অধ্যাপক ডা. এম এ বাসেদ
চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রভূত উন্নতির সাথে সাথে নি:সন্তান দম্পতিদের চিকিৎসাও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। যেসব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বìধ্যা স্ত্রীদের চিকিৎসায় সুফল লাভ করা যায় হাইড্রোটিউবেশন তাদের মধ্যে অন্যতম। উন্নত দেশগুলোতে ফেলোপিয়ান টিউবের কারণে প্রায় শতকরা ৩০ জন স্ত্রী স্খায়ীভাবে সন্তান জন্মদানে অক্ষম থাকে। আমাদের দেশে পারিপার্শ্বিক অবস্খার অবনতির জন্য দিনে দিনে এ ধরনের হতভাগ্য অক্ষম দম্পতির হার বেড়েই চলেছে। হাইড্রোটিউবেশন চিকিৎসার মাধ্যমে বর্তমানে দেশে শতকরা ২০ থেকে ২৬ ভাগ সন্তান জন্মদানে অক্ষম স্ত্রীকে সক্ষম করা সম্ভব।
দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে একটি পরিপক্ব ডিম ডিম্বকোষ থেকে বের হয়ে ফেলোপিয়ান টিউবের ভেতর দিয়ে জরায়ুর দিকে অগ্রসর হতে থাকে, শুক্রকীটের সাথে মিলনের জন্য। প্রত্যেক মাসিকের সময় এই প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে যত দিন পর্যন্ত স্ত্রী গর্ভ লাভ না করে অথবা মাসিক একেবারে বìধ হয়ে না যায়। আমাদের দেশে মহিলাদের মাসিক সাধারণত ৪০ থেকে ৪৫ বছর পর বìধ হয়ে যায়। যদি ডিমটি ৭২ ঘন্টার মধ্যে শুক্রকীটের সাথে মিলিত হতে না পারে, তবে কাáিক্ষত গর্ভ লাভ করতে সম্ভব হয় না। ফেলোপিয়ান টিউবের মধ্যে ডিম অথবা শুক্রকীটগুলোতে চলাফেরার বাধা অথবা টিউবের ভেতরে পরিবেশের কোনো তারতম্য থাকলে এই মিলনটি হতে পারে না এবং এই দম্পতি সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম থাকবে। হাইড্রোটিউবেশন চিকিৎসায় অনেক ক্ষেত্রে সুফল বয়ে আনতে পারে। প্রত্যেক মহিলার স্বাভাবিক অবস্খায় জরায়ুর দুই দিকে ফেলোপিয়ান টিউব থাকে। টিউবটির একটি অংশ জরায়ুর সাথে লেগে থাকে, অন্য অংশটি ডিম্বকোষকে ঘিরে রাখে, যাতে সময় মতো পরিপক্ব ডিমটিকে সহজেই টিউবের মধ্যে নিয়ে আসতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্ত হয়। এর প্রধান কারণ হলো :
১. যদি টিউবের ভেতরে যাতায়াতের রাস্তা বìধ থাকে।
২. ডিম অথবা শুক্রকীটগুলোর চলাফেরার জন্য টিউবের ভেতরে পরিবেশের তারতম্য থাকে।
৩. যদি কোনো কারণে Ligation (বন্ধ্যা) করা হয়ে থাকে।
৪. Ectopic Pregnanc-তে ( যেমন : টিউবের ভেতরে সন্তান) প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে টিউব ফেটে যায়।
প্রথম ও দ্বিতীয় কারণের জন্য হাইড্রোটিউবেশন চিকিৎসাটি ভালো ফল বয়ে আনতে পারে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে নি:সন্তান দম্পতিদের চিকিৎসা ও গবেষণা কেন্দ্রে বেশ কিছু শিশু জন্ম লাভ করেছে। Hystero salpingograpy-এর মাধ্যমে প্রথম দেখতে হবে টিউবগুলোর বর্তমান অবস্খা কী? ডিম ও শুক্রকীটগুলোর চলাফেরার জন্য টিউবের কোনো স্খানে বাধা আছে কি না অথবা কোন অংশে বাধা আছে তা নির্ণয় করতে হবে। তবে এই পরীক্ষাটি মাসিকের একটি নির্দিষ্ট সময়ে করতে হবে। যদি দেখা যায়, টিউবগুলোর কোনো অংশে বাধা আছে অথবা শেষপ্রান্তে এসে টিউবের মুখটির কিছু অংশ বìধ হয়ে আছে সে ক্ষেত্রে হাইড্রোটিউবেশন করতে হবে।
চিকিৎসাটি মোটেই ব্যয়বহুল নয়, কিন্তু সময়সাপেক্ষ। স্ত্রীকে নি:সন্তান দম্পতিদের চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করতে হয় না এবং হাইড্রোটিউবেশনের পর কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না। এই চিকিৎসাটি তিন ভাবে সন্তানহীন দম্পতিকে সন্তানদানে সাহায্য করে।
১. টিউবের ভেতরের পরিবেশকে ঠিক করে রাখে।
২. আংশিকভাবে টিউবটি বìধ থাকলে তা খুলে দিতে সাহায্য করে।
৩. টিউবের কোন অংশ বìধ আছে তা নির্ণয় করা যায়।
নি:সন্তান দম্পতির চিকিৎসা ও গবেষণা কেন্দ্র কয়েক বছর ধরে আধুনিক পদ্ধতিতে সন্তানহীন দম্পতিদের চিকিৎসা দিয়ে আসছে। অন্যান্য পদ্ধতির মতো হাইড্রোটিউবেশন একটি উন্নতমানের চিকিৎসা যা সহজেই সন্তানহীন দম্পতির মুখে হাসি ফোটাতে পারে।
লেখক : নি:সন্তান দম্পতিদের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ, এন-২৩, নূরজাহান রোড, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭
ফোন : ৮১১৫৯৩২, ০১৭১৪৩০১৯২৫