কিডনি আমাদের শরীরের দু’টি প্রয়োজনীয় অঙ্গ। দেখতে অনেকটা সিমের বীজের মতো বা অনেকটা বাংলা ৫ অঙ্কের আকার। মানবদেহের পাঁজরের ঠিক নিচে পেটের পেছন দিকে মেরুদণ্ডের দু’পাশে দু’টি কিডনি থাকে। বাম কিডনিটি ডান কিডনি অপেক্ষা সামান্য বড় এবং কিছুটা ওপরে থাকে।
কিডনি হলো শরীরের পরিশোধনাগার। প্রতিদিন কিডনি প্রায় ২০০ লিটার রক্ত শোধন করে দুই লিটার রেচন পদার্থ মূত্র থলিতে জমা করে, যা মূত্রাকারে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিডনি তার ছাঁকনির মাধ্যমে রক্তকে পরিশোধিত করে অপ্রয়োজনীয় দূষিত পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে বের করে দিয়ে আমাদের শরীরকে সুস্খ রাখে। যদি কোনো কারণে কিডনি রক্ত থেকে সেই দূষিত পদার্থ অপসারণ করতে না পারে, তবেই শরীর নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
একনজরে কিডনির ১০টি কাজ :
১। রক্ত পরিশ্রুত করে দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বের করে দেয়া।
২। শরীরে পানির সমতা বজায় রাখা।
৩। রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
৪। হাড় ও মজ্জাকে সবল রাখা।
৫। লোহিত রক্তকণিকা তৈরির জন্য হরমোন উৎপাদন করা।
৬। রক্তে খনিজ পদার্থগুলোর ভারসাম্য রক্ষা করা।
৭। ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য রক্ষা করা।
৮। রক্ত থেকে ওষুধ অপসারণ করা (সেবনকৃত ওষুধ)।
৯। রক্তে এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা।
১০। পুষ্টি পুনরুদ্ধার এবং সেগুলো পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা।
কিডনি রোগের লক্ষণ : ২০ শতাংশ কার্যক্ষম একটি মাত্র কিডনিই একজন মানুষকে সুস্খ রাখতে সক্ষম। কিডনি রোগের প্রধান প্রধান লক্ষণগুলো :
ক) ব্যথা : সাধারণত খুব মৃদু ব্যথা পেটের পেছনে মেরুদণ্ডের দু’পাশে এবং পেটের মাঝখানে নাভির কাছে। কিডনি পাথরের বেলায় ব্যথা তীব্র হতে পারে।
খ) প্রায়ই মাথা ব্যথা।
গ) বমি-বমিভাব এবং বমি করা।
ঘ) প্রস্রাব করতে ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া।
ঙ) বারবার প্রস্রাব হওয়া। অথবা হঠাৎ প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।
চ) চুলকানি/খোস-পাঁচড়া।
ছ) ক্ষুধা না পাওয়া ও ক্লান্তিবোধ করা।
জ) মুখ, বিশেষত চোখের নিচে, হাত, পা অথবা সর্বশরীর ফুলে যাওয়া।
ঝ) উচ্চ রক্তচাপ ও রক্ত শূন্যতা।
রোগ নির্ণয় : যেহেতু কিডনি রোগ অনেক প্রকার, তাই লক্ষণও ভিন্ন ভিন্ন। প্রথমাবস্খায় কিডনি রোগে প্রায়ই কোনো লক্ষণ থাকে না বা সামান্য থাকে। কখনো কখনো কোনো লক্ষণ প্রকাশের আগেই রোগীর কিডনি ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষার দ্বারা কিডনির রুটিন চেকআপ জরুরি। প্রস্রাবের পরীক্ষা, রক্তের বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসাউন্ড এবং প্রয়োজনে বায়োপসি দ্বারা কিডনি রোগ নির্ণয় করা যায়।
কিডনি রোগের জটিলতা : কিডনির রোগ মানে কিডনির কাজ ব্যাহত হওয়া। যার ফলে যে সব রোগ দেখা দিতে পারে সেগুলো হচ্ছে : ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, নেফন্সাইটিস, সংক্রামণ, পাথর হওয়া, আঘাত প্রাপ্তি ইত্যাদি।
কিডনি রোগের প্রতিরোধ : ক) প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা। খ) নিজেকে কর্মতৎপর রাখুন। নিজস্ব পেশার কাজ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা, দৌড়ান বা সাইকেল চালানোর অভ্যাস করা। গ) গলায় প্রদাহ বা খোস-পাঁচড়া হলে সময় মতো ভালোভাবে চিকিৎসা করানো। ঘ) ধূমপান না করা। ধূমপান কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া ধূমপান কিডনিতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। ঙ) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। উচ্চরক্তচাপ কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অন্যদিকে ক্রলিক কিডনি রোগের উচ্চরক্তচাপ একটি প্রধান লক্ষণ। চ) ব্যথা বা বাতের ব্যথার ওষুধ একটানা বেশিদিন ব্যবহার না করা। এ জন্য ব্যথা উপশমে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। ছ) ডায়বেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। জ) শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ঝ) কিডনি পরীক্ষা করুন যদি আপনার পরিবারে কারো কিডনি রোগের ইতিহাস থাকে, তবে আপনার কিডনি পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
কিডনি রোগের চিকিৎসা : কোথায় যাবেন?
কিডনি রোগের চিকিৎসা বেশ জটিল। কী ধরনের রোগ, প্রকৃত কারণ এবং রোগের স্খায়ীত্বের ওপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা। অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসের শরণাপন্ন হয়ে ভালোভাবে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হবে। আধুনিক অ্যালোপ্যাথিতে মেডিসিন এবং ডায়ালিসিস পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়। শুরুতেই রোগ ধরা পড়া রোগী স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারেন। ডায়ালিসিসের মাধ্যমে রোগী অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতেও কিডনি রোগের ভালো চিকিৎসা রয়েছে। যেমন হোমিওপ্যাথিতে কিডনি রোগের উন্নত চিকিৎসা রয়েছে। এ জন্য এ বিষয়ে একজন বিজ্ঞ, উচ্চশিক্ষিত, প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের সাহায্য নিতে পারেন। ইউনানী, আয়ুর্বেদী ও হারবাল পদ্ধতিতেও কিডনি রোগের ভালো চিকিৎসা সম্ভব। এসব চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর একজন বিজ্ঞ চিকিৎসকই শুধু আপনাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারেন। এ জন্য চিকিৎসক বাছাইয়ে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ।
রোড নং-১১, বাড়ি নং-৩৮, নিকুঞ্জ-০২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯। হেলপ লাইন : ০৬৬৬-২৬২৯৬০৮ (১২-২টা), ০১৭১২৮১৭১৪৪।