সচরাচর নির্দোষ বলে গণ্য কোনো জিনিস যদি শরীরে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তবে তাকে এলার্জি বলা হয়। যে সব দ্রব্য এলার্জি সৃষ্টি করে তাকে বলা হয় এলারজেন বা এন্টিজেন এবং এসব দ্রব্য দেহে প্রবেশের ফলে দেহের অভ্যন্তরে যে দ্রব্য সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় এন্টিবডি। এন্টিজেন ও এন্টিবডি পরস্পর মিলিত হলে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় তাকে বলা হয় এন্টিজেন-এন্টিবডি বিক্রিয়া।
হাঁপানির সঙ্গে এলার্জির গভীর সংযোগ আছে। ফুলের পরাগ, দূষিত বাতাস, ধোঁয়া, কাঁচা রংয়ের গন্ধ, চুনকাম, ঘরের ধূলো, পুরানো ফাইলের ধূলো দেহে এলার্জিক বিক্রিয়া করে হাঁপানি রোগের সৃষ্টি করে। কাজেই যারা হাপানিতে ভুগছেন তাদেরকে এগুলি পরিত্যাগ করে চলতে হবে।
ছত্রাক দেহে এলার্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টি করে। ছত্রাক হচ্ছে অতি ক্ষুদ্র সরল উদ্ভিদ। ছত্রাক ২০ ডিগ্রী সেঃ গ্রেঃ থেকে ৩২ ডিগ্রী সেঃ গ্রেঃ উত্তাপে জন্মে, ভেজা পদার্থে এই ছত্রাক জন্মাতে দেখা যায়। আবার কোনো কোনো খাদ্য ছত্রাকদ্বারা দূষিত হয়ে থাকে। পনিরে ছত্রাক মিশিয়ে তৈরী করা হয়। কোনো কোনো পাউরুটি এবং কেক তৈরী করতেও ইয়েস্ট জাতীয় ছত্রাক ব্যবহার করা হয়। আলু, পেঁয়াজও ছত্রাকদ্বারা দূষিত হয়। এই ছত্রাক ও এলর্জি তথা হাঁপানি সৃষ্টির একটি অন্যতম কারণ। ঘরের ধূলোতে একটি সচরাচর পরিচিত। এক অনুসন্ধানে দেখা যেছে যে শতকরা প্রায় ষাট শতাংশ ক্ষেত্রে এলার্জি সৃষ্টির জন্য এই ‘মাইট’ দায়ী। সে জন্যে যারা হাঁপানিজনিত এলার্জিক সমস্যায় ভোগেন তারা ঘরের ধূলো সবসময় এড়িয়ে চলবেন। ঘরের আসবাবপত্র, কম্বল, পর্দা, তোষক, বালিশ, প্রভৃতিতে যে ধূলো জমে থাকে তা পরিষ্কার করার সময় দূরে সরে থাকতে হবে।
খাদ্যে প্রচুর এলার্জির সম্ভাবনা থাকে যেমন, দুধে এলার্জি, বিশেষ করে শিশুদের থেকে গরুর দুধে খুবই বেশী এলার্জি হতে দেখা যায়। গরুর দুধে বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে গায়ে চুলকানি, হাঁপানি ইত্যাদি হতে দেখা যায়। এছাড়া গমে ডিমে, মাছে এলার্জি হতে দেখা যায়। বাদাম, কলা, আপেল, আঙ্গুর, ব্যাঙের ছাতা, তরমুজ, পেঁয়াজ, বসুন, চকোলেট, এমনকি ঠান্ডা পানীয় কোনো কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে এলার্জি সৃষ্টি করে।
পতঙ্গের কামড়ে গায়ে চুলকানি, স্থানটি ফুলে যাওয়া এমকি হাঁপানি পর্যন্তও হতে দেখা যায়। মশা, বেলেমাছি, মৌমাছি, বোলতা, ভীমরুল, প্রভৃতি, পতঙ্গের কামড়ে দেহে এলার্জির সৃষ্টি হয়।
জীবজন্তু----- যেমন বিড়াল, কুকুর, অর্শ্ব, প্রভৃতি গৃহপালিত পশু, অনেকসময় এলার্জি সৃষ্টির জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এছাড়া একটি চর্মরোগ আছে যাকে বলা হয় আর্টিকোরিয়া, বাংলায় কেউ কেউ আমরাতও বলে থাকেন। এক্ষেত্রে ত্বকে চাকা চাকা হয়। আর ফুলে উঠে চুলকাতে দেখা যায়। এটিও হল এলার্জির অন্যতম প্রকাশ। অধিকাংশ লোকের জীবনেই কোনো না কোনো সময় এই রোগ হতে দেখা যায়। এই আর্টিকোরিয়া শরীরের কোনো অংশে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে অথবা সমস্ত শরীর ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে বিভিন্ন আকারে লালচে চাকা চাকা ফোলা দাগ হতে দেখা যায় এবং সেইসঙ্গে থাকে প্রচন্ড চুলকানি। অনেকগুলো কারণ এর মধ্যে খাদ্য এলার্জির থেকেও এ রোগ হতে পারে। যেমন- বাদাম, ডাল, মাংস, ডিম ইত্যাদি। এছাড়া এই এলার্জির সৃষ্টি পতঙ্গ থেকেও হতে পারে এছাড়া ঔষধই এলার্জি সৃষ্টি দায়ী। এছাড়া এই এলার্জির সৃষ্টি পতঙ্গ মৌমাছি, ভীমরুল, মাকড়সা প্রভৃতির কামড়ে এই এলার্জি দেখা দিতে পারে। এছাড়া ঔষধ এলার্জি হতে পারে। এর মধ্যে পেনিসিলিন আর অ্যাসপিরিন অন্যতম। মোট কথা এলার্জিতে ভুগলে লক্ষ্য করবেন কোনো খাবারে আপনার এলার্জি হয় কিনা ? যদি খাবারের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় তবে সেই খাবারের সর্ম্পর্ক খুজে পাওয়া যায়। তবে সেই খাবার অবশ্যই পরিহার করতে হবে। মোট কথা যে করণে আপনার এলার্জি হয় সেই কারণ এড়িয়ে চলতে হবে।
০ডা. দিদারুল আহসান
চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ
আলরাজী হাসপাতাল, ১২, ফার্মগেট, ঢাকা।
ফোন : ০১৮১৯২১৮৩৭৮।