ভর্তির পরামর্শ

সবাই ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায় না

- অধ্যাপক নজরুল ইসলাম



বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেছেন, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বরাবরের মতোই সুযোগ থাকবে শিক্ষার্থীদের। এ বছর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খুব বেশি আসন বাড়ছে না। তবে নতুন কিছু বিশ্ববিদ্যালয় হওয়াতে সেখানে ২০০ থেকে ৫০০ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবেন। যারা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাবেন না তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ভর্তি হতে পারবেন।

তিনি বলেন, প্রতি বছরই আমরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন বাড়ানোর চেষ্টা করি। কারণ বর্তমানে অন্যান্য সময়ের চেয়ে পাসের হার বেশি ও পড়াশোনও বেশি করছে শিক্ষার্থীরা। সবাই চায় সরকারি ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে। তবে সবার সুযোগ করে দেয়া সম্ভব হয় না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে শতকরা ১০ ভাগ আসন বাড়ানোর জন্য চিঠি দেই। কিন্তু বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫ শতাংশও আসন বাড়ানো সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংখ্যা বাড়াতে হলে আবাসিক সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষক সংখ্যা, ক্লাস রুমসহ বিভিন্ন সুবিধা বাড়াতে হয়। কিন্তু এসব সুযোগ সুবিধা বাড়ানো কঠিন হয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ সুবিধা বাড়ানোর ব্যাপারে সজাগ রয়েছে। তবে সীমাবদ্ধতার কারণে সম্ভব হয়ে ওঠে না। তিনি বলেন, সরকার উচ্চতর শিক্ষার প্রসার করতে চায়। এ জন্যই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হচ্ছে। এসব নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বিভাগ খুলে পড়ানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ প্রণয়ন হচ্ছে। আইনটি সংসদীয় কমিটির কাছ থেকে চূড়ান্ত হয়ে আগামী সংসদে বিল হিসাবে পাস হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আইনটি পাস হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় একটি নিয়মের মধ্যে আসবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেধাবী গরীব শিক্ষার্থীদের জন্য শতকরা ৫ ভাগ বিনা বেতনে পড়াশোনার সুযোগ দেয়ার বিধান রয়েছে। তবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়গুলো ঠিকভাবে মানছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে। স্কলারশীপ দেয়ারও বিধান রয়েছে। এছাড়া নতুন আইনে গরীব মেধাবী শিক্ষার্থীদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতে আরো বিধি-বিধান থাকছে।



ইন্টারমিডিয়েটের বিষয়গুলো ভালো করে পড়লেই হবে

- আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ভর্তির প্রশ্নপত্র যেহেতু ইন্টারমিডিয়েটের বিষয়গুলোর আলোকে তৈরি করা হয়, সেহেতু ইন্টারমিডিয়েটের বিষয়গুলো ভালো করে পড়লেই হবে। যেমন- বিজ্ঞান বিভাগ হলে পদার্থ, রসায়ন, জীব এবং গণিত বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে হবে। মানবিকের শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞান বেশি করে পড়া উচিত, কারণ সাধারণ জ্ঞানে মার্কস উঠানো সহজ।

বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রচুর হওয়ায় এবং আসন সংখ্যা সীমিত হওয়ার কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। তবে বিজ্ঞান বিভাগের শেষের বিষয়গুলো থেকে কিছু শিক্ষার্থী মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং-এ চলে যায়। তাই আসন সংখ্যার সমান শিক্ষার্থী ধরে রাখতে আসন সংখ্যা একশ হলেও শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হবে একশত বিশ।

অনেক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে হা-হুতাশ করে; কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও বহু শিক্ষার্থী অনেক ভালো করছে। তাই প্রতিষ্ঠান যাই হোক ভাল করে পড়াশোনা করে যে কেউ ভালো করতে পারে।



অধ্যাপক দ্বীন মোহাম্মদ

অধ্যক্ষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ



এই মুহূর্তে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিচ্ছুদের কিভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে এ বিষয় নিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক দ্বীন মোহাম্মদ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, কেমিষ্ট্রি, বায়োলজি এবং ইংলিশ বিষয়গুলোকে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে। যেহেতু এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করে তাই এ পর্যায়ে ভর্তিচ্ছুদের ইংরেজী বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও ম্যাথমেটিক্স বিষয়ে বেশি করে পড়তে হবে। সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে নানা প্রশ্ন করা হয়ে থাকে বলে এই বিষয়গুলোর প্রতিও সমান গুরুত্ব দিয়ে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। তবে তিনি এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীদের সঠিক দিক-নির্দেশনা নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তাহলেই শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় নিজের আসনটি নিশ্চিত করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।



অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম

শিক্ষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বর্তমানের শিক্ষার্থীরা খুবই মেধাবী। শুধু আসন সংখ্যার সীমাবদ্ধতার কারণে তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছে না। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। তবে অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসন সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে। কোচিং সেন্টারের পেছনে পেছনে না ছুটে ইন্টারমিডিয়েটের বিষয়গুলো ভালো করলে পড়লেই হবে।

এ সময় শিক্ষার্থীদের সতর্ক হওয়া উচিত, কেন না সামান্য পয়েন্টের ব্যবধানে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে জীবন শেষ, এমনটা ভাবার কারণ নেই। ঢাবি ছাড়াও অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও ভালো করছে। ভালো পড়াশোনা করলে যে কেউ জীবনে উন্নতি লাভ করতে পারে।



