সেদিন যা ঘটেছিল

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। ভোররাত। ধানমণ্ডির বাড়িটি আক্রান্ত হওয়ার আগেই রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার আত্মীয় ও মন্ত্রিসভার সদস্য আবদুর রব সেরনিয়াবাতের হত্যাকাণ্ডের খবর পেয়ে যান।

যে ঘরে বঙ্গবন্ধু ছিলেন তার বাইরের বারান্দায় ঘুমিয়েছিল মো. সেলিম (আব্দুল) ও আব্দুর রহমান শেখ (রমা)।

উপর থেকেই বঙ্গবন্ধু নিচতলায় তার ব্যক্তিগত সহকারি এ এফ এম মহিতুল ইসলামকে টেলিফোন করে বলেন, "সেরনিয়াবাতের বাসায় দুষ্কৃতিকারীরা আক্রমণ করেছে। জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন লাগা।" পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে, মহিতুল গণভবন (তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়) এক্সচেঞ্জে চেষ্টা করতে থাকেন।

ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির রক্ষীরা বিউগল বাজিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শুরু করা মাত্রই বাড়িটি লক্ষ করে দক্ষিণ দিক থেকে সরাসরি আক্রমণ শুরু হয়।

একটু পরেই বঙ্গবন্ধু তার ঘরের দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে আসেন। ঘুম থেকে ওঠে গৃহকর্মী আব্দুল আর রমা। বেগম মুজিবের কথায় রমা নিচে নেমে মেইন গেটের বাইরে এসে দেখেন সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য গুলি করতে করতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে এগুচ্ছে।

রমা বাড়ির ভেতরে ফিরে দেখেন, লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধু নিচতলায় নামছেন।
দোতলায় গিয়ে দেখেন, বেগম মুজিব আতঙ্কিত অবস্থায় ছোটাছুটি করছেন। রমা আর দোতলায় দাঁড়িয়ে না থেকে তিনতলায় চলে যান এবং বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল ও তার স্ত্রী সুলতানা কামালকে ঘুম থেকে তোলেন।

ঘটনা শুনে শার্ট-প্যান্ট পড়ে নিচতলায় নামেন শেখ কামাল। সুলতানা কামাল আসেন দোতলা পর্যন্ত।

রমা দোতালায় শেখ জামাল ও তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে তোলেন। জামা-কাপড় পরে শেখ জামাল তার স্ত্রীকে নিয়ে দোতলায় বেগম মুজিবের কক্ষে যান।

ওদিকে গোলাগুলির মধ্যে অভ্যর্থনা কক্ষে বঙ্গবন্ধুর সামনেই বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে থাকেন মহিতুল।

পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও গণভবন এক্সচেঞ্জে চেষ্টার এক পর্যায়ে রিসিভার নিয়ে বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেন, "আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি ..."। বঙ্গবন্ধু তার কথা শেষ করতে পারেননি।

একঝাঁক গুলি জানালার কাচ ভেঙে অফিসের দেয়ালে লাগে। কাচের এক টুকরায় মহিতুলের ডান হাতের কনুই জখম হয়। ওই জানালা দিয়ে গুলি আসতেই থাকে। বঙ্গবন্ধু টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন এবং মহিতুলের হাত ধরে কাছে টেনে শুইয়ে দেন।

এর মধ্যেই গৃহকর্মী আব্দুলকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে তার পাঞ্জাবি ও চশমা পাঠিয়ে দেন বেগম মুজিব। কিছুক্ষণ পর গুলিবর্ষণ থেমে গেলে বঙ্গবন্ধু উঠে দাঁড়িয়ে আব্দুলের হাত থেকে পাঞ্জাবি আর চশমা নিয়ে পরেন। নিচতলার এই ঘর থেকে বারান্দায় বের হয়ে বঙ্গবন্ধু পাহারায় থাকা সেনা ও পুলিশ সদস্যদের বলেন, "এতো গুলি হচ্ছে, তোমরা কী করছো ?" এ কথা বলেই বঙ্গবন্ধু উপরে চলে যান।

বঙ্গবন্ধু উপরে উঠতে না উঠতেই শেখ কামাল নিচে নেমে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলেন, "আর্মি আর পুলিশ ভাইরা, আপনারা আমার সঙ্গে আসেন।" এ সময় শেখ কামালের পেছনে গিয়ে দাঁড়ান মহিতুল ইসলাম ও পুলিশের ডিভিশনাল সুপারিনটেনডেন্ট (ডিএসপি) নুরুল ইসলাম খান।

ঠিক তখনই মেজর নূর, মেজর মহিউদ্দিন (ল্যান্সার) এবং ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা সৈন্যদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢোকে। গেটের ভেতর ঢুকেই তারা 'হ্যান্ডস্ আপ' বলে চিৎকার করতে থাকে। মহিতুল ইসলামকে টেনে ঘরের মধ্যে নিয়ে যান নুরুল ইসলাম খান।

কোনো কথা না বলেই শেখ কামালের পায়ে গুলি করে বজলুল হুদা। নিজেকে বাঁচাতে লাফ দিয়ে ঘরের মধ্যে গিয়ে পড়েন শেখ কামাল। মহিতুলকে বলতে থাকেন, "আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল। আপনি ওদেরকে বলেন।" মহিতুল ঘাতকদের বলেন, "উনি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।"

এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে শেখ কামালকে লক্ষ করে বজলুল হুদা তার হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে ব্রাশফায়ার করে। সঙ্গে সঙ্গে মারা যান শেখ কামাল। এর মধ্যে একটা গুলি মহিতুলের হাঁটুতে আরেকটা নুরুল ইসলামের পায়ে লাগে।

এ অবস্থাতেই মহিতুলকে টেনে নুরুল ইসলাম তার কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তারা দেখেন, পুলিশের বিশেষ শাখার এক সদস্য দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপছে। অস্ত্রটা তার পায়ের কাছে পড়ে আছে। মুহূর্তের মধ্যে ওই ঘরে ঢুকে বজলুল হুদা সবাইকে বাইরে গিয়ে দাঁড়ানোর আদেশ দেয়।

নিচে কী হচ্ছে তার কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি দোতলায় তার ঘরের দরজা বন্ধ করে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ফোনে তার সামরিক সচিব কর্নেল জামিলউদ্দিনকে পান। তিনি তাকে বলেন, "জামিল, তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আর্মির লোকরা আমার বাসা অ্যাটাক করেছে। শফিউল্লাহকে ফোর্স পাঠাতে বলো।"

তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহকেও ফোন করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি তাকে বলেন, "শফিউল্লা তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে, কামালকে (শেখ কামাল) বোধ হয় মেরে ফেলেছে। তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও।"

জবাবে শফিউল্লাহ বলেন, "আই অ্যাম ডুয়িং সামথিং। ক্যান ইউ গেট আউট অফ দ্যা হাউজ?"

বঙ্গবন্ধুর কথা শোনার পরই কর্নেল জামিল তার ব্যক্তিগত লাল রঙের গাড়িটি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন। সঙ্গে ছিলেন নিজের গাড়িচালক আয়েনউদ্দিন মোল্লা। কিন্তু, পথেই সোবাহানবাগ মসজিদের কাছে তাকে গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা। পালিয়ে বেঁচে যান আয়েনউদ্দিন।

এদিকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গেটের সামনে মহিতুল, নুরুল ইসলাম, আব্দুল মতিন, পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যসহ অন্য সদস্যদের সারি করে দাঁড় করানো হয়। এর মধ্যে ঘাতকদের একজন পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যকে গুলি করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি পড়ে যান।
এরপর ঘাতকরা গুলি করতে করতে ওপরে চলে যায়। তারা শেখ জামালের ঘরের বাথরুমে আশ্রয় নেওয়া গৃহকর্মী আব্দুলকে গুলি করে। হাতে ও পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থাতে তিনি সিঁড়ির পাশে গিয়ে হেলান দিয়ে বসে থাকেন।

"তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?"

বঙ্গবন্ধুর ঘরে তিনি ছাড়াও ছিলেন বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সুলতানা কামাল, রোজী জামাল। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ঘরের বাইরে অবস্থান নেয়। গোলাগুলি থামলে বঙ্গবন্ধু দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে আসলেই ঘাতকরা তাকে ঘিরে ধরে। মেজর মহিউদ্দিন ও তার সঙ্গের সৈন্যরা বঙ্গবন্ধুকে নিচে নিয়ে যেতে থাকে। ঘাতকদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন, "তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?"

