মাল্টিবুটিং কম্পিউটারে পছন্দের Operating System কে যেভাবে ডিফল্ট করবেন
০১. Run এ গিয়ে টাইপ করুন cmd। এবার এন্টার দিন। কমান্ড প্রম্পট চালু হবে।
০২. কমান্ড প্রম্পটে নিচের কমান্ডটি লিখে এন্টার দিন।
attrib -s -h -r c:\boot.ini
০৩. কমান্ড প্রম্পট বন্ধ করে দিন।
০৪. এবার আবার Run এ গিয়ে টাইপ করুন C:\boot.ini এবং এন্টার দিন।
০৫. চিত্রের ন্যায় একটি টেক্সট ফাইল Notepad এ খুলবে।
০৬. এখানে ৩য় লাইনে 'default=' এর পরে যা আছে তা মুছে দিন(সাধারনত থাকে 'multi(0)disk(0)rdisk(0)partition(1)\WINDOWS' লেখাটি)। এবার আপনি যে Operating System কে ডিফল্ট হিসাবে চান(৫ম লাইন থেকে শুরু করে যে কোনটি) তার multi(0)disk(0)rdisk(0)partition(1)\WINDOWS অর্থাৎ '=' এর আগ পর্যন্ত অংশটুকু কপি করে পেস্ট দিন।
০৭. Save করে পিসি রিস্টার্ট দিন। দেখুন কাজ হয়েছে কিনা
এছাড়া আপনি ৩০ সেকেন্ড অপেক্ষা করতে না চাইলে ২য় লাইনে 30 এর স্থলে আরো কম একটা সংখ্যা লিখুন।
পেন ড্রাইভ থেকে বুট করুন যে কোন কম্পিউটার!!!
আগে মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে ফ্লপি অথবা সিডি থেকে পিসি বুট করত। বর্তমানে ফ্লপিকে বিলু্প্তির পথে ধরে নেওয়া যায়। আর ফ্লপির স্থান দখল করে নিয়েছে পেনড্রাইভ। ফলে বর্তমানে যেসব মাদারবোর্ড বের হচ্ছে তার সবগুলোতেই ইউএসবি থেকে বুট করার অপশন থাকে। ইদানিং সব ধরনের অপারেটিং সিস্টেমের ইউএসবি ভার্শন পাওয়া যায় যা হার্ডডিস্কের পরিবর্তে সরাসরি ইউএসবি পেন ড্রাইব থেকে বুট হয়। যাদের মাদারবোর্ডে ইউএসবি বুট সুবিধা আছে তারা পেন ড্রাইভ থেকে অপারেটিং সিস্টেম বুট করা সহ সব ধরনের বুট করতে পারেন। যারা একটু পুরনো পিসি ব্যবহার করেন তাদের আফসোস আর দীর্ঘশ্বাস ফেলা আর কিছুই করার থাকে না। ফলে অনেকেই পুরোনো পিসি বিক্রি করে নতুন পিসি কিনছেন। আপনার আফসোসের দিন শেষ! মাদারবোর্ডে ইউএসবি বুট অপশন না থাকলেও পেন ড্রাইভ থেকে পিসি বুট করতে পারবেন!!! কিভাবে? একটা ছোট ইউটিলিটি সফটওয়্যার আপনাকে এই ব্যবস্থা করে দেবে।
সফটওয়্যারটির নাম হল PLoP Boot Manager। এই বুট ম্যানেজারটি আপনি ফ্লপি, সিডিরম অথবা সরাসরি হার্ডডিস্ক থেকে চালু করতে পারবেন। হার্ডডিস্কে ইনস্টল করার জন্য আলাদা পার্টিশন করার দরকার নেই, C: ড্রাইভেই ইনস্টল হবে। PLoP Boot Manager এর বিস্তারিত জানতে এবং ডাউনলোডের জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন।
তৈরি করুন USB BootDisk
ইউএসবি পেন ড্রাইভের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার ফলে ফ্লপিডিস্ক এখন প্রায় বিলুপ্ত। ফলে বুটেবল ডিস্কের ক্ষেত্রে ও ফ্লপির জায়গা দখর করে নিয়েছে ইউএসবি পেন ড্রাইভ। চলুন দেখা যাক কিভাবে USB Boot Disk তৈরী করা যায়।
১. এই লিংক থেকে Create USB Bootdisk ফাইলটি ডাউনলোড করুন। এক্সট্রাকশন পাসওয়ার্ড হবে http://jewelosman.wordpress.com/
২. 1_USB_Format এবং 2_DOS_System_Files নামে দুটো ফোল্ডার পাবেন। পিসির সাথে পেনড্রাইভ কানেক্ট করে 1_USB_Format থেকে HP USB Format for Windows রান করুন। File System : FAT32 সিলেক্ট করুন।
৪. 2_DOS_System_Files ফোল্ডার থেকে সব ফাইল পেন ড্রাইভে কপি করুন। ইউএসবি বুট ডিস্ক হয়ে গেল।
৫. বায়োসে বুট অপশন ফ্লপির পরিবর্তে ইউএসবি সিলেক্ট করলেই(পিসির বায়োসে ইউএসবি বুট সাপোর্ট থাকতে হবে) পেন ড্রাইভ থেকে পিসি বুট হবে।
Windows XP সেটাপ করুন USB পেন ড্রাইভ থেকে
USB_MultiBoot_10 ফোল্ডারের ভেতরে USB_MultiBoot_10 নামে একটা ব্যাচ ফাইল থাকবে সেটা চালু করুন। Press any key to continue . . . লেখা একটা মেসেজ আসবে। এন্টার দিন। Enter your choice: এ P লিখে করে এন্টার দিন। এবার আপনার পেন ড্রাইভটি ফরম্যাটের অপশন আসবে Start -> Yes -> Yes -> OK -> Close দিন। সিডিরমে Windows XP সেটাপ সিডি প্রবেশ করান। এক্সপি সেটাপ অটোরান হবে তা বন্ধ করুন। Enter your choice: এ 1 লিখে করে এন্টার দিন। এক্সপি সেটাপ সিডিটি যে ড্রাইভে আছে তা সিলেক্ট করে OK দিন। Unattended Install এর একটা অপশন আসবে Yes দিন। এবার একে একে নিচের তথ্যগুলো দিন এবং প্রত্যেকটা তথ্য দেওয়ার পর OK বাটনে ক্লিক করুন।
Owner Name = Jewel(আপনার নাম)
Organization Nmae = Personal(আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম)
Product Key = xxxxx-xxxxx-xxxxx-xxxxx-xxxxx(এক্সপির সিরিয়াল নাম্বার)
Computer Name = JEWEL-PC(আপনার কম্পিউটারের নাম)
Administrator Password = xxxxxx(আপনার পছন্দমত)
Time Zone = 205 (এটা GMT+07:00 এর জন্য। GMT+06:00 এর অপশন এতে নেই তাই পরে ঠিক করে নেবেন)
Workgroup Name = WORKGROUP(আপনার পছন্দমত)
User Name = Jewel(আপনার ইউজারনেম)
যেসব তথ্য দিয়েছেন সবকিছু দেখাবে। ঠিক আছে কিনা দেখে OK ক্লিক করুন। Enter your choice: এ 2 লিখে করে এন্টার দিন। এবার আপনার পেন ড্রাইভটি কম্পিউটারের যে ড্রাইভ হিসেবে দেখাচ্ছে তা সিলেক্ট করে OK দিন। যেমন আমার পিসিতে I: ড্রাইভ। Enter your choice: এ 3 লিখে এন্টার দিন। ডিস্ক তৈরী করা শুরু হবে।
সেটাপের সময় যা খেয়াল রাখতে হবে, প্রথমবার উইন্ডোজের ডেস্কটপ না আসা পর্যন্ত পেন ড্রাইভটা খুলবেন না। অনেকের পিসিতে সেটাপ চলাকালীন প্রথম রিস্টার্টের পর hal.dll এর একটা এরর আসতে পারে। সেক্ষেত্রে পিসিকে পেন ড্রাইভ থেকে বুট করে বুট মেন্যুতে "2. and 3. Continue with GUI Mode Setup Windows XP + Start XP from HD 1" সিলেক্ট করে এন্টার দিতে হবে।
ডাউনলোড লিংক ০১ , ০২ , ০৩
সেদিন যা ঘটেছিল
যে ঘরে বঙ্গবন্ধু ছিলেন তার বাইরের বারান্দায় ঘুমিয়েছিল মো. সেলিম (আব্দুল) ও আব্দুর রহমান শেখ (রমা)।
উপর থেকেই বঙ্গবন্ধু নিচতলায় তার ব্যক্তিগত সহকারি এ এফ এম মহিতুল ইসলামকে টেলিফোন করে বলেন, "সেরনিয়াবাতের বাসায় দুষ্কৃতিকারীরা আক্রমণ করেছে। জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন লাগা।" পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে, মহিতুল গণভবন (তৎকালীন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়) এক্সচেঞ্জে চেষ্টা করতে থাকেন।
ভোর সাড়ে ৫টার দিকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির রক্ষীরা বিউগল বাজিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন শুরু করা মাত্রই বাড়িটি লক্ষ করে দক্ষিণ দিক থেকে সরাসরি আক্রমণ শুরু হয়।
একটু পরেই বঙ্গবন্ধু তার ঘরের দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে আসেন। ঘুম থেকে ওঠে গৃহকর্মী আব্দুল আর রমা। বেগম মুজিবের কথায় রমা নিচে নেমে মেইন গেটের বাইরে এসে দেখেন সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য গুলি করতে করতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে এগুচ্ছে।
রমা বাড়ির ভেতরে ফিরে দেখেন, লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধু নিচতলায় নামছেন।
দোতলায় গিয়ে দেখেন, বেগম মুজিব আতঙ্কিত অবস্থায় ছোটাছুটি করছেন। রমা আর দোতলায় দাঁড়িয়ে না থেকে তিনতলায় চলে যান এবং বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল ও তার স্ত্রী সুলতানা কামালকে ঘুম থেকে তোলেন।
ঘটনা শুনে শার্ট-প্যান্ট পড়ে নিচতলায় নামেন শেখ কামাল। সুলতানা কামাল আসেন দোতলা পর্যন্ত।
রমা দোতালায় শেখ জামাল ও তার স্ত্রীকেও ঘুম থেকে তোলেন। জামা-কাপড় পরে শেখ জামাল তার স্ত্রীকে নিয়ে দোতলায় বেগম মুজিবের কক্ষে যান।
ওদিকে গোলাগুলির মধ্যে অভ্যর্থনা কক্ষে বঙ্গবন্ধুর সামনেই বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে থাকেন মহিতুল।
পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও গণভবন এক্সচেঞ্জে চেষ্টার এক পর্যায়ে রিসিভার নিয়ে বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেন, "আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি ..."। বঙ্গবন্ধু তার কথা শেষ করতে পারেননি।
একঝাঁক গুলি জানালার কাচ ভেঙে অফিসের দেয়ালে লাগে। কাচের এক টুকরায় মহিতুলের ডান হাতের কনুই জখম হয়। ওই জানালা দিয়ে গুলি আসতেই থাকে। বঙ্গবন্ধু টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন এবং মহিতুলের হাত ধরে কাছে টেনে শুইয়ে দেন।
এর মধ্যেই গৃহকর্মী আব্দুলকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে তার পাঞ্জাবি ও চশমা পাঠিয়ে দেন বেগম মুজিব। কিছুক্ষণ পর গুলিবর্ষণ থেমে গেলে বঙ্গবন্ধু উঠে দাঁড়িয়ে আব্দুলের হাত থেকে পাঞ্জাবি আর চশমা নিয়ে পরেন। নিচতলার এই ঘর থেকে বারান্দায় বের হয়ে বঙ্গবন্ধু পাহারায় থাকা সেনা ও পুলিশ সদস্যদের বলেন, "এতো গুলি হচ্ছে, তোমরা কী করছো ?" এ কথা বলেই বঙ্গবন্ধু উপরে চলে যান।
বঙ্গবন্ধু উপরে উঠতে না উঠতেই শেখ কামাল নিচে নেমে বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলেন, "আর্মি আর পুলিশ ভাইরা, আপনারা আমার সঙ্গে আসেন।" এ সময় শেখ কামালের পেছনে গিয়ে দাঁড়ান মহিতুল ইসলাম ও পুলিশের ডিভিশনাল সুপারিনটেনডেন্ট (ডিএসপি) নুরুল ইসলাম খান।
ঠিক তখনই মেজর নূর, মেজর মহিউদ্দিন (ল্যান্সার) এবং ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা সৈন্যদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ঢোকে। গেটের ভেতর ঢুকেই তারা 'হ্যান্ডস্ আপ' বলে চিৎকার করতে থাকে। মহিতুল ইসলামকে টেনে ঘরের মধ্যে নিয়ে যান নুরুল ইসলাম খান।
কোনো কথা না বলেই শেখ কামালের পায়ে গুলি করে বজলুল হুদা। নিজেকে বাঁচাতে লাফ দিয়ে ঘরের মধ্যে গিয়ে পড়েন শেখ কামাল। মহিতুলকে বলতে থাকেন, "আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল। আপনি ওদেরকে বলেন।" মহিতুল ঘাতকদের বলেন, "উনি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।"
এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে শেখ কামালকে লক্ষ করে বজলুল হুদা তার হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে ব্রাশফায়ার করে। সঙ্গে সঙ্গে মারা যান শেখ কামাল। এর মধ্যে একটা গুলি মহিতুলের হাঁটুতে আরেকটা নুরুল ইসলামের পায়ে লাগে।
এ অবস্থাতেই মহিতুলকে টেনে নুরুল ইসলাম তার কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে তারা দেখেন, পুলিশের বিশেষ শাখার এক সদস্য দাঁড়িয়ে ভয়ে কাঁপছে। অস্ত্রটা তার পায়ের কাছে পড়ে আছে। মুহূর্তের মধ্যে ওই ঘরে ঢুকে বজলুল হুদা সবাইকে বাইরে গিয়ে দাঁড়ানোর আদেশ দেয়।
নিচে কী হচ্ছে তার কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তিনি দোতলায় তার ঘরের দরজা বন্ধ করে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ফোনে তার সামরিক সচিব কর্নেল জামিলউদ্দিনকে পান। তিনি তাকে বলেন, "জামিল, তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আর্মির লোকরা আমার বাসা অ্যাটাক করেছে। শফিউল্লাহকে ফোর্স পাঠাতে বলো।"
তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহকেও ফোন করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি তাকে বলেন, "শফিউল্লা তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে, কামালকে (শেখ কামাল) বোধ হয় মেরে ফেলেছে। তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও।"
জবাবে শফিউল্লাহ বলেন, "আই অ্যাম ডুয়িং সামথিং। ক্যান ইউ গেট আউট অফ দ্যা হাউজ?"
বঙ্গবন্ধুর কথা শোনার পরই কর্নেল জামিল তার ব্যক্তিগত লাল রঙের গাড়িটি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন। সঙ্গে ছিলেন নিজের গাড়িচালক আয়েনউদ্দিন মোল্লা। কিন্তু, পথেই সোবাহানবাগ মসজিদের কাছে তাকে গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা। পালিয়ে বেঁচে যান আয়েনউদ্দিন।
এদিকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গেটের সামনে মহিতুল, নুরুল ইসলাম, আব্দুল মতিন, পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যসহ অন্য সদস্যদের সারি করে দাঁড় করানো হয়। এর মধ্যে ঘাতকদের একজন পুলিশের বিশেষ শাখার সদস্যকে গুলি করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি পড়ে যান।
এরপর ঘাতকরা গুলি করতে করতে ওপরে চলে যায়। তারা শেখ জামালের ঘরের বাথরুমে আশ্রয় নেওয়া গৃহকর্মী আব্দুলকে গুলি করে। হাতে ও পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থাতে তিনি সিঁড়ির পাশে গিয়ে হেলান দিয়ে বসে থাকেন।
"তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?"
বঙ্গবন্ধুর ঘরে তিনি ছাড়াও ছিলেন বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সুলতানা কামাল, রোজী জামাল। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ঘরের বাইরে অবস্থান নেয়। গোলাগুলি থামলে বঙ্গবন্ধু দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে আসলেই ঘাতকরা তাকে ঘিরে ধরে। মেজর মহিউদ্দিন ও তার সঙ্গের সৈন্যরা বঙ্গবন্ধুকে নিচে নিয়ে যেতে থাকে। ঘাতকদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন, "তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?"
রক্তে ভেসে যায় সারা সিঁড়ি
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের কাছে মহিউদ্দিন ঘাবড়ে যায়। বঙ্গবন্ধু বলেন, "তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি, কী করবি- বেয়াদবি করছিস কেন?" এ সময় নিচতলা ও দোতলায় সিঁড়ির মাঝামাঝি অবস্থান নেয় বজলুল হুদা ও নূর। বঙ্গবন্ধুকে নিচে নিয়ে আসার সময় নূর কিছু একটা বললে মহিউদ্দিন সরে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে বজলুল হুদা ও নূর তাদের স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে।
বঙ্গবন্ধুর বুকে ও পেটে ১৮টি গুলি লাগে। নিথর দেহটা সিঁড়ির মধ্যে পড়ে থাকে। সারা সিঁড়ি ভেসে যায় রক্তে।
রমাই প্রথম বেগম মুজিবকে জানায়, বঙ্গবন্ধুকে গুলি করা হয়েছে
বঙ্গবন্ধুর পেছন পেছন রমাও যাচ্ছিলো। কিন্তু, ঘাতকরা তাকে ঘরের মধ্যে চলে যেতে বলে। এর মধ্যে দোতলায় শেখ রেহানার ঘরে থাকা তার চাচা শেখ নাসের ওই কক্ষে যায়। তার হাতে গুলি লাগার ক্ষত ছিলো। রমাই প্রথম বেগম মুজিবকে জানায়, বঙ্গবন্ধুকে গুলি করা হয়েছে।
এ সময় ওই ঘরের বাথরুমে আশ্রয় নেন বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, শেখ নাসের ও রমা। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে নিচে নেমে এসে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।
এরপর পরই মেজর আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেউদ্দিন তাদের সৈন্যসহ বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আসে। আজিজ পাশা তার সৈন্যদের নিয়ে দোতলায় চলে যায়। তারা বঙ্গবন্ধুর ঘরের দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা দরজায় গুলি করে। তখন বেগম মুজিব দরজা খুলে দেয় এবং ঘরের মধ্যে যারা আছে তাদের না মারার জন্য অনুরোধ করেন।
ঘাতকরা বেগম মুজিব, শেখ রাসেল, শেখ নাসের ও রমাকে নিচে নিয়ে আসতে থাকে।
সিঁড়িতে বঙ্গবন্ধুর লাশ দেখেই বেগম মুজিব কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং চিৎকার দিয়ে বলেন, "আমি যাব না, আমাকে এখানেই মেরে ফেলো।"
রক্তক্ষরণে বিবর্ণ হয়ে যায় সুলতানা কামালের মুখ
বেগম মুজিব নিচে নামতে অস্বীকৃতি জানান। ঘাতকরা শেখ রাসেল, শেখ নাসের ও রমাকে নিচে নিয়ে যায়। আর, বেগম মুজিবকে তার ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। বেগম মুজিবসহ বঙ্গবন্ধুর ঘরে আগে থেকেই অবস্থান নেওয়া শেখ জামাল, সুলতানা কামাল ও রোজী জামালকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করে আজিজ পাশা ও রিসালদার মোসলেউদ্দিন।
বেগম মুজিবের নিথর দেহটি ঘরের দরজায় পড়ে থাকে। বাঁ'দিকে পড়ে থাকে শেখ জামালের মৃতদেহ। রোজী জামালের মুখে গুলি লাগে। আর রক্তক্ষরণে বিবর্ণ হয়ে যায় সুলতানা কামালের মুখ।
শেখ মুজিব বেটার দ্যান শেখ নাসের
শেখ নাসের, শেখ রাসেল আর রমাকে নিচে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদেরকে সবাইকে সঙ্গে লাইনে দাঁড় করানো হয়। এ সময় শেখ নাসের ঘাতকদের উদ্দেশ্যে বলেন, "আমি তো রাজনীতি করি না। কোনো রকম ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই।"
ঘাতকরা একে অপরকে বলে, "শেখ মুজিব বেটার দ্যান শেখ নাসের।"
এরপর তারা শেখ নাসেরকে বলে, "ঠিক আছে। আপনাকে কিছু বলবো না। আপনি ওই ঘরে গিয়ে বসেন।" এই বলে তাকে অফিসের সঙ্গে লাগোয়া বাথরুমে নিয়ে গুলি করে। এরপর শেখ নাসের 'পানি পানি' বলে গোঙাতে থাকেন। তখন শেখ নাসেরের ওপর আরেকবার গুলিবর্ষণ করা হয়।
'ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো?'
