ব্রেস্ট ক্যান্সার : সহজ প্রতিরোধব্যবস্খা

ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার পাশ্চাত্য মহিলাদের (৩৫-৫৫ বছর) অতি সাধারণ মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। প্রতি বছর এ রোগের প্রকোপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফুসফুসের ক্যান্সারের পরই ব্রেস্ট ক্যান্সার এখন মহিলাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ। এ কারণে বিশ্বব্যাপী অক্টোবর মাসকে ব্রেস্ট ক্যান্সার সচেতনতার মাস হিসেবে পালন করা হয়। বিশেষভাবে শিল্পসমৃদ্ধ পাশ্চাত্য দেশগুলোতেই ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি দেখা যায়। এ জন্য ব্রেস্ট ক্যান্সারকে উমঢ়পথঢ়প সফ ঈমংমলম্থয়মসষ বলা হয়ে থাকে।
বেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ
স্তনে চাকা বা পিণ্ড থাকা (ব্যথাবিহীন ৬৬ শতাংশ)। স্তনের আকারে পরিবর্তন হওয়া। স্তনে বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া। স্তনের বোঁটা থেকে অস্বাভাবিক রস ক্ষরণ। স্তনের চামড়ার রঙ পরিবর্তন। বগলতলায় চাকা বা পিণ্ড থাকা।
স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ে সেসব পরীক্ষা জরুরি তা হলো এফএনএসি (ঋঘঅঈ), আলট্রাসনোগ্রাম, মেমোগ্রাফি এমআরআই (গজও)। এ ছাড়া বিশেষ চিকিৎসক প্রয়োজনীয় অন্যান্য পরীক্ষাও করাতে পারেন যেমন­ টিউমার মার্কার হিসেবে ঈঅ-১৫-৩, অথবা জটিলতা পর্যবেক্ষণ ঈঊঅ এবং গঈঅ পরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে।
ব্রেস্ট ক্যান্সার যাদের বেশি হয়
ব্রেস্ট ক্যান্সারের নিশ্চিত কারণ অজানা। তবে জেনেটিক কারণ অন্যতম। যেসব পরিবার নিকটাত্মীয়ের অন্তত দু’জন ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগীর ইতিহাস থাকে, তাদের চার থেকে ছয় গুণ বেশি সম্ভাবনা থাকে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার। এ ছাড়া যাদের অল্প বয়সে (১২ বছরের নিচে) মাসিক শুরুর ইতিহাস, অধিক বয়সে (৫০ বছরের পরে) রজোনিবৃত্তি (গপষসহথৎঢ়প), অধিক বয়সে প্রথম গর্ভধারণ (৩০ বছরের পর), যারা নি:সন্তান, অধিক সময় গর্ভনিরোধক বড়ি সেবন, হরমন থেরাপি গ্রহণ, স্খূলতা (ঙদপঢ়ময়ী), অ্যালকোহল সেবন ইত্যাদি কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে থাকে।
এ ছাড়া অধিক চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ, বসা কাজের অভ্যাস, ব্যায়াম না করা, ক্রমাগত মানসিক চাপও ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে বর্তমানে চিহ্নিত। অন্য দিকে যেসব মহিলা জরায়ু কিংবা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। আবার ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগীর ফুসফুস, বোন, লিভার ক্যান্সার প্রবণতা থাকে।
ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ
মেয়েদের মাসিক শেষ হওয়ার পরই একটি নির্দিষ্ট দিনে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করতে হবে। ব্রেস্টে কোনো চাকা বা কোনো ধরনের অস্বাভাবিক থাকলে সাথে সাথেই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তবে ব্রেস্টে চাকা থাকা মানেই কিন্তু ক্যান্সার নয়। শতকরা ১০ ভাগ চাকা হয়তো ভবিষ্যতে ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। অন্তত ২০ বছর বয়স থেকে সব মেয়েকেই নিজ স্তন নিজেই পরীক্ষায় অভ্যস্ত হওয়া দরকার। (নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষার কৌশল নিকটস্খ কোনো স্বাস্খ্যকর্মী, নার্স বা চিকিৎসকের কাছ থেকে শিখে নিতে হবে।
খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। ফলমূল বেশি বেশি খেতে হবে। ভিটামিন এ এবং সি জাতীয় ফলমূল বেশি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যেসব খাবারের বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যেমন গাজর, মিষ্টিআলু ও সবুজ শাকসবজি প্রচুর খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। যাদের ওজন বেশি অবশ্যই তাদের ওজন কমাতে হবে। মানসিক চাপ থাকলে সাইকোথেরাপিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। জীবনযাত্রায় নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।
চিকিৎসা সম্ভব দেশেই
ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসায় অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, লেজারথেরাপি ও ইমুনোথেরাপি বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে ব্রেস্ট অপারেশন করে আবার কৃত্রিম উপায়ে ব্রেস্ট তৈরিও করে দেয়া হচ্ছে। সৌন্দর্য রক্ষার জন্যই এ ব্যবস্খা।
প্রাথমিকভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়লে এ রোগের পরিপূর্ণ চিকিৎসা এখন দেশেই সম্ভব। এ ছাড়া অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে হোমিওপ্যাথিতে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাফল্যের ভালো ইতিহাস রয়েছে। ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য খুবই উন্নতমানের ওষুধ রয়েছে হোমিওপ্যাথিতে। বিশেষভাবে ‘কারসিনোসিন’ ওষুধটি আবিষ্কারই রয়েছে ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে। তারপরও বলব হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে। দক্ষ, প্রশিক্ষিত, উচ্চতর ডিগ্রি প্রাপ্ত চিকিৎসক ছাড়া এ রোগের চিকিৎসা গ্রহণ সমীচীন হবে না। তবে ক্যান্সার চিকিৎসায় একক পদ্ধতির বদলে বোর্ডভিত্তিক (অভিজ্ঞ চিকিৎসক সমন্বয়) চিকিৎসায় সাফল্যের হার বেশি।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড রিচার্স, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক ক্যান্সার সোসাইটি, রোড : ১১, বাড়ি : ৩৮, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯।
ফোন : ০৬৬৬-২৬২৯৬০৮, ০১৫৫৬৬৩১৮৬৫, ০১৭১২৮১৭১৪৪
ই-মেইল : মভশড়য়পলপশপন @বথশথমল.ধসশ