রক্তে ভেসে যায় সারা সিঁড়ি

বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের কাছে মহিউদ্দিন ঘাবড়ে যায়। বঙ্গবন্ধু বলেন, "তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি, কী করবি- বেয়াদবি করছিস কেন?" এ সময় নিচতলা ও দোতলায় সিঁড়ির মাঝামাঝি অবস্থান নেয় বজলুল হুদা ও নূর। বঙ্গবন্ধুকে নিচে নিয়ে আসার সময় নূর কিছু একটা বললে মহিউদ্দিন সরে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে বজলুল হুদা ও নূর তাদের স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে।

বঙ্গবন্ধুর বুকে ও পেটে ১৮টি গুলি লাগে। নিথর দেহটা সিঁড়ির মধ্যে পড়ে থাকে। সারা সিঁড়ি ভেসে যায় রক্তে।

রমাই প্রথম বেগম মুজিবকে জানায়, বঙ্গবন্ধুকে গুলি করা হয়েছে

বঙ্গবন্ধুর পেছন পেছন রমাও যাচ্ছিলো। কিন্তু, ঘাতকরা তাকে ঘরের মধ্যে চলে যেতে বলে। এর মধ্যে দোতলায় শেখ রেহানার ঘরে থাকা তার চাচা শেখ নাসের ওই কক্ষে যায়। তার হাতে গুলি লাগার ক্ষত ছিলো। রমাই প্রথম বেগম মুজিবকে জানায়, বঙ্গবন্ধুকে গুলি করা হয়েছে।

এ সময় ওই ঘরের বাথরুমে আশ্রয় নেন বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, শেখ নাসের ও রমা। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে নিচে নেমে এসে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

এরপর পরই মেজর আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেউদ্দিন তাদের সৈন্যসহ বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আসে। আজিজ পাশা তার সৈন্যদের নিয়ে দোতলায় চলে যায়। তারা বঙ্গবন্ধুর ঘরের দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা দরজায় গুলি করে। তখন বেগম মুজিব দরজা খুলে দেয় এবং ঘরের মধ্যে যারা আছে তাদের না মারার জন্য অনুরোধ করেন।

ঘাতকরা বেগম মুজিব, শেখ রাসেল, শেখ নাসের ও রমাকে নিচে নিয়ে আসতে থাকে।

সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখেই বেগম মুজিব কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং চিৎকার দিয়ে বলেন, "আমি যাব না, আমাকে এখানেই মেরে ফেলো।"

রক্তক্ষরণে বিবর্ণ হয়ে যায় সুলতানা কামালের মুখ

বেগম মুজিব নিচে নামতে অস্বীকৃতি জানান। ঘাতকরা শেখ রাসেল, শেখ নাসের ও রমাকে নিচে নিয়ে যায়। আর, বেগম মুজিবকে তার ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। বেগম মুজিবসহ বঙ্গবন্ধুর ঘরে আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া শেখ জামাল, সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেউদ্দিন।

বেগম মুজিবের নিথর দেহটি ঘরের দরজায় পড়ে থাকে। বাঁ'দিকে পড়ে থাকে শেখ জামালের মৃতদেহ। রোজী জামালের মুখে গুলি লাগে। আর রক্তক্ষরণে বিবর্ণ হয়ে যায় সুলতানা কামালের মুখ।

শেখ মুজিব বেটার দ্যান শেখ নাসের

শেখ নাসের, শেখ রাসেল আর রমাকে নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদেরকে সবাইকে সঙ্গে লাইনে দাঁড় করানো হয়। এ সময় শেখ নাসের ঘাতকদের উদ্দেশ্যে বলেন, "আমি তো রাজনীতি করি না। কোনো রকম ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই।"

ঘাতকরা একে অপরকে বলে, "শেখ মুজিব বেটার দ্যান শেখ নাসের।"

এরপর তারা শেখ নাসেরকে বলে, "ঠিক আছে। আপনাকে কিছু বলবো না। আপনি ওই ঘরে গিয়ে বসেন।" এই বলে তাকে অফিসের সঙ্গে লাগোয়া বাথরুমে নিয়ে গুলি করে। এরপর শেখ নাসের 'পানি পানি' বলে গোঙাতে থাকেন। তখন শেখ নাসেরের ওপর আরেকবার গুলিবর্ষণ করা হয়।

'ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো?'

লাইনে দাঁড়িয়ে শেখ রাসেল প্রথমে রমাকে ও পরে মহিতুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে বলে, "ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো?"

মহিতুল জবাব দেয়, "না ভাইয়া, তোমাকে মারবে না।" এ সময় শেখ রাসেল তার মায়ের কাছে যেতে চাইলে আজিজ পাশা মহিতুলের কাছ থেকে জোর করে তাকে দোতলায় নিয়ে যেতে বলে।

আজিজ পাশার কথা মতো এক হাবিলদার শেখ রাসেলকে দোতলায় নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে। রাসেলের চোখ বের হয়ে যায়। আর মাথার পেছনের অংশ থেতলে যায়। রাসেলের দেহটি পড়ে থাকে সুলতানা কামালের পাশে।

পুরো ঘরের মেঝেতে মোটা রক্তের আস্তর পড়ে গিয়েছিলো। এর মাঝেই ঘাতকের দল লুটপাট চালায়।

বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সেদিন তার দু'মেয়ে ছিলেন না। বড় মেয়ে শেখ হাসিনা স্বামীর সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন। ছোট বোন শেখ রেহানাকেও নিয়ে গিয়েছিলেন তারা।

ঘাতকদের প্রস্তুতি

১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর টু-ফিল্ড রেজিমেন্টের যানবাহনগুলো সচল হয়ে ওঠে। ক্যান্টনমেন্টের দক্ষিণে অবস্থিত ইউনিট থেকে ১০৫এমএম কামানগুলোকে ভারি ট্রাক দিয়ে টেনে নির্মাণাধীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় নিয়মিত নৈশ প্রশিক্ষণের জন্য।

রাত ১০টার দিকে সেনানিবাসের উত্তর প্রান্ত থেকে বেঙ্গল ল্যান্সারের টি-৫৪ ট্যাংকগুলো ইউনিট থেকে বেরিয়ে পড়ে। এয়ারপোর্টে ১৮টি কামান ও ২৮টি ট্যাংক একত্রিত হয়।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে মেজর ডালিম, মেজর নূর, মেজর হুদা, মেজর শাহরিয়ার, মেজর পাশা, মেজর রাশেদ প্রমুখ সেখানে জড়ো হয় ।

১৫ আগস্ট রাতের প্রথম প্রহরে মেজর ফারুক অফিসারদের নির্দেশ দেয় বিমান বন্দরের কাছে হেড কোয়ার্টারে স্কোয়াড্রন অফিসে মিলিত হতে। অফিসারদের আপারেশনের পরিকল্পনা জানায় মেজর ফারুক।

সে-ই ছিলো এই অপারেশনের দায়িত্বে। প্রধান টার্গেট বঙ্গবন্ধুর বাড়ি সরাসরি আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়। ওই বাড়িকে ঘিরে দু'টো বৃত্ত তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। আরো সিদ্ধান্ত হয়, ভেতরের বৃত্তের সদস্যরা সরাসরি বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণ করবে। বাইরে থেকে রক্ষীবাহিনী বা ভেতর থেকে সেনাবাহিনীর কোনো আক্রমণ এলে তা ঠেকানোর দায়িত্বে দেওয়া হয় বাইরের বৃত্তের সদস্যদের।

এর দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর নূর ও মেজর হুদাকে। সিদ্ধান্ত হয়- তারা ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর রোড, সোবাহানবাগ মসজিদ এবং ৩২ নম্বর ব্রিজে রোড ব্ল�ক করবে। প্রধান টার্গেট বঙ্গবন্ধুর বাসা আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ধানমণ্ডিতেই শেখ ফজলুল হক মণি এবং আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় আক্রমণেরও সিদ্ধান্ত হয়।

ডালিমকে বঙ্গবন্ধুর বাসায় আক্রমণের সময় উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেন মেজর ফারুক। কিন্তু, পূর্ব সম্পর্কের অজুহাতে বঙ্গবন্ধুর বাসায় আক্রমণে উপস্থিত না থেকে স্বেচ্ছায় সেরনিয়াবাতের বাসায় আক্রমণের দায়িত্ব নেয় ডালিম।

ভারি মেশিনগান সংযোজিত দ্রুতগতির একটি জিপে রওনা দেয় ডালিম। সঙ্গে এক প্লাটুন ল্যান্সারসহ একটি বড় ট্রাক।

শেখ মণির বাসায় আক্রমণের দায়িত্ব দেওয়া হয় রিসালদার মোসলেমউদ্দিনকে। তার সঙ্গে দেওয়া হয় দু'প্ল�াটুন সৈন্য।

এক কোম্পানি সেনাসহ রেডিও স্টেশন, বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউমার্কেট এলাকার দায়িত্বে থাকে মেজর শাহরিয়ার। একই সঙ্গে ওই গ্র"পকে বিডিআর থেকে কোনো ধরনের আক্রমণ হলে প্রতিহত করার দায়িত্বও দেওয়া হয়।

২৮ টি গোলাবিহীন ট্যাংক নিয়ে শের-ই বাংলা নগরে রক্ষীবাহিনীকে প্রতিহত করার দায়িত্ব নেন মেজর ফারুক নিজে। তবে ট্যাংকের মেশিনগানগুলোয় প্রচুর গুলি ছিলো।

মেজর মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের জন্য ১২টি ট্রাকে সাড়ে তিনশ' সাধারণ সৈনিককে তৈরি করা হয়।

মেজর রশিদের সরাসরি কোনো আক্রমণের দায়িত্ব ছিলো না। তার দায়িত্ব ছিলো হত্যাকাণ্ড পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এবং সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সমন্বয় করা।

তার নেতৃত্বে থাকা ১৮টি কামান গোলা ভর্তি করে যুদ্ধাবস্থায় তৈরি রাখা হয়। কামানগুলো রক্ষীবাহিনীর হেড কোয়ার্টার এবং বঙ্গবন্ধুর বাসা লক্ষ করে তাক করা হয়। একটি মাত্র ১০৫ এমএম হাউইটজার কামান রাখা হয় আর্টিলারির মেজর মহিউদ্দিনের অধীনে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে লেকের পাড়ে।

দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার পর সবাইকে তাজা বুলেট ইস্যু করা হয়। ঘাতকের দল বিমানবন্দর এলাকা থেকে ভোররাত ৪ টার দিকে ধানমণ্ডির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ফারুকের নেতৃত্বে ২৮ টি ট্যাংক বিমানবন্দর সড়কে বনানীর এম.পি. চেকপোস্ট দিয়ে সেনানিবাসের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এর মধ্যে ফজরের আজান পড়ে যায়।

ফারুক তার ট্যাংক নিয়ে ৪৬ ব্রিগেড ইউনিটের লাইনের একেবারে ভেতর দিয়ে বাইপাস সড়ক ধরে সেনাসিবাসের প্রধান সড়কে চলে আসে। ঢাকা সেনানিবাসে সে সময়ে বিমানবাহিনীর যে হেলিপ্যাড ছিলো, তার ঠিক উল্টো দিকের একটি গেট দিয়ে ফারুক তার ট্যাংক নিয়ে বিমানবন্দরের (পুরনো বিমানবন্দর) ভেতর ঢুকে পড়ে। এ সময় ফারুককে অনুসরণ করছিলো মাত্র দু'টি ট্যাংক। বাকি ট্যাংকগুলো পথ হারিয়ে জাহাঙ্গীর গেট দিয়ে ফার্মগেটের দিকে এগুতে থাকে।

ফারুক এয়ারপোর্টের পশ্চিম দিকের দেয়াল ভেঙে রক্ষীবাহিনীর হেডকোয়ার্টারের সামনে উপস্থিত হয়।

রাত সোয়া ৫ টার দিকে মেজর ডালিম ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের নেতৃত্বে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ মণির বাসা আক্রান্ত হয়।

শেখ মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা করে ঘাতকরা। প্রাণে বেঁচে যান শেখ মণির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপস।

ডালিমের নেতৃত্বে হত্যা করা হয় আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ১৪ বছর বয়সী মেয়ে বেবী, ১২ বছরের ছেলে আরিফ, চার বছরের নাতি বাবু (আবুল হাসনাত আবদুল্লার ছেলে), ভাতিজা শহীদ সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে আবদুল নইম খান রিন্টু (আওয়ামী লীগ নেতা আমীর হোসেন আমুর খালাতো ভাই), তিন অতিথি এবং চারজন কাজের লোককে।

দাফন

পরের দিন ঢাকার স্টেশন কমান্ডার আব্দুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর লাশ ছাড়া ১৫ আগস্টে নিহতদের লাশ দাফন করেন। আব্দুল হামিদ ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে কফিনে নিহতদের লাশ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে শেখ মণি ও আবদুর রব সেরনিয়াবাতের পরিবারের সদস্যদের লাশ সংগ্রহ করে বনানী গোরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করেন।

বনানী কবরস্থানে সারিবদ্ধ কবরের মধ্যে প্রথমটি বেগম মুজিবের, দ্বিতীয়টি শেখ নাসেরের, এরপর শেখ কামাল, সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, রোজী জামাল, শেখ রাসেল, ১৩ নম্বরটি শেখ মণির, ১৪ নম্বরটি আরজু মণির, ১৭ নম্বরটি সেরনিয়াবাতের আর বাকি কবরগুলো সেদিন এই তিন বাড়িতে যারা মারা গেয়েছিলেন তাদের। ১৬ আগস্ট সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে বঙ্গবন্ধুর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় টুঙ্গীপাড়ায়। সেখানে তাকে দাফন করা হয় তার বাবার কবরের পাশে। সেনাবাহিনীর ওই হেলিকপ্টারের পাইলট ছিলেন ফ্লাইট লে. শমশের আলী।

সূত্র: বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দেওয়া এ এফ এম মহিতুল ইসলাম, আব্দুর রহমান শেখ (রমা), মো. সেলিম (আব্দুল), অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার মো. কুদ্দুস শিকদার, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল হামিদ, সাবেক সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ, আয়েনউদ্দিন মোল্লা (সোবহানবাগে নিহত বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিলউদ্দিনের গাড়িচালক) এর সাক্ষ্য এবং অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল হামিদের বই 'তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা'।

ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডের সেই রায়

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় বিচারিক আদালত বরখাস্ত লে.কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানসহ ১৫ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলো।

১৯৯৮ সালের ৮ই নভেম্বর দেওয়া ওই রায়ে ফায়ারিং স্কোয়াডে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছিলো, এভাবে কার্যকরে কর্তৃপক্ষের কোন অসুবিধা থাকলে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তা কার্যকর করা যাবে।

তৎকালীন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ গোলাম রসুল এই রায় দেন। আদালত সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত তাহেরউদ্দিন ঠাকুরসহ চার আসামিকে খালাস দেয়।

রায়ে মৃত্যৃদণ্ড পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারী), পলাতক লে. কর্নেল আবদুর রশিদ, পলাতক মেজর বজলুল হুদা (বর্তমানে বন্দি), পলাতক বরখাস্ত লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর শরিফুল হোসেন ওরফে শরফুল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার/ বর্তমানে বন্দি), অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল আবদুল আজিজ পাশা (প্রয়াত), ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাশেম, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসার, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ, রিসালদার মোসলেমউদ্দিন ওরফে মোসলেহউদ্দিন।

রায়ের আদেশে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর ৫টার দিকে ধানমণ্ডির নিজ বাসভবনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু, তার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও অন্যদের ষড়যন্ত্র ও পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গুলি করে হত্যা করার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

রায়ে আরো বলা হয়, "ঘটনার পর কোনো কোনো আসামি দেশ-বিদেশে নিজেদের আত্মস্বীকৃত খুনি হিসেবেও পরিচয় দিয়ে দাম্ভিকতা প্রকাশ করে। ঘটনাটি কেবল নৃশংস নয়, এই অপরাধ এমন একটি ক্ষতির কার্য যা শুধু ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষেও এটা মারাত্মক ক্ষতি। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ পরিণতির বিষয় স্বজ্ঞানে তারা ষড়যন্ত্রমূলক ও পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।"

"সুতরাং, তাদের প্রতি কোনো প্রকার সহানুভূতি ও অনুকম্পা প্রদর্শনের যুক্তি নেই। এই অনুকম্পা পাওয়ার কোনো যোগ্যতাও তাদের নেই। তাদের অপরাধের জন্য তাদের প্রত্যেককে দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারা মতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো।"

রায়ে আসামি তাহের উদ্দিন ঠাকুর, অনারারি ক্যাপ্টেন আবদুল ওহাব জোয়ারদার, দফাদার মারফত আলী ও এল ডি আবুল হাশেম মৃধার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় নি বলে তাদের অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

ভোর রাতে মুহুর্মুহু গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যায়

"ওইদিন ভোর রাতে মুহুর্মুহু গুলির শব্দে আমাদের ঘুম ভেঙে যায়। আমার শ্বাশুড়ি (আমেনা সেরনিয়াবাত) শ্বশুরকে (আব্দুর রব সেরনিয়াবাত) বলছিলেন, 'বাসায় ডাকাত পড়েছে।' এর উত্তরে শ্বশুর বলেন, 'মন্ত্রীর বাড়িতে ডাকাত পড়ে না। মনে হয়, আর্মি আক্রমণ করেছে।"

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে এভাবেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘটনার বর্ণনা দেন ওই রাতে বেঁচে যাওয়া শাহান-আরা-আব্দুল্লাহ। তিনি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর স্ত্রী।

বুধবার তিনি বলেন, "এ সময় আমরা সবাই শ্বশুরের রুমে চলে যাই। বাড়ির কাজের বুয়া লক্ষ্মীর মা বিপদ বুঝতে পেরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। এর কিছুক্ষণ পরই দরজা ভেঙে ভেতর ঢুকে পড়ে বেশ কিছু সেনা সদস্য। আমাদের সবাইকে নিচের রুমে এনে ব্রাশফায়ার করলো।"


পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট খুনিরা প্রথমে আক্রমণ করে ২৭ মিন্টো রোডে, সেরনিয়াবাতের বাড়িতে। ভোররাত সোয়া ৫টার দিকে মেজর ডালিমের নেতৃত্বে ওই বাড়িতে হামলা চালানো হয়।

হত্যা করা হয় আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ১৪ বছর বয়সী মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, ১০ বছরের ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, চার বছরের নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু (আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে), ভাতিজা সাংবাদিক ও অ্যাডভোকেট শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নাইম খান রিন্টুসহ কয়েকজন।

শাহান-আরা- আব্দুল্লাহ বলেন, "একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পঁচাত্তরের ১০ আগস্ট আমরা বরিশাল থেকে এসেছিলাম। ১৫ আগস্ট ভোররাতে সবাইকে এক সঙ্গে দাঁড় করিয়ে যখন ব্রাশ ফায়ার করা হলো, তখন আমার চার বছরের ছেলে বাবু ছিল শহীদ সেরনিয়াবাতের কোলে। আর আমার কোলে ছিল ১০ মাস বয়সী ছেলে সাদেক আব্দুল্লাহ ।"

"চোখের সামনে দেখলাম, শহীদের শরীর গুলিতে ঝাঝরা হয়ে গেল। আমার আদরের ছেলে বাবুসহ উপুড় হয়ে পড়ে গেল মাটিতে। পর মুহুর্তে গুলি লাগে আমার শরীরে। আমি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলি।"

শাহান-আরা- আব্দুল্লাহর ধারণা, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ মনে করেই গুলি করা হয় শহীদ সেরনিয়াবাতকে।

তিনি জানান, হামলার পর রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিহত-আহত সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