লাইনে দাঁড়িয়ে শেখ রাসেল প্রথমে রমাকে ও পরে মহিতুল ইসলামকে জড়িয়ে ধরে বলে, "ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো?"
মহিতুল জবাব দেয়, "না ভাইয়া, তোমাকে মারবে না।" এ সময় শেখ রাসেল তার মায়ের কাছে যেতে চাইলে আজিজ পাশা মহিতুলের কাছ থেকে জোর করে তাকে দোতলায় নিয়ে যেতে বলে।
আজিজ পাশার কথা মতো এক হাবিলদার শেখ রাসেলকে দোতলায় নিয়ে গিয়ে গুলি করে হত্যা করে। রাসেলের চোখ বের হয়ে যায়। আর মাথার পেছনের অংশ থেতলে যায়। রাসেলের দেহটি পড়ে থাকে সুলতানা কামালের পাশে।
পুরো ঘরের মেঝেতে মোটা রক্তের আস্তর পড়ে গিয়েছিলো। এর মাঝেই ঘাতকের দল লুটপাট চালায়।
বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সেদিন তার দু'মেয়ে ছিলেন না। বড় মেয়ে শেখ হাসিনা স্বামীর সঙ্গে জার্মানিতে ছিলেন। ছোট বোন শেখ রেহানাকেও নিয়ে গিয়েছিলেন তারা।
ঘাতকদের প্রস্তুতি
১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সেনাবাহিনীর টু-ফিল্ড রেজিমেন্টের যানবাহনগুলো সচল হয়ে ওঠে। ক্যান্টনমেন্টের দক্ষিণে অবস্থিত ইউনিট থেকে ১০৫এমএম কামানগুলোকে ভারি ট্রাক দিয়ে টেনে নির্মাণাধীন জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয় নিয়মিত নৈশ প্রশিক্ষণের জন্য।
রাত ১০টার দিকে সেনানিবাসের উত্তর প্রান্ত থেকে বেঙ্গল ল্যান্সারের টি-৫৪ ট্যাংকগুলো ইউনিট থেকে বেরিয়ে পড়ে। এয়ারপোর্টে ১৮টি কামান ও ২৮টি ট্যাংক একত্রিত হয়।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে মেজর ডালিম, মেজর নূর, মেজর হুদা, মেজর শাহরিয়ার, মেজর পাশা, মেজর রাশেদ প্রমুখ সেখানে জড়ো হয় ।
১৫ আগস্ট রাতের প্রথম প্রহরে মেজর ফারুক অফিসারদের নির্দেশ দেয় বিমান বন্দরের কাছে হেড কোয়ার্টারে স্কোয়াড্রন অফিসে মিলিত হতে। অফিসারদের আপারেশনের পরিকল্পনা জানায় মেজর ফারুক।
সে-ই ছিলো এই অপারেশনের দায়িত্বে। প্রধান টার্গেট বঙ্গবন্ধুর বাড়ি সরাসরি আক্রমণের পরিকল্পনা করা হয়। ওই বাড়িকে ঘিরে দু'টো বৃত্ত তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। আরো সিদ্ধান্ত হয়, ভেতরের বৃত্তের সদস্যরা সরাসরি বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণ করবে। বাইরে থেকে রক্ষীবাহিনী বা ভেতর থেকে সেনাবাহিনীর কোনো আক্রমণ এলে তা ঠেকানোর দায়িত্বে দেওয়া হয় বাইরের বৃত্তের সদস্যদের।
এর দায়িত্ব দেওয়া হয় মেজর নূর ও মেজর হুদাকে। সিদ্ধান্ত হয়- তারা ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর রোড, সোবাহানবাগ মসজিদ এবং ৩২ নম্বর ব্রিজে রোড ব্ল�ক করবে। প্রধান টার্গেট বঙ্গবন্ধুর বাসা আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে ধানমণ্ডিতেই শেখ ফজলুল হক মণি এবং আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় আক্রমণেরও সিদ্ধান্ত হয়।
ডালিমকে বঙ্গবন্ধুর বাসায় আক্রমণের সময় উপস্থিত থাকতে অনুরোধ করেন মেজর ফারুক। কিন্তু, পূর্ব সম্পর্কের অজুহাতে বঙ্গবন্ধুর বাসায় আক্রমণে উপস্থিত না থেকে স্বেচ্ছায় সেরনিয়াবাতের বাসায় আক্রমণের দায়িত্ব নেয় ডালিম।
ভারি মেশিনগান সংযোজিত দ্রুতগতির একটি জিপে রওনা দেয় ডালিম। সঙ্গে এক প্লাটুন ল্যান্সারসহ একটি বড় ট্রাক।
শেখ মণির বাসায় আক্রমণের দায়িত্ব দেওয়া হয় রিসালদার মোসলেমউদ্দিনকে। তার সঙ্গে দেওয়া হয় দু'প্ল�াটুন সৈন্য।
এক কোম্পানি সেনাসহ রেডিও স্টেশন, বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউমার্কেট এলাকার দায়িত্বে থাকে মেজর শাহরিয়ার। একই সঙ্গে ওই গ্র"পকে বিডিআর থেকে কোনো ধরনের আক্রমণ হলে প্রতিহত করার দায়িত্বও দেওয়া হয়।
২৮ টি গোলাবিহীন ট্যাংক নিয়ে শের-ই বাংলা নগরে রক্ষীবাহিনীকে প্রতিহত করার দায়িত্ব নেন মেজর ফারুক নিজে। তবে ট্যাংকের মেশিনগানগুলোয় প্রচুর গুলি ছিলো।
মেজর মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণের জন্য ১২টি ট্রাকে সাড়ে তিনশ' সাধারণ সৈনিককে তৈরি করা হয়।
মেজর রশিদের সরাসরি কোনো আক্রমণের দায়িত্ব ছিলো না। তার দায়িত্ব ছিলো হত্যাকাণ্ড পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দেওয়া এবং সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি সমন্বয় করা।
তার নেতৃত্বে থাকা ১৮টি কামান গোলা ভর্তি করে যুদ্ধাবস্থায় তৈরি রাখা হয়। কামানগুলো রক্ষীবাহিনীর হেড কোয়ার্টার এবং বঙ্গবন্ধুর বাসা লক্ষ করে তাক করা হয়। একটি মাত্র ১০৫ এমএম হাউইটজার কামান রাখা হয় আর্টিলারির মেজর মহিউদ্দিনের অধীনে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির উল্টো দিকে লেকের পাড়ে।
দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার পর সবাইকে তাজা বুলেট ইস্যু করা হয়। ঘাতকের দল বিমানবন্দর এলাকা থেকে ভোররাত ৪ টার দিকে ধানমণ্ডির উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। ফারুকের নেতৃত্বে ২৮ টি ট্যাংক বিমানবন্দর সড়কে বনানীর এম.পি. চেকপোস্ট দিয়ে সেনানিবাসের ভেতরে ঢুকে পড়ে। এর মধ্যে ফজরের আজান পড়ে যায়।
ফারুক তার ট্যাংক নিয়ে ৪৬ ব্রিগেড ইউনিটের লাইনের একেবারে ভেতর দিয়ে বাইপাস সড়ক ধরে সেনাসিবাসের প্রধান সড়কে চলে আসে। ঢাকা সেনানিবাসে সে সময়ে বিমানবাহিনীর যে হেলিপ্যাড ছিলো, তার ঠিক উল্টো দিকের একটি গেট দিয়ে ফারুক তার ট্যাংক নিয়ে বিমানবন্দরের (পুরনো বিমানবন্দর) ভেতর ঢুকে পড়ে। এ সময় ফারুককে অনুসরণ করছিলো মাত্র দু'টি ট্যাংক। বাকি ট্যাংকগুলো পথ হারিয়ে জাহাঙ্গীর গেট দিয়ে ফার্মগেটের দিকে এগুতে থাকে।
ফারুক এয়ারপোর্টের পশ্চিম দিকের দেয়াল ভেঙে রক্ষীবাহিনীর হেডকোয়ার্টারের সামনে উপস্থিত হয়।
রাত সোয়া ৫ টার দিকে মেজর ডালিম ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের নেতৃত্বে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও শেখ মণির বাসা আক্রান্ত হয়।
শেখ মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে হত্যা করে ঘাতকরা। প্রাণে বেঁচে যান শেখ মণির ছেলে শেখ ফজলে শামস পরশ ও শেখ ফজলে নূর তাপস।
ডালিমের নেতৃত্বে হত্যা করা হয় আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ১৪ বছর বয়সী মেয়ে বেবী, ১২ বছরের ছেলে আরিফ, চার বছরের নাতি বাবু (আবুল হাসনাত আবদুল্লার ছেলে), ভাতিজা শহীদ সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে আবদুল নইম খান রিন্টু (আওয়ামী লীগ নেতা আমীর হোসেন আমুর খালাতো ভাই), তিন অতিথি এবং চারজন কাজের লোককে।
দাফন
পরের দিন ঢাকার স্টেশন কমান্ডার আব্দুল হামিদ বঙ্গবন্ধুর লাশ ছাড়া ১৫ আগস্টে নিহতদের লাশ দাফন করেন। আব্দুল হামিদ ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে কফিনে নিহতদের লাশ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে শেখ মণি ও আবদুর রব সেরনিয়াবাতের পরিবারের সদস্যদের লাশ সংগ্রহ করে বনানী গোরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করেন।
বনানী কবরস্থানে সারিবদ্ধ কবরের মধ্যে প্রথমটি বেগম মুজিবের, দ্বিতীয়টি শেখ নাসেরের, এরপর শেখ কামাল, সুলতানা কামাল, শেখ জামাল, রোজী জামাল, শেখ রাসেল, ১৩ নম্বরটি শেখ মণির, ১৪ নম্বরটি আরজু মণির, ১৭ নম্বরটি সেরনিয়াবাতের আর বাকি কবরগুলো সেদিন এই তিন বাড়িতে যারা মারা গেয়েছিলেন তাদের। ১৬ আগস্ট সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে বঙ্গবন্ধুর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় টুঙ্গীপাড়ায়। সেখানে তাকে দাফন করা হয় তার বাবার কবরের পাশে। সেনাবাহিনীর ওই হেলিকপ্টারের পাইলট ছিলেন ফ্লাইট লে. শমশের আলী।
সূত্র: বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দেওয়া এ এফ এম মহিতুল ইসলাম, আব্দুর রহমান শেখ (রমা), মো. সেলিম (আব্দুল), অবসরপ্রাপ্ত হাবিলদার মো. কুদ্দুস শিকদার, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল হামিদ, সাবেক সেনাপ্রধান শফিউল্লাহ, আয়েনউদ্দিন মোল্লা (সোবহানবাগে নিহত বঙ্গবন্ধুর সামরিক সচিব কর্নেল জামিলউদ্দিনের গাড়িচালক) এর সাক্ষ্য এবং অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আব্দুল হামিদের বই 'তিনটি সেনা অভ্যুত্থান ও কিছু না বলা কথা'।
ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ডের সেই রায়
১৯৯৮ সালের ৮ই নভেম্বর দেওয়া ওই রায়ে ফায়ারিং স্কোয়াডে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছিলো, এভাবে কার্যকরে কর্তৃপক্ষের কোন অসুবিধা থাকলে প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তা কার্যকর করা যাবে।
তৎকালীন ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ গোলাম রসুল এই রায় দেন। আদালত সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত তাহেরউদ্দিন ঠাকুরসহ চার আসামিকে খালাস দেয়।
রায়ে মৃত্যৃদণ্ড পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারী), পলাতক লে. কর্নেল আবদুর রশিদ, পলাতক মেজর বজলুল হুদা (বর্তমানে বন্দি), পলাতক বরখাস্ত লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, অবসরপ্রাপ্ত মেজর শরিফুল হোসেন ওরফে শরফুল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার/ বর্তমানে বন্দি), অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, অবসরপ্রাপ্ত লে. কর্নেল আবদুল আজিজ পাশা (প্রয়াত), ক্যাপ্টেন মো. কিসমত হাশেম, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন নাজমুল হোসেন আনসার, অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ, রিসালদার মোসলেমউদ্দিন ওরফে মোসলেহউদ্দিন।
রায়ের আদেশে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোর ৫টার দিকে ধানমণ্ডির নিজ বাসভবনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু, তার পরিবারের সদস্য, আত্মীয়স্বজন ও অন্যদের ষড়যন্ত্র ও পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গুলি করে হত্যা করার অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
রায়ে আরো বলা হয়, "ঘটনার পর কোনো কোনো আসামি দেশ-বিদেশে নিজেদের আত্মস্বীকৃত খুনি হিসেবেও পরিচয় দিয়ে দাম্ভিকতা প্রকাশ করে। ঘটনাটি কেবল নৃশংস নয়, এই অপরাধ এমন একটি ক্ষতির কার্য যা শুধু ব্যক্তি বিশেষের জন্য নয়, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষেও এটা মারাত্মক ক্ষতি। এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ পরিণতির বিষয় স্বজ্ঞানে তারা ষড়যন্ত্রমূলক ও পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।"
"সুতরাং, তাদের প্রতি কোনো প্রকার সহানুভূতি ও অনুকম্পা প্রদর্শনের যুক্তি নেই। এই অনুকম্পা পাওয়ার কোনো যোগ্যতাও তাদের নেই। তাদের অপরাধের জন্য তাদের প্রত্যেককে দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারা মতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো।"
রায়ে আসামি তাহের উদ্দিন ঠাকুর, অনারারি ক্যাপ্টেন আবদুল ওহাব জোয়ারদার, দফাদার মারফত আলী ও এল ডি আবুল হাশেম মৃধার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় নি বলে তাদের অভিযোগের দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
ভোর রাতে মুহুর্মুহু গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যায়
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে এভাবেই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘটনার বর্ণনা দেন ওই রাতে বেঁচে যাওয়া শাহান-আরা-আব্দুল্লাহ। তিনি আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর স্ত্রী।
বুধবার তিনি বলেন, "এ সময় আমরা সবাই শ্বশুরের রুমে চলে যাই। বাড়ির কাজের বুয়া লক্ষ্মীর মা বিপদ বুঝতে পেরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। এর কিছুক্ষণ পরই দরজা ভেঙে ভেতর ঢুকে পড়ে বেশ কিছু সেনা সদস্য। আমাদের সবাইকে নিচের রুমে এনে ব্রাশফায়ার করলো।"
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট খুনিরা প্রথমে আক্রমণ করে ২৭ মিন্টো রোডে, সেরনিয়াবাতের বাড়িতে। ভোররাত সোয়া ৫টার দিকে মেজর ডালিমের নেতৃত্বে ওই বাড়িতে হামলা চালানো হয়।
হত্যা করা হয় আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ১৪ বছর বয়সী মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, ১০ বছরের ছেলে আরিফ সেরনিয়াবাত, চার বছরের নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু (আবুল হাসানাত আবদুল্লাহর ছেলে), ভাতিজা সাংবাদিক ও অ্যাডভোকেট শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নাইম খান রিন্টুসহ কয়েকজন।
শাহান-আরা- আব্দুল্লাহ বলেন, "একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পঁচাত্তরের ১০ আগস্ট আমরা বরিশাল থেকে এসেছিলাম। ১৫ আগস্ট ভোররাতে সবাইকে এক সঙ্গে দাঁড় করিয়ে যখন ব্রাশ ফায়ার করা হলো, তখন আমার চার বছরের ছেলে বাবু ছিল শহীদ সেরনিয়াবাতের কোলে। আর আমার কোলে ছিল ১০ মাস বয়সী ছেলে সাদেক আব্দুল্লাহ ।"
"চোখের সামনে দেখলাম, শহীদের শরীর গুলিতে ঝাঝরা হয়ে গেল। আমার আদরের ছেলে বাবুসহ উপুড় হয়ে পড়ে গেল মাটিতে। পর মুহুর্তে গুলি লাগে আমার শরীরে। আমি সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলি।"
শাহান-আরা- আব্দুল্লাহর ধারণা, আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ মনে করেই গুলি করা হয় শহীদ সেরনিয়াবাতকে।
তিনি জানান, হামলার পর রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিহত-আহত সবাইকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
কান্না বিজড়িত কন্ঠে শাহান-আরা বলেন, "আমার শরীরে চারটা গুলি লেগেছিল। হাসপাতালে ঢোকার সময় দেখি গাড়ি থেকে মণি ভাইয়ের লাশ নামানো হচ্ছে। কিছুদিন হাসপাতালে ছিলাম। সেখান থেকে কিছুদিন সোবহানবাগে খালা শ্বাশুড়ির (খাদিজা হোসেন, বঙ্গবন্ধুর ছোট বোন) বাড়িতে ছিলাম। পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় '৭৬ সালের ১২ ফেব্র"য়ারি আমরা বরিশাল চলে যাই। কিন্তু সেখানেও নিরাপদ না হওয়ায় ভারতে চলে গিয়েছিলাম।"
"আমার শাশুড়ি শরীরে গুলির অংশ নিয়ে দীর্ঘ দিন নিদারুন যন্ত্রনা ভোগ করে তিন বছর আগে মারা গেছেন। আমরা যারা বেঁচে আছি, এখনো বুকের গভীরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। যতদিন না খুনিরা শাস্তি পাবে, ততদিন এই রক্তক্ষরণ বন্ধ হবে না।"
বঙ্গবন্ধুর ঘটনাবহুল জীবন
তৃতীয় সন্তান মুজিবকে খোকা বলে ডাকতেন শেখ লুৎফর রহমান ও মোসাম্মৎ সায়রা বেগম দম্পতি।
৭ বছর বয়সে পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে পড়াশুনা শুরু করেন তিনি। দুই বছর পর গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণীতে ভর্তি হন। পরে মিশনারি স্কুলে।
কিন্তু ১২ বছর বয়সে বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে তার লেখাপড়ায় সাময়িক বিরতি ঘটে। চার বছর পর আবার স্কুলে ভর্তি হন।
চাচাতো বোন বেগম ফজিলাতুন্নেসার সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে হয় ১৮ বছর বয়সে।
১৯৪০ সালে মুজিব নিখিল ভারত মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনে যোগ দেন। এক বছরের জন্য বেঙ্গল মুসলিম ছাত্র ফেডারেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
