এস এম মাহফুজ
আরিফ। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের ছাত্র। উঠে এসেছে অজপাড়া গাঁয়ের এক প্রতিষ্ঠান হতে। এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৪.৭৫ পেয়ে সেই প্রতিষ্ঠানেই এইচএসসি ভর্তি। এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করাকে সে তার জীবনের মিশন হিসেবে নেয়। অজপাড়া গাঁয়ের প্রতিষ্ঠান হলেও উচ্চশিক্ষার স্বপ্নে সে বিভোর। এ লক্ষ্যে তার প্রস্তুতিও থেমে থাকেনি। ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৩০০ জনের মধ্যে সে দৃঢ় অবস্থান করে নেয়।
অন্যদিকে আসিফ এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে ভর্তি হয় ঢাকার ঐতিহ্যবাহী নটরডেম কলেজে। কলেজে ভর্তি হয়েই শুরু হয় তার অন্যরকম জীবন। পড়াশোনা আর উচ্চশিক্ষার চিন্তা সে তো অনেক দূর। এইচএসসি পাশ করলেও ভাগ্য হয়নি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। ভর্তি পরীক্ষায় সে কুপোকাত। অবশেষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ই তার ঠিকানা। আরিফ আর আসিফের মত শত উদাহরণ সমাজে বিদ্যমান। এসএসসির পর এইচএসসি। এইচএসসি মানেই কলেজ। গত ১২ জুলাই হতে দেশের কলেজগুলোতে এইচএসসির ক্লাশ শুরু হয়ে গেছে। সুতরাং এবার তোমাদের উচ্চশিক্ষার নতুন প্রস্তুতি।
প্রকৃত মেধাকে শানিত কর :
তোমরা সবাই এসএসসিতে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়েই কলেজে এসেছো। তোমাদের যে মেধা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করেছো সে মেধাকে শানিত করে নাও এখনি। তোমাদের আর পিছু হটা নয়। যে অবস্থায় আছো, যে প্রতিষ্ঠানেই ভর্তি হওনা কেন, এখান থেকেই এগিয়ে যাও। কেউ পছন্দমত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে না পারলেও মন খারাপের কিছুুনেই। কলেজের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তোমার মেধা। তুমি পড়াশুনায় কতটা মনযোগী। তোমার নিজের চেষ্টায় তুমি কত ভাল করেছো সেটাই দেখার বিষয়। এক্ষেত্রে তোমার একাডেমিক পড়াতো বটেই, সাথে গোটা বিশ্ব সম্পর্কেও তোমাকে জানতে হবে।
প্রস্তুতি নাও উচ্চশিক্ষার :
তোমার কলেজের দু’বছর চোখের পলকেই কেটে যাবে। এ দু’বছর তোমার জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এইচএসসি পরীক্ষায় ভাল ফল করলেই কেবল উচ্চশিক্ষার কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানে তুমি ভর্তি হতে পারবে। সেজন্য এখন থেকেই নিতে হবে প্রস্তুতি। মনে রাখবে তোমার পরবর্তী উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের পরীক্ষায় কলেজের বই থেকেই অনেক প্রশ্ন এসে থাকে। তাই একাডেমিক বিষয়ে তুমি যত দক্ষ হবে, তোমার উচ্চশিক্ষায় প্রবেশের সম্ভাবনা ততই বেড়ে যাবে। আর অন্যসব বিষয়েও জ্ঞান লাগবে। দিন দিন বাড়ছে প্রতিযোগিতা। উচ্চশিক্ষার এ প্রতিযোগিতার প্রস্তুতির মূল সময় এখনই।
লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হবেনা :
কলেজে নতুন শ্রেণীতে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গে নতুন শিক্ষাঙ্গন, নতুন পরিবেশ, নতুন বই আর নতুন নতুন বন্ধু বান্ধব তোমার সময়গুলোকে আচ্ছন্ন করে রাখবে। কিন্তু আনন্দের আতিশয্যে ভুলে গেলে চলবে না যে, তোমাকে খুব শীঘ্রই নতুন করে যোগ্যতা প্রমাণের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে হবে। যে যোগ্যতা তোমাকে পৌঁছে দেবে তোমার জীবনের মানজিল মাকসুদে। তোমার লক্ষ্যের সাথে সাথে তোমার প্রতিজ্ঞাও থাকতে হবে। তুমি যদি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হও যে, আমি বুয়েটে, কিংবা আইবিএ-তে চান্স পাবই এবং সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিতে থাকো তবে সফলতা তোমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবেই।
সময়কে কাজে লাগাও যথাযথভাবে :
একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি তোমাদের শেষ। এখন ক্লাশ আর পড়াশোনার রুটিন ওয়ার্ক। এ সময়টি কাজে লাগাবে সফলভাবে। ক্লাসে উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনের পাঠ অনুশীলন তো থাকবেই। সে সঙ্গে প্রথম থেকেই প্রতিটি বিষয়ের কঠিনতম অংশগুলো আয়ত্ত্বে আনার চেষ্টা করবে। মুখস্থ এবং গতানুগতিক নোটবই বা গাইড বই এড়িয়ে প্রতিটি বিষয়কে বিস্তারিতভাবে বুঝার চেষ্টা করবে। শিক্ষক ছাড়াও সহপাঠীদের সঙ্গে শেয়ার করবে পড়ার বিষয় নিয়ে। এসএসসি পরীক্ষায় যারা তুলনামূলকভাবে খারাপ করেছ, তারা যথাযথ শ্রম দিয়ে এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করার চেষ্টা করবে। প্রথম থেকে সচেষ্ট হলে দুই বছর শেষে তোমরা নতুন করে সাফল্য দেখবার সুযোগ পাবে। সে সুযোগ তোমার কেবল উচ্চশিক্ষার পথই তৈরি করবে না, তোমাদের জীবন তথা ভবিষ্যৎ কর্মজীবনকে সফল করবে।
বন্ধুরা কলেজের পড়াশোনাই তোমাকে বলে দেবে উচ্চশিক্ষার কোন্ পথে তুমি হাঁটবে। উচ্চশিক্ষার জন্য তোমাদের যার যে স্বপ্ন আছে সে স্বপ্ন পূরণে কলেজের পড়াশোনার পাশাপাশি দেশ ও বিদেশকে জানতে কিংবা উচ্চশিক্ষার বিস্তারিত তথ্য জানতে মাসিক কারেন্ট ইস্যুসহ অন্যান্য মাসিক, কারেন্ট ও দৈনিক সংবাদপত্র তোমার সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।