কান্না বিজড়িত কন্ঠে শাহান-আরা বলেন, "আমার শরীরে চারটা গুলি লেগেছিল। হাসপাতালে ঢোকার সময় দেখি গাড়ি থেকে মণি ভাইয়ের লাশ নামানো হচ্ছে। কিছুদিন হাসপাতালে ছিলাম। সেখান থেকে কিছুদিন সোবহানবাগে খালা শ্বাশুড়ির (খাদিজা হোসেন, বঙ্গবন্ধুর ছোট বোন) বাড়িতে ছিলাম। পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় '৭৬ সালের ১২ ফেব্র"য়ারি আমরা বরিশাল চলে যাই। কিন্তু সেখানেও নিরাপদ না হওয়ায় ভারতে চলে গিয়েছিলাম।"

"আমার শাশুড়ি শরীরে গুলির অংশ নিয়ে দীর্ঘ দিন নিদারুন যন্ত্রনা ভোগ করে তিন বছর আগে মারা গেছেন। আমরা যারা বেঁচে আছি, এখনো বুকের গভীরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যতদিন না খুনিরা শাস্তি পাবে, ততদিন এই রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে না।"

বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জীবন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গীপাড়া গ্রামে।

তৃতীয় সন্তান মুজিবকে খোকা বলে ডাকতেন শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মৎ সায়রা বেগম দম্পতি।

৭ বছর বয়সে পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে পড়াশুনা শুরু করেন তিনি। দুই বছর পর গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। পরে মিশনারি স্কুলে।

কিন্তু ১২ বছর বয়সে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে তার লেখাপড়ায় সাময়িক বিরতি ঘটে। চার বছর পর আবার স্কুলে ভর্তি হন।

চাচাতো বোন বেগম ফজিলাতুন্নেসার সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়সে।


১৯৪০ সালে মুজিব নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। এক বছরের জন্য বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

১৯৪২ এন্ট্রান্স (এখনকার এসএসসি) পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। এ বছরই তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পরের বছর মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।

১৯৪৬ সালে মুজিব ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন।

পরের বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি এ পাশ করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।

'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' বাংলা ভাষা নিয়ে মুসলিম লীগের 'ষড়যন্ত্রের' প্রতিবাদে ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট ডাকে। ধর্মঘট পালনকালে সহকর্মীদের সঙ্গে গ্রেপ্তার হন মুজিব। ছাত্র আন্দোলনের মুখে ১৫ মার্চ তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার।

ফরিদপুরে কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য ১১ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ২১ জানুয়ারি মুক্তি পান মুজিব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা তাদের দাবি আদায়ে ধর্মঘট ঘোষণা করলে মুজিব সমর্থন জানান।

কর্মচারীদের এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে ২৯ মার্চ কর্তৃপক্ষ তাকে জরিমানা করে। এ নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহি�কৃত হন মুজিব। ১৯ এপ্রিল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। কারাবন্দি মুজিব এর যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। জুলাই মাসে মুক্তি পেয়েই খাদ্য সঙ্কটের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। সেপ্টেম্বরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের দায়ে গ্রেপ্তার হন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের আগমন উপলক্ষে আওয়ামী মুসলিম লীগের ভুখা মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ায় ১৪ অক্টোবর তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। এবার প্রায় দু'বছর পাঁচ মাস জেলে আটক রাখা হয় মুজিবকে।

১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করলে বন্দি অবস্থায় ২১ ফেব্র"য়ারিকে রাজবন্দি মুক্তি এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি দিবস হিসবে পালনের জন্য সংগ্রাম পরিষদের প্রতি আহবান জানান মুজিব।

এ দাবিতে ১৪ ফেব্র"য়ারি জেলখানায় অনশন শুরু করেন তিনি।

২১ ফেব্র"য়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র সমাজের মিছিলে পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর শহীদ হন।

মুজিব জেলখানায় এর প্রতিবাদে টানা ১৭ দিন অনশন করেন।

১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ পাকিস্তান গণপরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টিই পায় যুক্তফ্রন্ট। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ১৪৩টি। শেখ মুজিব গোপালগঞ্জের আসনে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে ১৩ হাজার ভোটে পরাজিত করেন।

১৫ মে তিনি প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ৩০ মে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বাতিল করে দেয়। ৩০ মে মুজিব করাচি থেকে ঢাকায় ফেরেন এবং গ্রেপ্তার হন। ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি পান।

১৯৫৫ সালের ৫ জুন মুজিব গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৭ জুন পল্টন ময়দানের জনসভায় আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে ২১ দফা ঘোষণা করে।

দলকে সব ধর্মের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে দলের নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দ প্রত্যাহার করা হয়। মুজিব আবার দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।

পরের বছরের ৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১১ অক্টোবর মুজিবকে গ্রেপ্তার করে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে। প্রায় চৌদ্দ মাস পর মুক্তি দিয়ে আবার জেলগেটে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের এক সভায় মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও মুজিব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্র"য়ারি মুজিব ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করেন। এতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবি জোরালোভাবে তোলা হয়।

১ মার্চ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ৬ দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সারা বাংলায় গণসংযোগ সফর শুরু করেন।

১৯৬৬ সালের প্রথম তিন মাসে আটবার গ্রেপ্তার হন মুজিব।

১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার তাকে প্রধান আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের মুক্তির দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ শুরু হয়।

১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি ৬ দফাসহ ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। পরিষদ আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও মামলায় আটকদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে যা। গণআন্দোলনে পরিণত হয়।

১৪৪ ধারা ও কারফিউ ভঙ্গ, পুলিশ-ইপিআর এর গুলি আর বহু হতাহতের মধ্য দিয়ে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে আইয়ুব সরকার ১ ফেব্র"য়ারি গোলটেবিল বৈঠকের আহ্বান জানায়।

২২ ফেব্র"য়ারি চাপের মুখে সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে মুজিবসহ আসামিদের মুক্তি দেয়।

২৩ ফেব্র"য়ারি রেসকোর্স ময়দানে সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি দেওয়া হয়। এ সময় তিনি ছাত্র সমাজের ১১ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানান।

২৬ ফেব্র"য়ারি বঙ্গবন্ধু রাওয়ালপিন্ডিতে আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে বলেন, গণঅসন্তোষ নিরসনে ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

পাকিস্তানি শাসকরা বঙ্গবন্ধুর দাবি অগ্রাহ্য করলে ১৩ মার্চ তিনি বৈঠক ত্যাগ করে ঢাকা চলে আসেন।

২৫ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হন।

১৯৭০ সালের ৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পুনরায় আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হন।

৭ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টির মধ্যে ৩০৫টি আসন পায় দলটি।

১৩ ফেব্র"য়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করেন। কিন্তু
১ মার্চ তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা দিলে সারা বাংলায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। আওয়ামী লীগ ২ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল ডাকে। হরতালের পরদিন বঙ্গবন্ধু অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।

৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু অনিবার্য হয়ে ওঠা স্বাধীনতা যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়ে ঘোষণা দেন� "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"

১৬ মার্চ ঢাকায় ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক শুরু হয়। আলোচনার জন্য ভুট্টোও ঢাকায় আসেন। ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া-মুজিব-ভুট্টোর আলোচনা হয়।

২৫ মার্চ আলোচনা ব্যর্থ হবার পর সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। বলা হয়ে থাকে এ সময় পাকিস্তানী বাহিনী আসলে দমন অভিযানের প্রস্তুতি নেয়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতেই নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।

বঙ্গবন্ধু ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে বন্দী হওয়ার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে একটি বার্তা পাঠাতে সক্ষম হন। এতে তিনি বলেন, "সম্ভবত এটাই আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। ." তিনি সবাইকে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করার আহ্বান জানান।

২৬ মার্চ চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন।

এরপর ২৭ মার্চ বাঙালি সেনা কর্মকর্তা মেজর জিয়াউর রহমান ঘোষণাপত্রটি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে একাধিকবার পাঠ করেন।

২৬ মার্চ ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেন এবং তাকে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়।

১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। এতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে (মুজিবনগর) বাংলাদেশ সরকারের শপথ হয়।

নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী বাংলাদেশকে সহায়তাকারী ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও বাংলাদেশী মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে।

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নতি স্বীকার করে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়।

বঙ্গবন্ধু লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি ঢাকায় পৌঁছলে তাকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

১৯৭৩ এ নতুন সংসদের প্রথম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ২৯৩টি। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ, সিপিবি ও ন্যাপের সমন্বয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়।

যুুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ দুর্নীতি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতিসহ নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ে।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।

১৯৭৫ সালের ৬ জুন বঙ্গবন্ধু এক বিতর্কিত উদ্যোগে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তাকে এটি করতে হচ্ছে এবং এটি দেশের জন্য ভালো হবে।

১৫ আগস্ট আরও নিহত হন যারা

ঢাকা, নভেম্বর ১৯ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)-- ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ৩৪ বছর পর বৃহস্পতিবার এ হত্যা মামলার নিষ্পত্তি হতে যাচ্ছে। ওই দিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও বেগম ফজিলতুন্নেছা মুজিব ছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্য এবং আত্মীয়-স্বজনসহ নিহত হন আরও ২৬ জন। এদের মধ্যে যারা রয়েছেন:

শেখ কামাল
বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে
জন্ম: টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ৫ই আগস্ট, ১৯৪৯ সাল।

বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল ঢাকার শাহীন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি. এ. (অনার্স) পাস করেন। ছায়ানটে সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। নাটক, মঞ্চ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একনিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন। ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে ছিলেন প্রতিষ্ঠিত। শৈশব থেকেই খেলাধুলায় ছিলো তার প্রচণ্ড উৎসাহ। আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।

বিশেষ করে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার মানোন্নয়নে তার শ্রম ও অবদান ছিল অপরিসীম। নতুন খেলোয়াড় তৈরির জন্য যথেষ্ট সময় দিয়ে নিজেই মাঠে অনুশীলন করতেন। ১৯৭৫ সালের ১৮ জুলাই সুলতানা খুকুর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ছাত্রলীগের একজন সংগঠক হিসেবে '৬৬-এর স্বাধিকার আন্দোলন, '৬৯-এর গণআন্দোলন ও '৭১- এর অসহযোগ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতেই বাড়ি থেকে চলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। লেফটেন্যান্ট হিসেবে কর্নেল ওসমানীর এডিসি ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ার সময় তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এম.এ. শেষ পর্বের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ওই দিন ভোরে বাড়ি ঘেরাওয়ের কথা শুনে নিচে নেমে এলে ঘাতকরা সবার আগে তাকে গুলি করে হত্যা করে।

শেখ জামাল
বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় ছেলে
জন্ম: টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ২৮ এপ্রিল, ১৯৫৪ সাল।

বঙ্গবন্ধুর মেজো ছেলে শেখ জামাল শৈশবে শাহীন স্কুল ও পরে রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। একটি সঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্রে গিটার বাজানো শিখতেন। ক্রিকেট খেলতেন আবাহনী মাঠে। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধানমণ্ডি ১৮ নং রোডের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে বন্দি অবস্থায় থাকাকালে একদিন গোপনে বের হয়ে কালীগঞ্জ হয়ে মুক্তাঞ্চলে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।

ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে থাকাকালে যুগোশ্লভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল জোসেফ টিটোর আমন্ত্রণে সেদেশে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ নিতে যান। তার পর লন্ডনের স্যান্ডহার্স্ট আর্মি একাডেমি থেকে সেনা প্রশিক্ষণ নেন। দেশে ফিরে তিনি দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট র‌্যাংকে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালের ১৭ই জুলাই ফুফাতো বোন রোজীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৫ আগস্ট তাদের এক সঙ্গে গুলি করে হত্যা করা হয়।

শেখ রাসেল
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র
জন্ম: ঢাকা, ১৮ অক্টোবর ১৯৬৪ সাল।

বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। বাড়ির ছোট্ট ছেলে হিসেবে সবার আদরের ছিল। রাজনৈতিক পরিবেশ ও সঙ্কটের মধ্যেও সে চির সঙ্গী সাইকেল নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতো। ১৯৭১�এর মুক্তিযুদ্ধকালীন দীর্ঘ নয়মাস পিতার অদর্শন তাকে এমনই ভাবপ্রবণ করে রাখে যে, পরে সব সময় পিতার কাছাকাছি থাকতে জেদ করতো। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাইকে হত্যা করে তাদের লাশ দেখিয়ে তারপর রাসেলকে হত্যা করা হয়। তাকে কাজের লোকজন পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নিয়ে যায়। কিন্তু ঘাতকরা তাকে দেখে ফেলে। বুলেটবিদ্ধ করার পূর্বে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে অনুমতি নেওয়া হয়। রাসেল প্রথমে মায়ের কাছে যেতে চায়। মায়ের লাশ দেখার পর অশ্র"সিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিল 'আমাকে হাসু আপার ( শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দিন।'

শেখ আবু নাসের
বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই
জন্ম: টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, সেপ্টেম্বর, ১৯২৮ সাল।

শেখ আবু নাসের টুঙ্গিপাড়া ও গোপালগঞ্জে লেখাপড়া করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবং বড়ভাই রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অল্প বয়সেই তাকে পিতার সঙ্গে পারিবারিক কাজকর্ম ও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়তে হয়। এজন্য খুলনা শহরে বসবাস করতে হত। পরবর্তী সময়ে তিনি খুলনায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন।

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। ১৯৭৫-এ নিহত হওয়ার সময় বড় ভাইয়ের বাড়িতে ছিলেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে যান।

সুলতানা কামাল খুকু
শেখ কামালের স্ত্রী
জন্ম: ঢাকা, ১৯৫১ সাল।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দবির উদ্দিন আহমেদের ছোট মেয়ে। মুসলিম গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স পাস করেন। ১৯৭৫ সালে এম. এ পরীক্ষা দেন। স্কুল থেকে আন্তঃখেলাধুলায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন বিভাগে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। বিশেষ করে লংজাম্পে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক ক্রীড়ায় চ্যাম্পিয়ন হন।

মোহামেডান ক্লাবের পক্ষে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান অলিম্পিকে লংজাম্পে দ্বিতীয়, ১৯৬৮ সালে ঢাকার মাঠে পাকিস্তান অলিম্পিকে লং জাম্পে ১৬ ফুট দূরত্ব অতিক্রমের রেকর্ডসহ স্বর্ণপদক পান। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯-৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে জাতীয় ক্রীড়ায় অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে নিখিল পাকিস্তান মহিলা এথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় তিনি রেকর্ডসহ স্বর্ণ পদক পান। ১৯৭৩-এ লংজাম্পে স্বর্ণ পান। ১৯৭৪ এ লংজাম্প ছাড়াও সুলতানা ১০০ মিটার হার্ডলসে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। বাংলাদেশের একজন শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিয়ের আগে তাকে দেখে আশীর্বাদ করেছিলেন। বাড়ির বড় বউ হিসাবে তার বিপুল সমাদর হয়েছিল।


পারভীন জামাল রোজী
শেখ জামালের স্ত্রী
জন্ম: সিলেট, ১৯৫৬ সাল।

বঙ্গবন্ধুর ছোট্ট বোন খাদেজা হোসেনের মেয়ে। পিতা সৈয়দ হোসেন বঙ্গবন্ধু সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। ধানমণ্ডি গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে বদরুন্নেসা আহমেদ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। মাত্র ৩০ দিনের বিবাহিত জীবন ছিল তার। মেহেদির রং তখনও তার দু'হাতে ছিল। বেগম মুজিবকে হত্যা করে ঘাতকরা জামালের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রোজী ও সুলতানাকে এক সঙ্গে গুলি ছুঁড়ে হত্যা করে। ওই বাড়িতে দু'বধুর শুভাগমন যেমন এক সঙ্গে তেমনি শোকাহত বিদায়ও ছিলো একসঙ্গে।


আবদুর রব সেরনিয়াবাত
বঙ্গবন্ধুর সেজ বোনের স্বামী
জন্ম: বরিশাল, ১৪ই চৈত্র ১৩২৭ বাংলা।

বরিশাল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ছিলেন। বেকার হোস্টেলেও এক সঙ্গে থাকতেন। বঙ্গবন্ধুর সেজ বোন আমেনা বেগমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কলকাতায় আই. এ. ও বি. এ পাস করার পরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করে বরিশালে আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়ে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১- এর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭২ সালের ১২ই এপ্রিল কৃষিমন্ত্রী হন। ১৯৭৩ এর নির্বাচনেও জয়লাভ করেন এবং বঙ্গবন্ধু তাকে সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী নিয়োগ করেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের কৃষিক্ষেত্রে সংস্কার ও উৎপাদনে এবং কৃষকদের সহায়তা দেওয়ায় তার ভূমিকা ছিল যথেষ্ট জোরালো। একজন সৎ আদর্শবান ব্যক্তি হিসেবে তিনি সব মহলে প্রশংসিত ছিলেন।


শেখ ফজলুল হক মনি
বঙ্গবন্ধুর মেজো বোনের বড় ছেলে
জন্ম: টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ ৪ঠা ডিসেম্বর, ১৯৩৯ সাল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ অনুসারী, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সাংবাদিক, দৈনিক বাংলার বাণী ও বাংলাদেশ টাইমস-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, সাপ্তাহিক 'সিনেমা' ও মধুমতি মুদ্রণালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি ১৯৫৬ সালে ঢাকা নবকুমার স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৮ সালে ঢাকা জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.এ. ১৯৬০ সালে বরিশাল বি. এম. কলেজ থেকে বি. এ. এবং ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. বং পরবর্তী সময়ে এলএলবি পাস করেন।

ছাত্রাবস্থায়ই শেখ মনি সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬০ সালে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে কুখ্যাত হামদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছয় মাস বিনা বিচারে আটক থাকার পর তিনি মুক্তি পান।

গণবিরোধী শিক্ষানীতি ও সরকারের দমনীতির প্রতিবাদে ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে তদানীন্তন গভর্নর মোনায়েম খানের হাত থেকে ডিগ্রি সার্টিফিকেট না নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শেখ মনির এম. এ. ডিগ্রী কেড়ে নেওয়া হয়। কিছু দিন পর তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৬৫ সালের শেষাশেষি পর্যন্ত তাকে দেশরক্ষা আইনে আটক রাখা হয়। এ সময় সরকার তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সাজানো মামলা দায়ের করে।

১৯৬৬ সালে শেখ ফজলুল হক মণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত বাঙালির স্বাধিকারের সনদ ঐতিহাসিক ছয়দফার পক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ছয় দফা আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণীকে সংগঠিত করা এবং ঐতিহাসিক ৭ জুনের হরতাল সর্বাত্মক সফল করার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। ওই সময় সরকার শেখ মনির বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে। ১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর মুক্তিযোদ্ধা ও যুব সমাজকে সংগঠিত করে দেশগড়ার কাজে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে শেখ মনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি ছিলেন আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তেজগাঁও আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের সভাপতি হিসেবে মনি শ্রমিক লীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করলে শেখ মনি অন্যতম সম্পাদক নিযুক্ত হন।

