জার্মানির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কোনো টিউশন ফি নেই। এ কারণে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীই ইউরোপের এ দেশটিতে পড়তে যেতে আগ্রহী। জার্মানিতে ব্যাচেলর প্রোগ্রামের জন্য ১২ বছরের শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্থাৎ এইচএসসি কিংবা এ লেভেল পাস হতে হয়।
ভর্তি ও ভিসা আবেদন
বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। আবেদন পাঠানোর পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে যোগ্য শিক্ষার্থীদের ঠিকানায় ‘অফার লেটার’ পাঠায়। অফার লেটার পাওয়ার পর ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে ঢাকার জার্মান দূতাবাসে।
ঠিকানা : ১৭৮ গুলশান এভিনিউ, গুলশান-২, ঢাকা। ফোন : ০২-৮৮৫৩৫২১।
শিখে নিন জার্মান ভাষা
জার্মানির অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই জার্মান ভাষায় পড়ানো হয়। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্মান ভাষার পাশাপাশি ইংরেজিতেও পড়ার সুযোগ রয়েছে। তবে এর জন্য নূ্যনতম আইইএলটিএস স্কোর থাকতে হবে ৫.৫০। জার্মান ভাষা শিখে গেলে পড়াশোনা অনেক সহজ হবে। ঢাকার জার্মান কালচারাল সেন্টারে আছে জার্মান ভাষা শেখার সুযোগ। ঠিকানা: বাড়ি-১০, রোড-৯ (নতুন), ধানমণ্ডি, ঢাকা। ফোন : ০২-৯১২৬৫২৫। অনলাইনে তথ্য জানতে পারবেন এই লিংকে www.goethe.de/ins/bd/dha/enindex.htm.
যেসব বিষয়ে পড়তে পারেন
ডিপ্লোমা, ব্যাচেলর, মাস্টার্স স্তরের শিক্ষার্থীরা প্রচলিত ও চাহিদাসম্পন্ন প্রায় সব বিষয়েই পড়তে পারবেন জার্মানিতে। এখানকার সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কম্পিউটার সায়েন্স, ন্যাচারাল সায়েন্স, বিভিন্ন বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং, অ্যাকাউন্টিং, বিবিএ, এমবিএ, ম্যানেজমেন্ট, মার্কেটিং অ্যান্ড ই-কমার্স, এগ্রিকালচার ছাড়াও রয়েছে অনেক বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ।
ভর্তি সুযোগ বছরে দুবার
জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়া যায় বছরে দুবার। গ্রীষ্ম ও শীতকালীন সেশনে। সেশন দুটি শুরু হয় যথাক্রমে এপ্রিল ও অক্টোবরে। সেশন শুরুর অন্তত তিন মাস আগ থেকেই ভর্তি কার্যক্রম শুরু করা ভালো। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ভর্তি ও আবেদনের যোগ্যতাসহ দরকারি তথ্য জেনে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র প্রস্তুত রাখলে পরবর্তী সময়ে বেগ পেতে হবে না।
কেমন খরচ হবে
জার্মানির সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে কোনো টিউশন ফি দিতে হয় না। তবে পাবলিক হেলথ ফি বাধ্যতামূলক হওয়ায় বছরে ৬৫০ ইউরোর মতো খরচ হয়। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফি বাবদ প্রতি সেমিস্টারে গুনতে হয় ৫০০ থেকে ৮০০ ইউরো। প্রতি মাসে ৪০০ থেকে ৫০০ ইউরো দিয়ে অনায়াসে থাকা, খাওয়া, যাতায়াত ও অন্যান্য খরচ মেটাতে পারবেন। উল্লেখ্য, এক ইউরো প্রায় ৯০ টাকার সমান।
পড়াশোনার পাশাপাশি কাজ
ওয়ার্ক পারমিট ছাড়াই বিদেশি শিক্ষার্থীরা জার্মানিতে খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ পান। সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের নিয়ম থাকলেও গ্রীষ্মের ছুটিতে তিন মাস ফুলটাইম কাজ করার সুযোগ পান শিক্ষার্থীরা। জার্মান ভাষা জানা থাকলে রেস্টুরেন্ট, দোকান বা শপিং মলে কাজ করে ভালো আয় করা যায়।
আছে বৃত্তির সুযোগ
জার্মান সরকার ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে থাকে। আবার কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ও বৃত্তি মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেয়। জার্মান একাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিসের ওয়েবসাইট (www.daad.de) থেকেই জানতে পারবেন বৃত্তিসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য।
কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব ঠিকানা
www.en.uni-muenchen.de
www3.uni-bonn.de, portal.mytum.de
www.uni-freiburg.de
www.uni-heidelberg.de
www.uni-goettingen.de
জার্মানিতে উচ্চশিক্ষার বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন www.study-in-germany.de.
জার্মানিতে পড়াশোনার চার ধাপ
বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন
যোগ্যতা, পছন্দ, আর্থিক সামর্থ্যের কথা মাথায় রেখে বিষয় ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকেই প্রয়োজনীয় সব তথ্য জানা যাবে।
কাগজপত্র প্রস্তুত ও আবেদন
একাডেমিক সার্টিফিকেট, মার্কশিট, আইইএলটিএস স্কোর সার্টিফিকেট, পাসপোর্টের ফটোকপি, মেডিক্যাল রিপোর্ট, আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণপত্র ও পাসপোর্ট আকারের ছবি প্রস্তুত রাখুন। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফিসহ আবেদনপত্র পাঠানোর পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যোগ্য শিক্ষার্থীদের ঠিকানায় ‘অফার লেটার’ পাঠাবে।
ভিসা আবেদন
অফার লেটার হাতে পাওয়ার পর ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে ঢাকার জার্মান দূতাবাসে। ভিসা আবেদনের দিকনির্দেশনা ও ফি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে সরাসরি যোগাযোগ করুন জার্মান দূতাবাসে অথবা ভিজিট করুন অফিসিয়াল এই সাইটে www.dhaka.diplo.de।
জার্মান পেঁৗছার পর
স্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ থাকে তিন মাস। জার্মানিতে পেঁৗছানোর পর প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধ ও আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় মেয়াদ ফুরানোর আগেই নবায়ন করে নিতে হবে।