মুখস্থবিদ্যা পরিহার করবেন যেভাবে

এ ম আ র মা নি ক

আমার ছাত্র সাইফ। ঢাকার মোটামুটি নামকরা একটি বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। বিদ্যালয়ে কোন পড়া দিলে হুবহু Cortical_Memory_Fuster_f1মুখস্থ করতে আগ্রহী। যত বলি বোঝার চেষ্টা কর, সে নাছোড়বান্দা। বইতে যা আছে কিংবা নোটে যা আছে তাই মুখস্থ করবে। অবশ্য তারও উত্তর আছে। স্কুলে পরীক্ষার খাতায় হুবহু বই লিখলেই কেবল ভালো নাম্বার পাওয়া যায়। স্কুলগুলোর এ একগুঁয়েমী যে মেধার বিকাশে অন্তরায় তা বলাই বাহুল্য। অবশ্য আশার কথা হচ্ছে- এ মুখস্থবিদ্যা হতে পরিত্রাণ পেতে আসছে সৃজনশীল পদ্ধতি।

মুখস্থবিদ্যা কী?

মুখস্ত করা শব্দটি ইংরেজি প্রতিশব্দMemorize. মুখস্থ বলতে আমরা বুঝি কোন কিছুকে না বুঝেই বার বার পড়ার মাধ্যমে স্মৃতিতে ধরে রাখা বা স্মৃতিতে ধারণ করার চেষ্টা।
মুখস্ত বিদ্যা আজ সর্বত্রই প্রচলিত। একেবারে শিশুবেলার অ, আ, ই কিংবা ১, ২, ৩ পড়া হতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এর গণ্ডি । মুখস্থ মুখস্থ মুখস্থ -সর্বত্রই এর প্রচার ও প্রসার। শিক্ষকরাও মুখস্থবিদ্যাকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন।

মুখস্থবিদ্যার প্রভাব

আমরা যে মস্তিস্কের (Brain) দ্বারা পড়া মুখস্থ করি তার স্বাভাবিক প্রবণতা হলো চিন্তা করা। মুখস্থ করার মানে এই স্বাভাবিক প্রবণতার বিরুদ্ধে যাওয়া। মুখস্থ বিদ্যার ক্ষতির দিক হলো এটা আমাদের চিন্তা শক্তিকে ভোঁতা করে দেয়। মুখস্থ বিদ্যার মাধ্যমে ভালো ফল করলেও এটা ক্ষতিকরই বটে। কারণ, এটা চিন্তা শক্তিকে অকেজো করে দিয়ে উচ্চতর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাকে কঠিনতর করে দেয়। এসব শিক্ষার্থী যত ওপরের ক্লাসে উঠবে, তার কাছে পাঠ তত জটিল আর কঠিন মনে হবে। যাদের চিন্তাশক্তি সতেজ, এখানে তারাই ভালো করবে।
মুখস্তবিদ্যা পড়াশোনার আনন্দকে মাটি করে দেয়। পড়াশোনার মাঝে যে আনন্দ আছে তা শিক্ষার্থীরা লাভ করতে পারেনা। আবার কোন কিছু না বুঝে মুখস্থ করলে সেটা স্মৃতিতে বেশিদিন ধরে রাখাও সম্ভব নয়। এ অবস্থায় চিন্তাশক্তি বা বুঝশক্তিকে প্রাধান্য দিতে হবে।

কীভাবে পরিহার করবেন?

এ মুখস্থ বিদ্যা কিভাবে পরিহার করবেন তার কিছু টিপস নিম্নে দেয়া হলো-

  • পাঠ্যপুস্তকটি প্রথমত মনযোগ দিয়ে ২ থেকে ৩ বার পড়-ন। সামগ্রিক বিষয়টি সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা নিন। এবার পুরো বিষয়টি বোঝার পর, কিছু প্রশ্ন তৈরি করে ফেলুন।
  • যখন পাঠ করছেন সমসাময়িক বিষয়কে কাছে রাখুন। পাঠকে তার সাথে মেলাতে চেষ্টা করুন।
  • পড়ার সময় আপনার বাস্তব জীবন বা বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে পাঠ্য বিষয়ের সম্পর্ক বের করুন এবং তা নিজের ভাষায় প্রকাশ করার চেষ্টা করুন।
  • পড়ার বিষয় নিয়ে অন্যদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করুন।
  • পড়ার যে বিষয়টি সহজে মাথায় ঢুকছে না সেটা একটু গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করুন। না বুঝলে আপনার আয়ত্তে থাকা অভিধান বা উচ্চতর শ্রেণীর বই থেকে সহযোগিতা নিতে পারেন।
  • এরপরও না বুঝলে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ কিংবা শিক্ষক বা সিনিয়র কোন ভাই বোনের শরনাপন্ন হতে পারেন।
  • তোতা পাখির মত না পড়ে, আস্তে আস্তে বুঝে বুঝে পড়–ন।
  • আপনি যে বিষয়টি পড়ছেন সে বিষয়ে আগ্রহী বা বিষয়টির চর্চা করে এমন কারো সাক্ষাৎ পেলে তার সাথে আলোচনা করুন।
  • পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর পড়া বা লেখার সময় নিজ ভাষায় পড়তে এবং লিখতে চেষ্টা করুন। এতে স্বাভাবিকভাবেই আপনার চিন্তাশক্তি কাজ করবে।
  • পড়াশোনাকে বা কোন বিষয়কে সহজে বুঝতে হলে, তার পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়–ন। বাইরের বই আপনার চিন্তাশক্তিকে বাড়িয়ে দেবে

শেষ কথা

মুখস্থবিদ্যা পরিহার করবেন মানে এই নয় সচেতনভাবে কোন কিছু মনে রাখবেন না। আপনার বিভিন্ন টুকরো তথ্য, যেমন- সাল, তারিখ, বইয়ের নাম, ব্যাক্তির নাম ইত্যাদি মনে রাখতে হবে- কী মনে রাখছেন, কেন মনে রাখছেন, এর সাথে অন্যান্য বিষয়ের সম্পর্ক কী তা বের করুন। এছাড়াও বিজ্ঞানের কোন সূত্র কিংবা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আয়ত্ত্ব করতে সেটা আগে বুঝুন পরে মুখস্থ করুন। এতে আপনার চিন্তাশক্তি যেমন ধারালো হবে তেমনি মুখস্থবিদ্যার কুফল থেকে রেহাই পাবেন ।