো বর্তমানেও আমাদের দেশে একটা সমস্যা। তবে আগের চেয়ে এখন এ সমস্যা অনেক কমে এসেছে। বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে। ২০০৩-এর এক বেসরকারি হিসাব মতে, আমাদের দেশে ৫ লাখ ৫০ হাজার ছানি রোগী রয়েছে। তার মধ্যে ২০০৩-এ অপারেশন হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার; যা মোট আক্রান্তের মাত্র ৫ ভাগের ১ ভাগ। প্রতি বছর নতুন নতুন রোগী যোগ হচ্ছে। সেই হিসাবে সামগ্রিকভাবে এগুলোর চিকিৎসা করাতে গেলে প্রতি বছর আড়াই থেকে তিন লাখ অপারেশন করতে হবে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে এ নিয়ে। এর চিকিৎসা এখন অনেক সহজ এবং স্বল্প খরচে করা যাচ্ছে। ছানি সাধারণত বয়স্ক রোগীদের বেশি হয়। অসচেতনতার কারণেই অনেকাংশে এর চিকিৎসা হচ্ছে না। বেশিরভাগ েেত্র দরিদ্রতার কারণে রোগীরা এর চিকিৎসা নেয় না। তা ছাড়া আমাদের চিকিৎসক, জনবল এবং যন্ত্রপাতিরও সংকট আছে। তাই এসব েেত্র আমাদের আরও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
সাপ্তাহিক : উন্নত বিশ্বে বর্তমানে চোখের ছানি অপারেশনের কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়? বাংলাদেশে এর সম্ভাবনা কতটুকু?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : উন্নত বিশ্বে যে প্রযুক্তি ব্যবহার হয় বাংলাদেশেও এখন তাই হচ্ছে। যান্ত্রিকভাবে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও সেসব দেশে যে রেজাল্ট, আমাদের দেশেও একই রেজাল্ট।
ছবি : রাশেদুজ্জামান
অধ্যাপক এ.এস.এম কামালউদ্দিন
চেম্বার : ৩০ গ্রিন সুপার মার্কেট (দ্বিতীয় তলা)
গ্রিন রোড, ফার্মগেট, ঢাকা
রোগী দেখার সময় : বিকেল ৫টা থেকে ৮টা
শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া)
ফোন : ৮১২২৪৭০
ডায়াবেটিস ও ইনসুলিন
ইনসুলিন নেয়ার বিভিন্ন নিয়মাবলী রয়েছে। তবে বিশেষ তিনটি জরুরি নিয়ম হলো-
এক. সাধারণত ইনসুলিন নিতে হয় খাবার ৩০-৪৫ মিনিট পূর্বে।
কারণ : মূলত দুই ধরনের ইনসুলিন আমরা ব্যবহার করে থাকি। একটি দেখতে পানির মতো স্বচ্ছ যার কাজ আরম্ভ হয় ইনজেকশন দেয়ার প্রায় ৩০ মিনিট পরে, ২-৪ ঘন্টার মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি কাজ করে এবং এটির কাজের স্থিতিকাল থাকে ৬-৮ ঘন্টা। অন্য ইনসুলিন দেখতে ঘোলাটে যার কাজ শুরু হয় ইনজেকশন দেয়ার মোটামুটি দেড় ঘন্টা পর, ৬-১২ ঘন্টা পর্যন্ত এটি সবচেয়ে বেশি কাজ করে এবং এর কাজের স্থিতিকাল প্রায় ১৮-২৪ ঘন্টা। খাবার পর পর রক্তে বাড়তি শর্করা কমায় স্বচ্ছ ইনসুলিন এবং বেজাল অর্থাৎ সারাদিনের বাড়তি শর্করা হ্রাসে ভূমিকা পালন করে ঘোলাটে ইনসুলিন। তাহলে দেখুন, ইনসুলিন নিয়েই যদি খাওয়া হয় তবে খাবার পর রক্তে যে শর্করা বাড়ছে সেটা কমানোর জন্য কিন্তু ইনসুলিনের কাজ শুরুই হচ্ছে না। উল্লেখ্য, ‘ইনসুলিন এনালোগ’ এক ধরনের নতুন ইনসুলিন বর্তমানে রয়েছে যা খাবার একটু আগে নেয়া যায়। তবে এটি ব্যয়বহুল।
