পড়ার বিষয় : ক্রিমিনলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স

শান্তি সবাই চায়। শান্তিকামী জনতা শান্তি শান্তি করে হাহাকার করছে। কিন্তু শান্তি নেই কোথাও, শত চেষ্টা করেও ধরা logo_CRIME_BWযাচ্ছে না শান্তির পায়রা। দিন দিন অশান্ত হয়ে উঠছে পৃথিবী। এ অশান্ত হওয়ার পেছনে প্রধান কারণটি হচ্ছে ক্রাইম বা অপরাধ।
এ ক্রাইম শব্দ হতেই এসেছে ক্রিমিনলজি বা অপরাধ বিদ্যা। যখনই কোনো অপরাধ সংঘটিত হয় সেটা দমনের জন্য আসে পুলিশের কথা। অপরাধ প্রতিনিয়তই ঘটছে, আর অপরাধ দমনে বাড়ছে পুলিশের কার্যক্রমও। দরকার হচ্ছে নিত্য নতদুন কৌশল উদ্ভাবনের। এ সব বিষয়কে সামনে রেখেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে “ক্রিমিনলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স” নামে একটি বিষয় জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এ বিষয়ে পড়াশোনাসহ এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানাচ্ছেন এস এম মাহফুজ।

কী পড়ানো হয় এতে

নতুন ও ব্যতিক্রমী এ বিষয়টিতে মূলত অপরাধের বিভিন্ন ধরন ও তা প্রতিরোধের উপায় ও কলাকৌশল পড়ানো হয়। এছাড়া উল্লেখযোগ্য যে সব কোর্স পড়ানো হয় সেগুলো হচ্ছে-

  • পুলিশ স্টাডিজ
  • পুলিশ অ্যাডমিনস্ট্রেশন
  • সিকিউরিটি সায়েন্স
  • ফান্ডামেন্টাল ক্রিমিনলজি
  • জুভেনাইল ক্রিমিনলজি
  • ক্রিমিনলজিক্যাল ইভাল্যুয়েশন অ্যান্ড অ্যানালাইসিস।

ক্যারিয়ার

‘ক্রিমিনলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স’ অপরাধ এবং পুলিশ সংক্রান্ত হলেও এর ক্ষেত্র বেশ বিস্তৃত। দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এ বিষয়ে পড়ার পর ভালো ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব সহজেই। ক্রিমিনালজি অ্যান্ড জাস্টিস ইনস্টিটিউশন নামে জাতিসংঘের একটি স্বতন্ত্র্য প্রতিষ্ঠান আছে। উন্নত বিশ্বের প্রায় দেশেই এ নামে ইনস্টিটিউশন রয়েছে যেখানে এ বিষয়ের গবেষক নিয়োগ দেয়া হয়। বাংলাদেশে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিসিএসে ২৯টি ক্যাডারের মধ্যে পুলিশ ক্যাডার নামে স্বতন্ত্র্য ক্যাডার আছে যেখানে এ বিষয় পড়য়াদেরই প্রাধান্য রয়েছে। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই (NSI)সহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরাসরি এখান থেকে নিয়োগ দেয়া হয়। পুলিশের এসআই (SI), জেলখানার জেলার নিয়োগেও ক্রিমিনলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স পড়ুয়াদের প্রাধান্য স্পষ্ট।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি এনজিও প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রসহ অপরাধ দমন সংক্রান্ত সকল এনজিওতে সহজেই ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব এ বিষয়ে ডিগ্রি নিয়ে। এছাড়া যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক কিংবা কোম্পানিতে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ তো রয়েছেই।

কোথায় পড়বেন

বাংলাদেশে একমাত্র মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। টাঙ্গাইলে অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে চালু করে ক্রিমিনলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স। বর্তমানে ৬ষ্ঠ ব্যাচ চলছে। প্রতি ব্যাচে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৫০ (পঞ্চাশ) জন।
২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে অনার্সের পাশাপাশি মাস্টার্স কোর্স চালু হয়েছে। অন্য বিষয়ে অনার্স করার পর এখানে মাস্টার্সের সুযোগ এখন নেই। তবে অচিরেই এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে।

