আপনি ছাত্র, চাকুরিজীবী, বেকার বা যে কেউই হোন না কেন আপনাকে প্রতিনিয়ত স্মরণশক্তির পরীক্ষা দিতে হয়। বাজারের লিস্ট মনে রাখা, প্রশ্নের পয়েন্ট মনে রাখা, মুখে মুখে হিসাব করা, রাসায়নিক নাম মুখস্থ রাখা এইসব তার কয়েকটি মাত্র। অনেকে আবার স্মৃতিশক্তিকে বয়সের মাপকাঠি হিসেবেও মানেন। কিন্তু সমস্যা হলো বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার স্মৃতিশক্তি কমে যেতে থাকে, ফলে নিজেকে অসহায় ও দুর্বল মনে হয়, আত্মবিশ্বাস লোপ পায়। এটি একজন ছাত্রের কিংবা একজন বৃদ্ধের জন্য স্থায়ী বিষন্নতা বয়ে আনতে পারে। তাই এ বিষয়ে কারেন্ট ইস্যুর পাঠকদের জন্য কিছু টিপ্স নিচে দেয়া হলো। লেখাটি সম্পাদনা করেছেন আহমাদ মাহদী।
ব্রেইনকে বেশি বেশি কাজে লাগান
আপনার স্মরণশক্তি কমবে না, যদি আপনি ব্রেইনের এক্সারসাইজ করেন। ব্রেইন একটি মাসলের মতো। তাই যতই একে খাটাবেন ততই এর ক্ষমতা বাড়বে। আপনি নিশ্চয়ই টিভি দেখেন। টিভিতে কোন্ অনুষ্ঠান কখন দেখানো হবে সেটা মনে রাখতে পারেন। অল্প অল্প করে শুরু করুন, কিছুদিনের মধ্যেই আপনি আপনার স্মরণশক্তিকে কন্ট্রোল করতে পারবেন। শুধু কি টিভি দেখা? আরো অনেক কিছুই আছে যাতে ব্রেইনের এক্সারসাইজ হয়:
< শব্দের বিভিন্ন খেলা বেশিরভাগ খবরের কাগজে প্রতিদিনই ছাপা হয়, সেগুলো নিয়মিত খেলুন। যে শব্দগুলো পারলেন না সেগুলো মনে রাখার চেষ্টা করুন।
< আলাপচারিতা, দলীয় প্রচেষ্টা (teamwork) করতে পারলে ভাল। এটি পরীক্ষিত, যারা বেশি যোগাযোগ (social contact) বজায় রাখেন, তারা স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ সংক্রান্ত পরীক্ষায় ভাল করেন।
< বহির্বিশ্বের খোঁজখবর রাখুন। খবরের কাগজ পড়তে পারেন, সাধারণ জ্ঞানের বইও উপকারী।
< বিদেশী কোনো ভাষা শিখতে পারেন।
< পাঠ্যবই ও পাঠ্যবইয়ের বাইরে পড়াশোনা করলে ভাল।
< নতুন কোনো কাজ শিখতে পারেন।
< কোনো শখের কাজ (hobby) করা যেতে পারে। যেমন: ছবি আঁকা, বাগান করা, সাইকেল চড়া অথবা এমন কোনো কিছু যাতে ব্রেইন, চোখ ও হাতের সহযোগিতা লাগে।
< ক্যারিয়ার বদল করা অথবা নতুন ক্যারিয়ারে যোগ দেয়া যেতে পারে।
< সেচ্ছাসেবী (volunteer) হিসেবে কাজ করতে পারেন।
< ক্যালকুলেটর ছাড়া হিসাব করার চেষ্টা করুন, নিজে ডিকশনারী ঘেটে শব্দার্থ বের করুন।
< বাজারের লিস্ট মনে রাখার চেষ্টা করুন।
< এমন কিছু করুন যা চিন্তাকে প্রসারিত করে।
বয়স কোনো ব্যাপারই না!
