ইনসুলিন একটি জীবন রক্ষাকারী ওষুধ। একজন ডায়াবেটিস রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যখন কোনো ডায়াবেটিস রোগীকে বলেন, ‘আপনাকে ইনসুলিন নিতে হবে’- তখন তার উচিত খুব সহজভাবে বিষয়টি মেনে নেয়া। কারণ সময়মতো ইনসুলিন নিতে পারলে চক্ষু, স্নায়ু, হৃদপিন্ড ও কিডনীর বহু জটিল সমস্যা প্রতিরোধ করা যায়। অথচ ইনসুলিন ভীতি এখনও রয়েছে অনেকের মধ্যে।
ইনসুলিন নেয়ার বিভিন্ন নিয়মাবলী রয়েছে। তবে বিশেষ তিনটি জরুরি নিয়ম হলো-
এক. সাধারণত ইনসুলিন নিতে হয় খাবার ৩০-৪৫ মিনিট পূর্বে।
কারণ : মূলত দুই ধরনের ইনসুলিন আমরা ব্যবহার করে থাকি। একটি দেখতে পানির মতো স্বচ্ছ যার কাজ আরম্ভ হয় ইনজেকশন দেয়ার প্রায় ৩০ মিনিট পরে, ২-৪ ঘন্টার মধ্যে এটি সবচেয়ে বেশি কাজ করে এবং এটির কাজের স্থিতিকাল থাকে ৬-৮ ঘন্টা। অন্য ইনসুলিন দেখতে ঘোলাটে যার কাজ শুরু হয় ইনজেকশন দেয়ার মোটামুটি দেড় ঘন্টা পর, ৬-১২ ঘন্টা পর্যন্ত এটি সবচেয়ে বেশি কাজ করে এবং এর কাজের স্থিতিকাল প্রায় ১৮-২৪ ঘন্টা। খাবার পর পর রক্তে বাড়তি শর্করা কমায় স্বচ্ছ ইনসুলিন এবং বেজাল অর্থাৎ সারাদিনের বাড়তি শর্করা হ্রাসে ভূমিকা পালন করে ঘোলাটে ইনসুলিন। তাহলে দেখুন, ইনসুলিন নিয়েই যদি খাওয়া হয় তবে খাবার পর রক্তে যে শর্করা বাড়ছে সেটা কমানোর জন্য কিন্তু ইনসুলিনের কাজ শুরুই হচ্ছে না। উল্লেখ্য, ‘ইনসুলিন এনালোগ’ এক ধরনের নতুন ইনসুলিন বর্তমানে রয়েছে যা খাবার একটু আগে নেয়া যায়। তবে এটি ব্যয়বহুল।
দুই. ইনসুলিন নেয়ার পর পরিমাণমতো খাবার খেতে হবে।
কারণ : রক্তে শর্করা পরিমাণ প্রতি লিটারে ২.৫ মিলিমোলের কম হলে মস্তিষ্কের কিছু অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়, ক্ষেত্র বিশেষে মানিসিক প্রতিবন্ধকতাও দেখা দেয়। ব্লাড সুগার হ্রাস পাওয়ার উল্লেখযোগ্য লক্ষণসমূহ হলো- অসুস্থ বোধ করা, কিছু ভাল না লাগা, বুক ধড়ফড় করা, অধিক ঘাম হওয়া, বুক কাঁপতে থাকা, অস্বাভাবিক আচরণ করা, ভারসাম্য হারিয়ে যাওয়া, এমনকি অজ্ঞান হয়ে পড়া। আর তাই, ইনসুলিন নেয় এমন রোগীকে সব সময় গ্লুকোজ, চিনি কিংবা মিষ্টি কাছে রাখতে হয় যাতে উপরিল্লিখিত উপসর্গগুলো অনুভব হলে সাথে সাথে খেয়ে নেয়া যায়। তিন. অসুস্থ হলে অর্থাৎ ডায়রিয়া, বমি, খাবারে অরুচি অথবা জ্বর হলে সময় মতো ইনসুলিন নিতে হবে। কারণ, আমাদের শরীরে যেকোনো স্ট্রেস বা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কিছু হরমোন তৈরি হয় যা রক্তে শর্করা বাড়ায়। ইনসুলিনের অভাবে একদিকে রক্তের শর্করা শরীরের কাজে লাগে না, অপরদিকে তাপ ও শক্তির জন্য দেহের সঞ্চিত চর্বি অতিরিক্ত ভেঙ্গে কতক ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যেমন কিটন বডি বেশি মাত্রায় রক্তে বেড়ে যায়। ফলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এই অবস্থাকে ডায়াবেটিক কোমা বলা যায় যার উল্লেখযোগ্য লক্ষণসমূহ হচ্ছে- ঘন ঘন প্রস্রাব ও প্রস্রাবে অধিক হারে শর্করা থাকা, খুব বেশি পিপাসা ও ক্ষুধা পাওয়া, বমি ভাব হওয়া, খুব অসুস্থ লাগা, শ্বাস কষ্ট হওয়া, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, ঝিমানো ভাব হওয়া, মাথা ধরা, চোখে ঝাপসা দেখা, এমনকি নিস্তেজ বোধ হওয়া ও শ্বাসে এসিটোনের গন্ধ টের পাওয়া।
অতএব, অসুস্থকালীন দিনগুলো ইনসুলিন নেয়া বন্ধতো করা যাবেই না বরং ক্ষেত্র বিশেষে অধিক মাত্রায় ইনসুলিন দরকার হয়। আর এই সময় খেতে হয় যথাযথ পরিমাণে তরল খাবার যেমন টমেটো, আপেল বা লেবুর সরবত, ভেজিটেবল বা মুরগির সুপ, অন্যান্য ফল এবং কমপক্ষে ৬-৮ গ্লাস পানি।
ডা. বিমল কুমার আগরওয়ালা
মোবাইল : ০১৭১১৬৮২৩৬৪।