দুই. ইনসুলিন নেয়ার পর পরিমাণমতো খাবার খেতে হবে।
কারণ : রক্তে শর্করা পরিমাণ প্রতি লিটারে ২.৫ মিলিমোলের কম হলে মস্তিষ্কের কিছু অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়, ক্ষেত্র বিশেষে মানিসিক প্রতিবন্ধকতাও দেখা দেয়। ব্লাড সুগার হ্রাস পাওয়ার উল্লেখযোগ্য লক্ষণসমূহ হলো- অসুস্থ বোধ করা, কিছু ভাল না লাগা, বুক ধড়ফড় করা, অধিক ঘাম হওয়া, বুক কাঁপতে থাকা, অস্বাভাবিক আচরণ করা, ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়া, এমনকি অজ্ঞান হয়ে পড়া। আর তাই, ইনসুলিন নেয় এমন রোগীকে সব সময় গ্লুকোজ, চিনি কিংবা মিষ্টি কাছে রাখতে হয় যাতে উপরিল্লিখিত উপসর্গগুলো অনুভব হলে সাথে সাথে খেয়ে নেয়া যায়। তিন. অসুস্থ হলে অর্থাৎ ডায়রিয়া, বমি, খাবারে অরুচি অথবা জ্বর হলে সময় মতো ইনসুলিন নিতে হবে। কারণ, আমাদের শরীরে যেকোনো স্ট্রেস বা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কিছু হরমোন তৈরি হয় যা রক্তে শর্করা বাড়ায়। ইনসুলিনের অভাবে একদিকে রক্তের শর্করা শরীরের কাজে লাগে না, অপরদিকে তাপ ও শক্তির জন্য দেহের সঞ্চিত চর্বি অতিরিক্ত ভেঙ্গে কতক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যেমন কিটন বডি বেশি মাত্রায় রক্তে বেড়ে যায়। ফলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থাকে ডায়াবেটিক কোমা বলা যায় যার উল্লেখযোগ্য লক্ষণসমূহ হচ্ছে- ঘন ঘন প্রস্রাব ও প্রস্রাবে অধিক হারে শর্করা থাকা, খুব বেশি পিপাসা ও ক্ষুধা পাওয়া, বমি ভাব হওয়া, খুব অসুস্থ লাগা, শ্বাস কষ্ট হওয়া, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, ঝিমানো ভাব হওয়া, মাথা ধরা, চোখে ঝাপসা দেখা, এমনকি নিস্তেজ বোধ হওয়া ও শ্বাসে এসিটোনের গন্ধ টের পাওয়া।
অতএব, অসুস্থকালীন দিনগুলো ইনসুলিন নেয়া বন্ধতো করা যাবেই না বরং ক্ষেত্র বিশেষে অধিক মাত্রায় ইনসুলিন দরকার হয়। আর এই সময় খেতে হয় যথাযথ পরিমাণে তরল খাবার যেমন টমেটো, আপেল বা লেবুর সরবত, ভেজিটেবল বা মুরগির সুপ, অন্যান্য ফল এবং কমপক্ষে ৬-৮ গ্লাস পানি।
ডা. বিমল কুমার আগরওয়ালা
মোবাইল : ০১৭১১৬৮২৩৬৪।
দেহের ওজন কমাতে আঁশের জুড়ি নেই
শাকসবজীতে ছিল আঁশ। আর আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খেলে দেহ সুস্থ সবল, সজীব হয়, ওজন কমে। আঁশ খেলে খাদ্য নলের স্বাস্থ্য ভাল থাকে, এমন খ্যাতি আঁশের তো আছেই বেশ জনপ্রিয়ও আছে খাদ্য আঁশ। বলা হচ্ছে, আঁশ সমৃদ্ধ খাদ্য নানারকম অসুখে যেমন হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসে বেশ হিতকর। শরীরের বাড়তি ওজন হ্রাসে আঁশ সমৃদ্ধ খাবারের জুড়ি নেই। দিন অন্ততঃ ২৫ গ্রাম আঁশ তো থাকা চাই, পশ্চিমা খাবারে যে তা নেই বলা বাহুল্য আমাদের মা-দাদিরা যে রান্না করেছেন এতে যে প্রচুর আঁশ ছিল এতেও