১৯৪২ এন্ট্রান্স (এখনকার এসএসসি) পাসের পর কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। এ বছরই তিনি পাকিস্তান আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। পরের বছর মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
১৯৪৬ সালে মুজিব ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন।
পরের বছর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি এ পাশ করেন। ১৯৪৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন।
'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ' বাংলা ভাষা নিয়ে মুসলিম লীগের 'ষড়যন্ত্রের' প্রতিবাদে ১১ মার্চ সাধারণ ধর্মঘট ডাকে। ধর্মঘট পালনকালে সহকর্মীদের সঙ্গে গ্রেপ্তার হন মুজিব। ছাত্র আন্দোলনের মুখে ১৫ মার্চ তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার।
ফরিদপুরে কর্ডন প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করার জন্য ১১ সেপ্টেম্বর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ২১ জানুয়ারি মুক্তি পান মুজিব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীরা তাদের দাবি আদায়ে ধর্মঘট ঘোষণা করলে মুজিব সমর্থন জানান।
কর্মচারীদের এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগে ২৯ মার্চ কর্তৃপক্ষ তাকে জরিমানা করে। এ নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহি�কৃত হন মুজিব। ১৯ এপ্রিল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট করায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন করা হয়। কারাবন্দি মুজিব এর যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। জুলাই মাসে মুক্তি পেয়েই খাদ্য সঙ্কটের বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। সেপ্টেম্বরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের দায়ে গ্রেপ্তার হন।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের আগমন উপলক্ষে আওয়ামী মুসলিম লীগের ভুখা মিছিলের নেতৃত্ব দেওয়ায় ১৪ অক্টোবর তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। এবার প্রায় দু'বছর পাঁচ মাস জেলে আটক রাখা হয় মুজিবকে।
১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করলে বন্দি অবস্থায় ২১ ফেব্র"য়ারিকে রাজবন্দি মুক্তি এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি দিবস হিসবে পালনের জন্য সংগ্রাম পরিষদের প্রতি আহবান জানান মুজিব।
এ দাবিতে ১৪ ফেব্র"য়ারি জেলখানায় অনশন শুরু করেন তিনি।
২১ ফেব্র"য়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্র সমাজের মিছিলে পুলিশের গুলিতে সালাম, বরকত, রফিক, শফিউর শহীদ হন।
মুজিব জেলখানায় এর প্রতিবাদে টানা ১৭ দিন অনশন করেন।
১৯৫৩ সালের ৯ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৫৪ সালের ১০ মার্চ পাকিস্তান গণপরিষদের নির্বাচনে ২৩৭টি আসনের মধ্যে ২২৩টিই পায় যুক্তফ্রন্ট। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ১৪৩টি। শেখ মুজিব গোপালগঞ্জের আসনে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে ১৩ হাজার ভোটে পরাজিত করেন।
১৫ মে তিনি প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ৩০ মে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বাতিল করে দেয়। ৩০ মে মুজিব করাচি থেকে ঢাকায় ফেরেন এবং গ্রেপ্তার হন। ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি পান।
১৯৫৫ সালের ৫ জুন মুজিব গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৭ জুন পল্টন ময়দানের জনসভায় আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করে ২১ দফা ঘোষণা করে।
দলকে সব ধর্মের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে দলের নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দ প্রত্যাহার করা হয়। মুজিব আবার দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
সংগঠনকে সুসংগঠিত করতে ১৯৫৭ সালের ৩০ মে দলীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন।
পরের বছরের ৭ অক্টোবর জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১১ অক্টোবর মুজিবকে গ্রেপ্তার করে একের পর এক মিথ্যা মামলা দায়ের করে। প্রায় চৌদ্দ মাস পর মুক্তি দিয়ে আবার জেলগেটে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের এক সভায় মাওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ ও মুজিব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্র"য়ারি মুজিব ঐতিহাসিক ৬ দফা দাবি পেশ করেন। এতে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবি জোরালোভাবে তোলা হয়।
১ মার্চ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ৬ দফার পক্ষে জনমত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সারা বাংলায় গণসংযোগ সফর শুরু করেন।
১৯৬৬ সালের প্রথম তিন মাসে আটবার গ্রেপ্তার হন মুজিব।
১৯৬৮ সালের ৩ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার তাকে প্রধান আসামি করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করে। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামিদের মুক্তির দাবিতে সারাদেশে বিক্ষোভ শুরু হয়।
১৯৬৯ সালের ৫ জানুয়ারি ৬ দফাসহ ১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। পরিষদ আগরতলা মামলা প্রত্যাহার ও মামলায় আটকদের মুক্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করে যা। গণআন্দোলনে পরিণত হয়।
১৪৪ ধারা ও কারফিউ ভঙ্গ, পুলিশ-ইপিআর এর গুলি আর বহু হতাহতের মধ্য দিয়ে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে আইয়ুব সরকার ১ ফেব্র"য়ারি গোলটেবিল বৈঠকের আহ্বান জানায়।
২২ ফেব্র"য়ারি চাপের মুখে সরকার আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে মুজিবসহ আসামিদের মুক্তি দেয়।
২৩ ফেব্র"য়ারি রেসকোর্স ময়দানে সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধি দেওয়া হয়। এ সময় তিনি ছাত্র সমাজের ১১ দফা দাবির প্রতি সমর্থন জানান।
২৬ ফেব্র"য়ারি বঙ্গবন্ধু রাওয়ালপিন্ডিতে আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে বলেন, গণঅসন্তোষ নিরসনে ৬ দফা ও ১১ দফার ভিত্তিতে আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
পাকিস্তানি শাসকরা বঙ্গবন্ধুর দাবি অগ্রাহ্য করলে ১৩ মার্চ তিনি বৈঠক ত্যাগ করে ঢাকা চলে আসেন।
২৫ মার্চ জেনারেল ইয়াহিয়া খান সামরিক শাসন জারির মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হন।
১৯৭০ সালের ৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পুনরায় আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হন।
৭ ডিসেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টি এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩১০টির মধ্যে ৩০৫টি আসন পায় দলটি।
১৩ ফেব্র"য়ারি প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করেন। কিন্তু
১ মার্চ তিনি অনির্দিষ্টকালের জন্য অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণা দিলে সারা বাংলায় প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। আওয়ামী লীগ ২ মার্চ দেশব্যাপী হরতাল ডাকে। হরতালের পরদিন বঙ্গবন্ধু অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।
৭ মার্চ রেসকোর্সের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু অনিবার্য হয়ে ওঠা স্বাধীনতা যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়ে ঘোষণা দেন� "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।"
১৬ মার্চ ঢাকায় ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক শুরু হয়। আলোচনার জন্য ভুট্টোও ঢাকায় আসেন। ২৪ মার্চ পর্যন্ত ইয়াহিয়া-মুজিব-ভুট্টোর আলোচনা হয়।
২৫ মার্চ আলোচনা ব্যর্থ হবার পর সন্ধ্যায় ইয়াহিয়া গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। বলা হয়ে থাকে এ সময় পাকিস্তানী বাহিনী আসলে দমন অভিযানের প্রস্তুতি নেয়। ২৫ মার্চ মধ্যরাতেই নিরীহ নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাপিয়ে পড়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।
বঙ্গবন্ধু ২৫ শে মার্চ রাতে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে বন্দী হওয়ার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে একটি বার্তা পাঠাতে সক্ষম হন। এতে তিনি বলেন, "সম্ভবত এটাই আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। ." তিনি সবাইকে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করার আহ্বান জানান।
২৬ মার্চ চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণাপত্রটি পাঠ করেন।
এরপর ২৭ মার্চ বাঙালি সেনা কর্মকর্তা মেজর জিয়াউর রহমান ঘোষণাপত্রটি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে একাধিকবার পাঠ করেন।
২৬ মার্চ ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী আখ্যা দেন এবং তাকে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়।
১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি করে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। এতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দিন আহমদ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে (মুজিবনগর) বাংলাদেশ সরকারের শপথ হয়।
নয়মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী বাংলাদেশকে সহায়তাকারী ভারতীয় মিত্রবাহিনী ও বাংলাদেশী মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে আত্মসমর্পণ করে।
আন্তর্জাতিক চাপের মুখে নতি স্বীকার করে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেয়।
বঙ্গবন্ধু লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ১০ জানুয়ারি ঢাকায় পৌঁছলে তাকে অবিস্মরণীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৭৩ এ নতুন সংসদের প্রথম নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পায় ২৯৩টি। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগ, সিপিবি ও ন্যাপের সমন্বয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়।
যুুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ দুর্নীতি, আইন-শৃঙ্খলার অবনতিসহ নানা ধরণের সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়ে।
১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি রাষ্ট্রপতি পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
১৯৭৫ সালের ৬ জুন বঙ্গবন্ধু এক বিতর্কিত উদ্যোগে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) নামে একটি নতুন দল গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, দেশে বিদ্যমান পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য তাকে এটি করতে হচ্ছে এবং এটি দেশের জন্য ভালো হবে।
১৫ আগস্ট আরও নিহত হন যারা
শেখ কামাল
বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে
জন্ম: টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ৫ই আগস্ট, ১৯৪৯ সাল।
বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামাল ঢাকার শাহীন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক ও ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে বি. এ. (অনার্স) পাস করেন। ছায়ানটে সেতার বাদন বিভাগের ছাত্র ছিলেন তিনি। নাটক, মঞ্চ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একনিষ্ঠ সংগঠক ছিলেন। ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। অভিনেতা হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যাঙ্গনে ছিলেন প্রতিষ্ঠিত। শৈশব থেকেই খেলাধুলায় ছিলো তার প্রচণ্ড উৎসাহ। আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
বিশেষ করে ফুটবল ও ক্রিকেট খেলার মানোন্নয়নে তার শ্রম ও অবদান ছিল অপরিসীম। নতুন খেলোয়াড় তৈরির জন্য যথেষ্ট সময় দিয়ে নিজেই মাঠে অনুশীলন করতেন। ১৯৭৫ সালের ১৮ জুলাই সুলতানা খুকুর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ছাত্রলীগের একজন সংগঠক হিসেবে '৬৬-এর স্বাধিকার আন্দোলন, '৬৯-এর গণআন্দোলন ও '৭১- এর অসহযোগ আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ রাতেই বাড়ি থেকে চলে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। লেফটেন্যান্ট হিসেবে কর্নেল ওসমানীর এডিসি ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহত হওয়ার সময় তিনি সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এম.এ. শেষ পর্বের পরীক্ষা দিয়েছিলেন। ওই দিন ভোরে বাড়ি ঘেরাওয়ের কথা শুনে নিচে নেমে এলে ঘাতকরা সবার আগে তাকে গুলি করে হত্যা করে।
শেখ জামাল
বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় ছেলে
জন্ম: টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, ২৮ এপ্রিল, ১৯৫৪ সাল।
বঙ্গবন্ধুর মেজো ছেলে শেখ জামাল শৈশবে শাহীন স্কুল ও পরে রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। একটি সঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্রে গিটার বাজানো শিখতেন। ক্রিকেট খেলতেন আবাহনী মাঠে। ১৯৭১ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ধানমণ্ডি ১৮ নং রোডের বাড়িতে মায়ের সঙ্গে বন্দি অবস্থায় থাকাকালে একদিন গোপনে বের হয়ে কালীগঞ্জ হয়ে মুক্তাঞ্চলে চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন।
ঢাকা কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে থাকাকালে যুগোশ্লভিয়ার প্রেসিডেন্ট মার্শাল জোসেফ টিটোর আমন্ত্রণে সেদেশে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ নিতে যান। তার পর লন্ডনের স্যান্ডহার্স্ট আর্মি একাডেমি থেকে সেনা প্রশিক্ষণ নেন। দেশে ফিরে তিনি দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট র্যাংকে যোগ দেন। ১৯৭৫ সালের ১৭ই জুলাই ফুফাতো বোন রোজীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ১৫ আগস্ট তাদের এক সঙ্গে গুলি করে হত্যা করা হয়।
শেখ রাসেল
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র
জন্ম: ঢাকা, ১৮ অক্টোবর ১৯৬৪ সাল।
বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। বাড়ির ছোট্ট ছেলে হিসেবে সবার আদরের ছিল। রাজনৈতিক পরিবেশ ও সঙ্কটের মধ্যেও সে চির সঙ্গী সাইকেল নিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখতো। ১৯৭১�এর মুক্তিযুদ্ধকালীন দীর্ঘ নয়মাস পিতার অদর্শন তাকে এমনই ভাবপ্রবণ করে রাখে যে, পরে সব সময় পিতার কাছাকাছি থাকতে জেদ করতো। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবাইকে হত্যা করে তাদের লাশ দেখিয়ে তারপর রাসেলকে হত্যা করা হয়। তাকে কাজের লোকজন পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নিয়ে যায়। কিন্তু ঘাতকরা তাকে দেখে ফেলে। বুলেটবিদ্ধ করার পূর্বে ওয়্যারলেসের মাধ্যমে অনুমতি নেওয়া হয়। রাসেল প্রথমে মায়ের কাছে যেতে চায়। মায়ের লাশ দেখার পর অশ্র"সিক্ত কণ্ঠে মিনতি করেছিল 'আমাকে হাসু আপার ( শেখ হাসিনা) কাছে পাঠিয়ে দিন।'
শেখ আবু নাসের
বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই
জন্ম: টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ, সেপ্টেম্বর, ১৯২৮ সাল।
শেখ আবু নাসের টুঙ্গিপাড়া ও গোপালগঞ্জে লেখাপড়া করেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবং বড়ভাই রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় অল্প বয়সেই তাকে পিতার সঙ্গে পারিবারিক কাজকর্ম ও ব্যবসায় জড়িয়ে পড়তে হয়। এজন্য খুলনা শহরে বসবাস করতে হত। পরবর্তী সময়ে তিনি খুলনায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। ১৯৭৫-এ নিহত হওয়ার সময় বড় ভাইয়ের বাড়িতে ছিলেন। তিনি অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী এবং ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে যান।
সুলতানা কামাল খুকু
শেখ কামালের স্ত্রী
জন্ম: ঢাকা, ১৯৫১ সাল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দবির উদ্দিন আহমেদের ছোট মেয়ে। মুসলিম গার্লস স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স পাস করেন। ১৯৭৫ সালে এম. এ পরীক্ষা দেন। স্কুল থেকে আন্তঃখেলাধুলায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন বিভাগে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখেন। বিশেষ করে লংজাম্পে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক ক্রীড়ায় চ্যাম্পিয়ন হন।
মোহামেডান ক্লাবের পক্ষে ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান অলিম্পিকে লংজাম্পে দ্বিতীয়, ১৯৬৮ সালে ঢাকার মাঠে পাকিস্তান অলিম্পিকে লং জাম্পে ১৬ ফুট দূরত্ব অতিক্রমের রেকর্ডসহ স্বর্ণপদক পান। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯-৭০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করে জাতীয় ক্রীড়ায় অংশ নিয়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। ১৯৭০ সালে নিখিল পাকিস্তান মহিলা এথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় তিনি রেকর্ডসহ স্বর্ণ পদক পান। ১৯৭৩-এ লংজাম্পে স্বর্ণ পান। ১৯৭৪ এ লংজাম্প ছাড়াও সুলতানা ১০০ মিটার হার্ডলসে রেকর্ড গড়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন। বাংলাদেশের একজন শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিয়ের আগে তাকে দেখে আশীর্বাদ করেছিলেন। বাড়ির বড় বউ হিসাবে তার বিপুল সমাদর হয়েছিল।
পারভীন জামাল রোজী
শেখ জামালের স্ত্রী
জন্ম: সিলেট, ১৯৫৬ সাল।
বঙ্গবন্ধুর ছোট্ট বোন খাদেজা হোসেনের মেয়ে। পিতা সৈয়দ হোসেন বঙ্গবন্ধু সরকারের সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলেন। ধানমণ্ডি গার্লস স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে বদরুন্নেসা আহমেদ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছিলেন। মাত্র ৩০ দিনের বিবাহিত জীবন ছিল তার। মেহেদির রং তখনও তার দু'হাতে ছিল। বেগম মুজিবকে হত্যা করে ঘাতকরা জামালের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা রোজী ও সুলতানাকে এক সঙ্গে গুলি ছুঁড়ে হত্যা করে। ওই বাড়িতে দু'বধুর শুভাগমন যেমন এক সঙ্গে তেমনি শোকাহত বিদায়ও ছিলো একসঙ্গে।
আবদুর রব সেরনিয়াবাত
বঙ্গবন্ধুর সেজ বোনের স্বামী
জন্ম: বরিশাল, ১৪ই চৈত্র ১৩২৭ বাংলা।
বরিশাল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে বঙ্গবন্ধুর সহপাঠী ছিলেন। বেকার হোস্টেলেও এক সঙ্গে থাকতেন। বঙ্গবন্ধুর সেজ বোন আমেনা বেগমের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কলকাতায় আই. এ. ও বি. এ পাস করার পরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি পাস করে বরিশালে আইনজীবী ও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়ে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১- এর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭২ সালের ১২ই এপ্রিল কৃষিমন্ত্রী হন। ১৯৭৩ এর নির্বাচনেও জয়লাভ করেন এবং বঙ্গবন্ধু তাকে সেচ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী নিয়োগ করেন। বঙ্গবন্ধু সরকারের কৃষিক্ষেত্রে সংস্কার ও উৎপাদনে এবং কৃষকদের সহায়তা দেওয়ায় তার ভূমিকা ছিল যথেষ্ট জোরালো। একজন সৎ আদর্শবান ব্যক্তি হিসেবে তিনি সব মহলে প্রশংসিত ছিলেন।
শেখ ফজলুল হক মনি
বঙ্গবন্ধুর মেজো বোনের বড় ছেলে
জন্ম: টুঙ্গিপাড়া, গোপালগঞ্জ ৪ঠা ডিসেম্বর, ১৯৩৯ সাল
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একনিষ্ঠ অনুসারী, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, সাংবাদিক, দৈনিক বাংলার বাণী ও বাংলাদেশ টাইমস-এর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, সাপ্তাহিক 'সিনেমা' ও মধুমতি মুদ্রণালয়ের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মণি ১৯৫৬ সালে ঢাকা নবকুমার স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯৫৮ সালে ঢাকা জগন্নাথ কলেজ থেকে আই.এ. ১৯৬০ সালে বরিশাল বি. এম. কলেজ থেকে বি. এ. এবং ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম. এ. বং পরবর্তী সময়ে এলএলবি পাস করেন।
ছাত্রাবস্থায়ই শেখ মনি সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬০ সালে তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালে কুখ্যাত হামদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ছয় মাস বিনা বিচারে আটক থাকার পর তিনি মুক্তি পান।
গণবিরোধী শিক্ষানীতি ও সরকারের দমনীতির প্রতিবাদে ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন উৎসবে তদানীন্তন গভর্নর মোনায়েম খানের হাত থেকে ডিগ্রি সার্টিফিকেট না নিয়ে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য শেখ মনির এম. এ. ডিগ্রী কেড়ে নেওয়া হয়। কিছু দিন পর তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৬৫ সালের শেষাশেষি পর্যন্ত তাকে দেশরক্ষা আইনে আটক রাখা হয়। এ সময় সরকার তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সাজানো মামলা দায়ের করে।
১৯৬৬ সালে শেখ ফজলুল হক মণি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত বাঙালির স্বাধিকারের সনদ ঐতিহাসিক ছয়দফার পক্ষে আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ছয় দফা আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণীকে সংগঠিত করা এবং ঐতিহাসিক ৭ জুনের হরতাল সর্বাত্মক সফল করার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ অবদান রাখেন। ওই সময় সরকার শেখ মনির বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করে। ১৯৬৬ সালের জুলাই মাসে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর মুক্তিযোদ্ধা ও যুব সমাজকে সংগঠিত করে দেশগড়ার কাজে নিয়োজিত করার লক্ষ্যে শেখ মনি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর আওয়ামী যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি ছিলেন আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান। তেজগাঁও আঞ্চলিক শ্রমিক লীগের সভাপতি হিসেবে মনি শ্রমিক লীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সাংগঠনিক কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করলে শেখ মনি অন্যতম সম্পাদক নিযুক্ত হন।
শেখ ফজলুল হক মনি ১৯৭৩ সালে বার্লিন যুব উৎসবে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তিনি বিশ্ব শান্তি আন্দোলনের সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিলেন। তিনি ছিলেন সফল সংগঠক, সুবক্তা ও সুলেখক। সম্পাদকীয় ছাড়াও তিনি স্বনামে ও ছদ্মনামে বহু প্রবন্ধ-নিবন্ধ লিখেছেন। ছয় দফার ওপর ও তার লেখা ছোটগল্পের সংকলন 'বৃত্ত' প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। ১৯৭৪ সালে শেখ মনির দ্বিতীয় গল্প সংকলন 'গীতা রায়' প্রকাশিত হয়।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মনি ঘাতকের হাতে নিহত হন। সেই রাতে শেখ মনির জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ ফজলে শামস পরশ ও কনিষ্ঠপুত্র শেখ ফজলে নূর তাপস অলৌকিকভাবে রক্ষা পায়। পরশের বয়স ছিল পাঁচ বছর এবং তাপসের মাত্র তিন বছর।
বেগম আরজু মনি
শেখ ফজলুল হক মনির স্ত্রী
জন্ম: বরিশাল, ১৫ মার্চ ১৯৪৭ সাল।
বরিশাল সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং বিএম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক ও বি. এ. পাস করেন। আবদুর রব সেরনিয়াবাতের জ্যেষ্ঠ কন্যা ছিলেন। ১৯৭০ সালে খালাত ভাই শেখ ফজলুল হক মনির সঙ্গে বিয়ে হয়। দু'সন্তানের মা আরজুকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে গুলি করে হত্যা করে ঘাতকরা। ১৯৭৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এম.এ পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
কর্ণেল জামিল উদ্দিন আহমেদ
বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার
জন্মঃ গোপালগঞ্জ, ১ ফেব্র"য়ারি ১৯৩৩ সাল।
১৯৫২ সালে ক্যাডেট হিসেবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ১৯৫৫ সালে কমিশনপ্রাপ্ত হন। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান থেকে ফিরে আসার পর প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সচিবালয়ে যোগ দেন এবং বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে ভোর ৫টায় বঙ্গবন্ধু লাল টেলিফোনে তাকে সেনাবাহিনীর বাসভবন ঘেরাওয়ের কথা জানালে সঙ্গে সঙ্গে রওনা হন তিনি। কিন্তু সোবহানবাগ মসজিদের সামনে ঘাতকরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষার জন্য তিনি আত্মাহুতি দিয়েছেন। তার এ আত্মদান জাতি চিরকাল স্মরণ করবে।
বেবী সেরনিয়াবাত
আবদুর রব সেরনিয়াবাতের
ছোট মেয়ে
জন্মঃ বরিশাল, ২০ মে ১৯৬০ সাল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরী হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। নিহত হবার সময় পিতার কাছে ছিল।
আরিফ সেরনিয়াবাত
আবদুর রব সেরনিয়াবাতের কনিষ্ঠ পুত্র
জন্মঃ ২৭ মাচর্, ১৯৬৪ সাল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিল। নিহত হওয়ার সময় ঢাকায় পিতার কাছে ছিল।
সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু
আবদুর রব সেরনিয়াবাতের নাতি
জন্ম: গৌরনদী, বরিশাল, ২২ জুন ১৯৭১ সাল।
আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ছেলে আবুল হাসনাত আবদুল্ল�াহর জ্যেষ্ঠ পুত্র বাবু নিহত হওয়ার সময় বয়স ছিল ৪ বছর এবং ঢাকায় দাদার বাসায় বেড়াতে এসেছিল।
শহীদ সেরনিয়াবাত
আবদুর রব সেরনিয়াবাতের ভাইয়ের ছেলে
জন্মঃ বরিশাল, ২৬ মার্চ ১৯৪০ সাল।
বরিশাল বি এম স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, কলেজ থেকে আই. এ. ও বি. এ. পাস করেন। ঢাকা থেকে আইন পাস করে বরিশালে কোর্টে আইনজীবী ছিলেন। তিনি দৈনিক বাংলা পত্রিকার বরিশালের সংবাদদাতা ছিলেন। ১৫ আগস্ট চাচার বাসায় অবস্থানকালে নিহত হন।
আবদুল নঈম খান রিন্টু
আওয়ামী লীগ নেতা আমীর হোসেন আমুর খালাতো ভাই
জন্মঃ বরিশাল, ১ ডিসেম্বর ১৯৫৭ সাল।
বরিশাল জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। বরিশালের একটি সাংস্কৃতিক দলের সঙ্গে ঢাকায় এসেছিলেন এবং তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় অবস্থান কালে নিহত হন।
বিভিন্ন ধরনের জ্বর ও প্রতিকার
সুস্খ অবস্খায় মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বগলে ৯৭.৪ ডিগ্রি ও জিহবার নিচে ৯৮.৪ ডিগ্রি ফা.। শরীরে এর চেয়ে বেশি তাপ উৎপন্ন হলেই বুঝতে হবে জ্বর হয়েছে। জ্বরের অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। তবে বর্তমানে সব জ্বর, সর্দি জ্বর, ভাইরাস জ্বর বা ইনফ্লুয়েঞ্জা, টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড জ্বর ও ডেঙ্গুজ্বর দেখা দিচ্ছে। এসব জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা ভিন্ন। তবে যেকোনো জ্বরেই বিশ্রাম নেয়া ও প্রচুর তরল পানি পান করা প্রয়োজন। মাথা ধোয়ানো বা শরীর স্পঞ্জ করা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা দরকার। নিচে বিভিন্ন জ্বরের লক্ষণ ও চিকিৎসা ব্যবস্খাপনা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
জ্বর
বিভিন্ন কারণে দেহে উত্তাপ বৃদ্ধি পায়। পানিতে ভেজা, গরম লাগা, সর্দি, উত্তেজনা, রাতজাগা, অনিয়ম, বেশি মদ্যপান।
লক্ষণ : শরীরে তাপ বৃদ্ধির সাথে বমি বমি ভাব, মাথা ধরা, মাথা ঘোরা হয়ে থাকে। প্রায়ই কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে। চোখ বা দেহে জ্বালা, মাথায় তাপ বোধ হয়।
ব্যবস্খাপনা : প্যারাসিটামল গ্রুপের ওষুধ একটি করে দিনে তিন বার জ্বর না কমা পর্যন্ত এবং জ্বর স্খায়ী হলে চিকিৎসকের নির্দেশে এন্টিবায়োটিক খেতে হবে।
উপদেশ : বুকে ব্যথা বা গলায় বেশি সর্দি জমলে, বুকে সর্ষের তেল বা কর্পূর মিশ্রিত সর্ষে তেল মালিশ করা যেতে পারে। সাগু, বার্লি, খই, মুড়ি, আদার রস প্রভৃতি খাওয়া ভালো। ঠাণ্ডা লাগানো এবং ঠাণ্ডা পান ও পানীয় নিষিদ্ধ।
ইনফ্লুয়েঞ্জা : ইনফ্লুয়েঞ্জা নামক ভাইরাসের কারণে প্রধানত এ জ্বর হয়। এটি অনেক সময় ইপিডেমিক বা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ রোগ খুব ছোঁয়াচে।
লক্ষণ : জীবাণু দেহে প্রবেশ করলে গা ম্যাজ ম্যাজ করে। গা, হাত ও পায়ে ব্যথা বোধ হয়। হঠাৎ অল্প শীত করে জ্বর আসে। মাথায়, কোমরে ও চোখে খুব যন্ত্রণা হয়। কারো কারো বমির সাথে সর্দি-কাশির লক্ষণ ও ব্রঙ্কাইটিসের লক্ষণ থাকে। জ্বর ১০২ ডিগ্রি থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত হতে পারে।
ব্যবস্খাপনা : জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল ও জটিল উপসর্গের জন্য চিকিৎসকের নির্দেশে এন্টিবায়োটিক খেতে হবে।
উপদেশ : বুক, পিঠে, হাত ও পায়ে কর্পূর মিশ্রিত তেল বা মাসকলাইর তেল মালিশ উপকারী। রোগীকে পৃথক ঘরে শুইয়ে রাখতে হবে। অনেকের মতে তুলসী পাতা, বাসক পাতা, বেল পাতা পানিতে ফুটিয়ে ছেঁকে নিয়ে মধু মিশিয়ে খেলে উপকার হয়। দুধ, সাগু, বার্লি, ফলের রস, হরলিক্স খেতে দিতে হবে।
টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড জ্বর
কারণ : দুই ধরনের জীবাণু দিয়ে এই দুই ধরনের জ্বর হয়। রোদ ও তাপে এই জীবাণু নষ্ট হয়; কিন্তু ঠাণ্ডায় এগুলো জীবিত থাকে। সাধারণত ১০-২৫ বছরে এই জ্বর বেশি হয়। মাছি, পানি, খাদ্যদ্রব্য ও মানুষের জীবাণুযুক্ত হাতের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। এগুলো নানাভাবে রোগীর মল থেকে ছড়ায়।
লক্ষণ : দেহে জীবাণু সংক্রমণের পর রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে ৭-১১ দিন সময় লাগে। সাধারণত কোষ্ঠকাঠিন্য ও প্রস্রাব কমে যাওয়া থেকে এই রোগ শুরু হয়। এর লক্ষণগুলোকে চিকিৎসকরা চারটি সপ্তাহে ভাগ করেছেন।
প্রথম সপ্তাহ : প্রথমে ঠাণ্ডা লাগা, জ্বর ও সর্দি জ্বরের মতো মনে হয়। অবসাদ, কপাল ব্যথা, শীত শীত ভাব, গায়ে ব্যথা ও জ্বর ওঠানামা করা এর প্রাথমিক লক্ষণ। সকালের দিকে জ্বর কমে; কিন্তু একেবারে ছাড়ে না। পাঁচ-সাত দিন পরে সব সময় পেট ভরা ভাব দেখা যায়। এ সময় জিহ্বায় লাল গধৎমরহ থাকে এবং ফ্যাকাশে দেখায়। প্রস্রাব হয় লালচে, অল্প পরিমাণে।
দ্বিতীয় সপ্তাহ : এই সময় লক্ষণগুলো ক্রমেই বেড়ে যায়। মাথাব্যথা থাকে না; কিন্তু দুর্বলতা বেড়ে যায়। ঠোঁট ফেটে যায়, জিহবা শুকনো থাকে। জ্বর সর্বোচ্চ ওঠে।