আপনার বয়স কত? একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে ৭৫টি শব্দ পাঁচবার বলার পর; ১৮ বছর বয়স্করা ৫৪টি, ৪৫ বছর বয়স্করা ৪৭টি এবং ৬৫ বছর বয়স্করা ৩৭টি শব্দ মনে রাখতে পেরেছে। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের স্মরণশক্তি কমে যায়। বয়স বেশি হলে আমাদের ব্রেইন সেলগুলো মরে যেতে থাকে। তবে এর কারণে স্মৃতিশক্তির খুব একটা ক্ষতি হয় না, ক্ষতি হয় মনোযোগের এবং ইচ্ছার অভাবে। পরীক্ষাটিতেও তাই হয়েছে। তাই বয়সের দোহাই না দিয়ে মনোযোগ সহকারে বিভিন্ন জিনিস মনে রাখার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, বয়স বাড়লেই স্মরণশক্তি কমবে, এটি সত্য নয়।
কায়িক পরিশ্রম করুন
< স্বেচ্ছায় শ্রমের অভ্যাস করুন, নিয়মিত ১৫ থেকে ৩০ মিনিট। আপনাকে কাহিল হতে হবে এমন কোন কথা নেই, সাধারণ যে কোনো ধরনের সচল ব্যায়াম করতে পারেন। ব্যায়াম করলে শরীরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গে এবং ব্রেইনেও রক্ত চলাচল (blood circulation) বৃদ্ধি পাবে। এতে করে ব্রেইন সেল বৃদ্ধি পাবে। আর তাছাড়া আপনি সুস্থ, সতেজ ও energetic বোধ করবেন। সবসময়ই physically active থাকার চেষ্টা করুন। নিয়মিত হাঁটা একটা ভাল ব্যায়াম হতে পারে। আপনি যদি হাঁটতে পছন্দ না করেন আপনার পছন্দের যে কোনো পরিশ্রমও করতে পারেন।
< লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করতে পারেন।
< অল্প পথ যানবাহনে না চড়ে হাঁটার অভ্যাস করুন।
< বাগান করতে পারেন।
< সাইকেল চড়তে পারেন।
< টিভি দেখার সময় হালকা কোনো ব্যায়াম করতে পারেন।
< যে কোনো খেলা, যেমন: ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদিতে অংশ নিতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর খাবার খান
এর মানে এই নয় যে দামি দামি সব খাবার খেতে হবে। খাবার তালিকায় শাকসবজি ও ফলমূল রাখুন। এসবে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা আপনার শরীরের কলেস্টেরল কমিয়ে ব্রেইন ও অন্যান্য অঙ্গ- প্রত্যঙ্গে স্বাভাবিক রক্ত চলাচল নিশ্চিত করে। রঙিন ফল, শাকসবজি যেমন: কমলা, আঙ্গুর, কলা, পাকা পেঁপে, ফুলকপি, শাক, গাজর, মিষ্টি আলু, টমেটো ইত্যাদি বেশি বেশি খান। এছাড়াও-
< ভিটামিন এ, সি ও ই স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়ক।
< তেলযুক্ত (ওমেগা-৩) মাছ ব্রেইনের নার্ভাস সিস্টেমের জন্য দারুন উপকারী।
< ব্রেইনে যত বেশি nutrients ও oxygen পৌছাবে ততই ভালো।
অ্যালকোহল, খারাপ নেশা ও ধূমপান থেকে দূরে থাকুন
অ্যালকোহল, খারাপ নেশা ও ধূমপান থেকে দূরে থাকুন । এগুলো থেকে সামান্যতম উপকারও পাওয়া যায় না। তাই এসব থেকে ১০০ হাত দূরে থাকুন। ধূমপান একটি কমন ব্যাধি। ধূমপান ছাড়তে হলে শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছাই যথেষ্ট। প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন দশ বছরেরও বেশি সময় ধূমপান করেছেন। অথচ তিনি একদিন ঠিক করলেন আজ থেকে ধূমপান করবেন না, আর সেদিন থেকেই তিনি আর কখনো ধূমপান করেন নি। ধূমপায়ী হয়ে থাকলে আপনিও পারেন ইচ্ছাশক্তির পরীক্ষা দিয়ে ধূমপান ছাড়তে। টাকা দিয়ে বিষ কিনে লাভ কি বলুন?
দুশ্চিন্তা ছাড়ুন
দুশ্চিন্তা করলে স্মৃতি রক্ষা করার প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। তাই সুযোগ পেলে রিল্যাক্স করুন, গভীর শ্বাস নিন। বেশি দুশ্চিন্তা থাকলে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান খুঁজুন। যেমন: জীবনকে সহজতর করা, কিছু কাজ কমিয়ে আনা, ব্যায়াম করা ইত্যাদি। আপনি এক্ষেত্রে যোগব্যায়াম বা ণড়মধ করে বিশেষ উপকার পেতে পারেন। ভারতীয় এই ব্যায়াম পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। যোগব্যায়াম রিল্যাক্সেশনের জন্য খুবই উপকারী।
মাথায় যেন আঘাত না লাগে
ব্যায়াম খেলাধুলার অনেক কথাই তো বলা হলো। কিন্তু এসবের মধ্যে খেয়াল রাখতে হবে- মাথায় আঘাত লাগতে পারে এমন কাজ যেন এড়িয়ে চলা হয়। মাথায় আঘাত লাগলে আপনার স্মরণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।