সন্দেহ নাই। তাই পশ্চিমা ফাস্ট ফুডের বদলে এদেশের ঐতিহ্যগত খাবার কেলে আঁশ পাবেন ঠিকঠাক। আঁশ নিয়ে প্রথম আলোড়ন উঠে ১৯৮০ সালের শুরুর দিকে। যুক্তরাজ্যের একজন চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডাঃ ডেনিস বাকিট দেখালেন যে শাকসবজিতে যে আঁশ এবং যা পাকনল হজম করতে পারেনা সহজে, এই আঁশ জাত খাদ্য খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি তো কমেই, পেটের অনেক রোগ যেমন ‘ডাইভারটিকুলাইটিসের’ মত রোগও হয় না। তবে খাদ্যে আঁশের পরিমাণ ও ধরন বিশ্লেষণ যখন সম্ভব হলো তখন থেকে আঁশের গুরুত্ব ও খাদ্য হিসেবে বেড়ে গেল। আগে আঁশ কেবল অদ্রবণীয়, তাই মনে করা হতো। পেটকে সচল রাখতে, বোস্ট পরিষ্কারে এদের ভূমিকা জানা ছিল। লাল চান, আটা, তুষ, কোষ্ট পরিষ্কারে উপযোগী, জানা ছিল। এরপরে সনাক্ত হলো আরেক ধরনের আঁশ (দ্রবনীয় আঁশ)। বিভিন্ন ফলে, সবজিতে ও দানাদার শস্যে আছে দ্রবনীয় আঁশ। দেখা গেল আপেল, মটরশুটি, ভুট্টায় আঁশ অনেক বেশি। কিছু কিছু খাদ্যে দ্রবনীয়, অদ্রবনীয় দু’ধরনের আঁশই থাকে।
১. দ্রবণীয় আঁশ : যেসব প্যাকেট খাদ্যে দ্রবণীয় আঁশ থাকে, সেসব খাদ্যের প্যাকেটের লেভেলে লেখা থাকে পেক্টিন, গামস্ এবং মিউসিলেক, এগুলো আঠালো পদার্থ। এসব রয়েছে শুটি জাতীয় খাদ্যে যেমন কিডনি বীনস্, মটর কলাই, তিল-তিসি, ভুট্টা, রাই, ফল ও সব্জি যেমন আপেল, কমলা। এসব খাবার খেলে দ্রবণীয় আঁশ ফুলে উঠে, জেল সদৃশ বস্তু হয় তৈরি, সেই জেলি সদৃশ পদার্থে আটকা পড়ে চিনিও শ্বেতসারের মত পুষ্টি পদার্থ, সে জন্য অন্দ্র থেকে চিনি ও দেহের ওজন হ্রাসেও এরকম খাদ্য উপকরণ বেশ উপযোগী।
তাই দ্রবণীয় আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খেলে পরিপাক ও শোষণ প্রক্রিয়া যেমন ধীর হয়ে উঠে, তেমনি রক্তের সুগার সুমিত মানে রাখতে এধরনের খাদ্যের উপযোগীতা অনস্বীকার্য। যাদের ডায়াবেটিস, বিশেষ করে তাদের জন্য তো বটেই। তাই রক্তের শর্করা মানে চড়াই উৎরাই কম হলে সবারই সুবিধা আর পরিপাক ক্রিয়া মন্থর হওয়াতে ক্ষুধা কমে যাওয়াতে ওজনও শরীরে লাগে কম। প্রাতঃরাশের সময় উটমিল বা ডিনারের আগে মটর কলাই, অংকুরিত ছোলা, রসুন কুচিত তেল দিয়ে মাখা খেলে পরবর্তী বেলার খাবারের সময় ক্ষুধা অনেক কম লাগবে। ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে দ্রবণীয় আঁশের হিতকরী ভূমিকা এখন বোঝা গেছে।
২. অদ্রবণীয় আঁশ : খাদ্যে যোগ করা উচিত আঁশ, আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। যাই হোক অদ্রবণীয় তবুও এর পুষ্টি আবেদন হারায়নি। এর অন্তর্গত প্রধান জিনিস হলো সেলুলোজ, এ ধরনের আঁশ অন্ডকে সচল করে, মলকে নরম করে, মলের নিষ্ক্রমন দ্রুত করে, এভাবে কোষ্টবদ্ধতা থাকে না। আঁশ-জলের এই সম্পর্কের জন্য, প্রচুর আঁশ, বিশেষ করে অদ্রবণীয় আঁশ, খেলেও পানি খুব কম পান করলে, পেটে ব্যথা হয় কোষ্টবদ্ধতা। প্রচুর পানি পান করলে কোষ্ট পরিষ্কার থাকে।