তৃতীয় সপ্তাহ : এ সময় মারাত্মক লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত রক্তস্রাব, অন্ত্রে প্রদাহ হয়। পেটে ব্যথা দেখা দেয়। রোগী প্রলাপ করতে থাকে। অনেক সময় ইবফ ংড়ৎব হতে পারে।
চতুর্থ সপ্তাহ : জ্বর কমে স্বাভাবিক হয়ে আসে।
ব্যবস্খাপনা : এর চিকিৎসায় আজকাল অনেক ধরনের এন্টিবায়োটিক পাওয়া যায়। জ্বর স্খায়ী হলে চিকিৎসকের নির্দেশে ব্যবস্খা নিতে হয়। লক্ষণ ভেদে ওষুধ দেয়া হয়। খাওয়া-দাওয়ার মধ্যে ছানা, মাখন, তোলা দুধ, মিষ্টি, দই বা ঘোল, ভাত, মাছ বা গোশত, জুস উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য হলে গ্লিসারিন সাপোজিটরি দিতে হয়।
ডেঙ্গুজ্বর
কারণ : ডেঙ্গু ভাইরাসের কারণে হয়। আমাদরে দেশে জুলাই-ডিসেম্বরে এর প্রাদুর্ভাব বেশি হয়।
লক্ষণ : সারা অঙ্গে তীব্র ব্যথা, কম্পন, শীতবোধ, মাথাব্যথা; বমি শরীর প্রচণ্ড কামড়ায়। একে হাড়ভাঙা জ্বরও বলা হয়।
ব্যবস্খাপনা : এসব লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হয়।
চেম্বার : জেনারেল মেডিক্যাল হাসপাতাল (প্রা.) লি., ১০৩, এলিফ্যান্ট রোড (তৃতীয় তলা), বাটা সিগন্যালের পশ্চিম দিকে, ঢাকা। মোবাইল : ০১৯১১৫৬৬৮৪২
ব্রেস্ট ক্যান্সার : সহজ প্রতিরোধব্যবস্খা
বেস্ট ক্যান্সারের লক্ষণ
স্তনে চাকা বা পিণ্ড থাকা (ব্যথাবিহীন ৬৬ শতাংশ)। স্তনের আকারে পরিবর্তন হওয়া। স্তনে বোঁটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া। স্তনের বোঁটা থেকে অস্বাভাবিক রস ক্ষরণ। স্তনের চামড়ার রঙ পরিবর্তন। বগলতলায় চাকা বা পিণ্ড থাকা।
স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ে সেসব পরীক্ষা জরুরি তা হলো এফএনএসি (ঋঘঅঈ), আলট্রাসনোগ্রাম, মেমোগ্রাফি এমআরআই (গজও)। এ ছাড়া বিশেষ চিকিৎসক প্রয়োজনীয় অন্যান্য পরীক্ষাও করাতে পারেন যেমন টিউমার মার্কার হিসেবে ঈঅ-১৫-৩, অথবা জটিলতা পর্যবেক্ষণ ঈঊঅ এবং গঈঅ পরীক্ষারও প্রয়োজন হতে পারে।
ব্রেস্ট ক্যান্সার যাদের বেশি হয়
ব্রেস্ট ক্যান্সারের নিশ্চিত কারণ অজানা। তবে জেনেটিক কারণ অন্যতম। যেসব পরিবার নিকটাত্মীয়ের অন্তত দু’জন ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগীর ইতিহাস থাকে, তাদের চার থেকে ছয় গুণ বেশি সম্ভাবনা থাকে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার। এ ছাড়া যাদের অল্প বয়সে (১২ বছরের নিচে) মাসিক শুরুর ইতিহাস, অধিক বয়সে (৫০ বছরের পরে) রজোনিবৃত্তি (গপষসহথৎঢ়প), অধিক বয়সে প্রথম গর্ভধারণ (৩০ বছরের পর), যারা নি:সন্তান, অধিক সময় গর্ভনিরোধক বড়ি সেবন, হরমন থেরাপি গ্রহণ, স্খূলতা (ঙদপঢ়ময়ী), অ্যালকোহল সেবন ইত্যাদি কারণে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে থাকে।
এ ছাড়া অধিক চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ, বসা কাজের অভ্যাস, ব্যায়াম না করা, ক্রমাগত মানসিক চাপও ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য দায়ী বলে বর্তমানে চিহ্নিত। অন্য দিকে যেসব মহিলা জরায়ু কিংবা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। আবার ব্রেস্ট ক্যান্সার রোগীর ফুসফুস, বোন, লিভার ক্যান্সার প্রবণতা থাকে।
ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ
মেয়েদের মাসিক শেষ হওয়ার পরই একটি নির্দিষ্ট দিনে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করতে হবে। ব্রেস্টে কোনো চাকা বা কোনো ধরনের অস্বাভাবিক থাকলে সাথে সাথেই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তবে ব্রেস্টে চাকা থাকা মানেই কিন্তু ক্যান্সার নয়। শতকরা ১০ ভাগ চাকা হয়তো ভবিষ্যতে ক্যান্সার হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। অন্তত ২০ বছর বয়স থেকে সব মেয়েকেই নিজ স্তন নিজেই পরীক্ষায় অভ্যস্ত হওয়া দরকার। (নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষার কৌশল নিকটস্খ কোনো স্বাস্খ্যকর্মী, নার্স বা চিকিৎসকের কাছ থেকে শিখে নিতে হবে।
খাবার-দাবারের ক্ষেত্রে চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। ফলমূল বেশি বেশি খেতে হবে। ভিটামিন এ এবং সি জাতীয় ফলমূল বেশি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যেসব খাবারের বিটা ক্যারোটিন রয়েছে, যেমন গাজর, মিষ্টিআলু ও সবুজ শাকসবজি প্রচুর খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। যাদের ওজন বেশি অবশ্যই তাদের ওজন কমাতে হবে। মানসিক চাপ থাকলে সাইকোথেরাপিস্টের পরামর্শ নিতে হবে। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। জীবনযাত্রায় নৈতিকতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে।
চিকিৎসা সম্ভব দেশেই
ব্রেস্ট ক্যান্সার চিকিৎসায় অপারেশন, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, লেজারথেরাপি ও ইমুনোথেরাপি বেশ জনপ্রিয়। বর্তমানে ব্রেস্ট অপারেশন করে আবার কৃত্রিম উপায়ে ব্রেস্ট তৈরিও করে দেয়া হচ্ছে। সৌন্দর্য রক্ষার জন্যই এ ব্যবস্খা।
প্রাথমিকভাবে ব্রেস্ট ক্যান্সার ধরা পড়লে এ রোগের পরিপূর্ণ চিকিৎসা এখন দেশেই সম্ভব। এ ছাড়া অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে হোমিওপ্যাথিতে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসায় সাফল্যের ভালো ইতিহাস রয়েছে। ব্রেস্ট ক্যান্সারের জন্য খুবই উন্নতমানের ওষুধ রয়েছে হোমিওপ্যাথিতে। বিশেষভাবে ‘কারসিনোসিন’ ওষুধটি আবিষ্কারই রয়েছে ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে। তারপরও বলব হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহণে সতর্ক থাকতে হবে। দক্ষ, প্রশিক্ষিত, উচ্চতর ডিগ্রি প্রাপ্ত চিকিৎসক ছাড়া এ রোগের চিকিৎসা গ্রহণ সমীচীন হবে না। তবে ক্যান্সার চিকিৎসায় একক পদ্ধতির বদলে বোর্ডভিত্তিক (অভিজ্ঞ চিকিৎসক সমন্বয়) চিকিৎসায় সাফল্যের হার বেশি।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড রিচার্স, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক ক্যান্সার সোসাইটি, রোড : ১১, বাড়ি : ৩৮, নিকুঞ্জ-২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯।
ফোন : ০৬৬৬-২৬২৯৬০৮, ০১৫৫৬৬৩১৮৬৫, ০১৭১২৮১৭১৪৪
ই-মেইল : মভশড়য়পলপশপন @বথশথমল.ধসশ
পিত্তথলিতে পাথর : লক্ষণ ও প্রতিকার
কেন হয় পিত্তথলিতে পাথর : বয়স বাড়ার কারণে। কোলেস্টেরল জাতীয় খাবার বেশি খেলে। প্রোজেস্টেরল হরমোন বেশি দিন খেলে। আঁশজাতীয় খাবার না খেলে। অ্যালকোহল জাতীয় খাবার খেলে। মেশিনে অতিরিক্ত মসৃণকৃত শর্করাজাতীয় খাদ্য খেলে ও উচ্চমাত্রার ক্যালরিযুক্ত খাবার খেলে।
লক্ষণঃ পেটে হঠাৎ মারাত্মক ব্যথা হতে পারে। সাধারণ পেট ব্যথা ১ ঘণ্টা স্থায়ী হয়ে থাকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ৬ ঘণ্টার বেশি পেটে ব্যথা হলে ধরে নিতে হবে পিত্তথলিতে পাথর হতে পারে। চর্বিজাতীয় খাবার খেলে সমস্যা দেখা দেবে। পেটে গ্যাস্ট্রিক সমস্যা হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই লক্ষণ অপ্রকাশিত থাকে। শতকরা ৯৫ ভাগের ক্ষেত্রেই লক্ষণ দেখা যায় না বা বোঝা যায় না।
চিকিৎসাঃ পেটে প্রচন্ড ব্যথা হলে বিশেষজ্ঞ সার্জনের চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। পিত্তথলির পাথর নির্ণয় করে তা অপারেশন না ওষুধ দিতে হবে তা চিকিৎসকই সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে লেপরোসকোপিক সার্জারি চিকিৎসাই বেশি কার্যকর।
ছাদে বাগানের টুকিটাকি
ছাদে বাগান করার প্রয়োজনীয় উপকরণ : মাটি বা সিমেন্টের টব, হাফ ড্রাম কিংবা সুবিধামত ছাদে স্থায়ী বেড; আয়তন ৩ ফুট বাই ৩ ফুট বা ছাদের কার্নিশ বাড়িয়ে স্থায়ী বেড করা যায়। এছাড়া সিকেচার, কোঁদাল, কাঁচি, সাবল, ঝরনা, বালতি, চালনি, করাত, ছুরি, খুপরী, ¯েপ্র মেশিন ইত্যাদি।
ফুল বা ফলের জন্য কলমের বা গ্রাফটিং চারা ও বিভিন্ন প্রকারের ফুল, ফল ও শাক-সবজি চারা বা বীজ। মাটির মধ্যে বেলে দো-আঁশ মাটি বা পাহাড়িয়া লাল মাটি, গোবর, খৈলসহ বিভিন্ন প্রকার জৈব সার এবং গাছের রোগ-বালাই দমনের জন্য বিভিন্ন কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক।
ছাদে বাগান তৈরি করার ঊপযোগী গাছসমূহ: ছাদের বাগানে বিভিন্ন রকমের গাছ লাগানো যায়। এর মধ্যে রয়েছে গোলাপ, রজনীগন্ধা, হাসনাহেনা, ক্যনা, গাদা, বেলি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা অন্যান্য মৌসুমী ফুল, অর্কিড, বনসাই ও ক্যাকটাস লাগানো যায়। ফল গাছের মধ্যে রয়েছে আম্রপলি, আতা, আঙুর, লতা বোম্বাই জাতের আম, পেয়ারা, কুল, আমড়া, সফেদা, লেবু, ডালিম, বাতাবিলেবু, করমচা, বিলিম্বি, জামরুল, ছোট জাতের কলা, ছোট জাতের আনারস, কমলা, কামরাঙা ইত্যাদি। সবজির মধ্যে রয়েছে বেগুন, টমেটো, শিম, মরিচ, লাউ, কুমড়া, ঢেঁড়শ, পুইশাক, লালশাক, পটল, শসা, বরবটি, করলা ইত্যাদি।
ছাদে বাগান করার বিভিন্ন পদ্ধতি :
টব পদ্ধতি : খুব সহজে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানাš-র করা যায় বলে টব ছাদ, আঙিনা ও ব্যালকণীর জন্য সর্বোত্তম বাগান পদ্ধতি বলে বিবেচিত। দিনদিন টব পদ্ধতির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির কারণে আজকাল প্লাস্টিকের বিভিন্ন ধরনের টব তৈরি করা হচ্ছে এবং এসব টবের ব্যবহার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। টবে চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জৈব সার ব্যবহার করা উচিত। ১৪ ইঞ্চি থেকে ১৮ ইঞ্চি আকারের একটি টবের জন্য জৈব সারের পাশাপাশি ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার উত্তমরূপে মিশিয়ে ১০ দিন থেকে ১২ দিন রেখে দিতে হবে। তারপর টব ভরাট করতে হবে।
হাফড্রাম পদ্ধতি : টব পদ্ধতি ও হাফড্রাম পদ্ধতির মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য নেই। হাফড্রামের তলদেশে ছিদ্র করতে হবে। ছিদ্রগুলোয় ইটের টুকরো বসাতে হবে; তার উপরে ড্রামের তলদেশে প্রথম ১ ইঞ্চি পরিমাণ খোয়া বা সুড়কি দিতে হবে এবং তার উপরে এক ইঞ্চি পরিমাণ জৈব সার বা পচা গোবর দিতে হবে। এর ফলে অতিরিক্ত পানি সহজেই বের হয়ে যেতে পারবে। জৈব সারের পাশাপাশি প্রতিটি ড্রামে ২০০ গ্রাম টিএসপি, ১০০ গ্রাম এমওপি ব্যবহার করা যেতে পারে। আম ও লেবু জাতীয় গাছের জন্য প্রতিটি ড্রামে উপরোক্ত জৈব ও রাসায়নিক সারের পাশাপাশি ৫০০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।
স্থায়ী বেড পদ্ধতি : স্থায়ী বেড পদ্ধতি হল স্থায়ীভাবে ছাদে বাগান করা। ছাদে বাগান করার পূর্বে ছাদ বিশেষভাবে ঢালাই দিয়ে নেট ফিনিশ করে নিতে হবে। এর দু’টি পদ্ধতি আছে। যেমনÑ
ছাদের চারদিকে স্থায়ী বেড পদ্ধতি : ছাদে বাগান করার জন্য স্থায়ী বেড পদ্ধতি একটি আধুনিক পদ্ধতি। স্থায়ী বেড পদ্ধতির বাগান করার জন্য ছাদের চারিদিকে ২ ফুট প্রস্থের দুই পাশে ১.৫ ফুট উঁচু দেয়াল ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে তৈরি করলে মাঝখানে যে খালি জায়গা তৈরি হয়, সেই খালি জায়গার তলায় প্রথমে এক ইঞ্চি ইটের সুড়কি বা খোয়া, পরের এক ইঞ্চি গোবর সার দেয়ার পর বাকি অংশ ২ ভাগ মাটি ও ১ ভাগ গোবরের মিশ্রণ দিয়ে ভরাট করে স্থায়ী বেড তৈরি করা হয়।
ট্যাংক পদ্ধতি: ছাদে এক ফুট উঁচু ৪টি পিলারের উপর পানির ট্যাংক আকৃতির ৩ ফুট দৈর্ঘ্য, ২ ফুট প্রস্থ ও ১.৫ ফুট উঁচু ৩ ইঞ্চি গাঁথুনির নেট ফিনিশিং ঢালাই দিয়ে যে ট্যাংক তৈরি করা হয় একেই বলে ট্যাংক বেড পদ্ধতি।
ছাদে গাছ লাগানোর কৌশল : গাছের ধরন অনুযায়ী ড্্রাম/টব নির্বাচন করে সার-মাটি দিয়ে গাছ লাগাতে হবে। ডাইথেন এম-৪৫ অথবা এ জাতীয় ছত্রাকনাশক ছাই এর সাথে মিশিয়ে মাটিতে প্রয়োগ করে মাটি শোধন করা যায়। মাটি শোধন করে আদর্শ নার্সারি থেকে চারা, কলম, কাটিং, বীজ সংগ্রহ করে নিজেই টবে লাগালে খরচ কম হবে। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর মাসের মধ্যে ড্রাম বা টবের মাটি বদলাতে হবে। ড্রামে বা টবে ইউরিয়া সার না দেয়াই ভাল।
দূষণমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি, অবসর সময় কাটাতে, কর্মসংস্থান ও শারীরিক পরিশ্রমের সুযোগ তৈরি করতে এবং টাটকা ফল ও শাক-সবজি উৎপাদন করে পরিবারের চাহিদা মেটাতে আমাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে ছাদে বাগান করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে।
Ñমুুহম্মদ আরশেদ আলী চৌধুরী
কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার, মেহেরপুর
মেদ কমানোর চিকিৎসা
আমাদের খাদ্য এমন হওয়া উচিত যেন তার তেকে আসা মোট ক্যালরির এক-তৃতীয়াংশের বেশি যেন কোনো অবস্থাতেই চর্বি তেকে না আসে। কাজেই চর্বি গ্রহণের ব্যাপারে আমাদের, বিশেষ করে যারা মোটার সমস্যায় ভোগেন তাদের সতর্ক হতেই হবে। আবার অনেকেই ভাবেন, মোটা হওয়ার আসলেই কি কোনো চিকিৎসা আছে? উত্তর একটিই, হ্যাঁ আছে। বাজারে এখন একটি নতুন ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে, যা অরলিস্টেট উপাদানে তৈরি। এটি চর্বি পরিপাক ও শোষণে বাধা দেয় এবং শুধু পরিপাকতন্ত্রেই সক্রিয়। এটি মাংস নয়, বরং চর্বি কমিয়েই আপনার শরীরের ওজন কমাতে সক্ষম। এটি রক্তে উচ্চমাত্রার চর্বি ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করে, যা আপনার মস্তিষ্কে কোনো প্রভাব ফেলে না। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারের জন্যও নিরাপদ। ওষুধটি খাওয়ার ফলে চর্বিজাতীয় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদার্থে পরিণত হতে না পারার কারণে তা রক্তে শোষিত হতে পারে না। ফলে তা ক্ষুদ্রান্তেই তেকে যায় এবং তা পরে মলের সঙ্গে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। যাদের ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কিংবা যারা অস্বাভাবিক মোটা, যাদের রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি তারা ওই ওষুধটি ব্যবহার করতে পারেন। তবে এ ধরনের ওষুধ আপনি নিজে ব্যবহার করবেন না। কারণ অতি দ্রুত ওঝন হ্রাস বা বৃদ্ধি কোনোটিই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য কাম্য নয়। আপনি অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করবেন। তবে মনে রাখবেন, এর পাশাপাশি দৈহিক শ্রম ও ব্যায়াম আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে আরো সাহায্য করবে।
আপনি প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে যে চর্বি খাচ্ছেন, ওই ওষুধ এর এক-তৃতীয়াংশকে হজমে বাধা দেয়। এছাড়া রক্তের মোট কোলেস্টেরল ও এলডিএল কমায়। কোলেস্টেরল ছাড়াও রক্তের ট্রাইগ্লোসারাইড, ডায়াবেটিসও ওই ওষুদের সাহায্যে কমে থাকে। ওই ওষুধ ব্যবহার করতে হলে আপনি চিকিৎসককে নিয়ে একত্রে সিদ্ধান্ত নেবেন, আপনার ওজন কতটুকু কমাতে হবে। মনে রাখবেন, শতকরা ৫ থেকে ১০ ভাগ ওজন কমলেই অনেক রোগের ঝুঁকি কমে যায়। ওই ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও যে নেই, তা নয়। ওষুধ খেলে পায়ুপথে অতিরিক্ত বায়ু নির্গমণ হতে পারে। চর্বি মল ও তন্ত্রে পরিচলন বৃদ্ধি ঘটতে পারে। স্বাভাবিকভাবে আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন আসবে, ওই ওষুধ কত দ্রুত ওজন কমাতে সক্ষম।
ডা. দিদারুল আহসান
চর্ম, যৌন ও অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ
চেম্বার : আল-রাজি হাসপাতাল, ফার্মগেট
মোবাইল : ০১৮১৯২১৮৩৭৮
“NTLDR file is missing” সমস্যা হলে কি করবেন ?