শেখ ফজলুল হক মনি ১৯৭৩ সালে বার্লিন যুব উৎসবে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি বিশ্ব শান্তি আন্দোলনের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন সফল সংগঠক, সুবক্তা ও সুলেখক। সম্পাদকীয় ছাড়াও তিনি স্বনামে ও ছদ্মনামে বহু প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। ছয় দফার ওপর ও তার লেখা ছোটগল্পের সংকলন 'বৃত্ত' প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। ১৯৭৪ সালে শেখ মনির দ্বিতীয় গল্প সংকলন 'গীতা রায়' প্রকাশিত হয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মনি ঘাতকের হাতে নিহত হন। সেই রাতে শেখ মনির জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ ও কনিষ্ঠপুত্র শেখ ফজলে নূর তাপস অলৌকিকভাবে রক্ষা পায়। পরশের বয়স ছিল পাঁচ বছর এবং তাপসের মাত্র তিন বছর।


বেগম আরজু মনি
শেখ ফজলুল হক মনির স্ত্রী
জন্ম: বরিশাল, ১৫ মার্চ ১৯৪৭ সাল।

বরিশাল সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং বিএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও বি. এ. পাস করেন। আবদুর রব সেরনিয়াবাতের জ্যেষ্ঠ কন্যা ছিলেন। ১৯৭০ সালে খালাত ভাই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিয়ে হয়। দু'সন্তানের মা আরজুকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা। ১৯৭৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ পরীক্ষা দিয়েছিলেন।


কর্ণেল জামিল উদ্দিন আহমেদ
বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার
জন্মঃ গোপালগঞ্জ, ১ ফেব্র"য়ারি ১৯৩৩ সাল।

১৯৫২ সালে ক্যাডেট হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৫৫ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান থেকে ফিরে আসার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সচিবালয়ে যোগ দেন এবং বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে ভোর ৫টায় বঙ্গবন্ধু লাল টেলিফোনে তাকে সেনাবাহিনীর বাসভবন ঘেরাওয়ের কথা জানালে সঙ্গে সঙ্গে রওনা হন তিনি। কিন্তু সোবহানবাগ মসজিদের সামনে ঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষার জন্য তিনি আত্মাহুতি দিয়েছেন। তার এ আত্মদান জাতি চিরকাল স্মরণ করবে।

বেবী সেরনিয়াবাত
আবদুর রব সেরনিয়াবাতের
ছোট মেয়ে
জন্মঃ বরিশাল, ২০ মে ১৯৬০ সাল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরী হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। নিহত হবার সময় পিতার কাছে ছিল।

আরিফ সেরনিয়াবাত
আবদুর রব সেরনিয়াবাতের কনিষ্ঠ পুত্র
জন্মঃ ২৭ মাচর্, ১৯৬৪ সাল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। নিহত হওয়ার সময় ঢাকায় পিতার কাছে ছিল।


সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু
আবদুর রব সেরনিয়াবাতের নাতি
জন্ম: গৌরনদী, বরিশাল, ২২ জুন ১৯৭১ সাল।

আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে আবুল হাসনাত আবদুল্ল�াহর জ্যেষ্ঠ পুত্র বাবু নিহত হওয়ার সময় বয়স ছিল ৪ বছর এবং ঢাকায় দাদার বাসায় বেড়াতে এসেছিল।

শহীদ সেরনিয়াবাত
আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ভাইয়ের ছেলে
জন্মঃ বরিশাল, ২৬ মার্চ ১৯৪০ সাল।

বরিশাল বি এম স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, কলেজ থেকে আই. এ. ও বি. এ. পাস করেন। ঢাকা থেকে আইন পাস করে বরিশালে কোর্টে আইনজীবী ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলা পত্রিকার বরিশালের সংবাদদাতা ছিলেন। ১৫ আগস্ট চাচার বাসায় অবস্থানকালে নিহত হন।


আবদুল নঈম খান রিন্টু
আওয়ামী লীগ নেতা আমীর হোসেন আমুর খালাতো ভাই
জন্মঃ বরিশাল, ১ ডিসেম্বর ১৯৫৭ সাল।

বরিশাল জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। বরিশালের একটি সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন এবং তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় অবস্থান কালে নিহত হন।

বিভিন্ন ধরনের জ্বর ও প্রতিকার

জ্বরে জীবনে কখনো ভোগেননি এমন মানুষ নিশ্চয়ই খুঁজে পাওয়া যাবে না। চিকিৎসাবিজ্ঞানে শরীরের শান্তি ভঙ্গকারী বিভিন্ন বিরুদ্ধ শক্তি বা জীবাণুর অনুপ্রবেশের ফলে শরীরের একটি প্রতিক্রিয়াকে জ্বর বলা হয়। প্রকৃতপক্ষে জ্বরকে অনিষ্টকারী না বলে বরং উপকারী বলা যায়। কারণ জ্বর প্রমাণ করে বিরুদ্ধ শক্তি বা জীবাণুর প্রবল আক্রমণে শরীর দুর্বল হয়ে যাচ্ছে বা প্রতিরোধ ক্ষমতা পরাভূত হচ্ছে। যদিও জ্বরের কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই, তবে সাময়িকভাবে মস্তিষ্কের থার্মোজেনিক সেন্টারকে প্রশমিত করে জ্বর কমানো হয়। যেহেতু জ্বর রোগ নয়, রোগের লক্ষণ মাত্র, তাই বিভিন্ন ধরনের জ্বরের উপসর্গ দেখে চিকিৎসা দেয়া হয়।
সুস্খ অবস্খায় মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বগলে ৯৭.৪ ডিগ্রি ও জিহবার নিচে ৯৮.৪ ডিগ্রি ফা.। শরীরে এর চেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন হলেই বুঝতে হবে জ্বর হয়েছে। জ্বরের অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। তবে বর্তমানে সব জ্বর, সর্দি জ্বর, ভাইরাস জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জা, টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড জ্বর ও ডেঙ্গুজ্বর দেখা দিচ্ছে। এসব জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা ভিন্ন। তবে যেকোনো জ্বরেই বিশ্রাম নেয়া ও প্রচুর তরল পানি পান করা প্রয়োজন। মাথা ধোয়ানো বা শরীর স্পঞ্জ করা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা দরকার। নিচে বিভিন্ন জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা ব্যবস্খাপনা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
জ্বর
বিভিন্ন কারণে দেহে উত্তাপ বৃদ্ধি পায়। পানিতে ভেজা, গরম লাগা, সর্দি, উত্তেজনা, রাতজাগা, অনিয়ম, বেশি মদ্যপান।
লক্ষণ : শরীরে তাপ বৃদ্ধির সাথে বমি বমি ভাব, মাথা ধরা, মাথা ঘোরা হয়ে থাকে। প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে। চোখ বা দেহে জ্বালা, মাথায় তাপ বোধ হয়।
ব্যবস্খাপনা : প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ একটি করে দিনে তিন বার জ্বর না কমা পর্যন্ত এবং জ্বর স্খায়ী হলে চিকিৎসকের নির্দেশে এন্টিবায়োটিক খেতে হবে।
উপদেশ : বুকে ব্যথা বা গলায় বেশি সর্দি জমলে, বুকে সর্ষের তেল বা কর্পূর মিশ্রিত সর্ষে তেল মালিশ করা যেতে পারে। সাগু, বার্লি, খই, মুড়ি, আদার রস প্রভৃতি খাওয়া ভালো। ঠাণ্ডা লাগানো এবং ঠাণ্ডা পান ও পানীয় নিষিদ্ধ।
ইনফ্লুয়েঞ্জা : ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক ভাইরাসের কারণে প্রধানত এ জ্বর হয়। এটি অনেক সময় ইপিডেমিক বা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ রোগ খুব ছোঁয়াচে।
লক্ষণ : জীবাণু দেহে প্রবেশ করলে গা ম্যাজ ম্যাজ করে। গা, হাত ও পায়ে ব্যথা বোধ হয়। হঠাৎ অল্প শীত করে জ্বর আসে। মাথায়, কোমরে ও চোখে খুব যন্ত্রণা হয়। কারো কারো বমির সাথে সর্দি-কাশির লক্ষণ ও ব্রঙ্কাইটিসের লক্ষণ থাকে। জ্বর ১০২ ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে।
ব্যবস্খাপনা : জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ও জটিল উপসর্গের জন্য চিকিৎসকের নির্দেশে এন্টিবায়োটিক খেতে হবে।
উপদেশ : বুক, পিঠে, হাত ও পায়ে কর্পূর মিশ্রিত তেল বা মাসকলাইর তেল মালিশ উপকারী। রোগীকে পৃথক ঘরে শুইয়ে রাখতে হবে। অনেকের মতে তুলসী পাতা, বাসক পাতা, বেল পাতা পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার হয়। দুধ, সাগু, বার্লি, ফলের রস, হরলিক্স খেতে দিতে হবে।
টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড জ্বর
কারণ : দুই ধরনের জীবাণু দিয়ে এই দুই ধরনের জ্বর হয়। রোদ ও তাপে এই জীবাণু নষ্ট হয়; কিন্তু ঠাণ্ডায় এগুলো জীবিত থাকে। সাধারণত ১০-২৫ বছরে এই জ্বর বেশি হয়। মাছি, পানি, খাদ্যদ্রব্য ও মানুষের জীবাণুযুক্ত হাতের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। এগুলো নানাভাবে রোগীর মল থেকে ছড়ায়।
লক্ষণ : দেহে জীবাণু সংক্রমণের পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৭-১১ দিন সময় লাগে। সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য ও প্রস্রাব কমে যাওয়া থেকে এই রোগ শুরু হয়। এর লক্ষণগুলোকে চিকিৎসকরা চারটি সপ্তাহে ভাগ করেছেন।
প্রথম সপ্তাহ : প্রথমে ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর ও সর্দি জ্বরের মতো মনে হয়। অবসাদ, কপাল ব্যথা, শীত শীত ভাব, গায়ে ব্যথা ও জ্বর ওঠানামা করা এর প্রাথমিক লক্ষণ। সকালের দিকে জ্বর কমে; কিন্তু একেবারে ছাড়ে না। পাঁচ-সাত দিন পরে সব সময় পেট ভরা ভাব দেখা যায়। এ সময় জিহ্বায় লাল গধৎমরহ থাকে এবং ফ্যাকাশে দেখায়। প্রস্রাব হয় লালচে, অল্প পরিমাণে।
দ্বিতীয় সপ্তাহ : এই সময় লক্ষণগুলো ক্রমেই বেড়ে যায়। মাথাব্যথা থাকে না; কিন্তু দুর্বলতা বেড়ে যায়। ঠোঁট ফেটে যায়, জিহবা শুকনো থাকে। জ্বর সর্বোচ্চ ওঠে।
তৃতীয় সপ্তাহ : এ সময় মারাত্মক লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত রক্তস্রাব, অন্ত্রে প্রদাহ হয়। পেটে ব্যথা দেখা দেয়। রোগী প্রলাপ করতে থাকে। অনেক সময় ইবফ ংড়ৎব হতে পারে।
চতুর্থ সপ্তাহ : জ্বর কমে স্বাভাবিক হয়ে আসে।
ব্যবস্খাপনা : এর চিকিৎসায় আজকাল অনেক ধরনের এন্টিবায়োটিক পাওয়া যায়। জ্বর স্খায়ী হলে চিকিৎসকের নির্দেশে ব্যবস্খা নিতে হয়। লক্ষণ ভেদে ওষুধ দেয়া হয়। খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে ছানা, মাখন, তোলা দুধ, মিষ্টি, দই বা ঘোল, ভাত, মাছ বা গোশত, জুস উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে গ্লিসারিন সাপোজিটরি দিতে হয়।
ডেঙ্গুজ্বর
কারণ : ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে হয়। আমাদরে দেশে জুলাই-ডিসেম্বরে এর প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।
লক্ষণ : সারা অঙ্গে তীব্র ব্যথা, কম্পন, শীতবোধ, মাথাব্যথা; বমি শরীর প্রচণ্ড কামড়ায়। একে হাড়ভাঙা জ্বরও বলা হয়।
ব্যবস্খাপনা : এসব লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়।
চেম্বার : জেনারেল মেডিক্যাল হাসপাতাল (প্রা.) লি., ১০৩, এলিফ্যান্ট রোড (তৃতীয় তলা), বাটা সিগন্যালের পশ্চিম দিকে, ঢাকা। মোবাইল : ০১৯১১৫৬৬৮৪২