পড়াশোনা ও ভর্তি যোগ্যতা

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি)- এর লাইফ সায়েন্স (এলএস) অনুষদের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এ বিষয়ে ভর্তি হওয়া যায়। এ অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ন্যূনতম যোগ্যতা বিজ্ঞান গ্রুপে এসএসসি, এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ৪র্থ বিষয় বাদে মোট জিপিএ ৬.৫। এসএসসি, এইচএসসি কিংবা সমমানের উভয় পরীক্ষার প্রতিটিতেই ৪র্থ বিষয়ে জিপিএ ৩.০ পেতে হবে। আর এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় রসায়ন ও জীববিদ্যায় পৃথকভাবে কমপক্ষে জিপিএ ২.৫ পেতে হবে। চার বছর মেয়াদী এ কোর্সে ৮টি সেমিস্টার রয়েছে। মোট ক্রেডিট হচ্ছে ১৬০।

যোগাযোগ

ক্রিমিনলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সন্তোষ, টাঙ্গাইল
ফোন : ০৯২১৫৫৪০০

বিদেশে উচ্চ শিক্ষা :

ক্রিমিনলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিষয়ে বিদেশে উচ্চ শিক্ষার অবারিত সুযোগ বিদ্যমান। বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ অনেক দেশেই এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা যায়। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি, ফ্লোরিডা আটলান্টিক ইউনিভার্সিটি, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ইউনিভার্সিটি, লন্ডনের ভিক্টরিয়া, ইউনিভার্সিটি এবং ভারতের মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটিসহ প্রায় দেশেই এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশে পড়েও দেশের বাইরে ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা রয়েছে। অনেক উন্নত বিশ্বে শুধু ক্রিমিনলজি কিংবা শুধু পুলিশ সায়েন্স নামেও সাবজেক্ট আছে।

::::::সাক্ষাৎকার::::::

Aziz_Criমোহাম্মদ আজিজুর রহমান
চেয়ারম্যান
ক্রিমিনলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

প্রশ্ন : কোন লক্ষ্যকে সামনে রেখে ক্রিমিনলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগটি চালু করা হয়েছে?
উত্তর : দেশে ক্রিমিনাল এবং পুলিশ সংক্রান্ত বিষয়ে অনেকে কাজ করলেও তারা আসলে এ বিষয়ে প্রফেশনাল নয়। এছাড়া স্বতন্ত্রভাবে এ বিষয়ে কোনো ডিগ্রি প্রদানেরও ব্যবস্থা ছিল না। এসব বিষয় মাথায় রেখে প্রফেশনাল ও দক্ষ জনবল তৈরি করতেই চালু করা হয় বিভাগটি।
প্রশ্ন : নতুন বিষয় হিসেবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এটি কতটা আগ্রহ সৃষ্টি করতে পেরেছে?
উত্তর : ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষ হতে চালু হয় ক্রিমিনলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স। বাংলাদেশে অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিভাগটি নেই। নতুন বিভাগ হলেও সূচনা থেকে এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। আমাদের এ বিভাগে প্রতি বছর ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারে। শুরু থেকেই প্রত্যেকটি ব্যাচেই ৫০ জন করে শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ হয়েই তাদেরকে এখানে আসতে হয়েছে।
প্রশ্ন : আমাদের দেশে বিষয়টি কতটা জরুরি?
উত্তর : আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি। বিডিআর বিদ্রোহের কথাই ধরুন; আমাদের এসব জাতীয় অপরাধে যদি এবিষয়ে বিশেষজ্ঞরা কাজ করেন তবে দ্রুত এবং সুক্ষ্মভাবে তদন্ত কাজসহ অপরাধ দমনসংক্রান্ত নানা কাজ করা সম্ভব। কিশোর অপরাধ দমন, অপরাধীদের সনাক্তকরণ এবং দক্ষ ও দেশ প্রেমিক পুলিশ বাহিনী গঠনে এ বিভাগের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
প্রশ্ন : বিষয়টির ক্যারিয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
উত্তর : এ বিষয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীদের উজ্জ্বল ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশে এবং বিদেশে তাদের কাক্সিক্ষত ক্যারিয়ার গড়তে পারবে। বিসিএস-এর পুলিশ ক্যাডারসহ পুলিশের বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদে চাকরির সুযোগ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এনজিওতেও শিক্ষার্থীরা ক্যারিয়ার গড়তে পারে। আমাদের এখান থেকে যেসব ব্যাচ বের হয়ে গেছে তারা কর্মক্ষেত্রে ভালোই করছে।
প্রশ্ন : এ বিভাগ নিয়ে আপনার বিশেষ কোনো পরিকল্পনা আছে কি?
উত্তর : আমরা দেশে বিভাগটিকে জনপ্রিয় করতে চাই, যাতে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও এটি সাবজেক্ট হিসেবে চালু করে। তাছাড়া ঢাকায় এ বিষয়ে একটি ইনস্টিটিউট গড়তে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।