প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন

প্রো-ভিসি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

আমাদের দেশের এসএসসি ও এইচএসসি ল্যাভেলের লেখাপড়া বর্তমানে উন্নত দেশের মতো স্ট্যান্ডার্ড মানে পৌঁছেছে বলে আমি মনে করি। শিক্ষার্থীরা একটু সজাগ হলে আরো ভালো করতে পারে। তারা বিদেশেও উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে নিতে পারে। শুধু ভালো রেজাল্টই যথেষ্ট নয়, ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে বুঝে শুনে পরিকল্পিতভাবে পড়তে হবে। কলেজে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী টিউশনমুখী থাকে। মূল বই না পড়ার কারণে তারা অনেক বিষয়ে অজ্ঞ থাকে। এইচএসসি পরীক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পূর্ব পর্যন্ত তারা ৪-৫ মাস সময় পাবে। এ সময়টাতে পুরো বই সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। মূল পাঠ্যবই বারবার পড়া ও লেখার ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া অধিকংশ শিক্ষার্থী ইংরেজিতে দুর্বল। ইংরেজি বিষয়ে তাদের বেসিক উন্নতি করার এখনই সময়। এজন্য ইংরেজির জন্য নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় ব্যয় করা উচিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ বিষয় ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানো হয়। ইংরেজিতে যাদের দখল থাকে তারা এ পর্যায়ে এসে ভালো করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির জন্য কোচিং মুখ্য বিষয় নয়। তবে বাসায় ভর্তি সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। অনুশীলনের পর তা লেখা ও কয়েকদিন অন্তর অন্তর পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেকে যাচাই করতে হবে।

প্রক্সির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ নিলে তারা নিজেদেরকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এরকম অনেক শিক্ষার্থীর মাঝ পথে ঝড়ে পড়ার রেকর্ড আছে। ছাত্রছাত্রীদের সবসময় নিজেদের উপর আন্মবিশ্বাস রেখে লেখাপড়া করতে হ্েব।



ড. এম আব্দুস সোবহান

ভিসি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় নিজের জন্য একটি আসন তৈরী করে নেয়ার জন্য ছাত্রদের কে কি ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এমন প্রশ্ন করা হলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আব্দুস সোবহান বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার জন্য পড়ালেখার কোন বিকল্প নেই। যারা পড়াশোনা করবে তারাই নিজের জন্য একটি আসন নিশ্চিত করতে পারবে। এক্ষেত্রে তাকে হতাশ না হয়ে ধৈর্য ও সাহস নিয়ে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে।



প্রফেসর মুহাম্মদ নূরুল্লাহ

প্রোভিসি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ইউনিটভিত্তিক করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর মুহাম্মদ নূরুল্লাহ। তিনি বলেন বিগত দিনে বিষয়ভিত্তিক অনুযায়ী প্রতিটি বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হত। এজন্য ছাত্রদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ছাত্রদের কথা চিন্তা করেই এবারে ভর্তি পরীক্ষা ইউনিট ভিত্তিক করা হতে পারে। এ ব্যাপারে ভর্তি কমিটিতে এ বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভর্তি পরীক্ষা ইউনিট ভিত্তিক করা হবে।



ড. এসএএম খায়রুল বাশার

উপ-উপাচার্য, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ সম্পর্কে নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এ এম খায়রুল বাশার বলেন, শিক্ষার্থীদের আগে ঠিক করতে হবে সে কোন বিষয়ে পড়বে, সেই বিষয়ের জন্য তাকে প্রস্তুতি নিতে হবে। কেননা ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করা ব্যতীত এখন ভালো মানের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া সম্ভব নয়। তারপর খোঁজ নিতে হবে তার পছন্দনীয় বিষয়টি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে। কারণ সব বিষয় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয় না। আরেকটু খেয়াল রাখতে হবে যে, সেই বিষয়টি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো পড়ায়। এ বিষয়ে তিনি নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করে বলেন যে, এখানকার যে কোনো বিষয়ের শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমতুল্য। তাছাড়া প্রায় সাড়ে বারো লক্ষ বর্গ কিলোমিটার জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত ক্যাম্পাসের পরিবেশটাও শিক্ষা উপযোগী। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে দেশে ভালো মানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকায় শিক্ষার্থীরা এখন বিদেশে না গিয়ে দেশেই পছন্দনীয় বিষয়ে পড়াশুনা করছে। এতে দেশ অনেকভাবে উপকৃত হচ্ছে।



ড. এম হাবিবুর রহমান

প্রোভিসি, বুয়েট



প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের আসনটি কিভাবে তৈরী করতে হবে এ বিষয় বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রোভিসি ড. এম হাবিবুর রহমান বলেন এইচ.এস.সি পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কঠোর পরিশ্রম প্রকৃত সাফল্য এনে দিতে পারে। বুয়েটে ভর্তির জন্য সাধারণত পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত ও ইংরেজী এ চারটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব প্রদান করা উচিত। এই বিষয়গুলোর উপরই ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। খুব কম ছেলে মেয়েই বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পায়। সুতরাং অপ্রয়োজনে সময় নষ্ট না করে এ সময়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত।