এক নজরে সৌদি আরব

১। সরকারি নাম : আল মামলাকাতুল আরাবিয়্যাহ আস সৌদিয়া (কিংডম অব সৌদি আরাবিয়া, রাজকীয় সৌদি আরব)
২। রাজধানী ও বৃহত্তম শহর : রিয়াদ, জনসংখ্যা ৩৭,২৪,১০০ জন (২০০৩)। অন্যান্য বড় শহর : জেদ্দা, জনসংখ্যা ২৭,৪৫,০০০ জন, মক্কা জনসংখ্যা ১৬,১৪,৮০০ জন।
৩। সরকার পদ্ধতি : রাজতন্ত্র, রাষ্ট্রপ্রধান পবিত্র মসজিদদ্বয়ের খাদেম বাদশাহ আবুদল্লাহ বিন আবদুল আজিজ।
৪। আয়তন : ২২,৪০,০০০ বর্গকিলোমিটার, ৮,২৯,৯৯৫ বর্গমাইল।
৫। ভাষা : আরবি, ইংরেজিরও প্রচলন আছে।
৬। জনসংখ্যা : ২,৮৬,৮৬,৬৩৩, জন্ম বৃদ্ধির হার ১.৮%, জন্মহার ২৮.৫/১০০০, শিশু মৃত্যুর হার ১১.৫/১০০০, গড় আয়ু ৭৬.৩, প্রতি বর্গমাইলে জনবসতির ঘনত্ব ৩৩ (২০০৯)।
৭। ধর্ম : ইসলাম, শতকরা ১০০% মুসলমান, ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন, মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর জন্মভূমি এবং ইসলামের দুই পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনা শরীফের অবস্খানের কারণে সৌদি আরব বিশ্বের সকল মুসলমানের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।
৮। পতাকা : পতাকার রঙ সবুজ। দৈর্ঘ্যরে দুই-তৃতীয়াংশ প্রস্খ ও এতে তাওহীদের মর্মবাণী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলূলাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকারের মাবুদ নেই মুহাম্মাদ সা: আল্লাহর রাসূল)। এ কালিমা আরবিতে উৎকীর্ণ রয়েছে। কালিমার নিচেই একটি কোষমুক্ত তরবারি অঙ্কিত রয়েছে যা দ্বারা ন্যায়বিচারকে বুঝানো হয়েছে। কালিমা তাইয়্যিবাহ উৎকীর্ণ থাকায় সৌদি আরবের পতাকা কখনো অর্ধনমিত করা হয় না। সবুজ রঙ ইসলামের ঐতিহ্যের দিকে ইঙ্গিতবহ।
৯। প্রতীক : আড়াআড়ি দু’টি তরবারির ওপর একটি খেজুরগাছ হলো সৌদি আরবের জাতীয় প্রতীক, খেজুর দ্বারা বোঝানো হয়েছে সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি, আর তরবারি দ্বারা ন্যায়বিচার, শক্তি ও নিরাপত্তা বুঝানো হয়েছে।
১০। আবহাওয়া : তাপমাত্রা ১২ থেকে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ওঠানামা করে, বৃষ্টিপাত বিক্ষিপ্ত ও অনিয়মিত। দীর্ঘস্খায়ী উষ্ম ও শুষ্ক গ্রীষ্মকাল। রাতে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে হন্সাস পায়। শীতকালে হালকা তুষারপাত হয়।
১১। জাতিসত্তা : আরব ৯০% আফেন্সা এশীয় ১০%।
১২। শিক্ষার হার : ৭৯% (২০০৩)।
১৩। মুদ্রা : রিয়াল, ১০০ হালালায় ১ রিয়াল (এক মার্কিন ডলার সমান ৩.৭৫ সৌদি রিয়াল)।
১৪। স্বাধীনতা : ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সব গোত্র ও প্রদেশগুলো একত্রীকরণ করা হয়। সে জন্য ২৩ সেপ্টেম্বরকেই সৌদি আরবের জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।
১৫। সংবিধান : ইসলামি আইন (শরিয়া) মোতাবেক ১৯৯৩ সালে সরকারের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কিত ধারা-উপধারা সংযোজন করা হয়েছে।