“এই সমস্যাটি ঘটেতে পারে যদি MFT root folder টি severely fragmented হয়। অথবা যদি MFT মূল ফোল্ডার অনেক ফাইল ধারণ করে, MFT fragmented হতে পারে যদি সেখান একটি অতিরিক্ত বরাদ্দ করা সূচিপত্র (additional allocation index) তৈরি করা হয়। কারণ ফাইল বরাদ্দ করা সূচিপত্রে বর্ণানুক্রমিক ম্যাপ করা হয়, NTLDR ফাইলটি হয়তো দ্বিতীয় allocation index. এ ধাক্কা দেয় । যখন এইটি ঘটায়, আপনি ত্রুটি বার্তা গ্রহন করেন যে , NTLDR is missing . এই অবস্থাটি ঘটেতে পারে যদি একটি program নিয়মিতভাবে তৈরি করে এবং removes temporary files in the root folder , অথবা যদি অনেক ফাইল ভূলের কারনে মূল ফোল্ডারে (root folder ) কপি করা হয়।”
আসুন জনে নেই এই ত্রুটিটি যে বড় নয় এবং Windows পার্টিশনের মূল ডিরেক্টরীতে উইন্ডোজ XP সিডি-রম থেকে NTLDR ফাইল কপি করে কিভাবে সমাধান করা যায় ।
পদক্ষেপ সমূহ :
১। আপনার কম্পিউটার সিডি-রম ড্রাইভে Windows XP ইনস্টলেশন সিডি ঢোকান এবং Computer Restart করুন।
২। আপনার কম্পিউটারকে CD থেকে Boot করতে Del,F2,F10,F8, যা চাপতে হয় চেপে CD থেকে Boot করতে হবে ।
৩।এবার লোডকৃত, Windows XP setup মেনু থেকে আপনাকে Windows Repair “R” select করতে হবে ।
৪।এবার স্কীনে আসবে
1:c:\windows
Which windows installation would you like to log into
( to cancel………………press enter )
এখন আপনাকে 1 চাপতে হবে
এবার আপনার কাম্পউটারে যদি পূর্বে পাশওয়ার্ড দেওয়া থাকে তাহলে সেই এডমিন পাশওয়ার্ড দিয়ে Enter চাপতে হবে ।
৫। এবার স্কীনে আসবে
C:\ Windows>-
এবার CD Rom drive এ প্রবেশ করতে (ধরি আপনার CD Rom drive টি আছে E : তে )
C:\ Windows>e: লিখে Enter চাপতে হবে ।
৬। এবার স্কীনে আসবে
E:\
E:\ dir লিখে Enter চাপতে হবে (Confirm হওয়ার জন্য যে আপনার CD Rom drive টিতে Windows XP আছে) ।
৭। এবার
E:\ copy e:\i386\ntldr c:\ লিখে Enter চাপতে হবে ।
নীচে 1 file(s) Copied লেখাটি আসবে
৮।এবার
E:\ exit লিখে Enter চাপতে হবে ।
ব্যাস আপনার কাজ শেষ ।
এবার Computer Restart হবে এবং আপনার Boot Option পবির্বতন করে HDD করে দিন । দেখুন এখন Computer ঠিক মতো চলছে ।
হৃদরোগ থেকে মুক্তি
যেকোনো ব্যক্তিকে যখনই কিছু জিজ্ঞাসা করা হয় তখনই একটা উত্তর মুখে লেগেই আছে তা হল প্রোবলেম (সমস্যা) সমস্যা আর সমস্যা। অন্য গ্রহের লোকেরা নাকি পৃথিবীতে বেড়াতে এসে বলে, পৃথিবীর মানুষেরা বেশি সুবিধার নয়, কারণ নিজেরাই নিজেদের সমস্যা সৃষ্টি করে আবার ওই সমস্যার জন্য নানান অজুহাত তৈরি করে। চিন্তার জন্মদাতা মানুষ নিজেই।
ডায়রিয়া থেকে পাইওরিয়া, অম্লপিত্ত থেকে মধুমেহ, ব্লাড প্রেসার থেকে হার্ট অ্যাটাক ও চুলকানি থেকে ক্যান্সার সব রোগের জন্মদাতা এই দুশ্চিন্তা বা চিন্তা।
চিন্তা বা মানসিক চাপ হৃদরোগের একটি বড় কারণ। বিশ্বের এক নম্বর মরণব্যাধি হৃদরোগ। কোনো রকম পূর্বাভাস ছাড়াই যেকোনো সময় এটি কেড়ে নিতে পারে মানুষের জীবন। বিশ্বের মোট মৃত্যুর অর্ধেকই হয় হার্টের রোগ ও স্ট্রোকে।
প্রতি বছর লাখ লাখ লোকের হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। এদের মধ্যে ২৫ ভাগের মৃত্যু হয় হাসপাতালে পৌঁছার আগেই। হার্ট অ্যাটাক হয়েও অনেক সময় বেঁচে থাকতে হয় নানা অক্ষমতা আর হঠাৎ মৃত্যুর ভয় নিয়ে। বর্তমানে আমাদের জীবনধারায় পশ্চিমা ধাঁচে পরিবর্তন হচ্ছে। ফাস্টফুডের সাথে দ্রুততালে বাড়ছে ফ্যাট খাওয়ার প্রবণতা। কমেছে শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস ও টাটকা খাবার খাওয়ার ঝোঁক।
জীবনের গতি বাড়তে বাড়তে জেটগতির জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পরেছে একশ্রেণীর মানুষ। ফলে ইঁদুর-দৌড়ের জীবনে বাড়ছে টেনশন, মানসিক চাপ মনে হয়ে পড়ছে ক্ষতবিক্ষত হৃদরোগ, বেড়ে চলছে এভাবে। অবিশ্বাস্যভাবে বেড়ে চলছে ধূমপান। এর বিপক্ষে সচেতনতা সৃষ্টি ও মোটিভেশনও যেন রুখতে পারছে না এর অগ্রযাত্রাকে। ধূমপান এখন আর শুধু বড়দের সঙ্গী নয়, ছোটদেরও বìধু। অতীতে বাঙালি ছিল কর্মমুখর, পরিশ্রম-নির্ভরতায় চলছিল জীবন। জীবনযাপনের এ পদ্ধতি থেকে সরে এসেছে মানুষ। গ্রামের একশ্রেণীর মানুষ এখন মোটরসাইকেলে চড়েন বেশি, সাইকেলে চড়েন কম, হাঁটেন আরো কম। শহরাঞ্চলে লাফ দিয়ে বাড়ছে গাড়ি চড়া, বসে বসে কাজ করা ও আয়েশী জীবনযাপনের মানসিকতা। কমছে শরীরের ব্যায়াম, বাড়ছে স্খুলতা।
উন্নত বিশ্বে বিজ্ঞানীরা হৃদরোগের বিকল্প পদ্ধতিতে চিকিৎসার গবেষণা করেই চলছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে, বিকল্প পদ্ধতিতে জীবনধারা ইতিবাচকভাবে বদলে দিতে পারলে সেটা হৃদরোগের ঊর্ধ্বগতি থামিয়ে দেয়। একই সাথে রুদ্ধ ধমনীগুলোও (ব্লকেজ) খুলে যায়।
করোনারি আর্টারি ডিজিজ এখন বিশ্বব্যাপী আলোচিত ব্যাধি। বাংলাদেশে এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এই রোগের কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে : বংশানুক্রমিক ধারা (অর্থাৎ পিতা-মাতার হৃদরোগ থাকলে), উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল, ধূমপান ইত্যাদি। ব্যক্তির জীবনযাপন এবং মানসিক অবস্খাও সমভাবে গুরুত্ব বহন করে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে। প্রতিকূল পরিস্খিতি, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব এবং পরিবার ও কর্মক্ষেত্রে মানসিক চাপ যুবা বয়সে হার্ট অ্যাটাকের প্রধান কারণ।
প্রচলিত চিকিৎসা
হৃদরোগ চিকিৎসায় বর্তমানে যে পদ্ধতিটি বহুল ব্যবহৃত সেটি হলো হৃদযন্ত্রের ধমনীকে প্রসারিত করে তার ভেতরে রক্ত সঞ্চালন করা এবং হৃদযন্ত্রের পেশিতে অক্সিজেনবাহিত রক্তের প্রয়োজন হন্সাস করা। সার্জিক্যাল চিকিৎসায় সঙ্কীর্ণ ধমনীতে রক্ত সঞ্চালনের বিকল্প পথ তৈরি অথবা বেলুন প্রবেশের মাধ্যমে সেই পথ প্রসারিত করা হয়। এসব রোগীকে সাময়িক উপশম দেয় বটে কিন্তু এর কোনোটিই হৃদরোগের মূল সমস্যার সাথে সম্পর্কিত নয়।
বিকল্প চিকিৎসা
এটা প্রমাণিত যে, এই পদ্ধতি গ্রহণে হৃদরোগ ভালো হতে শুরু করে এবং জীবনধারায় পরিবর্তন এনে রোগের মাত্রা থামিয়ে দেয়া যায়। এসব পরিবর্তনের ভেতরে রয়েছে : মেদযুক্ত খাদ্য পরিহার, অত্যন্ত স্বল্প মেদযুক্ত আহার গ্রহণ; ধূমপান বর্জন, মনোদৈহিক চাপ ব্যবস্খাপনা, নিয়মিত ব্যায়াম করা, মেডিটেশন ও মনোসামাজিক সহায়তা দান। অনেকেই জানেন না, বাইপাস সার্জারি/এনজিওপ্লাস্টি করা হরেও পাঁচ বছরের মধ্যে হৃদযন্ত্রের ওইসব ধমনীর শতকরা ৫০ ভাগ পর্যন্ত ব্লকড হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া এনজিওপ্লাস্টি করা ধমনী ৩০ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত আবারো রুদ্ধ হয়ে যায় চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে। সে ক্ষেত্রে পুনরায় বাইপাস সার্জারি ও এনজিওপ্লাস্টি করা জরুরি হয়ে পড়ে। একটার সাথে যুক্ত আরেকটা রোগ, হৃদরোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে স্বল্প ব্যয়ের এই বিকল্প পদ্ধতির কোনো বিকল্প নেই।
আমাদের এই বিকল্প চিকিৎসা প্রোগ্রামে রয়েছে :
ডায়েট কাউন্সেলিং বা পরামর্শ অনুযায়ী খাবার গ্রহণ
নিয়মিত ব্যায়াম, যেমন প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট হাঁটা, প্রাণায়াম, যোগ ব্যায়াম
গভীর প্রশান্তির জন্য চাপ গ্রহণ ও চাপমুক্তির ব্যায়াম
মেডিটেশন এবং দৃশ্যমান ইমেজারি
অনুভূতি ভাগাভাগির ওপর জোর দিয়ে গ্রুপ আলোচনা।
খাদ্যাভাসের পরিবর্তন, প্রাণায়াম, মেডিটেশনের পাশাপাশি অপারেশন ছাড়াই হৃদরোগ প্রতিরোধে আরো একটি পদ্ধতি বায়োকেমিক্যাল এনজিওপ্লাস্টি বা চিলেশন থেরাপি : হৃদযন্ত্রের ধমনীর ব্লক অপসারণ সম্ভব বায়োকেমিক্যাল মিশ্রণের মাধ্যমে। বর্তমানে উন্নত বিশ্বের এ পদ্ধতির চিকিৎসা অনেক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জীবনে চলার পথে যা ঘটার তাই ঘটে। ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক তাকে স্বীকার করে নেয়াই মহত্ত্বের লক্ষণ। কোনো ঘটনা জানিয়ে আসে আবার কোনো ঘটনা না জানিয়ে আসে। কোনোটা ইতিবাচক, কোনোটা নেতিবাচক। কখনো প্রেরণাদায়ক, কখনো বেদনাদায়ক। কখনো ঘটনা জীবনকে প্রভাবিত করে, কখনো হতাশা এনে দেয়। অভিজ্ঞতার আলোকে বিচার করলে দেখা যাবে সব ঘটনার পেছনে এক কল্যাণকারী ছায়া আছে, যাকে অনুধাবন করতে পারলে ভবিষ্যতে কায়ারূপে অর্থাৎ সাকাররূপে মঙ্গলময় হয়। তাই ঘটনা পেছনে না দৌড়ে, দুশ্চিন্তাকে প্রশ্রয় না দিয়ে সময় ও মনের শান্তিকে সাশ্রয় করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
আত্মিক উন্নয়ন ঘটানোর মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক উন্নয়ন ঘটানোর নাম মেডিটেশন (ধ্যান)। দেহ ও মনের সুস্খতা ও সুরক্ষায় এর বিকল্প নেই। মেডিসিনের মাধ্যমে চিকিৎসা নেই এমন সব রোগ থেকে দূরে থাকা যায়, এমনকি সেসব রোগ থেকে রক্ষাও পাওয়া যায়।
লেখক : কনসালটেন্ট
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল
মোবাইল : ০১৭১১৫৯৪২২৮
কিডনি রোগ : জেনে নিন প্রতিরোধের উপায়
কিডনি হলো শরীরের পরিশোধনাগার। প্রতিদিন কিডনি প্রায় ২০০ লিটার রক্ত শোধন করে দুই লিটার রেচন পদার্থ মূত্র থলিতে জমা করে, যা মূত্রাকারে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। কিডনি তার ছাঁকনির মাধ্যমে রক্তকে পরিশোধিত করে অপ্রয়োজনীয় দূষিত পদার্থ মূত্রের মাধ্যমে বের করে দিয়ে আমাদের শরীরকে সুস্খ রাখে। যদি কোনো কারণে কিডনি রক্ত থেকে সেই দূষিত পদার্থ অপসারণ করতে না পারে, তবেই শরীর নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
একনজরে কিডনির ১০টি কাজ :
১। রক্ত পরিশ্রুত করে দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বের করে দেয়া।
২। শরীরে পানির সমতা বজায় রাখা।
৩। রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
৪। হাড় ও মজ্জাকে সবল রাখা।
৫। লোহিত রক্তকণিকা তৈরির জন্য হরমোন উৎপাদন করা।
৬। রক্তে খনিজ পদার্থগুলোর ভারসাম্য রক্ষা করা।
৭। ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য রক্ষা করা।
৮। রক্ত থেকে ওষুধ অপসারণ করা (সেবনকৃত ওষুধ)।
৯। রক্তে এসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা।
১০। পুষ্টি পুনরুদ্ধার এবং সেগুলো পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা।
কিডনি রোগের লক্ষণ : ২০ শতাংশ কার্যক্ষম একটি মাত্র কিডনিই একজন মানুষকে সুস্খ রাখতে সক্ষম। কিডনি রোগের প্রধান প্রধান লক্ষণগুলো :
ক) ব্যথা : সাধারণত খুব মৃদু ব্যথা পেটের পেছনে মেরুদণ্ডের দু’পাশে এবং পেটের মাঝখানে নাভির কাছে। কিডনি পাথরের বেলায় ব্যথা তীব্র হতে পারে।
খ) প্রায়ই মাথা ব্যথা।
গ) বমি-বমিভাব এবং বমি করা।
ঘ) প্রস্রাব করতে ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া।
ঙ) বারবার প্রস্রাব হওয়া। অথবা হঠাৎ প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া।
চ) চুলকানি/খোস-পাঁচড়া।
ছ) ক্ষুধা না পাওয়া ও ক্লান্তিবোধ করা।
জ) মুখ, বিশেষত চোখের নিচে, হাত, পা অথবা সর্বশরীর ফুলে যাওয়া।
ঝ) উচ্চ রক্তচাপ ও রক্ত শূন্যতা।
রোগ নির্ণয় : যেহেতু কিডনি রোগ অনেক প্রকার, তাই লক্ষণও ভিন্ন ভিন্ন। প্রথমাবস্খায় কিডনি রোগে প্রায়ই কোনো লক্ষণ থাকে না বা সামান্য থাকে। কখনো কখনো কোনো লক্ষণ প্রকাশের আগেই রোগীর কিডনি ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষার দ্বারা কিডনির রুটিন চেকআপ জরুরি। প্রস্রাবের পরীক্ষা, রক্তের বায়োকেমিক্যাল পরীক্ষা, এক্স-রে, আলট্রাসাউন্ড এবং প্রয়োজনে বায়োপসি দ্বারা কিডনি রোগ নির্ণয় করা যায়।
কিডনি রোগের জটিলতা : কিডনির রোগ মানে কিডনির কাজ ব্যাহত হওয়া। যার ফলে যে সব রোগ দেখা দিতে পারে সেগুলো হচ্ছে : ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, নেফন্সাইটিস, সংক্রামণ, পাথর হওয়া, আঘাত প্রাপ্তি ইত্যাদি।
কিডনি রোগের প্রতিরোধ : ক) প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা। খ) নিজেকে কর্মতৎপর রাখুন। নিজস্ব পেশার কাজ ছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম, হাঁটা, দৌড়ান বা সাইকেল চালানোর অভ্যাস করা। গ) গলায় প্রদাহ বা খোস-পাঁচড়া হলে সময় মতো ভালোভাবে চিকিৎসা করানো। ঘ) ধূমপান না করা। ধূমপান কিডনিতে রক্ত প্রবাহ কমিয়ে দেয়। এ ছাড়া ধূমপান কিডনিতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়। ঙ) রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। উচ্চরক্তচাপ কিডনিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অন্যদিকে ক্রলিক কিডনি রোগের উচ্চরক্তচাপ একটি প্রধান লক্ষণ। চ) ব্যথা বা বাতের ব্যথার ওষুধ একটানা বেশিদিন ব্যবহার না করা। এ জন্য ব্যথা উপশমে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। ছ) ডায়বেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করুন। জ) শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ঝ) কিডনি পরীক্ষা করুন যদি আপনার পরিবারে কারো কিডনি রোগের ইতিহাস থাকে, তবে আপনার কিডনি পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি।
কিডনি রোগের চিকিৎসা : কোথায় যাবেন?
