এসএম মাহফুজ
মাটি ও মানুষের দেশ বাংলাদেশ। এদেশের মাটিতে সোনা ফলে। কৃষি প্রধান দেশটিতে কৃষি ব্যবস্থার আধুনিকায়নের মাধ্যমেই জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধি সম্ভব। সবুজ শ্যামল ফসলের এদেশে তাই “ক্রপ এন্ড সায়েন্স টেকনোলজি” পড়ার গুরুত্ব অনেক। এ বিষয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে কৃষিখাতে অবদান রাখার পাশাপাশি নানামুখী ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগও রয়েছে।
চীন বর্তমান বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। অর্থনৈতিক মন্দায় যখন বড় বড় শক্তিধর দেশগুলো ফতুর, চীন তখনও সম্পদশালী। চীন কৃষিপ্রধান দেশ। বর্তমান বিশ্বের ধনী দেশগুলোর অর্থনৈতিক ইতিহাসে দেখি, তারা শিল্পে উন্নত হওয়ার আগে কৃষিতে উন্নতি লাভ করেছিলো। তাই এটা সত্যি, মান্ধাতা আমলের কৃষিব্যবস্থা আধুনিকায়নের মাধ্যমেই বাংলাদেশের জাতীয় উন্নতি সম্ভব। বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হলেও কৃষি এখানে অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে। এ কথা সত্যি যে, দেশের ক্রমহ্রাসমান ফসলের জমির বিপরীতে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার বেপরোয়া চাহিদার যোগান দেয়া অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় আবশ্যক হয়ে পড়েছে বিদ্যমান সীমিত আবাদী জমির সর্বোচ্চ ব্যবহারের। প্রয়োজন বিজ্ঞানসম্মতভাবে মাটি, পানি, পরিবেশ, আবহাওয়া উপযোগী কৃষিপণ্য উৎপাদন, গবেষণা এমনকি সার্বিক কৃষি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর। আর এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে “ক্রপ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি বা শস্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি” বিভাগটি।
এ বিষয়ের কোর্সের অন্তর্ভূক্ত বিষয়
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিশিক্ষার সাথে সংগতি রেখেই বিএসসি এজি (অনার্স) ডিগ্রির কোর্স কারিকুলাম প্রস্তুত করা হয়েছে। চার বছর মেয়াদি এই কোর্সে মোট ৪,৮০০ নাম্বারের সিলেবাস পড়ানো হয়। এর মধ্যে ৩,০০০ তত্ত্বীয় এবং ১,৭০০ নাম্বার ব্যবহারিক। এছাড়াও জব ওরিয়েন্টেড কোর্সের জন্য ব্যবহারিকসহ ১০০ নাম্বার বরাদ্দ আছে।
এখানের কোর্সে মেজর সাবজেক্ট হিসেবে যে বিষয়গুলো পড়ানো হয় তা হলো-
- এগ্রোনমি
- সয়েল সায়েন্স
- হর্টিকালচার
- ক্রপ বোটানি
- এনটোমলজি
- প্ল্যান্ট প্যাথলজি
- জেনেটিক্স এ্যান্ড ব্রিডিং
- বায়োকেমিস্ট্রি
- এগ্রো ফরেস্ট্রি
- এগ্রো ইকনমিক্স
- ফার্ম মেকানিক্স
- পোস্ট হার্ভেস্ট টেকনোলজি
- এগ্রো মেটেরিওলজি।
এছাড়া ননমেজর সাবজেক্ট হিসেবে এগ্রি স্ট্যাটিস্টিক্স, এনিমেল হাজবেন্ড্রি, রুরাল সোসিওলজি এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিষয়গুলো পড়ানো হয়।
ভর্তি যোগ্যতা
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে “ক্রপ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি” বিভাগে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রার্থীকে অবশ্যই এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ হতে হবে। এক্ষেত্রে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক উভয় পরীক্ষায় মোট জিপিএ ৭.৫ (৪র্থ বিষয়সহ) থাকতে হবে। তবে এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষাতেই ন্যূনতম জিপিএ ৩.৫ (৪র্থ বিষয়সহ) থাকতে হবে। “ও” লেভেল এবং “এ” লেভেল পরীক্ষায় পাসকৃত ছাত্র/ছাত্রীদের উভয় পরীক্ষায় ন্যূনতম “বি” গ্রেড পেতে হবে।
ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় সকল প্রতিযোগীকে MCQ (এমসিকিউ) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। রসায়ন-১২, ইংরেজি-০৬ ও জীব বিজ্ঞান/কৃষি বিজ্ঞান-৪২। মোট ৬০ নম্বরের পরীক্ষায় ১০০টি প্রশ্নের উত্তর ১ ঘণ্টায় দিতে হবে। প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২ কাটা যাবে। ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সাথে এসএসসি ও এইচএসসির মোট জিপিএ স্কেল যোগ করে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি করা হয়। বিভাগটির আসন সংখ্যা ১৫। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এই বিভাগের অধীনে এমএস, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
ক্যারিয়ার সম্ভাবনা
এ বিষয়ের ক্যারিয়ার খুবই উজ্জ্বল। কৃষিপ্রধান এ দেশেতো বটেই, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এর ব্যাপক ক্যারিয়ার আছে। যে কোনো বিষয়ের পড়াশোনা শেষে দু’ধরনের ক্যারিয়ার রয়েছে- প্রোফেশনাল এবং সাধারণ। এ বিষয়ে পড়াশোনা শেষে প্রোফেশনাল জব হিসেবে কৃষি সংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের শস্য গবেষণা কেন্দ্রে কর্মসংস্থানের দারুণ সুযোগ রয়েছে।
তাছাড়া কৃষি উন্নয়নে কর্মরত দেশী-বিদেশী এনজিওগুলোতেও সহজেই ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব। এটা স্পষ্ট যে বাংলাদেশে একমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়েই বিভাগটি রয়েছে। আর এর আসন সংখ্যা মাত্র ১৫। অথচ আমাদের দেশের ৬৪টি জেলায় এবং ৪৮৩টি উপজেলায়ই কৃষি অফিসারের পদ রয়েছে। সেই সাথে কেন্দ্রীয়ভাবে তো নানা অফিস ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছেই। মোটের ওপর কৃষি মন্ত্রণালয় এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়েও এ বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষে ক্যারিয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চীনের মত বিভিন্ন দেশ আছে কৃষিপ্রধান। কৃষি নিয়ে গোটা বিশ্বেই চাহিদা রয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনার যোগ্যতানুযায়ী কৃষির আন্তর্জাতিক সংস্থা, সংগঠন, গবেষণা প্রতিষ্ঠানেও প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে সহজেই ১৫-৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। আবার সাধারণ ডিগ্রি হিসেবে দেশের সকল প্রতিষ্ঠানেই যেমন ব্যাংক, বীমা, স্কুল, কলেজসহ সাধারণ সকল চাকরির দরজাই আপনার জন্য উন্মুক্ত। আপনার এক্সেলেন্সি দিয়ে আপনার বিভাগে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট, সেকেন্ড কিংবা থার্ড হওয়ার মাধ্যমে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় তো বটেই, ভবিষ্যতে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়টি খুলবে সেখানে সহজেই আপনি শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন।
বিদেশে উচ্চ শিক্ষা
ক্রপ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি বিষয়ে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার রয়েছে অবারিত সুযোগ। আমেরিকার পুরুদে (Purude) ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব গ্ল্যামারগন, লন্ডনের এবারডন, নটিংহাম, ব্রিস্টল ও হার্টফোর্ডশায়ার ইউনিভার্সিটি এবং নিউজিল্যান্ডের দি ইন্টারন্যাশনাল টেকনোলজি এ্যান্ড এগ্রিকালচার কলেজসহ গোটা বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স, মাস্টার্স, এমফিল এবং পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে স্কলারশিপও ছেড়ে থাকে।
যোগাযোগ
ক্রপ সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগ
কৃষি অনুষদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ফোন : ০৬৪৪৭-২৯০২৪৫