১৬। বিচার ব্যবস্খা ইসলামি আইন অনুযায়ী করা হয়। কিছু ধর্মনিরপেক্ষ ধারা-উপধারা সংযোজিত হয়েছে। বাণিজ্যিক বিষয়াদি বিশেষ কমিটি কর্তৃক নিষ্পত্তি করা হয়।
১৭। প্রশাসনিক এলাকা : সৌদি আরবে ১৩টি প্রশাসনিক এলাকা আছে।
(ক) রিয়াদ (খ) পবিত্র মদিনা (গ) পূর্বাঞ্চল (আশ শারকিয়া) (ঘ) তাবুক (ঙ) পবিত্র মক্কা (চ) আল কাছিম (ছ) আছির (জ) হাইল (ঝ) উত্তর সীমান্তবর্তী অঞ্চল (আল হুদুদ আশ শিমালিয়া) (ঞ) জাযান (ট) নাজরান (ঠ) আলবাহা (ড) আল জাওফ।
১৮। শিক্ষা : সৌদি আরব আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে। সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সকল নাগরিকের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা। বর্তমানে সৌদি আরবের বাজেটের ২৫% এ খাতের জন্য নির্ধারিত। বর্তমানে সৌদিতে চালু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : ক. বিশ্ববিদ্যালয়-২০টি, খ. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-২টি
গ. কলেজ-১০৫টি তন্মধ্যে মহিলা কলেজ ১১টি। ঘ. বিদ্যালয় ৩৫,০০০টি।
২০০৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে ৫৮,০০,০০০ ছাত্রছাত্রী শিক্ষারত তন্মধ্যে ৬,০৪,০০০ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৫৮,০০০ কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষারত ৮৮,০০০ ব্যক্তি গণস্বাক্ষরতা শিক্ষাকার্যক্রমের সাথে জড়িত। সকল পর্যায়ে শিক্ষকের সংখ্যা ৪,৫৭,৮৯৮ জন।
২০০৮ শিক্ষাবর্ষে সৌদি আরবের ৫০ হাজারের অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী বিদেশে শিক্ষারত অবস্খায় আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যাধুনিক শিক্ষা উপকরণ দ্বারা সুসজ্জিত ও শিক্ষার মান উন্নয়নে চেষ্টারত। বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর বেশ সংখ্যক ছাত্র সৌদি আরবে অধ্যয়ন করতে যায়।
১৯। স্বাস্খ্য : স্বাস্খ্য খাতে মাথাপিছু ব্যয় বিশ্বের সর্বোচ্চ। বিদেশীসহ সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্খা রয়েছে। বর্তমানে সৌদি আরবে-
হাসপাতাল সংখ্যা : ৩১৩টি, শয্যা সংখ্যা : ৪৫,৫০০, চিকিৎসকের সংখ্যা : ৩০,৭০০, প্রাথমিক স্বাস্খ্যকেন্দ্র : ৩,১৩০টি (২০০৮)।
২০। মোট জাতীয় আয় : বৃদ্ধির হার ১৩.৫% (২০০৮)।
২১। মাথাপিছু আয় : সৌদি রিয়াল ৩৫,০০০ (৯,৫০০ মার্কিন ডলার)।
২২। শিল্প : ২০০৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩০০ বিলিয়নের অধিক সৌদি রিয়াল ব্যয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩,৭৮৫টি শিল্প ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যাতে বর্তমানে ৩,৫০,০০০ জন শ্রমিক কর্মরত আছে।
২৩। কৃষি : মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৪৫ লাখ হেক্টর, চাষাবাদের আওতায় ২৯ লাখ হেক্টর, চারণভূমি ৪ কোটি ৮০ লাখ হেক্টর। প্রধান ফসল খেজুর যার বার্ষিক উৎপাদন ৫ লাখ টন। এক হিসাবে দেখা গেছে, মাথাপিছু ২৯ কেজি করে খেজুর উৎপাদিত হয়, বর্তমানে খেজুর প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য সারাদেশে ৪০টি কারখানা রয়েছে। তা ছাড়াও বছরে প্রায় ৪০ লাখ টন গম উৎপাদন হয়। পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্যশস্য আলু, ফল-ফলাদি ও শাকসবজি বিপুল পরিমানে উৎপাদি হয়।
২৪। বিদ্যুৎ : ষষ্ঠ উন্নয়ন পরিকল্পনা (১৯৯৬-২০০০) সাল শেষে দেশের ৯০ ভাগ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে।
২৫। পর্যটন : আকর্ষণীয় স্খানগুলোর মধ্যে রয়েছে : তায়েফ, আলশিফা, আলহাদা, আলবাহা, আবহা, খামিস মুশাইয়াত, আলনামাছ, আলআহসা।
এ ছাড়া পূর্বাঞ্চলে রয়েছে আকর্ষণীয় হাফ মুন বিচ, যা অর্ধচন্দ্রাকৃতীয় সমুদ্রসৈকত এবং বন্দরনগরী জেদ্দার অভূতপূর্ব প্রবাল প্রাচীর ও দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত।
২৬। খনিজ ও খনন : অশোধিত তেলের মোট মজুদ ২৬০ বিলিয়ন ব্যারেল, যা বিশ্বের মোট মজুদের এক-চতুর্থাংশ। মোট গ্যাসের মজুদ ১৮০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। সৌদি আরবে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ হিসেবে বিশ্বে চতুর্থ।
অন্যান্য খনিজদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে : খনিজ সিসা, নিকেল, দস্তা, সোনা, টিন ও টাংস্টোন, লোহা, তামা, ইউরেনিয়াম, ফসফেট, বক্সাইট, পটাশিয়াম, গ্রানাইট ও মার্বেল।
২৭। রফতানি : সৌদি আরব তার রফতানি আয়ের ৯০% তেল ও তেলজাত দ্রব্য থেকে অর্জন করে, যা তার জাতীয় বাজেটের ৭৫%। এ ছাড়াও পেট্রোরসায়ন, সার, ধাতব পদার্থ, গম, সিমেন্ট, নির্মাণসামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্য।
২০০৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে যে, সৌদি আরব এশিয়ান দেশের নিকট ৪৯.৯%, উত্তর আমেরিকা ১৫.৮%, পশ্চিম ইউরোপ ১৩.৩%, জিসিসি দেশসমূহে ৭.৪%, আরবলিগের দেশসমূহে ৫.৩% দ্রব্যাদি রফতানি করেছে।
২৮। আমদানি : বিদ্যুৎ সামগ্রী গৃহস্খালি আসবাবপত্র, বস্ত্র, মসলা, রেশমীদ্রব্য, কাটলারিজ, অলঙ্কার আমদানি করে। সৌদি আরব ২০০৬ সালে নিুোক্ত দেশগুলো থেকে বিভিন্ন জিনিস আমদানি করে-
আমেরিকা : ১৪.৫%, চায়না : ৮.৬%, জার্মানি : ৮.১%, জাপান : ৮.১%, ইতালি : ৪%, ব্রিটিশ : ৩.৯%, ফন্সান্স : ৩.৯%, উত্তর কোরিয়া : ৩.৮%, ভারত : ৩.৮%।
২৯। পরিবহন ও যোগাযোগ : পরিবহন খাতে সৌদি আরব খুবই সমৃদ্ধ।
বিমানবন্দর ২৬টি তন্মধ্যে চারটি আন্তর্জাতিক : ১) জেদ্দা, ২) রিয়াদ, ৩) দাম্মাম, ৪) মদিনা ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ২২টি। সৌদি আরবে বর্তমানে রেললাইন ১৩৯২ কিমি (২০০২)
মহাসড়ক ১,৫১,৪৭০ কিমি তন্মধ্যে পাকা সড়ক ৪৫.৫৯২, কাঁচা সড়ক ১০৫.৮৭৮ কিমি.