তবে যেকোন ধরনের আঁশ খুব বেশি হঠাৎ করে খাবারে যোগ করলে পেটে সমস্যা হয়, পেট মোচড়াতে পারে। তাই আঁশ যোগ করতে হয় ধীরে সুস্থে, বিশেষ করে দ্রবণীয় আঁশ সমৃদ্ধ খাদ্য, যা সহজে পেটে গ্যাস উৎপন্ন করে।
খাদ্যে আঁশ কি করে যোগ করা যায়। আঁশ সম্বন্ধে কমবেশি জানলে সম্ভব।
০ তুষ বা ছাতু খেলে হয় প্রাতঃরাশে। লাল চালের ভাত, আটার রুটি, সবজি ভাজি।
০ গোটা দানা শস্য খাদ্য।
০ প্রতিদিন ফল ও সবজির পাঁচটি সার্ভিং।
০ স্যালাভের বাটিতে বকোলি, গাজর, পালংশাক বা অন্য শাক, সঙ্গে কাসুন্দি।
০ একমুঠ বাদাম বা বীজ যোগ করুন স্যালাডে। শুকনো ফলের স্ন্যাকস্।
০ স্যালাডে কিডনি বীনস্, মটরশুটি, সুপে, সসে।
কিছু আঁশের ঠিকানা : ওটমিল হাফ কাপ/৭৫ মিলিলিটার, দ্রবণীয় আঁশ ১.৪ গ্রাম, মোট আঁশ ১.৬ গ্রাম; তুষ হাফ কাপ ৭৫ মিলিলিটার, দ্রবণীয় আঁশ ২ গ্রাম, মোট আঁশ ৭.৮ গ্রাম; কিডনি বীনস্ হাফ কাপ/ ১২৫ মিলিলিটার, দ্রবণীয় আঁশ ২ গ্রাম, মোট আঁশ ১০.১ গ্রাম; আপেল মাঝারি একটি, দ্রবণীয় আঁশ ১ গ্রাম, মোট আঁশ ৩.৫ গ্রাম; কলা মাঝারি একটি, দ্রবণীয় আঁশ ০.৭ গ্রাম, মোট আঁশ ২.৪ গ্রাম; কমলা মাঝারি একটি, দ্রবণীয় আঁশ ১.১ গ্রাম, মোট আঁশ ২.৮ গ্রাম; গাজর মাঝারি একটি, দ্রবণীয় আঁশ ১.১ গ্রাম, মোট আঁশ ২.২ গ্রাম।
অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস, বারডেম, ঢাকা
আপেলের চেয়ে আমড়ার পুষ্টিগুণ বেশি
আমড়া ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। ভিটামিন সি দেহের জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। এর অভাবে স্কার্ভি রোগ হয়। এ রোগে দাঁতের মাড়ি ফুলে যায়, দাঁতের গোড়া থেকে পুঁজ ও রক্ত পড়ে, মাড়িতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়, খাবার খেতে অসুবিধা হয়, অকালে দাঁত ঝরে যায়। বিভিন্ন প্রকার ভাইরাস ইনফেকশন, সর্দি কাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জায় ভিটামন সি অত্যন্ত উপকারী। ক্যালসিয়ামের অভাবে মাংশপেশিতে খিঁচুনি হয়, শিশুদের দৈহিক গঠন দুর্বল হয়। আমড়াতে প্রচুর আয়রন থাকায় রক্ত স্বল্পতায় খেলে এর অভাব পূরণ হয়। আমড়ার পুষ্টিগুণ ছাড়াও কিছু ভেষজগুণ রয়েছে। আমড়া পিত্তনাশক ও কফনাশক। আমড়া খেলে অরুচিভাব দূর হয়। মুখে রুচি ফিরে আসে, ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। বদহজম ও কোষ্ঠ-কাঠিন্য রোধে আমড়া উপকারী। কাঁচা আমড়া গুঁড়ো মরিচ, লবণ ও মসলা দিয়ে খাওয়া হয় বা অত্যন্ত মুখরোচক এবং এতে ভিটামিন সি পুরোপুরি পাওয়া যায়। আমড়া খেলে পাকস্থলী থাকবে সুস্থ। আমড়ায় থাকা ভিটামিন সি রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং খাদ্যে উপস্থিত ভিটামিন এ এবং ই এর সাথে হয়ে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে যা ক্যান্সারসহ নানা ঘাত-প্রতিঘাত থেকে দেহকে রক্ষা করে।