হাঁটু সন্ধির ব্যথা

বাত, ব্যথা ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ সহযোগী অধ্যাপক, ফিজিক্যাল মেডিসিন বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

সন্ধিবাত বা জোড়া ব্যথা জীবনে হয়নি এমন মানুষ খুব কম। এধরনের বাত ব্যথা সাধারনত বয়স্কদের বেশী হয়, তবে কম বয়সীরাও অনেক সময় এরোগে ভুগে থাকে। এখানে হাঁটুর অস্থি সংযোগের ক্ষয়জনিত রোগ বা অস্টিও আর্থোসিস নিয়ে আলোচনা করব যা বৃদ্ধ বয়সে প্রায় সকলকে পেয়ে বসে। হাঁটুর অস্থি সংযোগে বৃদ্ধ বয়সে ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে একটি পরিবর্তন সাধিত হয়। এই পরিবর্তনের ফলে হাঁটু সন্ধির নানা উপসর্গ দেখা দেয়।

উপসর্গগুলি হল-

০ হাটুর অস্থি সংযোগে ব্যথা। এ ব্যথা প্রথমে অল্প থেকে আরম্ভ হয় এবং ক্রমে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

০ হাটুর অস্থি সংযোগে সকালে শক্তভাব দেখা দেয় এবং এ কারণে অনেক সময় হাটু নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয় অথবা করলে ব্যথা আরো বৃদ্ধি পায়। তবে এই শক্তভাব সাধারণত একঘন্টার কম থাকে।

০ হাটুর অস্থি সংযোগে দুর্বলতা বা জোর না পাওয়ার অনুভূতি হয়।

০ প্রাত্যহিক কাজ যেমন, সিড়ি দিয়ে উঠানামা করা, বাথরুমে বসা ইত্যাদিতে হাঁটুর অস্থি সংযোগের ব্যথা বৃদ্ধি পায়।

০ অনেক সময় ব্যথার সাথে প্রদাহ হতে পারে। এই প্রদাহ হলে হাঁটু কিছুটা ফুলে যায়।

চিকিৎসা, প্রতিকার ও উপদেশঃ

এ রোগে বিভিন্ন প্রকার চিকিৎসকগণ প্রয়োগ করে থাকেন। ব্যথা উপশমকারী ঔষধ হিসেবে প্যারাসিটামল উত্তম। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইনডোম্যাথাসিন, ডাউক্লোফেন, আইবুপ্রোফেন রোগীর অবস্থা অনুযায়ী দেয়া হয়ে থাকে। ব্যথা থাকা অবস্থায় মাংসপেশী শিথিলকরণ ঔষধ যেমন, ডায়াজিপাম দেয়া যেতে পারে। সব ক্ষেত্রে একমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক নির্দিষ্ট মাত্রায় সঠিক নিয়মে ঔষধ খেতে হবে। হাঁটুর অস্থি সংযোগে স্টেরয়েড ঔষধ ইনজেকশন-এর মাধ্যমে রোগীর অবস্থা অনুযায়ী প্রয়োগ করা যেতে পারে। একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে এ ইনজেকশন প্রয়োগ করা উচিত। সঠিক নিয়মে এ ইনজেকশন প্রয়োগ না হলে লাভের চেয়ে ক্ষতি হবার সম্ভাবনাই বেশী থাকে। চিকিৎসক এই প্রক্রিয়ায় যথেষ্ঠ সাবধানতা অবলম্বন করে থাকেন। বিভিন্ন প্রকার তাপ এ রোগে চিকিৎসকগণ প্রয়োগ করে থাকেন যেমন, শটওয়েভ থেরাপী, আলট্রাসাউন্ড থেরাপী ইত্যাদি। রোগীর কোনো অবস্থায় এ সমস্ত থেরাপি প্রয়োগ করতে হবে তা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নির্ধারণ করে দেন।

হাঁটুর অস্থি সংযোগ ব্যথা রোগীর জন্য উপদেশঃ

০ হাঁটুর ব্যথা থাকা অবস্থায় যতদূর সম্ভব হাঁটুকে বিশ্রাম দিন।

০ ঝুকে বা উপুর হয়ে কোনো কাজ করবেন না।

০ একই স্থানে বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে অথবা বসে থাকবেন না।

০ ভারী কোনো জিনিস যেমন, এক বালতি পানি, বেশী ওজনের বাজারের থলি ইত্যাদি বহন করবেন না।

০ ঝরনায় অথবা সোজা হয়ে বসে তোলা পানি দিয়ে গোসল করবেন।

০ পিড়িতে বসে কোনো কাজ করবেন না।

০ডা. এম এ শাকুর

বাত রোগ বিশেষজ্ঞ

সহযোগী অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

মোবাইল : ০১৮১৯৪১০০৮০।