বন্দর ও পোতাশ্রয় : ১। দাম্মাম ২। আলজুবাইল ৩। দুবা ৪। জেদ্দা ৫। জিজান ৬। রাবিগ ৭। রাসআলখাফজি ৮। রাসআততাননুরা ৯। মিছহাব ১০। ইয়াম্বুল আলবাহর ১১। মদিনাতুল ইয়াম্বু আল ছিনাইয়াহ
৩০। গণমাধ্যম : বহুল প্রচারিত দৈনিক ১১টি : ১। আল রিয়া ২। আল জাজিরা ৩। ওকাজ ৪। আল ওয়াতন ৫। আল ইকতিছাদিয়া ৬। আমদিনা ৭। আল ইয়াওম ৮। আল রিয়াদিয়া ৯। আল রিয়াদা ১০। আশশারফ আওমাত ১১। আল হায়াত। এ ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্খ্য, ওষুধ, খেলাধুলা, নারী ও সামাজিক বিষয়ের ওপর অসংখ্য ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়।
রেডিও স্টেশন : এএম ৪৩, এফএম ৩১, সটওয়েব ২ (১৯৯৮)।
টিভি সম্প্রচার কেন্দ্র ১১৭ (১৯৯৭), ডাকঘর ৬৮৩, ট্যালেক্স ৩০,০০০ (২০০৮)। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারী সংস্খা ২২।
৩১। গণযোগাযোগ : ফিক্সড টেলিফোন : ৩.৯ মিলিয়ন (২০০২), মোবাইল ফোন : ২.৯ মিলিয়ন (২০০২) রেডিও সেট : ৬.২৫ মিলিয়ন (১৯৯৭), টেলিভিশন : ৫.০১ মিলিয়ন (২০০২), কম্পিউটার : ৪ মিলিয়ন, ইন্টারনেট ব্যবহারহারী : ১.৪৫৩ মিলিয়ন (২০০২)।
৩২। বাঁধ : মরুধূসর সৌদি আরব পানি সংরক্ষণের জন্য সারাদেশে ২৩০টি বাঁধ নির্মাণ করছে। যার দ্বারা ৮৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার সংরক্ষণ করা যায়। বিশা ও নাজকরান বাঁধ সর্ববৃহৎ।
৩৩। লবণ বিযুক্তকরণ প্রকল্প : সারাদেশে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের জন্য ২৭টি প্রকল্প বিদ্যমান, যা দৈনিক ৫৭ কোটি ৩০ লাখ ঘনমিটার পানি উৎপাদনে সক্ষম।
৩৪। ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্খান : প্রত্নতত্ত্ব সমৃদ্ধ এলাকা ১। মদিনা মুনাওয়ারা ২। আল-আউলা ৩। মাদায়েন সালেহ ৪। নাজরান ।
৩৫। দুই পবিত্র মসজিদের উন্নয়ন : ৭০ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল ব্যয়ে মক্কা ও মদিনায় ২টি পবিত্র মসজিদের উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে।
১৯৯৫ সালে সমাপ্ত ফাহদ সম্প্রসারণ প্রকল্পের ফলে ২টি মসজিদের আয়তন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার বর্গমিটার। ফলে একসঙ্গে প্রায় ৪০ লাখ লোক একত্রে নামাজ আদায় করতে পারে।
৩৬। ২০০৮ সালের মানবিক সাহায্য ফান্ডে সর্বোচ্চ ২০টি দাতা দেশগুলোর দানের জিডিপি’র হারে দেখা যায় যে, সৌদি আরব শীর্ষে রয়েছে। উহার সাহায্যের হার ০.১৯০৫%।