কিডনি রোগের চিকিৎসা বেশ জটিল। কী ধরনের রোগ, প্রকৃত কারণ এবং রোগের স্খায়ীত্বের ওপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা। অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসের শরণাপন্ন হয়ে ভালোভাবে নিয়মিত চিকিৎসা নিতে হবে। আধুনিক অ্যালোপ্যাথিতে মেডিসিন এবং ডায়ালিসিস পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হয়। শুরুতেই রোগ ধরা পড়া রোগী স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে পারেন। ডায়ালিসিসের মাধ্যমে রোগী অপেক্ষাকৃত স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতেও কিডনি রোগের ভালো চিকিৎসা রয়েছে। যেমন হোমিওপ্যাথিতে কিডনি রোগের উন্নত চিকিৎসা রয়েছে। এ জন্য এ বিষয়ে একজন বিজ্ঞ, উচ্চশিক্ষিত, প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের সাহায্য নিতে পারেন। ইউনানী, আয়ুর্বেদী ও হারবাল পদ্ধতিতেও কিডনি রোগের ভালো চিকিৎসা সম্ভব। এসব চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর একজন বিজ্ঞ চিকিৎসকই শুধু আপনাকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে পারেন। এ জন্য চিকিৎসক বাছাইয়ে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।
লেখক : নির্বাহী পরিচালক, ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড রিসার্চ।
রোড নং-১১, বাড়ি নং-৩৮, নিকুঞ্জ-০২, খিলক্ষেত, ঢাকা-১২২৯। হেলপ লাইন : ০৬৬৬-২৬২৯৬০৮ (১২-২টা), ০১৭১২৮১৭১৪৪।
কিডনিতে স্টোন বা পাথর হওয়া
1. Zyqî gøaw ÌRËM IVw - owcwkYZ mkyËkk GKewËm ÂkØ pt Ggv e^wRËkk ÌeQd ÌaËK ÂkØ pËt Ìj#dwËŠk xbËK cwxgZ pËZ awËK„
2. gwk gwk eoÛwËgk ZwxMb AdÖhg Kkw ÈË£I eoÛwg Kkwk oit ÌKgl owiwdø exkiwY eoÛwgB xdMêZ pt Zwk Ìgxm pt dw, xKvgw GËKgwËkB eoÛwg dw pItw„
3. ËaËi ÌaËi eoÛwg xdMêZ pItw|
4. eÖkØnËbk ÌqË¢, xmËmí Ggv A¡ËKwËn gøaw pItw|
5. k£ßwh xKvgw Mws eoÛwg|
6. xgZÚnäw Ggv gxi|
xKWxdËZ Adø ÌKwd ÌkwM pËl gw qZ pËl ÌoUwk DeoMê pËZ ewËk:
1. Ròk|
2. eoÛwËg RòwlwËewrw|
3. Ggv ÌNwlwËU eoÛwg„
Ky Kkw DxPZ
1. jxb Awexd xKWxdËZ ewak pgwk AoÖËL Aw¢ßwìæ pËt awËKd ÌoËqË¢ eÞPÖk exkiwY ewxd ewd KkØd, xbËd AìæZ AwU ÌaËK bm Möwo„ eÞP×k ewxd ewd KkËl ÌoUw xKWxdk ewak†Ëlw cÖËt xdMêZ KËk xbËZ oqi pËg Ggv Adøwdø ewak pgwk oÖËjwM dÄ KkËg„
2. gøaw ÌaËK ÌkpwB ewgwk RËdø gøaw xdkwitKwky ÌKwd InÖc xWoËeëowxk ÌaËK xKËd Ëogd KkËZ ewËkd, ZËg AgmøB Ìo InÖcxU Ww£ßwxk ekwimê AdÖjwty Ìogd KkËgd„
1. jxb Awedwk mkyËkk GKxbËK ZygÛ gøaw ÌRËM IËV, Ggv ÌoUw GK RwtMw ÌaËK Adø xbËK eÞgwxpZ pt, Ìjid Awedwk xeËVk xbËK xKvgw DbËkk gw ZlËeËUk xbËK„
2. jxb eoÛwËg RòwlwËewrw gw KÄ pt„
3. jxb eoÛwËgk owËa k£ß xdMêZ pt
4. jxb GB lqY†Ëlwk owËa Awgwk RòkI awËK„
KyhwËg eÞxZËkwc KkËgd
xKWxdËZ eÖd:eÖd: ewak pËZ ewËk, Awk ZwB jwËZ KËk ewak RdôwËZ dw ewËk ÌoRËdø xdËiíw£ß ebËqe†Ëlw MÞpY KkØd:
1. GKxbËd AìæZ AwU Möwo ewxd ewd KkØd- MkËik xbËd AwkI Ìgxm ewd KkØd„
2. Ggv Ww£ßwËkk KwËQ InÖËck xgnËt ekwimê xdd Ggv Awedwk Lwbø ZwxlKwt xK exkgZêd owcd Kkw jwt Ìo xgnËt Awlwe KkØd„
এক নজরে সৌদি আরব
২। রাজধানী ও বৃহত্তম শহর : রিয়াদ, জনসংখ্যা ৩৭,২৪,১০০ জন (২০০৩)। অন্যান্য বড় শহর : জেদ্দা, জনসংখ্যা ২৭,৪৫,০০০ জন, মক্কা জনসংখ্যা ১৬,১৪,৮০০ জন।
৩। সরকার পদ্ধতি : রাজতন্ত্র, রাষ্ট্রপ্রধান পবিত্র মসজিদদ্বয়ের খাদেম বাদশাহ আবুদল্লাহ বিন আবদুল আজিজ।
৪। আয়তন : ২২,৪০,০০০ বর্গকিলোমিটার, ৮,২৯,৯৯৫ বর্গমাইল।
৫। ভাষা : আরবি, ইংরেজিরও প্রচলন আছে।
৬। জনসংখ্যা : ২,৮৬,৮৬,৬৩৩, জন্ম বৃদ্ধির হার ১.৮%, জন্মহার ২৮.৫/১০০০, শিশু মৃত্যুর হার ১১.৫/১০০০, গড় আয়ু ৭৬.৩, প্রতি বর্গমাইলে জনবসতির ঘনত্ব ৩৩ (২০০৯)।
৭। ধর্ম : ইসলাম, শতকরা ১০০% মুসলমান, ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ আল কুরআন, মহানবী হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর জন্মভূমি এবং ইসলামের দুই পবিত্র নগরী মক্কা ও মদিনা শরীফের অবস্খানের কারণে সৌদি আরব বিশ্বের সকল মুসলমানের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।
৮। পতাকা : পতাকার রঙ সবুজ। দৈর্ঘ্যরে দুই-তৃতীয়াংশ প্রস্খ ও এতে তাওহীদের মর্মবাণী ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলূলাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকারের মাবুদ নেই মুহাম্মাদ সা: আল্লাহর রাসূল)। এ কালিমা আরবিতে উৎকীর্ণ রয়েছে। কালিমার নিচেই একটি কোষমুক্ত তরবারি অঙ্কিত রয়েছে যা দ্বারা ন্যায়বিচারকে বুঝানো হয়েছে। কালিমা তাইয়্যিবাহ উৎকীর্ণ থাকায় সৌদি আরবের পতাকা কখনো অর্ধনমিত করা হয় না। সবুজ রঙ ইসলামের ঐতিহ্যের দিকে ইঙ্গিতবহ।
৯। প্রতীক : আড়াআড়ি দু’টি তরবারির ওপর একটি খেজুরগাছ হলো সৌদি আরবের জাতীয় প্রতীক, খেজুর দ্বারা বোঝানো হয়েছে সমৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি, আর তরবারি দ্বারা ন্যায়বিচার, শক্তি ও নিরাপত্তা বুঝানো হয়েছে।
১০। আবহাওয়া : তাপমাত্রা ১২ থেকে ৫১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ওঠানামা করে, বৃষ্টিপাত বিক্ষিপ্ত ও অনিয়মিত। দীর্ঘস্খায়ী উষ্ম ও শুষ্ক গ্রীষ্মকাল। রাতে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে হন্সাস পায়। শীতকালে হালকা তুষারপাত হয়।
১১। জাতিসত্তা : আরব ৯০% আফেন্সা এশীয় ১০%।
১২। শিক্ষার হার : ৭৯% (২০০৩)।
১৩। মুদ্রা : রিয়াল, ১০০ হালালায় ১ রিয়াল (এক মার্কিন ডলার সমান ৩.৭৫ সৌদি রিয়াল)।
১৪। স্বাধীনতা : ১৯৩২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর সব গোত্র ও প্রদেশগুলো একত্রীকরণ করা হয়। সে জন্য ২৩ সেপ্টেম্বরকেই সৌদি আরবের জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়।
১৫। সংবিধান : ইসলামি আইন (শরিয়া) মোতাবেক ১৯৯৩ সালে সরকারের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কিত ধারা-উপধারা সংযোজন করা হয়েছে।
১৬। বিচার ব্যবস্খা ইসলামি আইন অনুযায়ী করা হয়। কিছু ধর্মনিরপেক্ষ ধারা-উপধারা সংযোজিত হয়েছে। বাণিজ্যিক বিষয়াদি বিশেষ কমিটি কর্তৃক নিষ্পত্তি করা হয়।
১৭। প্রশাসনিক এলাকা : সৌদি আরবে ১৩টি প্রশাসনিক এলাকা আছে।
(ক) রিয়াদ (খ) পবিত্র মদিনা (গ) পূর্বাঞ্চল (আশ শারকিয়া) (ঘ) তাবুক (ঙ) পবিত্র মক্কা (চ) আল কাছিম (ছ) আছির (জ) হাইল (ঝ) উত্তর সীমান্তবর্তী অঞ্চল (আল হুদুদ আশ শিমালিয়া) (ঞ) জাযান (ট) নাজরান (ঠ) আলবাহা (ড) আল জাওফ।
১৮। শিক্ষা : সৌদি আরব আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে। সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সকল নাগরিকের জন্য অবৈতনিক শিক্ষা। বর্তমানে সৌদি আরবের বাজেটের ২৫% এ খাতের জন্য নির্ধারিত। বর্তমানে সৌদিতে চালু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান : ক. বিশ্ববিদ্যালয়-২০টি, খ. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-২টি
গ. কলেজ-১০৫টি তন্মধ্যে মহিলা কলেজ ১১টি। ঘ. বিদ্যালয় ৩৫,০০০টি।
২০০৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে ৫৮,০০,০০০ ছাত্রছাত্রী শিক্ষারত তন্মধ্যে ৬,০৪,০০০ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ৫৮,০০০ কারিগরি ও পেশাগত শিক্ষারত ৮৮,০০০ ব্যক্তি গণস্বাক্ষরতা শিক্ষাকার্যক্রমের সাথে জড়িত। সকল পর্যায়ে শিক্ষকের সংখ্যা ৪,৫৭,৮৯৮ জন।
২০০৮ শিক্ষাবর্ষে সৌদি আরবের ৫০ হাজারের অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী বিদেশে শিক্ষারত অবস্খায় আছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অত্যাধুনিক শিক্ষা উপকরণ দ্বারা সুসজ্জিত ও শিক্ষার মান উন্নয়নে চেষ্টারত। বাংলাদেশ থেকেও প্রতি বছর বেশ সংখ্যক ছাত্র সৌদি আরবে অধ্যয়ন করতে যায়।
১৯। স্বাস্খ্য : স্বাস্খ্য খাতে মাথাপিছু ব্যয় বিশ্বের সর্বোচ্চ। বিদেশীসহ সকল নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্খা রয়েছে। বর্তমানে সৌদি আরবে-
হাসপাতাল সংখ্যা : ৩১৩টি, শয্যা সংখ্যা : ৪৫,৫০০, চিকিৎসকের সংখ্যা : ৩০,৭০০, প্রাথমিক স্বাস্খ্যকেন্দ্র : ৩,১৩০টি (২০০৮)।
২০। মোট জাতীয় আয় : বৃদ্ধির হার ১৩.৫% (২০০৮)।
২১। মাথাপিছু আয় : সৌদি রিয়াল ৩৫,০০০ (৯,৫০০ মার্কিন ডলার)।
২২। শিল্প : ২০০৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৩০০ বিলিয়নের অধিক সৌদি রিয়াল ব্যয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ৩,৭৮৫টি শিল্প ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যাতে বর্তমানে ৩,৫০,০০০ জন শ্রমিক কর্মরত আছে।
২৩। কৃষি : মোট আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৪৫ লাখ হেক্টর, চাষাবাদের আওতায় ২৯ লাখ হেক্টর, চারণভূমি ৪ কোটি ৮০ লাখ হেক্টর। প্রধান ফসল খেজুর যার বার্ষিক উৎপাদন ৫ লাখ টন। এক হিসাবে দেখা গেছে, মাথাপিছু ২৯ কেজি করে খেজুর উৎপাদিত হয়, বর্তমানে খেজুর প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য সারাদেশে ৪০টি কারখানা রয়েছে। তা ছাড়াও বছরে প্রায় ৪০ লাখ টন গম উৎপাদন হয়। পাশাপাশি অন্যান্য খাদ্যশস্য আলু, ফল-ফলাদি ও শাকসবজি বিপুল পরিমানে উৎপাদি হয়।
২৪। বিদ্যুৎ : ষষ্ঠ উন্নয়ন পরিকল্পনা (১৯৯৬-২০০০) সাল শেষে দেশের ৯০ ভাগ এলাকা বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে।
২৫। পর্যটন : আকর্ষণীয় স্খানগুলোর মধ্যে রয়েছে : তায়েফ, আলশিফা, আলহাদা, আলবাহা, আবহা, খামিস মুশাইয়াত, আলনামাছ, আলআহসা।
এ ছাড়া পূর্বাঞ্চলে রয়েছে আকর্ষণীয় হাফ মুন বিচ, যা অর্ধচন্দ্রাকৃতীয় সমুদ্রসৈকত এবং বন্দরনগরী জেদ্দার অভূতপূর্ব প্রবাল প্রাচীর ও দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত।
২৬। খনিজ ও খনন : অশোধিত তেলের মোট মজুদ ২৬০ বিলিয়ন ব্যারেল, যা বিশ্বের মোট মজুদের এক-চতুর্থাংশ। মোট গ্যাসের মজুদ ১৮০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। সৌদি আরবে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ হিসেবে বিশ্বে চতুর্থ।
অন্যান্য খনিজদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে : খনিজ সিসা, নিকেল, দস্তা, সোনা, টিন ও টাংস্টোন, লোহা, তামা, ইউরেনিয়াম, ফসফেট, বক্সাইট, পটাশিয়াম, গ্রানাইট ও মার্বেল।
২৭। রফতানি : সৌদি আরব তার রফতানি আয়ের ৯০% তেল ও তেলজাত দ্রব্য থেকে অর্জন করে, যা তার জাতীয় বাজেটের ৭৫%। এ ছাড়াও পেট্রোরসায়ন, সার, ধাতব পদার্থ, গম, সিমেন্ট, নির্মাণসামগ্রী ও খাদ্যদ্রব্য।
২০০৬ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গেছে যে, সৌদি আরব এশিয়ান দেশের নিকট ৪৯.৯%, উত্তর আমেরিকা ১৫.৮%, পশ্চিম ইউরোপ ১৩.৩%, জিসিসি দেশসমূহে ৭.৪%, আরবলিগের দেশসমূহে ৫.৩% দ্রব্যাদি রফতানি করেছে।
২৮। আমদানি : বিদ্যুৎ সামগ্রী গৃহস্খালি আসবাবপত্র, বস্ত্র, মসলা, রেশমীদ্রব্য, কাটলারিজ, অলঙ্কার আমদানি করে। সৌদি আরব ২০০৬ সালে নিুোক্ত দেশগুলো থেকে বিভিন্ন জিনিস আমদানি করে-
আমেরিকা : ১৪.৫%, চায়না : ৮.৬%, জার্মানি : ৮.১%, জাপান : ৮.১%, ইতালি : ৪%, ব্রিটিশ : ৩.৯%, ফন্সান্স : ৩.৯%, উত্তর কোরিয়া : ৩.৮%, ভারত : ৩.৮%।
২৯। পরিবহন ও যোগাযোগ : পরিবহন খাতে সৌদি আরব খুবই সমৃদ্ধ।
বিমানবন্দর ২৬টি তন্মধ্যে চারটি আন্তর্জাতিক : ১) জেদ্দা, ২) রিয়াদ, ৩) দাম্মাম, ৪) মদিনা ও অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর ২২টি। সৌদি আরবে বর্তমানে রেললাইন ১৩৯২ কিমি (২০০২)
মহাসড়ক ১,৫১,৪৭০ কিমি তন্মধ্যে পাকা সড়ক ৪৫.৫৯২, কাঁচা সড়ক ১০৫.৮৭৮ কিমি.
বন্দর ও পোতাশ্রয় : ১। দাম্মাম ২। আলজুবাইল ৩। দুবা ৪। জেদ্দা ৫। জিজান ৬। রাবিগ ৭। রাসআলখাফজি ৮। রাসআততাননুরা ৯। মিছহাব ১০। ইয়াম্বুল আলবাহর ১১। মদিনাতুল ইয়াম্বু আল ছিনাইয়াহ
৩০। গণমাধ্যম : বহুল প্রচারিত দৈনিক ১১টি : ১। আল রিয়া ২। আল জাজিরা ৩। ওকাজ ৪। আল ওয়াতন ৫। আল ইকতিছাদিয়া ৬। আমদিনা ৭। আল ইয়াওম ৮। আল রিয়াদিয়া ৯। আল রিয়াদা ১০। আশশারফ আওমাত ১১। আল হায়াত। এ ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্খ্য, ওষুধ, খেলাধুলা, নারী ও সামাজিক বিষয়ের ওপর অসংখ্য ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়।
রেডিও স্টেশন : এএম ৪৩, এফএম ৩১, সটওয়েব ২ (১৯৯৮)।
টিভি সম্প্রচার কেন্দ্র ১১৭ (১৯৯৭), ডাকঘর ৬৮৩, ট্যালেক্স ৩০,০০০ (২০০৮)। ইন্টারনেট সার্ভিস প্রদানকারী সংস্খা ২২।
৩১। গণযোগাযোগ : ফিক্সড টেলিফোন : ৩.৯ মিলিয়ন (২০০২), মোবাইল ফোন : ২.৯ মিলিয়ন (২০০২) রেডিও সেট : ৬.২৫ মিলিয়ন (১৯৯৭), টেলিভিশন : ৫.০১ মিলিয়ন (২০০২), কম্পিউটার : ৪ মিলিয়ন, ইন্টারনেট ব্যবহারহারী : ১.৪৫৩ মিলিয়ন (২০০২)।
৩২। বাঁধ : মরুধূসর সৌদি আরব পানি সংরক্ষণের জন্য সারাদেশে ২৩০টি বাঁধ নির্মাণ করছে। যার দ্বারা ৮৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার সংরক্ষণ করা যায়। বিশা ও নাজকরান বাঁধ সর্ববৃহৎ।
৩৩। লবণ বিযুক্তকরণ প্রকল্প : সারাদেশে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের জন্য ২৭টি প্রকল্প বিদ্যমান, যা দৈনিক ৫৭ কোটি ৩০ লাখ ঘনমিটার পানি উৎপাদনে সক্ষম।
৩৪। ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্খান : প্রত্নতত্ত্ব সমৃদ্ধ এলাকা ১। মদিনা মুনাওয়ারা ২। আল-আউলা ৩। মাদায়েন সালেহ ৪। নাজরান ।
৩৫। দুই পবিত্র মসজিদের উন্নয়ন : ৭০ মিলিয়ন সৌদি রিয়াল ব্যয়ে মক্কা ও মদিনায় ২টি পবিত্র মসজিদের উন্নয়ন সাধন করা হয়েছে।
১৯৯৫ সালে সমাপ্ত ফাহদ সম্প্রসারণ প্রকল্পের ফলে ২টি মসজিদের আয়তন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার বর্গমিটার। ফলে একসঙ্গে প্রায় ৪০ লাখ লোক একত্রে নামাজ আদায় করতে পারে।
৩৬। ২০০৮ সালের মানবিক সাহায্য ফান্ডে সর্বোচ্চ ২০টি দাতা দেশগুলোর দানের জিডিপি’র হারে দেখা যায় যে, সৌদি আরব শীর্ষে রয়েছে। উহার সাহায্যের হার ০.১৯০৫%।
সৌদি আরব : উন্নয়নের এক শ’ বছর
সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ
উন্নয়নের পথে সৌদি আরবের অব্যাহত অগ্রগতি একটি প্রণিধানযোগ্য ও উল্লেখযোগ্য বাস্তবতা। গোটা বিষয়টি অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে পরিকল্পিত ও দক্ষতার সাথে বাস্তবায়িত। বাদশাহ আবদুল আজিজ ও তার উত্তরসূরি পুত্রদের সউদ, ফয়সল, খালিদ ও ফাহাদ সবাই একটি অতি সাধারণ নীতি অনুসরণ করে এসেছেন। তা হলো, জনগণই দেশের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ এবং সরকারের কর্তব্য সব সেবা ও সুযোগ-সুবিধা তাদের জন্য সুলভ করে দেয়া যেন তারা নিজেদের মেধা ও যোগ্যতার সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে। অতীতে হাজীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফি সৌদি আরবের পশ্চিম অংশ হিজাজের শাসকদের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস ছিল। ১৯২৬ সালে হিজাজ দখলে আসার পর বাদশাহ আবদুল আজিজ এই মূল নীতি তৈরি করলেন যে, সৌদি আরব হাজীদের সেবা করবে এবং সরকারি কার্যক্রম পরিচালনার ব্যয়ভার হাজীদের কাছ থেকে গ্রহণ করা হবে না। সৌভাগ্যক্রমে, সৌদি আরব প্রতিষ্ঠার কয়েক বছরের মধ্যে খননকাজের ফলে দেশটির পূর্বাঞ্চলে তেলের বিপুল মজুদ আবিষ্কৃত হয়। আবিষ্কৃত তেলের এই বিপুল মজুদ সৌদি আরবের আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল সরবরাহ করে। সৌদি অর্থনৈতিক পরিকল্পনাবিদরা প্রাপ্ত তেলের এ বিপুল ভাণ্ডারকে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বিবেচনা করলেন এবং একে উন্নয়নের অন্যান্য খাতের মূলধন হিসেবে কাজে লাগালেন, যাতে একদিন এসব খাতও তেল খাতের মতো অর্থনীতির ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় আয়ের প্রধান উৎসে উন্নীত হতে পারে। জাতীয় তেল কোম্পানি ‘আরামকো’ তেল খাতের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে উৎপাদন, পরিশোধন, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের এক বিরাট ও ব্যাপকভিত্তিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে। সৌদি উন্নয়ন পরিকল্পনার সার্বিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয় জাতীয় সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি অর্জনের জন্য এবং একটি সফল অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পণ্য উৎপন্ন ও সেবার ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরশীল হওয়া। এর সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য হলো আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমানো এবং উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রফতানির সক্ষমতা অর্জন করা।
পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে পরবর্তী চার দশক উল্লিখিত লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পর সৌদি আরব উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অতিক্রম করে। ১৯৭০ সাল থেকে দেশে পঞ্চ-বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের উন্নততর পর্যায়ে প্রবেশ করে। উন্নয়নের পথে সমন্বয়, ধারাবাহিকতা ও সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যে গৃহীত প্রতিটি পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনাই ছিল পরবর্তীটির ভিত্তি। অবশ্য আশি ও নব্বইয়ের দশকের পরবর্তী পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্য নির্ধারিত হয় জাতীয় অর্থনীতির বহুমুখীকরণ ও বেসরকারীকরণ। বেসরকারি খাতের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার জন্য সরকার সুদমুক্ত ঋণ প্রদানের উদ্দেশ্যে বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠান স্খাপন করলেন, যার লক্ষ্য ছিল শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন নতুন বিনিয়োগ সুবিধার সৃষ্টি।
উন্নয়নের এক শ’ বছর
বিদ্যমান খাতগুলোকে সম্প্রসারিত করার জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোক্তা ও কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হয়। ১৯৯৭ সাল নাগাদ এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি খাতে ৭২.৮ বিলিয়ন ডলারেরও অধিক প্রদান করে। এগুলোসহ অন্যান্য কর্মসূচির ফলে ১৯৭০ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত সময়ে সৌদি আরবের মোট স্খানীয় উৎপাদন (জিডিপি) সাত গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪৪.৮২ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল বা ১৪৫.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায়। একই সময়কালে জিডিপিতে তেলবহির্ভূত খাতের অংশ ৪১.১ থেকে ৬৫.২%-এ উন্নীত হয়। একবিংশ শতাব্দীতে অর্জিত আর্থসামাজিক অগ্রগতির এই ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্য শিক্ষা খাতে দেশটির ব্যাপক বিনিয়োগ প্রয়োজন। ১৯৩২ সালে আধুনিক সৌদি আরব প্রতিষ্ঠালগ্নে সাধারণ শিক্ষা বলতে ছিল শহর এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্খাপিত কিছুসংখ্যক ধর্মীয় শিক্ষালয়। বর্তমানে সৌদি আরবের আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০টিরও অধিক ফ্যাকাল্টিতে এবং ২২ হাজার ৩০০ বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ সম্পূর্ণ অবৈতনিক। এই সব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বর্তমানে ৪৫ লাখের অধিক।
অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতি
জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রেও সৌদি আরবে অনুরূপ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। সৌদি আরবে ১৯৩২ সালে চিকিৎসাসেবা বলতে তেমন কিছুই ছিল না। সেখানে বর্তমানে দেশটিতে আধুনিক চিকিৎসাসেবার সব সুযোগ-সুবিধা পুরোপুরি বিদ্যমান। শিল্পের ক্ষেত্রেও অনুরূপ ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে শিল্পকারখানার সংখ্যা তিন হাজার ১০০ ছাড়িয়ে গেছে। যেগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীর সংখ্যা দুই লাখ ৮০ হাজার। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানো ও রফতানির জন্য এসব কারখানায় বিভিন্ন ধরনের শিল্প ও ভোগ্যপণ্য উৎপাদিত হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর বিশ্বের ১১৮টি দেশে প্রায় ২৩ বিলিয়ন রিয়াল বা ৬.১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের সৌদি উৎপাদিত দ্রব্য রফতানি করা হয়। যোগাযোগের জন্য দেশটিতে রয়েছে হাজার হাজার মাইলের সেকেন্ডারি রোড, একাধিক সমুদ্রবন্দর এবং বহুসংখ্যক বিমানবন্দর। সৌদি উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে দেশের পানিসম্পদ উন্নয়ন এবং কৃষি, শিল্প ও নাগরিকদের প্রাত্যহিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য পানি সরবরাহ বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। বর্তমানে দেশটিতে রয়েছে ১৮৪টি বাঁধ যেগুলোর মোট পানি ধারণক্ষমতা ২৭.৩ বিলিয়ন ঘনফুট। তা ছাড়া রয়েছে প্রতিদিন ৫২০ মিলিয়ন গ্যালন পানীয়জল সরবরাহের জন্য ৩৩টি লবণ-বিমুক্তকরণ কারখানা। কৃষি খাতই হচ্ছে সৌদি আরবে পানি ব্যবহারের সর্ববৃহৎ খাত বর্তমানে যার বার্ষিক উৎপাদন ৩০ লাখ টন শস্যদানা, ২৫ লাখ ৯০ হাজার টন সবজি, ১১ লাখ ৫০ হাজার টন ফল, তিন লাখ ৯৭ হাজার টন হাঁসমুরগি, ১৫৭ হাজার টন লাল গোশত এবং আট লাখ ১৬ হাজার টন গবাদিপশুজাত উৎপন্ন দ্রব্য।
প্রভাবশালী বিশ্বশক্তি
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সৌদি আরব বর্তমানে একটি প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে বিবেচিত। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সৌদি আরবের গুরুত্বের অন্যতম কারণ ইসলামের জন্মস্খান এবং দুই পবিত্র স্খান মক্কা মুকাররামা ও মদিনা মুনাওয়ারার দেশ হিসেবে বিশ্বের ১০০ কোটি মুসলমানের মধ্যে দেশটির বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ অবস্খান। অন্য দু’টি কারণের একটি হলো সৌদি সরকারের স্খিতিশীলতা ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং অপরটি প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের সাথে দেশটির বìধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। ইসলামি মূলনীতি ও সমৃদ্ধ আরবীয় ঐতিহ্যের ধারক সৌদি আরব বিশ্বের দরবারে সঠিকভাবেই তার মর্যাদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। জাতিসঙ্ঘ, আরব লিগ, ওআইসি, উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্খার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে সৌদি আরব মানবজাতির অব্যাহত উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য নিরলস দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। লেবানন, আফগানিস্তান ও বসনিয়ায় শান্তি স্খাপনসহ বিশ্বের অনেক সঙ্কট নিরসনে সৌদি আরব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আরব-ইসরাইল সমস্যা সমাধান এবং কুয়েতকে ইরাকি আগ্রাসনমুক্ত করার ক্ষেত্রেও সৌদি আরব উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। তা ছাড়া মানুষের সৃষ্ট বিপদ এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে মনুষ্যসমাজকে রক্ষার জন্য বরাবর অকাতরে অর্থসম্পদ ব্যয় করে আসছে ও জনসম্পদকে কাজে লাগিয়ে এসেছে। অন্যান্য দেশের উন্নয়ন সহায়তায় সৌদি আরব এ পর্যন্ত ৮ হাজার কোটি ডলারেরও অধিক সাহায্য প্রদান করেছে।
চোখের ছানি
সাাৎকার নিয়েছেন স্বকৃত নোমান
সাপ্তাহিক : চোখের ছানি কী?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : প্রকৃতপে আমাদের চোখ আর ক্যামেরার ম্যাকানিজম প্রায় এক। বাইরের কোনো ছবি ক্যামেরার লেন্সে একটি ছায়া তৈরি করে যে ছায়া প্রিন্ট হয়ে আসলে আমরা ছবিটা দেখতে পাই। ক্যামেরার মধ্যে একটি বা একাধিক লেন্স দিয়ে এই ছায়াটা তৈরি করা হয়। ঠিক তেমনই মানুষের চোখেও একটি লেন্স থাকে। এই লেন্সের মাধ্যমে বাইরের ছবি চোখের রেটিনার ওপরে পড়ে। রেটিনার ওপরে পড়লে রেটিনা থেকে এটি মস্তিষ্কে চলে যায় আমাদের নার্ভস সিস্টেমের মাধ্যমে। ফলে আমরা দেখতে পাই। যে লেন্সের মাধ্যমে বাইরের যে কোনো জিনিসের ছবি আমাদের রেটিনার ওপরে পড়ে সে লেন্স যে কোনো লেন্সের মতোই স্বচ্ছ, যার কারণে আমরা ছবি দেখতে পাই। কিন্তু যেহেতু এই লেন্সটি সাধারণ কাচের লেন্স নয় এবং এটি বায়োলজিক্যাল অথবা মানুষের শরীরের কোষ থেকে তৈরি। তাই বয়সের কারণে অথবা আঘাত বা অন্য কোনো কারণে এই লেন্সটি স্বচ্ছ নাও থাকতে পারে। যদি ঘোলা হয়ে যায় তখন বাইরের ছবি থেকে যে আলো আসবে তা রেটিনার ওপর পড়বে না। এই ঘোলা হয়ে যাওয়াকেই বলা হয় চোখের ছানি।
সাপ্তাহিক : ছানি কেন হয়?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : প্রকৃতপে লেন্স তৈরি হয় আমাদের শরীরের কোষ দিয়ে। শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন বিভিন্ন কারণে তিগ্রস্ত হতে পারে, আঘাতের কারণে বা বয়সের কারণে পরিবর্তিত হতে পারে, ঠিক তেমনই লেন্সটা যেহেতু শরীরেরই একটা অংশÑ লেন্সেরও এই পরিবর্তন হতে পারে। কোনো কারণে যদি লেন্সের পরিবর্তন হয় তখন লেন্স ঘোলা হয়ে যেতে পারে। শরীরের যে কোনো জিনিসকে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ রাখা অত্যন্ত কঠিন একটি কাজ। আমাদের শরীরে আমাদের চোখের লেন্সকে জেনেটিক সিস্টেম এমনভাবে তৈরি করেছে যেন এটি সারাজীবন স্বচ্ছ থাকে। কোনো কারণে এই স্বচ্ছতার সিস্টেমের মধ্যে সামান্যতম সমস্যা দেখা দিলেই এই লেন্সটা ঘোলা হয়ে যেতে পারে।
সাপ্তাহিক : ছানি শুধু কী বয়স্ক ব্যক্তিদেরই হয়?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : চোখের ছানি শুধু বয়স্ক ব্যক্তিদেরই হয় না, তবে বয়স্ক ব্যক্তিদের বেশি হয়। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের সমস্ত অঙ্গই অকার্যকর, দুর্বল হতে থাকে। একই প্রক্রিয়ায় চোখের লেন্সও একসময় না একসময় ঘোলা হয়ে যাবে। আমাদের দেশে প্রাপ্ত ছানির ৮০ ভাগই বয়সের কারণে হয়ে থাকে।
সাপ্তাহিক : ছানির পরিণতি কী?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : ক্যাটারেক্টের পরিণতি অন্ধত্ব। লেন্সটা স্বচ্ছ থাকলে, বাইরের আলো চোখের মধ্যে পড়লে আমরা দেখতে পাই, কিন্তু যদি লেন্সটা ঘোলা হয়ে যায় তাহলে বাইরের আলো চোখের রেটিনাতে পড়বে না। ফলে রোগী দেখবে না। প্রথমেই যদি সামান্য ঘোলা হয় তাহলে সামান্য কম দেখবে। আস্তে আস্তে যত বেশি লেন্স ঘোলা হতে থাকবে রোগী তত কম দেখবে। একপর্যায়ে পুরোটাই নষ্ট হয়ে যাবে।
সাপ্তাহিক : চোখের ছানি অপারেশনের আগে অনেক সময় ডাক্তার রোগীকে কিছুদিন অপো করতে বলেনÑ এর কারণ কী?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : না, ছানি অপারেশনের আগে সামান্যতম দেরি করার দরকার নেই। প্রকৃতপক্ষে আগেকার দিনে যখন উন্নত প্রযুক্তি ছিল না, মাইক্রোস্কোপ বা ফ্যাকোসার্জারির প্রযুক্তি ছিল না, তখন আমরা খালি চোখে ছানি অপারেশন করতাম। যেহেতু লেন্স অত্যন্ত সূক্ষ্ম এবং অত্যন্ত কোমল গঠনের তাই তখন ছানি অপারেশনের সময় লেন্সটাকে সম্পূর্ণ বের করে নিয়ে আসা হতো। তারপর চশমা দিয়ে রোগীর পরবর্তী চিকিৎসা করা হতো। ছানি যখন পাকে মানে ছানিটি যখন শক্ত হয়ে সাদা যায়, তখন এর সংযোগগুলো হালকা হয়ে যায়। তখন এটাকে বের করে আনা সুবিধাজনক। এজন্য আমরা রোগীদের বলতাম, ‘আপনার ছানি এখনো পাকেনি, ছানি পাকুক, তারপরে অপারেশন করুন।’ কিন্তু এখন যত তাড়াতাড়ি ছানি অপারেশন করা যায়, ততই ভালো এবং সুবিধাজনক। কারণ বয়স বাড়লে নানা রোগ দেখা দেয়। সুতরাং আগে করে ফেলাটাই ভালো।
সাপ্তাহিক : স্বাস্থ্যগত কোনো কারণ কি চোখের ছানি অপারেশনের জন্য বাধা হতে পারে?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : স্বাস্থ্যগত কারণ ছানির কারণও হতে পারে, আবার ছানি অপারেশনের বাধাও হতে পারে। যেমন ডায়াবেটিস, হরমোনজনিত রোগ, জন্মগত ভাইরাস, ইনফেকশনÑ এগুলোর জন্য ছানি হতে পারে। ছানি অপারেশনের পূর্বে আমরা রোগীর স্বাস্থ্যের কতগুলো পরীা করে নিই, যাতে ছানি অপারেশনে কোনো সমস্যা না হয়।
সাপ্তাহিক : ছানি অপারেশন কী কোনো বড় অপারেশন?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : খুব বড় ধরনের অপারেশন নয়। তবে অত্যন্ত উন্নত প্রযুক্তির অপারেশন এটি। সাধারণত কোনো অপারেশনের সঙ্গে ছানি অপারেশনের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলোÑ অন্য অপারেশনে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই অপারেশন করি; যাতে কোনো ইনফেকশন না হয়। তারপরও যদি কোনো সমস্যা বা ইনফেকশন হয় সেই সমস্যাটাকে আস্তে আস্তে মেকাপ করা যায়। ছানি ছোট্ট একটা অপারেশন। এই অপারেশনে যদি কোনো ইনফেকশন হয় রোগীর দৃষ্টি সারাজীবনের জন্য নষ্টও হয়ে যেতে পারে। এজন্য ছানি অপারেশন যেখানে করা হয় সেখানে অন্য অপারেশন করা হয় না।
সাপ্তাহিক : অপারেশনের কতদিন পর রোগী বাড়ি যেতে পারে?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : এক ঘণ্টা পরেই যেতে পারে।
সাপ্তাহিক : অপারেশনের পর রোগীর দৃষ্টিশক্তির উন্নতি কতটুকু হয়? সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কেমন সময় লাগে?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : রোগীর যদি অন্য কোনো রোগ না থাকে তবে এক শ ভাগ উন্নতি হবে। সুস্থ হতে আমরা সাধারণত ২৪ ঘণ্টা ব্যান্ডেজ রাখতে বলি, তারপর বলি কালো চশমা পরতে। দু-একদিন সাবধান থাকতে হবে, সাতদিন পর পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়া যায়।
সাপ্তাহিক : অপারেশন পরবর্তী রোগীর যতœ সম্পর্কে বলুন?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : এখনকার উন্নত চিকিৎসায় বিশেষ কোনো যতœ নিতে হয় না। তবুও জোরে চিৎকার করা, দৌড়ানো, মাথা ঝাঁকানোÑ ইত্যাদি কাজ না করলেই ভালো। ৭-১৫ দিন পানি না লাগাতে বলি আমরা।
সাপ্তাহিক : অপারেশন পরবর্তী জটিলতা কী কী হতে পারে?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : কোনো জটিলতা হবে না। তবে অপারেশনের সময় ডাক্তারের অসতর্কতায় কোনো সমস্যা হলে কিছু কিছু রোগ দেখা দিতে পারে। এগুলোর চিকিৎসাও আছে।
সাপ্তাহিক : অপারেশনে কেমন খরচ হয়?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : একসঙ্গে অনেক রোগী অপারেশন করলে খরচ কমে আসে, মাত্র দুই-তিন হাজার টাকায় সম্ভব। কিন্তু অল্প রোগীর েেত্র খরচ তো বেশি পড়াটাই স্বাভাবিক। কারণ এ অপারেশনের জন্য একটা মাইক্রোস্কোপের প্রয়োজন হয়। একটি দিয়ে তো অনেক রোগীর চিকিৎসা করা যায়। তা ছাড়া খরচ কম-বেশি সেটা লেন্সের ওপরও নির্ভর করে।
সাপ্তাহিক : বাংলাদেশে চোখের ছানি অপারেশনের বর্তমান প্রোপট/অবস্থা সম্পর্কে বলুন?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : চোখের ছানি অতীতের মতো বর্তমানেও আমাদের দেশে একটা সমস্যা। তবে আগের চেয়ে এখন এ সমস্যা অনেক কমে এসেছে। বর্তমানে উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে। ২০০৩-এর এক বেসরকারি হিসাব মতে, আমাদের দেশে ৫ লাখ ৫০ হাজার ছানি রোগী রয়েছে। তার মধ্যে ২০০৩-এ অপারেশন হয়েছে ১ লাখ ১৯ হাজার; যা মোট আক্রান্তের মাত্র ৫ ভাগের ১ ভাগ। প্রতি বছর নতুন নতুন রোগী যোগ হচ্ছে। সেই হিসাবে সামগ্রিকভাবে এগুলোর চিকিৎসা করাতে গেলে প্রতি বছর আড়াই থেকে তিন লাখ অপারেশন করতে হবে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে এ নিয়ে। এর চিকিৎসা এখন অনেক সহজ এবং স্বল্প খরচে করা যাচ্ছে। ছানি সাধারণত বয়স্ক রোগীদের বেশি হয়। অসচেতনতার কারণেই অনেকাংশে এর চিকিৎসা হচ্ছে না। বেশিরভাগ েেত্র দরিদ্রতার কারণে রোগীরা এর চিকিৎসা নেয় না। তা ছাড়া আমাদের চিকিৎসক, জনবল এবং যন্ত্রপাতিরও সংকট আছে। তাই এসব েেত্র আমাদের আরও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন।
সাপ্তাহিক : উন্নত বিশ্বে বর্তমানে চোখের ছানি অপারেশনের কী ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়? বাংলাদেশে এর সম্ভাবনা কতটুকু?
অধ্যাপক কামালউদ্দিন : উন্নত বিশ্বে যে প্রযুক্তি ব্যবহার হয় বাংলাদেশেও এখন তাই হচ্ছে। যান্ত্রিকভাবে কিছুটা পার্থক্য থাকলেও সেসব দেশে যে রেজাল্ট, আমাদের দেশেও একই রেজাল্ট।
ছবি : রাশেদুজ্জামান
অধ্যাপক এ.এস.এম কামালউদ্দিন
চেম্বার : ৩০ গ্রিন সুপার মার্কেট (দ্বিতীয় তলা)
গ্রিন রোড, ফার্মগেট, ঢাকা
রোগী দেখার সময় : বিকেল ৫টা থেকে ৮টা
শুক্রবার ও শনিবার ছাড়া)
ফোন : ৮১২২৪৭০