ব্রেস্ট ক্যান্সার : সহজ প্রতিরোধব্যবস্খা

ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার পাশ্চাত্য মহিলাদের (৩৫-৫৫ বছর) অতি সাধারণ মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। প্রতি বছর এ রোগের প্রকোপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফুসফুসের ক্যান্সারের পরই ব্রেস্ট ক্যান্সার এখন মহিলাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। এ কারণে বিশ্বব্যাপী অক্টোবর মাসকে ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতার মাস হিসেবে পালন করা হয়। বিশেষভাবে শিল্পসমৃদ্ধ পাশ্চাত্য দেশগুলোতেই ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। এ জন্য ব্রেস্ট ক্যান্সারকে উমঢ়পথঢ়প সফ ঈমংমলম্থয়মসষ বলা হয়ে থাকে।
বেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ
স্তনে চাকা বা পিণ্ড থাকা (ব্যথাবিহীন ৬৬ শতাংশ)। স্তনের আকারে পরিবর্তন হওয়া। স্তনে বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া। স্তনের বোঁটা থেকে অস্বাভাবিক রস ক্ষরণ। স্তনের চামড়ার রঙ পরিবর্তন। বগলতলায় চাকা বা পিণ্ড থাকা।
স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ে সেসব পরীক্ষা জরুরি তা হলো এফএনএসি (ঋঘঅঈ), আলট্রাসনোগ্রাম, মেমোগ্রাফি এমআরআই (গজও)। এ ছাড়া বিশেষ চিকিৎসক প্রয়োজনীয় অন্যান্য পরীক্ষাও করাতে পারেন যেমন­ টিউমার মার্কার হিসেবে ঈঅ-১৫-৩, অথবা জটিলতা পর্যবেক্ষণ ঈঊঅ এবং গঈঅ পরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে।
ব্রেস্ট ক্যান্সার যাদের বেশি হয়
ব্রেস্ট ক্যান্সারের নিশ্চিত কারণ অজানা। তবে জেনেটিক কারণ অন্যতম। যেসব পরিবার নিকটাত্মীয়ের অন্তত দু’জন ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগীর ইতিহাস থাকে, তাদের চার থেকে ছয় গুণ বেশি সম্ভাবনা থাকে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার। এ ছাড়া যাদের অল্প বয়সে (১২ বছরের নিচে) মাসিক শুরুর ইতিহাস, অধিক বয়সে (৫০ বছরের পরে) রজোনিবৃত্তি (গপষসহথৎঢ়প), অধিক বয়সে প্রথম গর্ভধারণ (৩০ বছরের পর), যারা নি:সন্তান, অধিক সময় গর্ভনিরোধক বড়ি সেবন, হরমন থেরাপি গ্রহণ, স্খূলতা (ঙদপঢ়ময়ী), অ্যালকোহল সেবন ইত্যাদি কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে থাকে।
এ ছাড়া অধিক চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ, বসা কাজের অভ্যাস, ব্যায়াম না করা, ক্রমাগত মানসিক চাপও ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে বর্তমানে চিহ্নিত। অন্য দিকে যেসব মহিলা জরায়ু কিংবা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। আবার ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগীর ফুসফুস, বোন, লিভার ক্যান্সার প্রবণতা থাকে।
ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ
মেয়েদের মাসিক শেষ হওয়ার পরই একটি নির্দিষ্ট দিনে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করতে হবে। ব্রেস্টে কোনো চাকা বা কোনো ধরনের অস্বাভাবিক থাকলে সাথে সাথেই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তবে ব্রেস্টে চাকা থাকা মানেই কিন্তু ক্যান্সার নয়। শতকরা ১০ ভাগ চাকা হয়তো ভবিষ্যতে ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। অন্তত ২০ বছর বয়স থেকে সব মেয়েকেই নিজ স্তন নিজেই পরীক্ষায় অভ্যস্ত হওয়া দরকার। (নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষার কৌশল নিকটস্খ কোনো স্বাস্খ্যকর্মী, নার্স বা চিকিৎসকের কাছ থেকে শিখে নিতে হবে।
খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। ফলমূল বেশি বেশি খেতে হবে। ভিটামিন এ এবং সি জাতীয় ফলমূল বেশি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যেসব খাবারের বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যেমন গাজর, মিষ্টিআলু ও সবুজ শাকসবজি প্রচুর খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। যাদের ওজন বেশি অবশ্যই তাদের ওজন কমাতে হবে। মানসিক চাপ থাকলে সাইকোথেরাপিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। জীবনযাত্রায় নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।
চিকিৎসা সম্ভব দেশেই
ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসায় অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, লেজারথেরাপি ও ইমুনোথেরাপি বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে ব্রেস্ট অপারেশন করে আবার কৃত্রিম উপায়ে ব্রেস্ট তৈরিও করে দেয়া হচ্ছে। সৌন্দর্য রক্ষার জন্যই এ ব্যবস্খা।
প্রাথমিকভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়লে এ রোগের পরিপূর্ণ চিকিৎসা এখন দেশেই সম্ভব। এ ছাড়া অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে হোমিওপ্যাথিতে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাফল্যের ভালো ইতিহাস রয়েছে। ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য খুবই উন্নতমানের ওষুধ রয়েছে হোমিওপ্যাথিতে। বিশেষভাবে ‘কারসিনোসিন’ ওষুধটি আবিষ্কারই রয়েছে ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে। তারপরও বলব হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে। দক্ষ, প্রশিক্ষিত, উচ্চতর ডিগ্রি প্রাপ্ত চিকিৎসক ছাড়া এ রোগের চিকিৎসা গ্রহণ সমীচীন হবে না। তবে ক্যান্সার চিকিৎসায় একক পদ্ধতির বদলে বোর্ডভিত্তিক (অভিজ্ঞ চিকিৎসক সমন্বয়) চিকিৎসায় সাফল্যের হার বেশি।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড রিচার্স, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক ক্যান্সার সোসাইটি, রোড : ১১, বাড়ি : ৩৮, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯।
ফোন : ০৬৬৬-২৬২৯৬০৮, ০১৫৫৬৬৩১৮৬৫, ০১৭১২৮১৭১৪৪
ই-মেইল : মভশড়য়পলপশপন @বথশথমল.ধসশ

পিত্তথলিতে পাথর : লক্ষণ ও প্রতিকার

বর্তমানে আমরা অনেকেই পিত্তথলির পাথর সমস্যা নিয়ে ভুগছি। কিছুদিন আগেও এটা সাধারণ একটা বিষয় ছিল, কিন্তু এতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সাধারণত মধ্য বয়সীরাই এতে বেশি ভুগে থাকেন। মধ্য বয়সী বিশেষ করে মহিলাদের বয়স বাড়লে, যে কোনো বয়সীদেরও হতে পারে। অধিক বাচ্চার মায়ের হতে পারে মোটা অর্থাৎ স্থূলকার শরীর হলে পাকস্থলীর অপারেশন হলে ইস্ট্রোজেন হরমোন বেশিমাত্রায় নিলে সিস্টিক ফাইব্রোসিস।

কেন হয় পিত্তথলিতে পাথর : বয়স বাড়ার কারণে। কোলেস্টেরল জাতীয় খাবার বেশি খেলে। প্রোজেস্টেরল হরমোন বেশি দিন খেলে। আঁশজাতীয় খাবার না খেলে। অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খেলে। মেশিনে অতিরিক্ত মসৃণকৃত শর্করাজাতীয় খাদ্য খেলে ও উচ্চমাত্রার ক্যালরিযুক্ত খাবার খেলে।

লক্ষণঃ পেটে হঠাৎ মারাত্মক ব্যথা হতে পারে। সাধারণ পেট ব্যথা ১ ঘণ্টা স্থায়ী হয়ে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ৬ ঘণ্টার বেশি পেটে ব্যথা হলে ধরে নিতে হবে পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে। চর্বিজাতীয় খাবার খেলে সমস্যা দেখা দেবে। পেটে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষণ অপ্রকাশিত থাকে। শতকরা ৯৫ ভাগের ক্ষেত্রেই লক্ষণ দেখা যায় না বা বোঝা যায় না।

চিকিৎসাঃ পেটে প্রচন্ড ব্যথা হলে বিশেষজ্ঞ সার্জনের চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। পিত্তথলির পাথর নির্ণয় করে তা অপারেশন না ওষুধ দিতে হবে তা চিকিৎসকই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে লেপরোসকোপিক সার্জারি চিকিৎসাই বেশি কার্যকর।

ছাদে বাগানের টুকিটাকি

ছাদে বাগানের প্রথম ধারণা এসেছিল আজ থেকে প্রায় ৩০০০ বছর আগে। মেসোপটেমিয়ায় রাজা নেবুচাঁদনেজার তার স্ত্রীর জন্য ইউফ্রেটিস নদীর তীরে প্রথম ব্যাবিলনের ঝুলš- উদ্যান তৈরি করেন। বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বেশিরভাগ ছাদ অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। এ সকল অব্যবহৃত ছাদে খুব সহজেই পরিকল্পিতভাবে ফুল, ফল ও শাক-সবজির পারিবারিক বাগান তৈরি করা সম্ভব। এর দ্বারা পারিবারিক ফুল, ফল ও শাক-সবজির চাহিদার মিটিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে।

ছাদে বাগান করার প্রয়োজনীয় উপকরণ : মাটি বা সিমেন্টের টব, হাফ ড্রাম কিংবা সুবিধামত ছাদে স্থায়ী বেড; আয়তন ৩ ফুট বাই ৩ ফুট বা ছাদের কার্নিশ বাড়িয়ে স্থায়ী বেড করা যায়। এছাড়া সিকেচার, কোঁদাল, কাঁচি, সাবল, ঝরনা, বালতি, চালনি, করাত, ছুরি, খুপরী, ¯েপ্র মেশিন ইত্যাদি।

ফুল বা ফলের জন্য কলমের বা গ্রাফটিং চারা ও বিভিন্ন প্রকারের ফুল, ফল ও শাক-সবজি চারা বা বীজ। মাটির মধ্যে বেলে দো-আঁশ মাটি বা পাহাড়িয়া লাল মাটি, গোবর, খৈলসহ বিভিন্ন প্রকার জৈব সার এবং গাছের রোগ-বালাই দমনের জন্য বিভিন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক।

ছাদে বাগান তৈরি করার ঊপযোগী গাছসমূহ: ছাদের বাগানে বিভিন্ন রকমের গাছ লাগানো যায়। এর মধ্যে রয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা, ক্যনা, গাদা, বেলি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা অন্যান্য মৌসুমী ফুল, অর্কিড, বনসাই ও ক্যাকটাস লাগানো যায়। ফল গাছের মধ্যে রয়েছে আম্রপলি, আতা, আঙুর, লতা বোম্বাই জাতের আম, পেয়ারা, কুল, আমড়া, সফেদা, লেবু, ডালিম, বাতাবিলেবু, করমচা, বিলিম্বি, জামরুল, ছোট জাতের কলা, ছোট জাতের আনারস, কমলা, কামরাঙা ইত্যাদি। সবজির মধ্যে রয়েছে বেগুন, টমেটো, শিম, মরিচ, লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়শ, পুইশাক, লালশাক, পটল, শসা, বরবটি, করলা ইত্যাদি।

ছাদে বাগান করার বিভিন্ন পদ্ধতি :

টব পদ্ধতি : খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানাš-র করা যায় বলে টব ছাদ, আঙিনা ও ব্যালকণীর জন্য সর্বোত্তম বাগান পদ্ধতি বলে বিবেচিত। দিনদিন টব পদ্ধতির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে আজকাল প্লাস্টিকের বিভিন্ন ধরনের টব তৈরি করা হচ্ছে এবং এসব টবের ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। টবে চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করা উচিত। ১৪ ইঞ্চি থেকে ১৮ ইঞ্চি আকারের একটি টবের জন্য জৈব সারের পাশাপাশি ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার উত্তমরূপে মিশিয়ে ১০ দিন থেকে ১২ দিন রেখে দিতে হবে। তারপর টব ভরাট করতে হবে।

হাফড্রাম পদ্ধতি : টব পদ্ধতি ও হাফড্রাম পদ্ধতির মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। হাফড্রামের তলদেশে ছিদ্র করতে হবে। ছিদ্রগুলোয় ইটের টুকরো বসাতে হবে; তার উপরে ড্রামের তলদেশে প্রথম ১ ইঞ্চি পরিমাণ খোয়া বা সুড়কি দিতে হবে এবং তার উপরে এক ইঞ্চি পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর দিতে হবে। এর ফলে অতিরিক্ত পানি সহজেই বের হয়ে যেতে পারবে। জৈব সারের পাশাপাশি প্রতিটি ড্রামে ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি ব্যবহার করা যেতে পারে। আম ও লেবু জাতীয় গাছের জন্য প্রতিটি ড্রামে উপরোক্ত জৈব ও রাসায়নিক সারের পাশাপাশি ৫০০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।

স্থায়ী বেড পদ্ধতি : স্থায়ী বেড পদ্ধতি হল স্থায়ীভাবে ছাদে বাগান করা। ছাদে বাগান করার পূর্বে ছাদ বিশেষভাবে ঢালাই দিয়ে নেট ফিনিশ করে নিতে হবে। এর দু’টি পদ্ধতি আছে। যেমনÑ

ছাদের চারদিকে স্থায়ী বেড পদ্ধতি : ছাদে বাগান করার জন্য স্থায়ী বেড পদ্ধতি একটি আধুনিক পদ্ধতি। স্থায়ী বেড পদ্ধতির বাগান করার জন্য ছাদের চারিদিকে ২ ফুট প্রস্থের দুই পাশে ১.৫ ফুট উঁচু দেয়াল ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে তৈরি করলে মাঝখানে যে খালি জায়গা তৈরি হয়, সেই খালি জায়গার তলায় প্রথমে এক ইঞ্চি ইটের সুড়কি বা খোয়া, পরের এক ইঞ্চি গোবর সার দেয়ার পর বাকি অংশ ২ ভাগ মাটি ও ১ ভাগ গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ভরাট করে স্থায়ী বেড তৈরি করা হয়।

ট্যাংক পদ্ধতি: ছাদে এক ফুট উঁচু ৪টি পিলারের উপর পানির ট্যাংক আকৃতির ৩ ফুট দৈর্ঘ্য, ২ ফুট প্রস্থ ও ১.৫ ফুট উঁচু ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে যে ট্যাংক তৈরি করা হয় একেই বলে ট্যাংক বেড পদ্ধতি।

ছাদে গাছ লাগানোর কৌশল : গাছের ধরন অনুযায়ী ড্্রাম/টব নির্বাচন করে সার-মাটি দিয়ে গাছ লাগাতে হবে। ডাইথেন এম-৪৫ অথবা এ জাতীয় ছত্রাকনাশক ছাই এর সাথে মিশিয়ে মাটিতে প্রয়োগ করে মাটি শোধন করা যায়। মাটি শোধন করে আদর্শ নার্সারি থেকে চারা, কলম, কাটিং, বীজ সংগ্রহ করে নিজেই টবে লাগালে খরচ কম হবে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসের মধ্যে ড্রাম বা টবের মাটি বদলাতে হবে। ড্রামে বা টবে ইউরিয়া সার না দেয়াই ভাল।

দূষণমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি, অবসর সময় কাটাতে, কর্মসংস্থান ও শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ তৈরি করতে এবং টাটকা ফল ও শাক-সবজি উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা মেটাতে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছাদে বাগান করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।

Ñমুুহম্মদ আরশেদ আলী চৌধুরী

কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, মেহেরপুর